ঈদুল আজহার আনন্দ by ড. আব্দুস সাত্তার
উৎসবের
কথা মনে পড়লে কার না আনন্দ লাগে। উৎসব সব মানুষের মনে আনন্দের ঢেউ বইয়ে
দেয় বলেই মানুষ নানাভাবে সেই আনন্দের বিষয়কে প্রকাশ করে। এই মুহূর্তে
মানুষের মুখে মুখে ঈদুল আজহার কথা মুসলিম জাহানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
অর্থাৎ মুসলমানদের সর্ববৃহৎ দুইটি উৎসবের একটি ঈদুল আজহা সমাগত। এ উৎসবকে
যথাযথভাবে পালন করবার জন্য সবাই এখন প্রস্তুত। অনলাইন, ফেসবুকসহ নানা
মাধ্যমে নিমিষেই সমগ্র মুসলিম জাহানে ঈদুল আজহার তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত
হওয়া সম্ভব হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে নানা দেশে
নানাভাবে উচ্চারণ করা হয়। ভাষাগত কারণেই সম্ভবত এ রূপ হয়েছে। যেমন-
অ্যারাবিক নাম হচ্ছে ঈদ আল আজহা, তুরস্কে বলা হয় কুরবান বইরামি, মালয়ে বলা
হয় হারি রায়া কোরবান, পারস্যে বলা হয় ঈদ-ই-কুরবান ইত্যাদি। এই মুহূর্তে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদকার্ড, ঈদের ছবি নিয়ে শিল্পীরা দোকান সাজিয়েছেন।
কোরবানির ঈদকে স্পষ্ট করার জন্য শিল্পীরা চিত্রে নানা ধরনের পশুকে স্থান
দিয়েছেন। উট, গরু, ভেড়া ও ছাগলকে নানাভাবে চিত্রে তুলে ধরেছেন। উইকিপিডিয়ার
বদৌলতে এসব চিত্র এখন আমাদের সামনে মুহূর্তেই হাজির হচ্ছে। এসব চিত্রের
মধ্যে কার্টুনও রয়েছে। একটি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্রে সিংওয়ালা এক ছাগলকে
গুঁতো মেরে একজন মানুষকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো
চিত্রে ছাগলের বড় বড় সিংকে সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করে ঈদকার্ড বানাতে দেখা
গেছে। ‘জাজ্ল ডট কম প্রিন্ট’ নামক এক কোম্পানি নানা ধরনের চিত্রসমৃদ্ধ
অ্যালবাম প্রকাশ করেছে বিক্রির জন্য। এৎঁহমব জধসধফধহ জড়ড়স মৎধঢ়যরপ নামে এক
চিত্রের মূল্য রাখা হয়েছে ৭১ ডলার। এসব কর্মকাণ্ড দেখে যে-কেউ ঈদকে নিয়ে
মানুষ যে কতটা আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে তা সহজেই অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
আমাদের বাংলাদেশেও প্রতি বছর ঈদুল আজহার উৎসব পালিত হয় মহা ধুমধামে। ঈদের আগে ঈদকার্ডেও পূর্ণ হয়ে যায় দোকানের দেয়ালগুলো। পূর্ণ হয় নতুন নতুন পোশাকে। কেনাকাটার উৎসব চলে সর্বত্র। এ ক্ষেত্রে ছোট ছেলেমেয়ে ও গৃহিণীদের ভূমিকাই থাকে প্রধান। পরিবারের প্রধানরা ব্যস্ত থাকেন পশু ক্রয়ের উৎসবে। একপর্যায়ে পশু নিয়ে পরিবারের সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। যেমনটি আমার জীবনেও ঘটেছে ছোটবেলায়, যখন গ্রামে ছিলাম। এখন শহুরে জীবনে তেমন