নওয়াজকে ছাপিয়ে রাহিল
এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের (বা থেকে তৃতীয়) বা পাশে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। ছবি: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া |
রাহিল
শরিফ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ছাপিয়ে প্রায়
প্রতিদিনই দেশটির দৈনিকগুলোর প্রথম পাতার শিরোনামে আসছেন তিনি।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সেনাদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া; বন্যা দুর্গত এলাকায় ছুটে যাওয়া কিংবা বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা—যা কিছুতে রাহিলের অংশগ্রহণ সেটাই খবরের প্রধান শিরোনাম হয়ে উঠছে।
অনেকেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ নন; জেনারেল রাহিল শরিফই এখন দেশ পরিচালনায় চালকের আসনে। কেননা গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
চরমপন্থা ও জঙ্গি দমনের বিষয়টি সামনে আসার পরই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। কেননা এ ক্ষেত্রে সরকার যখন নির্লিপ্ত, সেখানে সেনা নেতৃত্ব অনেকটাই শক্ত অবস্থান পোষণ করেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জেনারেল রাহিল পাকিস্তানিদের কাছে সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের গত দুই মেয়াদে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব সুখকর ছিল না। নিজের পছন্দ করা সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফের হাতেই ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল তাঁকে। তাই তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে সেনাপ্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক চাল চালেন নওয়াজ। তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাহিলকে নিয়োগ দেন সেনাপ্রধান হিসেবে।
পেশাদার সেনা সদস্য হিসেবে রাহিলের ব্যাপক খ্যাতি থাকলেও সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যে দূরত্ব তা সহজে ঘুচার নয়। রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বিচারের বিষয়টি যখনই সামনে আসে তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় তারা এ বিচার মানতে নারাজ। অবশেষে সরকারকে নিরুপায় হয়ে পিছু হটতে হয়। যার ফলশ্রুতিতে পারভেজ মোশাররফ এখন নিশ্চিন্তে করাচিতে নিজের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।
জেনারেল রাহিল তাঁর পূর্বসূরি জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি থেকে অনেক বেশি দৃঢ়চেতা ও পারদর্শিতার পরিচয় রেখেছেন। যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেখানে কায়ানি ছিলেন অনেক সতর্ক ও বাছবিচারি সেখানে জেনারেল রাহিল অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কাছে জঙ্গি মানে জঙ্গি। এর কোনো ভালো-মন্দ নেই। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সরকারের অনুমতির তোয়াক্কা করেন না তিনি। এর ফলে জঙ্গিদের নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে পরিচিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে এখন সহিংসতা অনেকটাই কমে এসেছে। এটা জেনারেল শরিফের একটি বড় অর্জন।
গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারে স্কুলে নৃশংস তালেবান হামলার পর রাজনৈতিক নেতা না হয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছেন রাহিল। শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন সান্ত্বনা, জুগিয়েছেন সাহস। এরপর দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপক বাড়ানো হয়েছে। পাকিস্তান বিষয়ে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, সেনাবাহিনী কেবল উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় লড়াইয়ে ব্যস্ত নয় তারা মূল ভূ-খণ্ডে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেক বেশি মনোযোগী। এরই অংশ হিসেবে করাচিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান কার্যকর করতে গঠিত কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনা কমান্ডাররা। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় প্রশাসনের চেয়ে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১৩ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বর ওয়াশিংটনে, জানুয়ারিতে লন্ডন ও বেইজিংয়ে, জুনে মস্কোতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন জেনারেল রাহিল। পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধান এই প্রথম এই দেশগুলোতে গিয়েছেন এমনটা নয়। কিন্তু জেনারেল রাহিলের এ ধরনের সফরে যে আগ্রহ তা নজিরবিহীন।
লক্ষণীয় যে জনগণ মনে করে পশ্চিমা জোটের কাছে এখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হচ্ছে প্রধান সিদ্ধান্তদাতা এবং তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাচ্ছে। যদিও দেশটির পররাষ্ট্রনীতি নীতে গঠনে সেনাবাহিনী সব সময়ও প্রধান ভূমিকা রেখেছে কিন্তু বর্তমানে সব ধরনের নীতি-নির্দেশনাতে সেনাবাহিনীর অংশ গ্রহণ দেখা যায়। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো দেশটিতে সার্বক্ষণিক পররাষ্ট্র মন্ত্রী না থাকা।
