আহ! মুক্তাগাছার মণ্ডা by তানিম কবির
সে প্রায় ২শ বছর আগের কথা--- ব্রিটিশ শাসিত পূর্ববঙ্গের মুক্তাগাছায়
স্বর্গীয় গোপাল পাল মহাশয় স্বপ্নে দেখলেন দস্তুরমতো এক সন্ন্যাসী তাকে
মানবজাতির মুখ মিষ্টি করবার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করছেন! প্রথমে পাত্তা দেননি।
কিন্তু পরপর কয়েক রাত একই স্বপ্ন দেখে টনক নড়ে তার। ভাবেন এ স্বপ্ন
নেহায়েত স্বপ্ন না হয়ে ঈশ্বরের কোনও সত্যবার্তাও তো হতে পারে!
সেদিন রাতেই স্বপ্ন দেখেন আবার। সন্ন্যাসীর কাছে জানতে চাইলেন কিভাবে এ গুরুদায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন তিনি? ঈশ্বরপ্রেরিত স্বপ্নের সেই দূত তাকে মিষ্টান্ন তৈরির এক অভূতপূর্ব প্রণালী শিখিয়ে দেন। আর বলেন, " গোঁপাল, কাল থেকেই তুই মানবজাতির জন্য সুস্বাদু মণ্ডা তৈরির কাজ শুরু করে দে।"
ঈশ্বরের আদেশানুযায়ী পরদিন থেকেই গোপাল পাল জগৎ ও মানবজাতির কল্যাণে মণ্ডা তৈরির কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সেদিনই স্বপ্নাগত সেই সন্ন্যাসী রক্ত-মাংসের শরীর নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হন।
ভক্তি জানাতেই সন্ন্যাসী তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন আর বলেন, "তোর হাতের তৈরি এ মণ্ডা খেয়ে সবাই তোর মণ্ডার অশেষ সুখ্যাতি করবে। আস্তে আস্তে তোর মণ্ডা একদিন জগৎবিখ্যাত হবে এবং পুরুষানুক্রমে তুই মণ্ডামিঠাই শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করবি।"
ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগাছা উপজেলায় প্রস্তুতকৃত কিংবদন্তীর মিষ্টান্ন `মুক্তাগাছার মণ্ডা`র শুরুর ইতিহাসটা এমনই এক উপকথায় আশ্রিত।
ইতিহাস ও ঐহিত্যের অবিচ্ছেদ্য রেখায় প্রবাহিত হয়ে গোপাল পালের পরবর্তী চার পুরুষও নিজেদেরকে এই পেশা ও দায়িত্বের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন। এভাবেই পাঁচ পুরুষের হাত ধরে গড়ে ওঠে প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী মণ্ডা। যা জিভের স্বাদকে অতিক্রম করে একটি দেশ ও জনপদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের জায়গায় নিশ্চিত করেছে তার অবস্থান।
গোপাল পালের স্বর্গলাভের পর দ্বিতীয় বংশধর পুত্র রাধানাথ পাল, তৃতীয় বংশধর কেদারনাথ পাল, চতুর্থ বংশধর দ্বারিনাথ পাল, পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্রনাথ পাল ও তার মৃত্যুর পর ভাই রবীন্দ্রনাথ পাল বর্তমানে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যমণ্ডিত এই মণ্ডা তৈরির কাজে নিয়োজিত আছেন। জগৎবাসীর মুখ মিষ্টি করার এই বংশানুক্রমিক গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরে তিনি গর্বিত বলে জানালেন বাংলানিউজকে।
মুক্তাগাছার আদি ও অকৃত্রিম গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান স্থাপিত হয় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে। রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, তৎকালীন রাজা, মহারাজা ও জমিদার বাবুদের আর্থিক আনুকূল্য, আন্তরিক সহযোগিতা ও সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাড়ির পূর্ব দিকে নির্মিত হয় মণ্ডার দোকানের এই দালান ঘরটি, যা ক্রমাগত প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বে উপনীত হয়ে আজও ঠায় দাঁড়িয়ে।
দোকানে টাঙিয়ে রাখা ১৯৫৩ সালে মুক্তাগাছার শেষ জমিদার বাবু জীতেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরীর নিজস্ব প্যাডে তৃতীয় বংশধর কেদারনাথ পালকে লেখা প্রশংসাপত্রটি দেখিয়ে রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, রূপার প্লেটে খোদাই করা রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর দেয়া প্রশংসাপত্রসহ আরো অনেক প্রশংসাপত্র পাকিস্তান আমল পর্যন্ত দোকানের দেয়ালে টাঙানো ছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্য- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ ও লুটপাটে ওসব প্রশংসাপত্র চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়।
