আলতা মুনিয়া
রাজশাহীর পদ্মার চর থেকে আলতা মুনিয়ার ছবিটি তুলেছেন মো. মারুফ রানা |
চার দিনের টানা বর্ষণে মাঠ, বাগান ও রাস্তাঘাট যখন তলিয়ে গেল, ডুবুডুবু আমাদের বাগানের খেজুরের চারা গাছটির ওপরের পাখির বাসাটি, পিচ্চি পাঁচটি ছানা হাঁচড়ে-পাঁচড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে বসল গিয়ে ওপরের ডগা-পাতার ভেতরে। চারপাশের মাঠ, বিল ও বাগান জলের তলায়। তবে মা-বাবা পাখি দূরে দূরে গিয়ে খাবার এনে খাওয়াচ্ছে ছানাদের। বাবা পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর, যেন সারা শরীরে আলতা মাখানো।
মাথা-ঘাড় বাদ দিয়ে সেই আলতা-শরীরের ওপর সাদা সাদা ছিট বসানো। ঠোঁট গোলাপি। লেজের আগা ঘন বাদামি। পেটের নিচের দিকটাও ঘন লালচে বাদামি। ডানা ও পেটের দুপাশে সাদা ছিট বেশি। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা গোলাপি। পিঠ লালচে বাদামি। ডানা ঘন বাদামি লালচে। মেয়েটির পিঠ বাদামি, গলা-বুক-পেট সাদাটে, ডানার ওপরে অল্প কয়েকটা সাদা ছিট। পিচ্চি ছানাগুলোর রং হালকা লালচে। ঠোঁটের গোড়া গোলাপি। পা ও পায়ের পাতাও গোলাপি। তিন দিন পর ছানা তিনটি মা-বাবার পেছন পেছন উড়ে চলে গেল দূরের উঁচু ভূমির পানের বরজ ও আখখেতটার দিকে। ঘটনাটি গত আগস্ট মাসের ২১-২৪ তারিখের। গ্রামেই ছিলাম আমি। ছোট সুন্দর এই পাখিটির নাম আলতা মুনিয়া। লাল মুনিয়া ও সোনামুনে নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম Red Avadavat. বৈজ্ঞানিক নাম Amandava amandava. দৈর্ঘ্য ১০ সেমি। ওজন ৯ গ্রাম। প্রজননের মৌসুমে পুরুষটি আলতারঙা হয়। অন্য সময় মেয়ে-পুরুষ প্রায় একই রকম দেখায়। নিরীহ, ভীত ও চতুর পাখি।
মূলত ঘাসভূমি তথা জলাভূমি বা জলাজমি লাগোয়া ঝোপঝাড়ের পাখি এরা। বাসাও করে হোগলাবন-নলখাগড়া-উলুঘাস-ঘাসবন-বাঁশবন-তাল-খেজুরের চারার মাথায়, শেওড়া ও গোলগাছের মাথার ভেতরে। গোল বাসাটার উপকরণ নিয়ে যখন সরু লম্বা ঘাস-লতা বা কাশফুলের ডগা ঠোঁটে-পায়ে ধরে দুলতে দুলতে উড়ে আসে, তখন উড়ন্ত সাপের মতো মনে হয়। বর্ষা-শরতে বাসা করে মূলত। ডিম হয় চার থেকে সাতটি। ছোট গোল গোল ডিমগুলো যেন মুক্তো দিয়ে গড়া। ফোটে ১২ থেকে ১৬ দিনে। ১৯ থেকে ২৪ দিনে ছানারা উড়তে শেখে। ছানাদের প্রধান শত্রু সোনাব্যাঙ, ধানখেত বা ঘাসবনে ওত পেতে থেকে ব্যাঙেরা লাফ দিয়ে মুখে পুরে ফেলে ছানাদের। ছানারাও নিয়মিত ধুলোস্নান করে। আবার পানিতে গোসল করে। এদের মূল খাদ্য ধান-কাউন-চিনাদানা-তিল-সরষে-বিভিন্ন রকমের ঘাসের বীজ, ছোট ছোট পোকামাকড়সহ নানান রকম ডাল। এরা মটরশুঁটির দানা বের করে খায়। আপেল শামুকের ডিমও এদের খেতে দেখেছি। সারা দেশেই দেখা মেলে। তবে সংখ্যায় একেবারেই কম।
No comments