‘খুন হয়ে থাকতে পারেন লালবাহাদুর’
নেতাজির
পর এবার শাস্ত্রী! ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর
মৃত্যু-রহস্যের ‘গোপন’ ফাইলও আর দেরি না করে প্রকাশ করার দাবি উঠল। তার
পুত্র, কংগ্রেস নেতা অনিল শাস্ত্রী শনিবার এই দাবি জানিয়ে বলেন, ‘মৃত্যুর
পর আমার বাবার দেহে নীলচে চিহ্ন আর সাদা-সাদা দাগ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। কেন
ওই সব দাগ ছিল বাবার দেহে, তা আজও আমরা জানতে পারিনি। আমার ব্যক্তিগত
ধারণা, বাবার মুত্যুটা খুব স্বাভাবিক ছিল না। পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে
পারছি না ঠিকই, তবে আমার মনে হয়, অবহেলার কারণেই বাবার মৃত্যু হয়েছিল। আর,
তার পরেও সকলেই সন্দেহের ঊর্দ্ধে রয়ে গেলেন! কারও কোনো শাস্তিও হলো না!
সকলকে এখন এই সব কিছু জানানো হোক। গোপন ফাইলগুলি প্রকাশ করা হোক।’
সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেতাজির অন্তর্ধান-সংক্রান্ত ৬৪টি ‘গোপন’ ফাইল
প্রকাশ করে। গত সাত দশক ধরে যে ফাইলগুলিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। এর পর
কেন্দ্রও যাতে এবার নেতাজি-সংক্রান্ত ‘গোপন’ ফাইলগুলি প্রকাশ করে, নেতাজির
পরিবারের তরফে সেই দাবিও জানানো হয়। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুতে
‘রহস্য’টা কোথায়, তার সন্দেহ কেন, তা খোলসা করতে গিয়ে প্রয়াত
প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অনিল। তার
কথায়, ‘ওই ঘটনার পর তাসখন্দের হোটেলে বাবার যে খানসামা ছিল, তাকে গ্রেফতার
করা হয়েছিল। সে ছাড়াও পেয়ে যায়। পরে আমার মা তাসখন্দে গিয়ে সেই খানসামার
সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, আমার মাকে জানানো হয়, ওই খানসামাকে
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হোটেলে বাবা যে-ঘরে ছিলেন, সেই ঘরে বাবার খাটের
পাশেই একটা ছোট্ট টেবিলে সেই রাতে রাখা ছিল একটা থার্মোফ্লাস্কও। বাবার
ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার আর এন চুঘ রাতে বাবাকে দেখতে গিয়ে টেবিলে ওই
থার্মোফ্লাস্কটি দেখেছিলেন। বাবার রাতে গরম দুধ খেয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস ছিল।
হয়তো সেই জন্যই ওই থার্মোফ্লাস্কটি রাখা হয়েছিল। কিন্তু, ওই
থার্মোফ্লাস্কটিরও আর হদিশ পাওয়া যায়নি। তাই, ওই থার্মোফ্লাস্কে দুধই ছিল
নাকি অন্য কিছু, এখনও পর্যন্ত আমরা তা জানতে পারিনি। আমার তো মনে হয়, বাবার
মৃত্যু-রহস্যের কারণ লুকিয়ে রয়েছে ওই থার্মোফ্লাস্কেই! ’ নিয়মিত ডায়েরি
লেখারও অভ্যাস ছিল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর। অনিল বলেছেন, ‘বাবার সেই ডায়েরিও
পরে আর পাওয়া যায়নি। ওই দিনই সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের বড় একটি
চুক্তি হয়েছিল। বাবা হয়তো সেই চুক্তির কথা তার ডায়েরিতে লিখেও রেখেছিলেন।
কিন্তু, কী লিখেছিলেন, তা আজও আমরা কেউ জানতে পারিনি।’ প্রয়াত
প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় পুত্র, বিজেপি নেতা সুনীল শাস্ত্রীও এ দিন
জানিয়েছেন, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু-রহস্যের জট যাতে খোলে, তার জন্য
তিনি ব্যক্তিগত ভাবে একাধিক বার চেষ্টা করেছেন। বাবার মুত্যু-সংক্রান্ত
‘গোপন’ সরকারি ফাইলগুলি যাতে প্রকাশ্যে আনা হয়, তার জন্য তিনি অন্তত তিন জন
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কয়েক বার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চন্দ্র শেখর,
আই কে গুজরাল ও মনমোহন সিং। কিন্তু, কেউই তাকে এ ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দিতে
পারেননি বলে জানিয়েছেন সুনীল। প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক পর শাস্ত্রীজির
মৃত্যু-সংক্রান্ত ‘গোপন’ ফাইলগুলি কি এ বার আসবে প্রকাশ্যে? লালবাহাদুরের
পরিবারেরই আরেক সদস্য, বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং অবশ্য এ ব্যাপারে
যথেষ্টই আশাবাদী। তার কথায়, ‘এ বার একটা কিছু হবে বলেই আমার মনে হচ্ছে।
কারণ, শাস্ত্রীজির মতো বড় নেতাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন প্রধানমন্ত্রী
মোদি।’-ওয়েবসাইট
No comments