স্বপ্নপ্রাপ্ত এই মণ্ডা খেয়ে লিখিত, অলিখিত হাজারও প্রশংসায় ধন্য গোপাল পাল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক আলোচনা ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজে এ জমিদার বাড়িতে আগত ভারত উপমহাদেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গ গোপাল পালের এই মণ্ডা খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। এদের মধ্যে প্রখ্যাত সেতারবাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বিখ্যাত চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ও নেতাজী সুভাষ বসুর নাম উল্লেখ করা যায়।
এর মধ্যে রাজা শ্রীকান্ত আচার্য চৌধুরী একবার রাশিয়ার বিপ্লবী নেতা স্ট্যালিনের জন্য মণ্ডা পাঠালে মণ্ডা খেয়ে স্ট্যালিনও রাজা শশীকান্তের কাছে গোপাল পালের মণ্ডার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাপত্র পাঠান।
অপর দিকে পাকিস্তান আমলে মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চীন সফরকালে মুক্তাগাছার মণ্ডা নিয়ে গিয়েছিলেন আরেক বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের জন্য।
জানা যায়, মাও সেতুংও এই মণ্ডার বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। এভাবে জীবদ্দশাতেই বিরল এই মণ্ডার আবিষ্কারকের নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারত উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে। পরবর্তীকালে এ তালিকায় আরও যুক্ত হন ব্রিটেনের তৎকালীন রাণী এলিজাবেথ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরো অনেকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও গোপাল পালের মণ্ডার দোকানে এসেছিলেন। মণ্ডা খেয়ে তিনিও এর প্রশংসা করে গেছেন বলে জানান রবীন্দ্রনাথ পাল। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও জিয়াউর রহমানের কথাও যুক্ত করেন তিনি।
এছাড়াও চলচ্চিত্র জগতের নায়করাজ রাজ্জাক, কবরী, ববিতা, শাবানা, সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশীদ, আবুল খায়ের, আসাদুজ্জামান নূর, বুলবুল আহমেদ, অমল বোস, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন দূরদূরান্ত থেকে এসে গোপাল পালের মণ্ডা খেয়ে পরম তৃপ্তি লাভ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
দোকানে ঢুকতেই কাচের সুদৃশ্য শোকেসে সুরক্ষিত অবস্থায় গোপাল পালের একটি কাঠের প্রতিকৃতি দেখা যায়।
জানা যায় রাজবাড়ির সুদক্ষ কাঠমিস্ত্রি স্বরূপ সূত্রধর ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিকৃতিটি তৈরি করেন। যা শতাধিক বছর ধরে মণ্ডার এই দোকানটিতে একইরকমভাবে প্রতিস্থাপিত আছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একবার পাক বাহিনীর লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিকৃতিটি জঙ্গলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
জানা গেল প্রসিদ্ধ এই মণ্ডা আসলে এক প্রকার সন্দেশ। কেবল ছানা ও চিনি দ্বারা প্রস্তুত করা হয় এই মণ্ডা। কিন্তু এর প্রস্তুত প্রণালীতে এমনই এক `সিক্রেট` লুক্কায়িত যে মুক্তাগাছার মণ্ডার স্বাদ আজ অবধি কেউ `কপি` করতে পারেনি।
বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মণ্ডামিঠাই শিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ সারাদেশের আর কোথাও তাদের কোনো শাখা, এজেন্ট, শো-রুম, বিক্রয় কেন্দ্র বা বিক্রয় প্রতিনিধি নেই। ফলে প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী, মুক্তাগাছার আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডা খাওয়ার জন্য তিনি সকলকে সরাসরি মুক্তাগাছায় আসবার আমন্ত্রণ জানান।
ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডার বর্তমান অর্থমূল্য প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা। চাইলে খুচরো হিসেবেও কেনা সম্ভব, প্রতি একটি মণ্ডার দাম পড়বে সেক্ষেত্রে ২০ টাকা করে। আর দেরি কেন, আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডা খেতে আজই চলে আসুন মুক্তাগাছায়!
