আন্তর্জাতিক- জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র by অনিন্দ্য আরিফ

খন কোনো অন্যায় যুদ্ধ বা আগ্রাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তার অনেক আগে থেকেই সত্যের বিরুদ্ধে আগ্রাসকদের যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ শেষ হলেও সত্যের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ থামে না। গত অক্টোবর মাসে লন্ডনে সাংবাদিকদের ডেকে এ কথা বলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। রাতারাতি তিনি পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেন, এই বক্তব্যের সমর্থনে যুদ্ধবাজদের মধ্যকার প্রেরিত গোপন সরকারি বার্তা ফাঁস করে দেয়, যার নাম উইকিলিকস। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে তিন লাখ ৯১ হাজার ৮৩২টি গোপন বার্তা ও দলিল তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন।
এই সরকারি দলিল ও বার্তা মার্কিন প্রশাসন এবং তার সহযোগী অন্য দেশের সরকারি কর্তারা অস্বীকার করেননি। গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর গোটা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করা শুরু করল এক নতুন লড়াইয়ের। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বনাম মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার সহচররা। এখন এই লড়াই জমে উঠেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তারের পর। ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেপ্তার করে নিজেদের চরিত্রের সম্পূর্ণ বহির্প্রকাশ ঘটাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুসারীরা।
কী করেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ? শেরউড রসের ভাষায়, "অ্যাসাঞ্জ হয়তো এক-দুজন সুইডিশ নারীকে ধর্ষণ করেছেন কিংবা করেননি (যেটা জানার জন্য হঠাৎ করে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেরুদণ্ডহীন সরকার), কিন্তু এ নিয়ে কোনো প্রশ্নই নেই যে তিনি 'স্ট্যাচু অফ লিবার্টি'কে বিবস্ত্র করে ফেলেছেন এবং সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন কেমন বেশ্যা (দেউলিয়া) সে হয়েছে ইদানীং।" সত্যিই দেউলিয়া হয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাইতো সে মহাখেপা!
কেমন খেপা, তা সেখানকার সরকার, রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ আর কট্টরপন্থী সাংবাদিকদের কথায় ফুটে উঠেছে। অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তারের ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট গেটস একে ভালো সংবাদ হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, তাঁকে মার্কিন আইনে বিচার ও দীর্ঘমেয়াদি কারাভোগের পথ সুগম করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নেত্রী সারাহ পলিন বলেছেন, আল কায়েদা আর তালেবান সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য আমেরিকা যেভাবে অভিযান চালায় অ্যাসাঞ্জকে পাকড়াও করতে তেমন অভিযান শুরু করা উচিত। মার্কিন রক্ষণশীল রাজনীতি বিশ্লেষকও দ্য উইকলি স্ট্যান্ডার্ড সাপ্তাহিকের সম্পাদক বিল ডিস্টল লিখেছেন, ওবামা প্রশাসন যেন অ্যাসাঞ্জকে অপহরণ বা হত্যা করার কথা ভেবে দেখে। মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক স্পিকার নিউইট গ্রিনগ্রিচ বলেছেন, অ্যাসাঞ্জ আমেরিকার শত্রুসেনা। শত্রুসেনাদের সঙ্গে যে রকম ব্যবহার করতে হবে, অ্যাসাঞ্জের সঙ্গেও তাই করা দরকার। বর্ষীয়ান রিপাবলিকান সিনেটর মাইক হিউক্যাবি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য যেকোনো শাস্তি অ্যাসাঞ্জের জন্য লঘুদণ্ড। ওয়াশিংটন টাইমসের রক্ষণশীল কলামিস্ট জেফরি টি কুহেনার লিখেছেন, 'অন্য যেসব শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করা হয়, তার ক্ষেত্রেও তা করা উচিত, তাকে হত্যা করো।'
খ্যাতনামা মার্কিন পণ্ডিত জোরাহ গোলবার্গ লিখেছেন, 'কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মৃত নয়।' জন হকিন্স ডানপন্থী সংবাদ মাধ্যমে লিখেছেন, 'সিআইএ-র অবিলম্বে অ্যাসাঞ্জকে হত্যা করা উচিত।' আঁতে ঘা লেগেছে যে মার্কিনি যুদ্ধবাজদের।
