সত্যিকারের নায়ক by শাহনেওয়াজ বিপ্লব
জনসংখ্যার
দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ। ভাষার দিক থেকে বাংলাদেশ
পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানের অধিকারী। কিন্তু আধুনিক অগ্রযাত্রায় শিক্ষা,
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি অথবা মৌলিক গবেষণায় বাংলাদেশীদের অবদান বিবেচনা করলে
পৃথিবীর ক্রম-আধুনিকতার পথে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই বললেই চলে।
একমাত্র যে নোবেল পুরস্কারটি বাংলাদেশ অর্জন করেছে তা-ও মৌলিক কোনো গবেষণায়
নয়, বরং শান্তিতে। পৃথিবীর অগ্রযাত্রায় আমাদের অবদান শেষ পর্যন্ত তাই কেবল
শ্রমিকের ওপরই বর্তায়। ১৬ কোটি মানুষের দেশ হয়েও, সব সম্ভাবনা থাকা
সত্ত্বেও বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা কেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি অথবা গবেষণায় নায়ক
হয়ে উঠতে পারে না, সেটি এক প্রশ্ন বটে। আর এ প্রশ্নের উত্তরও নিহিত আছে
আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা ও সংস্কৃতির মধ্যে। বিএনপির আমলে যে ছেলে
উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ গিয়েছে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে; উচ্চশিক্ষা
অর্জন শেষে দেশে ফিরে এসে দেখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সে
বিমানবন্দরের নাম পাল্টে রেখেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আওয়ামী লীগ পাঠ্যপুস্তকে এমএ হান্নানকে স্বাধীনতার ঘোষক লিখেছে, আর বিএনপি
ক্ষমতায় এসে সে পাঠ্যপুস্তক রদবদল করে দিয়ে লিখেছে মেজর জিয়াই স্বাধীনতার
ঘোষক। এরকম পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বিদ্বেষ আর ঘৃণার ভেতর বড় হয়ে ওঠে আমাদের
শিশু-কিশোররা। রাজনীতির স্বার্থে পাঠ্যপুস্তক আর ইতিহাস পাল্টে দেয়ার ফলে
আমাদের ইতিহাসের প্রকৃত নায়কদের খুঁজে পাওয়া হয়ে ওঠে না ছাত্রছাত্রীদের।
তারা পাঠ্যপুস্তকে যা পড়ে, সেসব আর বিশ্বাসও করে উঠতে পারে না। সেজন্য দেখা
যায়, সদা সত্য কথা বলবে, মিথ্যা বলা মহাপাপ- এসব সদুপদেশ কোনো আলোড়ন জাগায়
না আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মনে, কেননা তারা দেখে দেশের অনেক মন্ত্রী থেকে
শুরু করে উপদেষ্টা, ব্যবসায়ী, পুলিশ- এরা নিজেরাও সেসব আপ্তবাক্য মানেন না।
অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা অর্জন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হওয়ার জন্য চাকরিপ্রার্থীর উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার চেয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে সে আওয়ামী লীগ না বিএনপির সমর্থক সেই পরিচয়। আর এর ফলে হতোদ্যম হয়ে পড়ে আমাদের গবেষক, আমাদের বিজ্ঞানীরা। তারপর কেউ আবার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও সাদা দল, নীল দল, গোলাপি দল অথবা ডাক্তার হলে ড্যাব অথবা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। রাজনীতির এসব টালবাহানা সামলাতে সামলাতে নতুন চিন্তা অথবা গবেষণার কাজে আর মনোযোগ দেয়া হয়ে ওঠে না অনেকের পক্ষেই। এ সংস্কৃতির পৃথিবীর অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার জন্য কারণেই আমাদের দেশে কোনো নায়কের প্জন্ম হয় না, বরং খলনায়কেরাই আমাদের দিনযাপনের অংশ হয়ে থাকে। দেশের প্রধান দৈনিকগুলো খুললে তাই দেখা যায় প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো খলনায়কের ছবি। মন্ত্রীর বাসায় ৭০ লাখ টাকা পৌঁছে দিতে গিয়ে কেউ ধরা পড়ছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই হলমার্ক কেলেংকারি, ডেসটিনি কেলেংকারি। এসব চলতে চলতে মন্ত্রী হয়তো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে টেলিভিশনের টকশোতে ডাকছেন ‘বেয়াদবের হাড্ডি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশে যে যত ইতর সে তত বড় নায়ক! আর এসব নায়কের ইন্টারভিউ ও ছবি নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের ক্যামেরা আর কলম নিয়ে নিত্য চলছে দৌড়ঝাঁপ। আমার আপত্তিটা এখানেই। পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দিতে হবে এসব খলনায়কের চেহারা ও খবর। আর এসব জায়গায় নিয়ে আসতে হবে মাকসুদুল আলমের মতো আমাদের সত্যিকারের নায়কদের ছবি। আমাদের জাতির সত্যিকারের নায়ক মাকসুদুল আলম পাট গাছের ক্ষতিকর ছত্রাকের প্রাণভোমরা চিহ্নিত করেছেন। তার এ গবেষণা, আমাদের কৃষকদের জন্য এক নতুন শুভবার্তা। তার গবেষণা ও যুগান্তকারী এ আবিষ্কার বদলে দেবে আমাদের ফসল উৎপাদনের আগামী ইতিহাসও।