আনন্দ অনুভব করি না। কারণ গ্রামের ঈদ ও কোরবানি যতটা স্বতঃস্ফূর্ত ও জীবন্ত ছিল শহরের ঈদ ও কোরবানির ক্ষেত্রে ততটা স্বতঃস্ফূর্ত ও জীবন্ত মনে হয় না। শহরের ঈদ ও কোরবানি ক্রমান্বয়ে ধর্মীয় অনুভূতি হারিয়ে গোশত খাওয়ার উৎসবে পরিণত হচ্ছে। শহরে ঈদের উৎসব কিংবা আনন্দের চেয়ে ভোগের দিকটিই প্রাধান্য পেয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে অর্থবিত্তের অধিকারী মানুষের আত্মপ্রচারের বিষয়। যেমনটি ঘটে ঈদুল ফিতরের সময় জাকাতের কাপড় দেয়ার ক্ষেত্রে। অর্থ-প্রতিপত্তিতে শক্তিধর, ক্ষমতার দাপটে অন্ধ অহঙ্কারী মানুষ যেমন মাইকে ঘোষণা দিয়ে, পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে পরিধানের অযোগ্য কাপড় বিতরণ করেন ঠিক তেমনি। কোরবানিও তাদের জন্য একধরনের প্রচারণা। বিশ্বখ্যাত শিল্পী বেমব্রান্টের কোরবানি নামক চিত্রের প্রতি দৃষ্টি দিলে কোরবানি বিষয়ে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয়, আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়, এসব কোরবানিদাতার অনেকের আচরণে সেরূপ অনুভূতি জাগ্রত হয় না। মনে হয় এ যেন ত্যাগের কোরবানি নয়। ভোগ-বিলাসের ও প্রচারের কোরবানি!
দরিদ্র যারা, অর্থসম্পদে দুর্বল যারা তারাই বরং কোরবানির আদর্শ-উদ্দেশ্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে থাকেন। ছোটবেলায় গ্রামে দেখেছি পশু কোরবানি দেয়ার পর শুধু গোশতই কেটে বেছে নেয়া হতো। অপ্রয়োজনীয় হাড়হাড্ডি এবং নাড়িভুঁড়ি ফেলে রাখা হতো। সেগুলো খেতো শিয়াল-শকুন-কুকুরে। শিয়াল, শকুন ও কুকুরও সেগুলো খাওয়ার জন্য আনন্দে মেতে উঠত। শকুন তার বিশাল দুই ডানা মেলে আনন্দ প্রকাশ করত খাবার পেয়ে। সে দৃশ্য উপভোগ্য ছিল। বিশেষ করে ছোটদের জন্য। সে স্মৃতির কথা এখনো হৃদয় ক্যানভাসে ভেসে ওঠে। কিন্তু শহুরে জীবনে সেরূপ কোনো স্মৃতি নেই স্মরণ করার মতো। শহরে দেখছি মানুষ হাড়হাড্ডি, নাড়িভুঁড়িসহ সব কিছুই খেয়ে ফেলছে! অদ্ভুত সংস্কৃতি শহরের। এই সংস্কৃতির আর এক উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- কোরবানি দেয়া পশুর সব গোশতই নিজেরা খেয়ে ফেলা। এমনটি অনেকেই করেন। এমনকি আগের বছরের কোরবানির গোশত পরের বছরের কোরবানির দিনেও খান এবং অনেককে খাওয়ান! অথচ গ্রামে এরূপ ঘটতে দেখিনি কখনো। গ্রামের মানুষ তার অংশের গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলি করে নিজের জন্য রাখতেন এক ভাগ। সেটুকুই খেতেন যে ক’দিন খাওয়া যায়। শহরের অনেকেই এ নিয়ম মেনে চলেন। তবে অনেকে আবার এ নিয়ম মানেন না। অথচ কোরবানির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় কোরবানিদাতার প্রাপ্য এক ভাগই। বাকি