তবে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে দুই শরিফের মধ্যকার সম্পর্কটা কণ্টকাকীর্ণ। উফা সম্মেলনে গিয়ে দুই দেশের পক্ষ থেকে যে ১০ দফা ঘোষণা দেওয়া হয় যেটাকে পাকিস্তানে একপক্ষীয় বলে উল্লেখ করা হয় তা নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রবল আপত্তি রয়েছে। তবে এ নিয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয় তাতে বাহিনীর কোনো আপত্তি নেই। সম্প্রতি লাইন অব কন্ট্রোল এবং সীমান্তে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা নিয়ে সেনাবাহিনী তার অবস্থান থেকে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
এদিকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি জেনারেল শরিফের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন। নিরাপত্তা সহযোগিতার চুক্তির অংশ হিসেবে আফগান সেনা কর্মকর্তারা এখন পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের চাওয়া অনুযায়ী আফগান সেনারা সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এমনকি আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তালেবান ও আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা বসার সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন রাহিল শরিফ।
সম্প্রতি ইসলামাবাদের বাইরে দ্বিতীয় মুরি বৈঠককে আফগান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। কেননা সেখানে আফগানিস্তানের দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা ছাড়াও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিও ছিলেন।
পাকিস্তান ও চীন দীর্ঘ দিন ধরেই কৌশলগত অংশীদার। কিন্তু গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উঠে এসেছে। ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এই প্রকল্প ও চীনের কর্মীদের সুরক্ষায় ১০ হাজার সদস্যের বিশেষ বাহিনী গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি চীন থেকে কয়েক হাজার কোটি ডলার দিয়ে আটটি সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে আলোচনা চলছে পাকিস্তানের। চীন পাকিস্তানের সম্পর্ক বিষয়ক কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে এটি হলে তা হবে চীনের জন্য এই প্রথম কোনো দেশের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের চুক্তি।
সেনাবাহিনীর বাইরে নানা ক্ষেত্রে রাহিল শরিফের তৎপরতা হয়তো প্রধানমন্ত্রী শরিফের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে তিনি তাঁকে সরিয়ে সামরিক শাসনক্ষমতায় আসার শঙ্কা এখনই করছেন না। কেননা ২০১৩ সালে নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এনেছে তা খারিজ করে দিয়েছেন বিচারিক কমিশন। ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তালেবান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সেনাদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া; বন্যা দুর্গত এলাকায় ছুটে যাওয়া কিংবা বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা—যা কিছুতে রাহিলের অংশগ্রহণ সেটাই খবরের প্রধান শিরোনাম হয়ে উঠছে।
অনেকেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ নন; জেনারেল রাহিল শরিফই এখন দেশ পরিচালনায় চালকের আসনে। কেননা গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
চরমপন্থা ও জঙ্গি দমনের বিষয়টি সামনে আসার পরই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। কেননা এ ক্ষেত্রে সরকার যখন নির্লিপ্ত, সেখানে সেনা নেতৃত্ব অনেকটাই শক্ত অবস্থান পোষণ করেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জেনারেল রাহিল পাকিস্তানিদের কাছে সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের গত দুই মেয়াদে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব সুখকর ছিল না। নিজের পছন্দ করা সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফের হাতেই ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল তাঁকে। তাই তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে সেনাপ্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক চাল চালেন নওয়াজ। তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাহিলকে নিয়োগ দেন সেনাপ্রধান হিসেবে।
পেশাদার সেনা সদস্য হিসেবে রাহিলের ব্যাপক খ্যাতি থাকলেও সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যে দূরত্ব তা সহজে ঘুচার নয়। রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বিচারের বিষয়টি যখনই সামনে আসে তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় তারা এ বিচার মানতে নারাজ। অবশেষে সরকারকে নিরুপায় হয়ে পিছু হটতে হয়। যার ফলশ্রুতিতে পারভেজ মোশাররফ এখন নিশ্চিন্তে করাচিতে নিজের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।
জেনারেল রাহিল তাঁর পূর্বসূরি জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি থেকে অনেক বেশি দৃঢ়চেতা ও পারদর্শিতার পরিচয় রেখেছেন। যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেখানে কায়ানি ছিলেন অনেক সতর্ক ও বাছবিচারি সেখানে জেনারেল রাহিল অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কাছে জঙ্গি মানে জঙ্গি। এর কোনো ভালো-মন্দ নেই। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সরকারের অনুমতির তোয়াক্কা করেন না তিনি। এর ফলে জঙ্গিদের নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে পরিচিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে এখন সহিংসতা অনেকটাই কমে এসেছে। এটা জেনারেল শরিফের একটি বড় অর্জন।
গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারে স্কুলে নৃশংস তালেবান হামলার পর রাজনৈতিক নেতা না হয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছেন রাহিল। শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন সান্ত্বনা, জুগিয়েছেন সাহস। এরপর দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর তৎপরতা ব্যাপক বাড়ানো হয়েছে। পাকিস্তান বিষয়ে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, সেনাবাহিনী কেবল উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় লড়াইয়ে ব্যস্ত নয় তারা মূল ভূ-খণ্ডে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেক বেশি মনোযোগী। এরই অংশ হিসেবে করাচিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান কার্যকর করতে গঠিত কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনা কমান্ডাররা। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় প্রশাসনের চেয়ে সেনাবাহিনীর তৎপরতা বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১৩ সালে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বর ওয়াশিংটনে, জানুয়ারিতে লন্ডন ও বেইজিংয়ে, জুনে মস্কোতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন জেনারেল রাহিল। পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধান এই প্রথম এই দেশগুলোতে গিয়েছেন এমনটা নয়। কিন্তু জেনারেল রাহিলের এ ধরনের সফরে যে আগ্রহ তা নজিরবিহীন।
লক্ষণীয় যে জনগণ মনে করে পশ্চিমা জোটের কাছে এখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হচ্ছে প্রধান সিদ্ধান্তদাতা এবং তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাচ্ছে। যদিও দেশটির পররাষ্ট্রনীতি নীতে গঠনে সেনাবাহিনী সব সময়ও প্রধান ভূমিকা রেখেছে কিন্তু বর্তমানে সব ধরনের নীতি-নির্দেশনাতে সেনাবাহিনীর অংশ গ্রহণ দেখা যায়। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো দেশটিতে সার্বক্ষণিক পররাষ্ট্র মন্ত্রী না থাকা।
তবে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে দুই শরিফের মধ্যকার সম্পর্কটা কণ্টকাকীর্ণ। উফা সম্মেলনে গিয়ে দুই দেশের পক্ষ থেকে যে ১০ দফা ঘোষণা দেওয়া হয় যেটাকে পাকিস্তানে একপক্ষীয় বলে উল্লেখ করা হয় তা নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রবল আপত্তি রয়েছে। তবে এ নিয়ে যদি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয় তাতে বাহিনীর কোনো আপত্তি নেই। সম্প্রতি লাইন অব কন্ট্রোল এবং সীমান্তে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা নিয়ে সেনাবাহিনী তার অবস্থান থেকে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
এদিকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি জেনারেল শরিফের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন। নিরাপত্তা সহযোগিতার চুক্তির অংশ হিসেবে আফগান সেনা কর্মকর্তারা এখন পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের চাওয়া অনুযায়ী আফগান সেনারা সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এমনকি আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তালেবান ও আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা বসার সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন রাহিল শরিফ।
সম্প্রতি ইসলামাবাদের বাইরে দ্বিতীয় মুরি বৈঠককে আফগান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। কেননা সেখানে আফগানিস্তানের দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা ছাড়াও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিও ছিলেন।
পাকিস্তান ও চীন দীর্ঘ দিন ধরেই কৌশলগত অংশীদার। কিন্তু গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় উঠে এসেছে। ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এই প্রকল্প ও চীনের কর্মীদের সুরক্ষায় ১০ হাজার সদস্যের বিশেষ বাহিনী গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি চীন থেকে কয়েক হাজার কোটি ডলার দিয়ে আটটি সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে আলোচনা চলছে পাকিস্তানের। চীন পাকিস্তানের সম্পর্ক বিষয়ক কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে এটি হলে তা হবে চীনের জন্য এই প্রথম কোনো দেশের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের চুক্তি।
সেনাবাহিনীর বাইরে নানা ক্ষেত্রে রাহিল শরিফের তৎপরতা হয়তো প্রধানমন্ত্রী শরিফের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে তিনি তাঁকে সরিয়ে সামরিক শাসনক্ষমতায় আসার শঙ্কা এখনই করছেন না। কেননা ২০১৩ সালে নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এনেছে তা খারিজ করে দিয়েছেন বিচারিক কমিশন। ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে।
No comments