তাই মাকসুদুল আলমের মতো বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ আর গবেষকদের আমাদের পাঠ্যপুস্তকে আরও বেশি করে নিয়ে আসতে হবে। পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ও পাঠ্যপুস্তকে শিশুদের আগ্রহের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে বিজ্ঞানী, গবেষক আর সৎ মানুষদের ছবি। উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, আমলা- যারা দুর্নীতি অথবা অসভ্য আচরণের সঙ্গে জড়িত, তাদের ছবি আর খবরগুলো স্থানান্তরিত করে দিতে হবে তৃতীয়, চতুর্থ অথবা পত্রিকার ভেতরের পৃষ্ঠাগুলোয়, যাতে করে প্রতিদিন সকালে আমাদের শিশুরা নাস্তার টেবিলে বসে এসব কুৎসিত মুখ দেখতে না পায়। যদি এটা করা হয়, গত ৪০ বছরে আমাদের বাংলাদেশ তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন করতে পারেনি তো কী হয়েছে- আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকই একদিন বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে তুলে নিয়ে আসবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর তালিকায়। আর এ স্বপ্নের বীজ তাদের বুকে এখনই বুনে দিয়ে যেতে হবে আমাদের।
শাহনেওয়াজ বিপ্লব : গল্পকার, ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত
অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা অর্জন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হওয়ার জন্য চাকরিপ্রার্থীর উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার চেয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে সে আওয়ামী লীগ না বিএনপির সমর্থক সেই পরিচয়। আর এর ফলে হতোদ্যম হয়ে পড়ে আমাদের গবেষক, আমাদের বিজ্ঞানীরা। তারপর কেউ আবার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও সাদা দল, নীল দল, গোলাপি দল অথবা ডাক্তার হলে ড্যাব অথবা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। রাজনীতির এসব টালবাহানা সামলাতে সামলাতে নতুন চিন্তা অথবা গবেষণার কাজে আর মনোযোগ দেয়া হয়ে ওঠে না অনেকের পক্ষেই। এ সংস্কৃতির পৃথিবীর অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার জন্য কারণেই আমাদের দেশে কোনো নায়কের প্জন্ম হয় না, বরং খলনায়কেরাই আমাদের দিনযাপনের অংশ হয়ে থাকে। দেশের প্রধান দৈনিকগুলো খুললে তাই দেখা যায় প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো খলনায়কের ছবি। মন্ত্রীর বাসায় ৭০ লাখ টাকা পৌঁছে দিতে গিয়ে কেউ ধরা পড়ছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই হলমার্ক কেলেংকারি, ডেসটিনি কেলেংকারি। এসব চলতে চলতে মন্ত্রী হয়তো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে টেলিভিশনের টকশোতে ডাকছেন ‘বেয়াদবের হাড্ডি’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশে যে যত ইতর সে তত বড় নায়ক! আর এসব নায়কের ইন্টারভিউ ও ছবি নেয়ার জন্য সাংবাদিকদের ক্যামেরা আর কলম নিয়ে নিত্য চলছে দৌড়ঝাঁপ। আমার আপত্তিটা এখানেই। পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দিতে হবে এসব খলনায়কের চেহারা ও খবর। আর এসব জায়গায় নিয়ে আসতে হবে মাকসুদুল আলমের মতো আমাদের সত্যিকারের নায়কদের ছবি। আমাদের জাতির সত্যিকারের নায়ক মাকসুদুল আলম পাট গাছের ক্ষতিকর ছত্রাকের প্রাণভোমরা চিহ্নিত করেছেন। তার এ গবেষণা, আমাদের কৃষকদের জন্য এক নতুন শুভবার্তা। তার গবেষণা ও যুগান্তকারী এ আবিষ্কার বদলে দেবে আমাদের ফসল উৎপাদনের আগামী ইতিহাসও।
তাই মাকসুদুল আলমের মতো বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ আর গবেষকদের আমাদের পাঠ্যপুস্তকে আরও বেশি করে নিয়ে আসতে হবে। পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ও পাঠ্যপুস্তকে শিশুদের আগ্রহের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে বিজ্ঞানী, গবেষক আর সৎ মানুষদের ছবি। উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, আমলা- যারা দুর্নীতি অথবা অসভ্য আচরণের সঙ্গে জড়িত, তাদের ছবি আর খবরগুলো স্থানান্তরিত করে দিতে হবে তৃতীয়, চতুর্থ অথবা পত্রিকার ভেতরের পৃষ্ঠাগুলোয়, যাতে করে প্রতিদিন সকালে আমাদের শিশুরা নাস্তার টেবিলে বসে এসব কুৎসিত মুখ দেখতে না পায়। যদি এটা করা হয়, গত ৪০ বছরে আমাদের বাংলাদেশ তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন করতে পারেনি তো কী হয়েছে- আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকই একদিন বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে তুলে নিয়ে আসবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর তালিকায়। আর এ স্বপ্নের বীজ তাদের বুকে এখনই বুনে দিয়ে যেতে হবে আমাদের।
শাহনেওয়াজ বিপ্লব : গল্পকার, ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত
No comments