দুই অংশ দরিদ্র ও আত্মীয়স্বজনের হক। কিন্তু এই হক আদায়ের ক্ষেত্রে শহরের অনেকের মধ্যেই অনীহা দেখা যায়। আর এ কারণে কোরবানির প্রকৃত আদর্শ-উদ্দেশ্যের অনেক কিছুই শহরে দেখা যায় না। তবে ছোট ছেলেমেয়েরা ঠিকই ঈদের উৎসবকে ধরে রাখে। নানা রঙের পোশাক পরে যখন তারা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়, পাড়ায়-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি যায় তখন তাদের দেখেই মনে হয় ঈদের উৎসব প্রাণ পেয়েছে।
ঈদের উৎসব কতটা প্রাণবন্ত হয়, কতটা আকর্ষণীয় হয় এবং কতটা গুরুত্ব পায় সে বিষয়টি অনুভব করা যায় যখন মুঘল আমলে আঁকা শিল্পীদের ঈদের শোভাযাত্রার চিত্র দেখি। ঈদের সেই বিশাল শোভাযাত্রায় স্বয়ং সম্রাট ও তার পরিবারের সদস্যরা অংশ নিতেন। অংশ নিতেন ইংরেজ সভাসদবৃন্দ। অংশ নিতেন সমাজের সর্বস্তরের ধনী-দরিদ্র সবাই। ফলে শোভাযাত্রা হয়ে উঠত সব শ্রেণীর মানুষের। প্রাণ পেত শোভাযাত্রা। প্রাণবন্ত শোভাযাত্রায় সবাই সমভাবে আনন্দ উপভোগ করতেন। মুঘল আমলের এ রূপ দৃষ্টান্ত ঢাকার জাতীয় জাদুঘরেও সংরক্ষিত আছে। তৎকালে ঢাকাতেও যে গুরুত্বের সাথে ঈদের শোভাযাত্রার আয়োজন করা হতো সংরক্ষিত এসব চিত্র তারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এখন সরকারি উদ্যোগে কিংবা সরকারপ্রধানের উদ্যোগে ঈদের শোভাযাত্রার আয়োজন কল্পনাও করা যায় না। কারণ এখন সব কিছুর সাথেই যুক্ত হয়েছে নোংরা রাজনীতি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না সে বিতর্ক থেকেই অনুমান করা যায় বাংলাদেশে কারা কিভাবে ধর্মকে দেখেন। ধর্মের ক্ষেত্রে এখন বহুভাবে বিভাজিত মানুষ বাংলাদেশে। কিন্তু তার পরেও দ্ুেটা ঈদ আনন্দ উৎসবের মাধ্যমেই মানুষ পালন করতে চেষ্টা করেন। যারা এ উৎসবকে গুরুত্ব দেন, গুরুত্বের সাথে পালন করেন তারা কোনো বিতর্কের মধ্যে নেই। উৎসবই তাদের কাছে প্রধান। এ শ্রেণীর মানুষ সমাজে এখনো আছে বলেই ঈদের উৎসব এবং কোরবানি গুরুত্বের সাথেই পালিত হয়। পালিত হচ্ছে এবং হবে বলেই বিশ্বাস করি। তবে আমাদের সমাজে, দেশে কিভাবে ঈদের উৎসব পালিত হচ্ছে, কতটা গুরুত্বের সাথে এবং ধর্মের প্রতি দৃষ্টি রেখে পালিত হচ্ছে, কতটা অবহেলা করা হচ্ছে এসবের জবাব পাওয়া যাবে সংরক্ষিত ঈদের শোভাযাত্রা নামক চিত্রগুলো থেকে। এ চিত্রগুলো সব সময় আমাদের ঈদ এবং ঈদের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