সেদিন রাতেই স্বপ্ন দেখেন আবার। সন্ন্যাসীর কাছে জানতে চাইলেন কিভাবে এ গুরুদায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন তিনি? ঈশ্বরপ্রেরিত স্বপ্নের সেই দূত তাকে মিষ্টান্ন তৈরির এক অভূতপূর্ব প্রণালী শিখিয়ে দেন। আর বলেন, " গোঁপাল, কাল থেকেই তুই মানবজাতির জন্য সুস্বাদু মণ্ডা তৈরির কাজ শুরু করে দে।"
ঈশ্বরের আদেশানুযায়ী পরদিন থেকেই গোপাল পাল জগৎ ও মানবজাতির কল্যাণে মণ্ডা তৈরির কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সেদিনই স্বপ্নাগত সেই সন্ন্যাসী রক্ত-মাংসের শরীর নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হন।
ভক্তি জানাতেই সন্ন্যাসী তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন আর বলেন, "তোর হাতের তৈরি এ মণ্ডা খেয়ে সবাই তোর মণ্ডার অশেষ সুখ্যাতি করবে। আস্তে আস্তে তোর মণ্ডা একদিন জগৎবিখ্যাত হবে এবং পুরুষানুক্রমে তুই মণ্ডামিঠাই শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করবি।"
ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগাছা উপজেলায় প্রস্তুতকৃত কিংবদন্তীর মিষ্টান্ন `মুক্তাগাছার মণ্ডা`র শুরুর ইতিহাসটা এমনই এক উপকথায় আশ্রিত।
ইতিহাস ও ঐহিত্যের অবিচ্ছেদ্য রেখায় প্রবাহিত হয়ে গোপাল পালের পরবর্তী চার পুরুষও নিজেদেরকে এই পেশা ও দায়িত্বের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন। এভাবেই পাঁচ পুরুষের হাত ধরে গড়ে ওঠে প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী মণ্ডা। যা জিভের স্বাদকে অতিক্রম করে একটি দেশ ও জনপদের ঐতিহাসিক গুরুত্বের জায়গায় নিশ্চিত করেছে তার অবস্থান।
গোপাল পালের স্বর্গলাভের পর দ্বিতীয় বংশধর পুত্র রাধানাথ পাল, তৃতীয় বংশধর কেদারনাথ পাল, চতুর্থ বংশধর দ্বারিনাথ পাল, পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্রনাথ পাল ও তার মৃত্যুর পর ভাই রবীন্দ্রনাথ পাল বর্তমানে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যমণ্ডিত এই মণ্ডা তৈরির কাজে নিয়োজিত আছেন। জগৎবাসীর মুখ মিষ্টি করার এই বংশানুক্রমিক গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরে তিনি গর্বিত বলে জানালেন বাংলানিউজকে।
মুক্তাগাছার আদি ও অকৃত্রিম গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান স্থাপিত হয় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে। রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, তৎকালীন রাজা, মহারাজা ও জমিদার বাবুদের আর্থিক আনুকূল্য, আন্তরিক সহযোগিতা ও সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাড়ির পূর্ব দিকে নির্মিত হয় মণ্ডার দোকানের এই দালান ঘরটি, যা ক্রমাগত প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বে উপনীত হয়ে আজও ঠায় দাঁড়িয়ে।
দোকানে টাঙিয়ে রাখা ১৯৫৩ সালে মুক্তাগাছার শেষ জমিদার বাবু জীতেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরীর নিজস্ব প্যাডে তৃতীয় বংশধর কেদারনাথ পালকে লেখা প্রশংসাপত্রটি দেখিয়ে রবীন্দ্রনাথ পাল বলেন, রূপার প্লেটে খোদাই করা রাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর দেয়া প্রশংসাপত্রসহ আরো অনেক প্রশংসাপত্র পাকিস্তান আমল পর্যন্ত দোকানের দেয়ালে টাঙানো ছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্য- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ ও লুটপাটে ওসব প্রশংসাপত্র চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়।
