জরিপে জরিপে জর্জরিত পুষ্টিচিত্র by আসফিয়া আজিম
বাংলাদেশের
বর্তমান স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি কেমন, গত ২৫ এপ্রিল আমরা তার একটি
চিত্র পেলাম। সেদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হলো ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক
হেলথ সার্ভে ২০১৪’-র প্রাথমিক প্রতিবেদন। প্রতি চার বছর পর পর পরিচালিত
গুরুত্বপূর্ণ এই জরিপ থেকে দেশের জনবিন্যাস অনুযায়ী স্বাস্থ্য, পুষ্টি,
পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা ধারণা পাওয়া যায়। জানা যায়,
পরিবর্তনের গতিপথ কোন দিকে চলেছে। এসব ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা
নিজেদের কাজের একটি পর্যালোচনা এ থেকে করতে পারেন। এটুকুই তো শুধু নয়,
এতে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ভবিষ্যতে নানা গবেষণা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন
কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হবে। বাংলাদেশের আগামী দিনের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
উদ্যোগের ওপর এর সুগভীর প্রভাব এসে পড়বে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির কোন চিত্র পাওয়া গেল এই জরিপ থেকে?
একনজরে দেখলে সপ্তমবারের মতো পরিচালিত এই জরিপে উন্নয়নকর্মী ও জনস্বাস্থ্যবিদদের উৎসাহিত হওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ফলাফল আছে, বিশেষ করে পুষ্টি ক্ষেত্রে। প্রতিবেদনটি বলছে, দেশে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা গত চার বছরে ৪১ থেকে কমে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। মানে, চার বছর আগের তুলনায় শিশুদের মধ্যে খর্বতার সমস্যা কমেছে। এর সরল অর্থ হলো, দীর্ঘদিন ধরে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা এখন কম।
আরেকটি সূচক বলছে, কম ওজনের অপুষ্ট শিশুর সংখ্যাও আগের চেয়ে কমে এসেছে। এ জরিপ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ওজন তাদের বয়স অনুপাতে যতটা থাকা উচিত, দেশের বেশির ভাগ (৬৬ শতাংশ) শিশুর ওজন ততটাই। কম ওজনের এই সূচক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) প্রথমবারের লক্ষ্য পূরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারক সূচকগুলোর মধ্যে কম ওজন ছিল একটি। প্রতিটি দেশের জন্য তখন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল আলাদা আলাদা। ১৯৯০ সালে এমডিজির সূচনায় বাংলাদেশে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে ৭১ থেকে ৩৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। সরকারের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচিও সে লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালের জন্য একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এবারের জরিপে তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে। বিরাট আনন্দ সংবাদই বটে!
তবে ২০১১ সালের তুলনায় এবারের জরিপে দেশের পুষ্টিচিত্র কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ মন খারাপ করে দেওয়ার মতো। নতুন জরিপ বলছে, এবার টিকা নিয়েছে গতবারের চেয়ে ৭ শতাংশ কম শিশু। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হারও নেমে এসেছে প্রায় ৯ শতাংশ। শিশুদের খাবারের ধরন, পরিমাণ বা প্রকৃতিতেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। ভিটামিন ‘এ’ সম্পূরক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরিমাণ আগের তুলনায় মোটেই বাড়েনি। এর মানে, শিশুর অপুষ্টি কমাতে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। অথচ শিশুপুষ্টির উন্নতি ঘটেছে, কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়, ‘মায়াবীর মতো জাদুবলে’। কীভাবে তা সম্ভব হলো?
সমসাময়িক অন্য কতগুলো সমীক্ষার দিকে নজর ফেলা যাক। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস শিশু ও মাতৃপুষ্টি নিয়ে এর দুই বছর আগে, ২০১২ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে খর্বকায় শিশুর পরিমাণ ৪১ শতাংশ এবং বয়স অনুপাতে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩৪ শতাংশের বেশি। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে বর্তমান জরিপটির ফারাক বেশ লক্ষণীয়। মাত্র দুই বছরে পুষ্টিচিত্রের এত অভাবিত উন্নতি? চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা বটে।
আবার আরেক দিকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত নগর স্বাস্থ্য জরিপ কিন্তু দেখাচ্ছে আরও ভয়াবহ এক চিত্র। নগর এলাকার বস্তিতে প্রতি দুটি শিশুর একজনই খর্বকায়। আর সেখানকার ৪৩ শতাংশ শিশুর ওজনই বয়স অনুপাতে কম। এ হিসাবই বলে দেয়, আমাদের শহরাঞ্চলের বস্তিগুলোতে অপুষ্টি কোন চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশের বেশি এখন শহরবাসী। আর তাদের একটি বড় অংশই বাস করছে বস্তিতে। দেশের উল্লেখযোগ্য এই অংশকে অপুষ্ট রেখে পুষ্টির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কি আদৌ কোনোভাবে সম্ভব?