আমাদের বাংলাদেশেও প্রতি বছর ঈদুল আজহার উৎসব পালিত হয় মহা ধুমধামে। ঈদের আগে ঈদকার্ডেও পূর্ণ হয়ে যায় দোকানের দেয়ালগুলো। পূর্ণ হয় নতুন নতুন পোশাকে। কেনাকাটার উৎসব চলে সর্বত্র। এ ক্ষেত্রে ছোট ছেলেমেয়ে ও গৃহিণীদের ভূমিকাই থাকে প্রধান। পরিবারের প্রধানরা ব্যস্ত থাকেন পশু ক্রয়ের উৎসবে। একপর্যায়ে পশু নিয়ে পরিবারের সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। যেমনটি আমার জীবনেও ঘটেছে ছোটবেলায়, যখন গ্রামে ছিলাম। এখন শহুরে জীবনে তেমন আনন্দ অনুভব করি না। কারণ গ্রামের ঈদ ও কোরবানি যতটা স্বতঃস্ফূর্ত ও জীবন্ত ছিল শহরের ঈদ ও কোরবানির ক্ষেত্রে ততটা স্বতঃস্ফূর্ত ও জীবন্ত মনে হয় না। শহরের ঈদ ও কোরবানি ক্রমান্বয়ে ধর্মীয় অনুভূতি হারিয়ে গোশত খাওয়ার উৎসবে পরিণত হচ্ছে। শহরে ঈদের উৎসব কিংবা আনন্দের চেয়ে ভোগের দিকটিই প্রাধান্য পেয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছে অর্থবিত্তের অধিকারী মানুষের আত্মপ্রচারের বিষয়। যেমনটি ঘটে ঈদুল ফিতরের সময় জাকাতের কাপড় দেয়ার ক্ষেত্রে। অর্থ-প্রতিপত্তিতে শক্তিধর, ক্ষমতার দাপটে অন্ধ অহঙ্কারী মানুষ যেমন মাইকে ঘোষণা দিয়ে, পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের মধ্যে পরিধানের অযোগ্য কাপড় বিতরণ করেন ঠিক তেমনি। কোরবানিও তাদের জন্য একধরনের প্রচারণা। বিশ্বখ্যাত শিল্পী বেমব্রান্টের কোরবানি নামক চিত্রের প্রতি দৃষ্টি দিলে কোরবানি বিষয়ে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয়, আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়, এসব কোরবানিদাতার অনেকের আচরণে সেরূপ অনুভূতি জাগ্রত হয় না। মনে হয় এ যেন ত্যাগের কোরবানি নয়। ভোগ-বিলাসের ও প্রচারের কোরবানি!
দরিদ্র যারা, অর্থসম্পদে দুর্বল যারা তারাই বরং কোরবানির আদর্শ-উদ্দেশ্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে থাকেন। ছোটবেলায় গ্রামে দেখেছি পশু কোরবানি দেয়ার পর শুধু গোশতই কেটে বেছে নেয়া হতো। অপ্রয়োজনীয় হাড়হাড্ডি এবং নাড়িভুঁড়ি ফেলে রাখা হতো। সেগুলো খেতো শিয়াল-শকুন-কুকুরে। শিয়াল, শকুন ও কুকুরও সেগুলো খাওয়ার জন্য আনন্দে মেতে উঠত। শকুন তার বিশাল দুই ডানা মেলে আনন্দ প্রকাশ করত খাবার পেয়ে। সে দৃশ্য উপভোগ্য ছিল। বিশেষ করে ছোটদের জন্য। সে স্মৃতির কথা এখনো হৃদয় ক্যানভাসে ভেসে ওঠে। কিন্তু শহুরে জীবনে সেরূপ কোনো স্মৃতি নেই স্মরণ করার মতো। শহরে দেখছি মানুষ হাড়হাড্ডি, নাড়িভুঁড়িসহ সব কিছুই খেয়ে ফেলছে! অদ্ভুত সংস্কৃতি শহরের। এই সংস্কৃতির আর এক উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- কোরবানি দেয়া পশুর সব গোশতই নিজেরা খেয়ে ফেলা। এমনটি অনেকেই করেন। এমনকি আগের বছরের কোরবানির গোশত পরের বছরের কোরবানির দিনেও খান এবং অনেককে খাওয়ান! অথচ গ্রামে এরূপ ঘটতে দেখিনি কখনো। গ্রামের মানুষ তার অংশের গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলি করে নিজের জন্য