সক্রিয় সংযোগ এখন ১১ কোটি ৯৭ লাখ
আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন-প্রক্রিয়ার কারণে দেশে চার মাস ধরে কমছে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা। চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট—এই চার মাসে মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা কমেছে ১ কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে শুধু আগস্টেই ৯২ লাখ সংযোগ কমেছে। মুঠোফোন সংযোগের পাশাপাশি গত চার মাসে ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যাও ১৭ লাখ কমেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিটিআরসির আগস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সক্রিয় মুঠোফোন সংযোগের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৭ লাখ। যা চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ছিল ১২ কোটি ৮৯ লাখ। দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক সক্রিয় সিম ছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময় সক্রিয় সিমের সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৩৭ লাখ। এরপর আঙুলের ছাপ-পদ্ধতিতে (বায়োমেট্রিক) সিম পুনর্নিবন্ধন-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর কমতে শুরু করে সিমসংখ্যা। টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ৩১ মে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনর্নিবন্ধন-প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, মুঠোফোন অপারেটররা সোয়া এক কোটির বেশি অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করেছে। বিটিআরসির নিয়ম অনুযায়ী, একটি সিম বন্ধ হলেও ৯০ দিন বা ৩ মাস পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অপারেটরের হিসাবে সেটিকে সক্রিয় হিসেবে ধরা হয়। এ কারণে জুন-জুলাইয়ের পরিসংখ্যানে সিম বন্ধের প্রভাব সেভাবে পড়েনি। গত ৩১ আগস্ট অনিবন্ধিত সিম বন্ধের ৯০ দিন সময়সীমা শেষ হয়। মূলত এ কারণেই আগস্টে সংযোগসংখ্যা এতটা কমে গেছে। জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সক্রিয় সংযোগ কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আগে অনেক ব্যবহারকারীই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা একাধিক সিম রাখতেন। বায়োমেট্রিক-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা একটি সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল তথ্যভান্ডার পেয়েছি।’ দেশের সবচেয়ে বড় মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সংযোগসংখ্যা আগস্টে ১৮ লাখ কমেছে। জুলাইয়ে অপারেটরটির সংযোগসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬৩ লাখ, সেটি এখন কমে ৫ কোটি ৪৫ লাখ হয়েছে। একই সময়ে বাংলালিংকের সংযোগসংখ্যাও কমে ৩ কোটির নিচে চলে এসেছে। জুলাইয়ে বাংলালিংকের সংযোগ ছিল ৩ কোটি ২১ লাখ, যা আগস্টে কমে হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ। একীভূত হওয়ার অনুমোদন পাওয়া দুই অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের সংযোগসংখ্যাও আগস্টে কমেছে। রবির সংযোগসংখ্যা এ সময়ে ২ কোটি ৬৮ লাখ থেকে কমে ২ কোটি ৩২ লাখ হয়েছে। আর এয়ারটেলের সংযোগসংখ্যা ৯৩ লাখ থেকে কমে ৭৯ লাখে দাঁড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের প্রথম মুঠোফোন অপারেটর সিটিসেলের সংযোগসংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৬৮ হাজার। সব বেসরকারি অপারেটরের সংযোগ কমলেও অপরিবর্তিত আছে সরকারি অপারেটর টেলিটকের গ্রাহকসংখ্যা। আগস্টে অপারেটরটির গ্রাহকসংখ্যা জুলাইয়ের মতোই ৪৪ লাখ ৩৭ হাজারে অপরিবর্তিত আছে। অথচ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন না হওয়া প্রায় ২২ লাখ সিম বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে টেলিটক। এরপরও টেলিটকের সংযোগসংখ্যা না কমার বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অন্য অপারেটররা ৩১ মে-এর সময়সীমা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিম বন্ধ করেছে। টেলিটক সিমগুলো বন্ধ করতে একটু বেশি সময় নিয়েছে। তাই তাদের সংযোগসংখ্যা কমার চিত্রটি সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যানে উঠে আসবে। ইন্টারনেট সংযোগ: আগস্টে দেশে ইন্টারনেট সংযোগসংখ্যা ৬ কোটি ৩৯ লাখ থেকে কমে ৬ কোটি ২২ লাখ হয়েছে। এর প্রায় পুরোটাই কমেছে মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে। এ সময়ে মুঠোফোন ইন্টারনেট সংযোগসংখ্যা ৬ কোটি থেকে কমে ৫ কোটি ৮৩ লাখে নেমে এসেছে। তবে পিএসটিএন ও ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সংযোগসংখ্যা আগের মতোই আছে। রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র ইকরাম কবীর বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের মধ্যে এখন একটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—ডেটা ব্যবহারের জন্য আগে অনেকে একাধিক সিম রাখতেন, বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর এ প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে।
No comments