যেকোনো নতুন পরিকল্পনা নিতে, কর্মকৌশলের বদলাতে বা উন্নয়নের পথরেখা পর্যবেক্ষণ করতে তথ্য-উপাত্ত জানা দরকার। পরিস্থিতির সঠিক তথ্য না জানলে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান করা কঠিন। কিন্তু সরকারি এ প্রতিবেদনে দেশের পুষ্টিচিত্রের যেসব তথ্য আমরা পাচ্ছি, তা পরস্পরবিরোধী। এসব তথ্য নিজেরাই নিজেদের দিকে বহু প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এসব উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে নতুন কর্মকৌশল নিলে আমাদের ভবিষ্যৎ পুষ্টিচিত্রে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বর্তমান ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভের তথ্য বলছে, দেশে পুষ্টি অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের অপুষ্টির মাত্রা এখন ‘অতি উচ্চ’ নয়, ‘উচ্চ’। ফলে সাধারণভাবে আমরা ধরে নিতে পারি, অপুষ্টি কমাতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নেওয়া কর্মকৌশলই অনুসরণীয়। অথচ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের শিশু ও মাতৃপুষ্টি-সংক্রান্ত জরিপ কিংবা নগর স্বাস্থ্য জরিপটি বলছে, দেশে অপুষ্টি না কমে বরং তা স্থির হয়ে আছে; উল্টো কোথাও কোথাও বেড়েছে। এ যদি সত্য হয়, তাহলে তো সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কর্মকৌশলে পরিবর্তন না এনে উপায় নেই। তা-ই তো শুধু নয়, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের অপুষ্টি কমানোর জন্য আলাদা আলাদা কৌশল ও কর্মপদ্ধতিও নিতে হবে।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে, তা দেখাতেই কি ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে ২০১৪’-এ এমনটি করা হলো? এটি কি তাহলে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের কোঠায় দেখানোর কোনো মরিয়া চেষ্টার অংশ? আমরা কে না চাই, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ দ্রুত পূরণ করুক, মধ্য আয়ের দেশ হয়ে উঠুক। কিন্তু সেটি বাস্তবে না করে কেবল কাগজ-কলমে করতে গেলে আমরা নিজেরাই নিজেদের শুভংকরের ফাঁকির মধ্যে ফেলে দেব। আমাদের পুষ্টির খাতে এর প্রভাব হবে ভয়ংকর। জাতি হিসেবে তার মাশুল তাহলে কীভাবে যে আমাদের পরিশোধ করতে হবে, সে কথা ভাবতেই ভয় হয়।
আসফিয়া আজিম: জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর্মী।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির কোন চিত্র পাওয়া গেল এই জরিপ থেকে?
একনজরে দেখলে সপ্তমবারের মতো পরিচালিত এই জরিপে উন্নয়নকর্মী ও জনস্বাস্থ্যবিদদের উৎসাহিত হওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ফলাফল আছে, বিশেষ করে পুষ্টি ক্ষেত্রে। প্রতিবেদনটি বলছে, দেশে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা গত চার বছরে ৪১ থেকে কমে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। মানে, চার বছর আগের তুলনায় শিশুদের মধ্যে খর্বতার সমস্যা কমেছে। এর সরল অর্থ হলো, দীর্ঘদিন ধরে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা এখন কম।
আরেকটি সূচক বলছে, কম ওজনের অপুষ্ট শিশুর সংখ্যাও আগের চেয়ে কমে এসেছে। এ জরিপ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ওজন তাদের বয়স অনুপাতে যতটা থাকা উচিত, দেশের বেশির ভাগ (৬৬ শতাংশ) শিশুর ওজন ততটাই। কম ওজনের এই সূচক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) প্রথমবারের লক্ষ্য পূরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারক সূচকগুলোর মধ্যে কম ওজন ছিল একটি। প্রতিটি দেশের জন্য তখন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল আলাদা আলাদা। ১৯৯০ সালে এমডিজির সূচনায় বাংলাদেশে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে ৭১ থেকে ৩৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিল। সরকারের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচিও সে লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬ সালের জন্য একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এবারের জরিপে তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে। বিরাট আনন্দ সংবাদই বটে!