রাখতেন এক ভাগ। সেটুকুই খেতেন যে ক’দিন খাওয়া যায়। শহরের অনেকেই এ নিয়ম মেনে চলেন। তবে অনেকে আবার এ নিয়ম মানেন না। অথচ কোরবানির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় কোরবানিদাতার প্রাপ্য এক ভাগই। বাকি দুই অংশ দরিদ্র ও আত্মীয়স্বজনের হক। কিন্তু এই হক আদায়ের ক্ষেত্রে শহরের অনেকের মধ্যেই অনীহা দেখা যায়। আর এ কারণে কোরবানির প্রকৃত আদর্শ-উদ্দেশ্যের অনেক কিছুই শহরে দেখা যায় না। তবে ছোট ছেলেমেয়েরা ঠিকই ঈদের উৎসবকে ধরে রাখে। নানা রঙের পোশাক পরে যখন তারা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায়, পাড়ায়-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি যায় তখন তাদের দেখেই মনে হয় ঈদের উৎসব প্রাণ পেয়েছে।
ঈদের উৎসব কতটা প্রাণবন্ত হয়, কতটা আকর্ষণীয় হয় এবং কতটা গুরুত্ব পায় সে বিষয়টি অনুভব করা যায় যখন মুঘল আমলে আঁকা শিল্পীদের ঈদের শোভাযাত্রার চিত্র দেখি। ঈদের সেই বিশাল শোভাযাত্রায় স্বয়ং সম্রাট ও তার পরিবারের সদস্যরা অংশ নিতেন। অংশ নিতেন ইংরেজ সভাসদবৃন্দ। অংশ নিতেন সমাজের সর্বস্তরের ধনী-দরিদ্র সবাই। ফলে শোভাযাত্রা হয়ে উঠত সব শ্রেণীর মানুষের। প্রাণ পেত শোভাযাত্রা। প্রাণবন্ত শোভাযাত্রায় সবাই সমভাবে আনন্দ উপভোগ করতেন। মুঘল আমলের এ রূপ দৃষ্টান্ত ঢাকার জাতীয় জাদুঘরেও সংরক্ষিত আছে। তৎকালে ঢাকাতেও যে গুরুত্বের সাথে ঈদের শোভাযাত্রার আয়োজন করা হতো সংরক্ষিত এসব চিত্র তারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এখন সরকারি উদ্যোগে কিংবা সরকারপ্রধানের উদ্যোগে ঈদের শোভাযাত্রার আয়োজন কল্পনাও করা যায় না। কারণ এখন সব কিছুর সাথেই যুক্ত হয়েছে নোংরা রাজনীতি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কি থাকবে না সে বিতর্ক থেকেই অনুমান করা যায় বাংলাদেশে কারা কিভাবে ধর্মকে দেখেন। ধর্মের ক্ষেত্রে এখন বহুভাবে বিভাজিত মানুষ বাংলাদেশে। কিন্তু তার পরেও দ্ুেটা ঈদ আনন্দ উৎসবের মাধ্যমেই মানুষ পালন করতে চেষ্টা করেন। যারা এ উৎসবকে গুরুত্ব দেন, গুরুত্বের সাথে পালন করেন তারা কোনো বিতর্কের মধ্যে নেই। উৎসবই তাদের কাছে প্রধান। এ শ্রেণীর মানুষ সমাজে এখনো আছে বলেই ঈদের উৎসব এবং কোরবানি গুরুত্বের সাথেই পালিত হয়। পালিত হচ্ছে এবং হবে বলেই বিশ্বাস করি। তবে আমাদের সমাজে, দেশে কিভাবে ঈদের উৎসব পালিত হচ্ছে, কতটা গুরুত্বের সাথে এবং ধর্মের প্রতি দৃষ্টি রেখে পালিত হচ্ছে, কতটা অবহেলা করা হচ্ছে এসবের জবাব পাওয়া যাবে সংরক্ষিত ঈদের শোভাযাত্রা নামক চিত্রগুলো থেকে। এ চিত্রগুলো সব সময় আমাদের ঈদ এবং ঈদের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
No comments