স্বপ্নপ্রাপ্ত এই মণ্ডা খেয়ে লিখিত, অলিখিত হাজারও প্রশংসায় ধন্য গোপাল পাল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক আলোচনা ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজে এ জমিদার বাড়িতে আগত ভারত উপমহাদেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গ গোপাল পালের এই মণ্ডা খাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। এদের মধ্যে প্রখ্যাত সেতারবাদক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বিখ্যাত চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ও নেতাজী সুভাষ বসুর নাম উল্লেখ করা যায়।
এর মধ্যে রাজা শ্রীকান্ত আচার্য চৌধুরী একবার রাশিয়ার বিপ্লবী নেতা স্ট্যালিনের জন্য মণ্ডা পাঠালে মণ্ডা খেয়ে স্ট্যালিনও রাজা শশীকান্তের কাছে গোপাল পালের মণ্ডার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাপত্র পাঠান।
অপর দিকে পাকিস্তান আমলে মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চীন সফরকালে মুক্তাগাছার মণ্ডা নিয়ে গিয়েছিলেন আরেক বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের জন্য।
জানা যায়, মাও সেতুংও এই মণ্ডার বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন। এভাবে জীবদ্দশাতেই বিরল এই মণ্ডার আবিষ্কারকের নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারত উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে। পরবর্তীকালে এ তালিকায় আরও যুক্ত হন ব্রিটেনের তৎকালীন রাণী এলিজাবেথ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরো অনেকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও গোপাল পালের মণ্ডার দোকানে এসেছিলেন। মণ্ডা খেয়ে তিনিও এর প্রশংসা করে গেছেন বলে জানান রবীন্দ্রনাথ পাল। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও জিয়াউর রহমানের কথাও যুক্ত করেন তিনি।
এছাড়াও চলচ্চিত্র জগতের নায়করাজ রাজ্জাক, কবরী, ববিতা, শাবানা, সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশীদ, আবুল খায়ের, আসাদুজ্জামান নূর, বুলবুল আহমেদ, অমল বোস, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন দূরদূরান্ত থেকে এসে গোপাল পালের মণ্ডা খেয়ে পরম তৃপ্তি লাভ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
দোকানে ঢুকতেই কাচের সুদৃশ্য শোকেসে সুরক্ষিত অবস্থায় গোপাল পালের একটি কাঠের প্রতিকৃতি দেখা যায়।
জানা যায় রাজবাড়ির সুদক্ষ কাঠমিস্ত্রি স্বরূপ সূত্রধর ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিকৃতিটি তৈরি করেন। যা শতাধিক বছর ধরে মণ্ডার এই দোকানটিতে একইরকমভাবে প্রতিস্থাপিত আছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একবার পাক বাহিনীর লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিকৃতিটি জঙ্গলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
জানা গেল প্রসিদ্ধ এই মণ্ডা আসলে এক প্রকার সন্দেশ। কেবল ছানা ও চিনি দ্বারা প্রস্তুত করা হয় এই মণ্ডা। কিন্তু এর প্রস্তুত প্রণালীতে এমনই এক `সিক্রেট` লুক্কায়িত যে মুক্তাগাছার মণ্ডার স্বাদ আজ অবধি কেউ `কপি` করতে পারেনি।
বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মণ্ডামিঠাই শিল্পী রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ সারাদেশের আর কোথাও তাদের কোনো শাখা, এজেন্ট, শো-রুম, বিক্রয় কেন্দ্র বা বিক্রয় প্রতিনিধি নেই। ফলে প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী, মুক্তাগাছার আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডা খাওয়ার জন্য তিনি সকলকে সরাসরি মুক্তাগাছায় আসবার আমন্ত্রণ জানান।
ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডার বর্তমান অর্থমূল্য প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা। চাইলে খুচরো হিসেবেও কেনা সম্ভব, প্রতি একটি মণ্ডার দাম পড়বে সেক্ষেত্রে ২০ টাকা করে। আর দেরি কেন, আদি ও অকৃত্রিম মণ্ডা খেতে আজই চলে আসুন মুক্তাগাছায়!
No comments