আশ্রয়হীনরা শরণার্থী না অভিবাসী?
‘শরণার্থী’ নাকি ‘অভিবাসী’- সম্প্রতি আফ্রো-মধ্য এশিয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর আশ্রয়হীনদের ইউরোপমুখী যে ঢল নেমেছে তাদের শনাক্ত করতে এ শব্দ দুটি বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ তালগোল পাকিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক শরণার্থী কমিশন ইউনাইটেড নেশন্স ফর হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস/ ইউএনএইচসিআর এ দ্বিমুখী পরিচয়ের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ওইসব আশ্রয়হীন জনসমষ্টির নিরাপদ আবাসের নিশ্চয়তার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে ইউরোপকে। ইউএনএইচসিআরের দেয়া ১৯৫১ সালের সংজ্ঞা অনুযায়ী- উন্নত জীবন, রুজি ও কর্মক্ষেত্রের আশায় যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে তারা অভিবাসী। অপরদিকে যারা যুদ্ধ ও অত্যাচারের ভয়ে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয়ের সন্ধানে যায় তাদের বলা হয় শরণার্থী। কমিশনের মতে, বিশ্বব্যাপী অত্যাচারের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি। এর মধ্যে সামরিক যুদ্ধ ও ভীতির কারণে বাস্তুহারার সংখ্যা ১ কোটি ৯৫ লাখ (২০১৪ সাল পর্যন্ত)। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করছে তা হল,
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেসব আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে তাদের সঙ্গে ওই অঞ্চলের দেশগুলোর স্ববিরোধী আচরণ। সংস্থাটির মতে, এ জনসমষ্টিকে অভিবাসী ও শরণার্থী দুটিই বলা যেতে পারে। কেননা তাদের মাঝে উভয়ের মিশ্রণ রয়েছে। সুতরাং ইউরোপ অভিমুখী এসব মানুষ অভিবাসী না শরণার্থী তা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া তাদের অভিবাসী আখ্যা দিয়ে অনেকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। এসব কিছুই তারা করছে শরণার্থীদের প্রতি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এড়াতে। এজন্য এসব মানুষের প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে উপযুক্ত মর্যাদা (শরণার্থী বা অভিবাসী) দিয়ে রাষ্ট্রগুলোর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচারণবিধি তৈরি করা উচিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইউএনএইচসিআর। কিন্তু বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ত বলেছেন, তাদের এসব অসহায় মানুষকে শরণার্থী বলতে রাজি হননি। তার মতে, ‘ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে যে মানুষ এ দেশে আসছে তারা মূলত এখানে চাকরির সুবিধা ও উন্নত জীবনের আশায় আসছে।’
No comments