তবে ২০১১ সালের তুলনায় এবারের জরিপে দেশের পুষ্টিচিত্র কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ মন খারাপ করে দেওয়ার মতো। নতুন জরিপ বলছে, এবার টিকা নিয়েছে গতবারের চেয়ে ৭ শতাংশ কম শিশু। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হারও নেমে এসেছে প্রায় ৯ শতাংশ। শিশুদের খাবারের ধরন, পরিমাণ বা প্রকৃতিতেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। ভিটামিন ‘এ’ সম্পূরক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরিমাণ আগের তুলনায় মোটেই বাড়েনি। এর মানে, শিশুর অপুষ্টি কমাতে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। অথচ শিশুপুষ্টির উন্নতি ঘটেছে, কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়, ‘মায়াবীর মতো জাদুবলে’। কীভাবে তা সম্ভব হলো?
সমসাময়িক অন্য কতগুলো সমীক্ষার দিকে নজর ফেলা যাক। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস শিশু ও মাতৃপুষ্টি নিয়ে এর দুই বছর আগে, ২০১২ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে খর্বকায় শিশুর পরিমাণ ৪১ শতাংশ এবং বয়স অনুপাতে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩৪ শতাংশের বেশি। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে বর্তমান জরিপটির ফারাক বেশ লক্ষণীয়। মাত্র দুই বছরে পুষ্টিচিত্রের এত অভাবিত উন্নতি? চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা বটে।
আবার আরেক দিকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত নগর স্বাস্থ্য জরিপ কিন্তু দেখাচ্ছে আরও ভয়াবহ এক চিত্র। নগর এলাকার বস্তিতে প্রতি দুটি শিশুর একজনই খর্বকায়। আর সেখানকার ৪৩ শতাংশ শিশুর ওজনই বয়স অনুপাতে কম। এ হিসাবই বলে দেয়, আমাদের শহরাঞ্চলের বস্তিগুলোতে অপুষ্টি কোন চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশের বেশি এখন শহরবাসী। আর তাদের একটি বড় অংশই বাস করছে বস্তিতে। দেশের উল্লেখযোগ্য এই অংশকে অপুষ্ট রেখে পুষ্টির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কি আদৌ কোনোভাবে সম্ভব?
যেকোনো নতুন পরিকল্পনা নিতে, কর্মকৌশলের বদলাতে বা উন্নয়নের পথরেখা পর্যবেক্ষণ করতে তথ্য-উপাত্ত জানা দরকার। পরিস্থিতির সঠিক তথ্য না জানলে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান করা কঠিন। কিন্তু সরকারি এ প্রতিবেদনে দেশের পুষ্টিচিত্রের যেসব তথ্য আমরা পাচ্ছি, তা পরস্পরবিরোধী। এসব তথ্য নিজেরাই নিজেদের দিকে বহু প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এসব উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে নতুন কর্মকৌশল নিলে আমাদের ভবিষ্যৎ পুষ্টিচিত্রে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বর্তমান ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভের তথ্য বলছে, দেশে পুষ্টি অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের অপুষ্টির মাত্রা এখন ‘অতি উচ্চ’ নয়, ‘উচ্চ’। ফলে সাধারণভাবে আমরা ধরে নিতে পারি, অপুষ্টি কমাতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নেওয়া কর্মকৌশলই অনুসরণীয়। অথচ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের শিশু ও মাতৃপুষ্টি-সংক্রান্ত জরিপ কিংবা নগর স্বাস্থ্য জরিপটি বলছে, দেশে অপুষ্টি না কমে বরং তা স্থির হয়ে আছে; উল্টো কোথাও কোথাও বেড়েছে। এ যদি সত্য হয়, তাহলে তো সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কর্মকৌশলে পরিবর্তন না এনে উপায় নেই। তা-ই তো শুধু নয়, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের অপুষ্টি কমানোর জন্য আলাদা আলাদা কৌশল ও কর্মপদ্ধতিও নিতে হবে।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে, তা দেখাতেই কি ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে ২০১৪’-এ এমনটি করা হলো? এটি কি তাহলে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের কোঠায় দেখানোর কোনো মরিয়া চেষ্টার অংশ? আমরা কে না চাই, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ দ্রুত পূরণ করুক, মধ্য আয়ের দেশ হয়ে উঠুক। কিন্তু সেটি বাস্তবে না করে কেবল কাগজ-কলমে করতে গেলে আমরা নিজেরাই নিজেদের শুভংকরের ফাঁকির মধ্যে ফেলে দেব। আমাদের পুষ্টির খাতে এর প্রভাব হবে ভয়ংকর। জাতি হিসেবে তার মাশুল তাহলে কীভাবে যে আমাদের পরিশোধ করতে হবে, সে কথা ভাবতেই ভয় হয়।
আসফিয়া আজিম: জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর্মী।
No comments