অথচ মার্কিন প্রশাসনের নিটোল জাল থেকেই সংগৃহীত উইকিলিকসের এসব গোপন তথ্য। ইরাকে আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্য এই আগ্রাসকদের বর্বরতা এই দলিল থেকে, খানিকটা নিজেদের স্বীকারোক্তি থেকেও প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় প্রকাশিত তিন লাখ ৯১ হাজার ৮৩২টি মার্কিন সামরিক দলিলে দেখা যায়, নৃশংস অত্যাচার, ধর্ষণ ও নিরীহ মানুষের খুনের শত শত ঘটনা ঘটিয়ে এবং দেখেও মার্কিন দখলদার বাহিনী না দেখার, না জানার ভান করেছিল। উইকিলিকস আমেরিকার আসল কার্যকলাপের অনেক তথ্যপ্রমাণ ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্সের প্রধান কয়েকটি সংবাদপত্রের হাতে তুলে দিয়েছে। মার্কিন সৈন্যদের অনেকেই তথ্য দিয়েছেন, তাঁরা এই নৃশংসতা সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন এমনকি সর্বোচ্চ সামরিক অফিসারদের কাছে রিপোর্ট করেছিলেন। কিন্তু এই অফিসাররা নৃশংস কাজে মাথা ঘামাতে বাধা না দিতে সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ রকম ১০০টিরও বেশি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য রয়েছে। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর থেকে একটানা সাত বছর ধরে চলছে এই বর্বরতা। এর আগে গত জুলাই মাসে প্রথম দফায় ৯১ হাজার আফগান যুদ্ধ দলিল ফাঁস করেছিল উইকিলিকস। ১৪৪টি ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ন্যাটো বাহিনী সাধারণ আফগানদের ওপর বোমা, গুলি নিক্ষেপ করেছে। নিহত ও আহতদের সংখ্যা জানা যায়নি। এসব তথ্য পৃথিবীর কাছে আগে জানা ছিল না।
আমেরিকান প্রশাসন যে বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারদের ভাড়া করে নিয়োগ করেছে, যার মধ্যে কুখ্যাত ব্ল্যাকওয়াটার গ্রুপ রয়েছে। এগুলো উইকিলিকসের তথ্যে পাওয়া গেছে। এসব ঠিকাদারের নিয়োজিত সৈন্যরা মশা-মাছির মতো পাইকারি হারে মানুষ হত্যা করতে পারে, করেছেও। ইরাকের পুতুল সরকার এবং মার্কিন সামরিক প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তথ্য আড়াল করে আসছে। মার্কিন সামরিক দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে ৬৫ হাজার ১৮৫ জন এবং ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩ হাজার ৭৫৪ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মার্কিন দখলদারদের নৃশংসতায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিহত হয়েছে মোট এক লাখ ৫১ হাজার ইরাকি।
ব্রিটেনের বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা 'ল্যাসেন্ট'-এর হিসাবে মোট ৬ দশমিক ৫০ লাখ মানুষ খুন হয়েছে। এসব লাখ লাখ নথিতে অত্যাচারের অনেক ছবিও রয়েছে। যেগুলো ইরাকে মার্কিন অফিসারদের নজরেই ঘটেছে। উইকিলিকস তথ্যপ্রমাণসহ দেখিয়েছে। ২০০৪-২০০৮ সালের মধ্যে নিহতের যে সংখ্যা প্রচার হচ্ছে আসল মৃত্যু এর চেয়ে ১৫ হাজার বেশি।
এ ছাড়া উইকিলিকসের নথিপত্রে প্রকাশিত হয় বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা সেসব দেশের নেতাদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে নানা বিশেষণ ব্যবহার করে থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তারবার্তা অনুযায়ী, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বার্লুসকোনিকে 'অক্ষম, ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয়', রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনকে 'নেকড়ে দলের প্রধান', মেদভেদকে 'পুতিনের পুতুল', উত্তর কোরিয়ার কিম জং ইলকে 'নিস্তেজ বুড়ো', ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজিকে 'এক বস্ত্রহীন সম্রাট', ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদকে 'হিটলার', লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফিকে 'অদ্ভুত মানুষ', জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেলকে 'ঝুঁকি বিমুখ' ইত্যাদি সব বিশেষণে ভূষিত করা হয়। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কী অদ্ভুত নমুনা! দলিলে এ ছাড়া রয়েছে আরব রাষ্ট্র যেন আমেরিকা, ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর হামলা চালায়।
জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি ও তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের ভাইয়ের সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। রাশিয়ার সঙ্গে মাফিয়াদের রয়েছে যোগাযোগ, ব্রিটেনের দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে আমেরিকা গুচ্ছবোমা রাখে এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নয়-এগারোর পর থেকেই বুশ আর ওবামা ক্রমবর্ধমান হারে বলে আসছেন, সাধারণ নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা জানার প্রয়োজন নেই। অথচ উইকিলিকস কি না ওটাই ফাঁস করে দিয়েছে। একদম ঠিক জায়গায় আঘাত করেছে। গ্রেপ্তারের আগেই উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ানের একটা এঙ্ক্লুসিভ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাংবাদিক নাতালিয়া ডিয়ানা। আলাপচারিতায় সুইস ব্যাংক অ্যাকউন্ট জব্দ করার ঘটনায় জুলিয়ান তাঁর বিরক্তি ঢেকে রাখেননি।
জুলিয়ান লন্ডনের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন গত ৭ ডিসেম্বর। সুইডেনে তাঁর বিরুদ্ধে দুই নারীর ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ ফের তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পরিষ্কার নয়, কারণ তিনি ঘটনার সময় স্টকহোমে একটি বক্তৃতায় ছিলেন। গত ১৮ নভেম্বর সুইডিশ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
জুলিয়ান বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, আমি ও আমার সহকর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গৃপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছি। এটা মিথ্যা, সুইডেনে তথাকথিত ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে আমার বিরুদ্ধে। এটাও মিথ্যা। সত্য বেরিয়ে এলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। সুনাম নষ্ট করার লক্ষ্যে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে।' অবশ্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এফবিআই, সিআইএ ও মার্কিন অ্যার্টনি জেনারেলরা আনুষ্ঠানিক তদন্ত করছেন। অস্ট্রেলিয়াও সরকারি তদন্ত করতে যাচ্ছে এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে।
আসলে উইকিলিকস আর গুপ্তচরবৃত্তির মধ্যে পার্থক্য কী? এ প্রশ্নের জবাবে জুলিয়ান বলেন, 'উইকিলিকস বিভিন্ন ব্যক্তি (যারা নিজেদের সংগঠনের বেআইনি কাজের বিরোধিতা করে), সাংবাদিকদের কাছে খবরাখবর পায় এবং সেটা প্রকাশ করে দেয়। গুপ্তচরবৃত্তি বলতে বোঝায় সক্রিয়ভাবে খবরাখবর বা তথ্য সংগ্রহ করে বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়া। উইকিলিকসের খরচ চলে ভক্ত-অনুরাগীদের টাকায়। উইকিলিকস কোনো বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট নয়, এতে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় না। 'পেপল' নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার কম্পানির মাধ্যমে ভক্তরা উইকিলিকসে চাঁদার অর্থ পাঠায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপে পেপল উইকিলিকসের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরও ঠেকানো যাবে না উইকিলিকসকে, কেননা উইকিলিকসের ভক্ত-অনুরাগীরা নিজেদের সার্ভারে উইকিলিকসের অজস্র 'মিরর' তৈরি করেছে, ফলে উইকিলিকস যদি নিজের মূল সাইটটি কখনো হারায় এবং পৃথিবীর সব দেশের সরকার মিলেও যদি ইন্টারনেট থেকে উইকিলিকসের নথিগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে, পারবে না, সবখানে উইকিলিকসের অজস্র কপি আছে। এ ছাড়া গোপন নথি অ্যাসাঞ্জ গ্রেপ্তার হওয়ার পরও প্রকাশ বন্ধ হবে না। ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রে সম্প্রতি অ্যাসাঞ্জ জানিয়েছেন, 'দুই লাখ ৫১ হাজার ২৮৭টা কেবল বার্তা সাংকেতিক ভাষায় এক লাখেরও বেশি লোককে দেওয়া আছে। আমাদের কিছু করলে কিন্তু তার আসল জায়গাগুলো আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে যাবে।
এদিকে অ্যাসাঞ্জের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যুবসমাজে তার অনুরাগী বেশি। ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা অনলাইন সংস্করণে একটা জনমত জরিপ করেছে। তারা পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখেছে, সম্ভব হলে আপনি কি উইকিলিকসকে চাঁদা দেবেন? দেখা গেছে ব্যাপক সাড়া, প্রথমজন হ্যাঁ ভোট দিয়ে লিখেছেন, 'চাঁদা দেবেন জিজ্ঞেস করছেন কেন? বলুন চাঁদা দিন! আমি দিয়েছি। উইকিলিকসকে চাঁদার টাকা পাঠানোর হাজারো পথ খোলা আছে।'
এদিকে উইকিলিকসের প্রধান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে তার নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক সমাজ। সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে গত শুক্রবার শত শত লোক বিক্ষোভ, শোভাযাত্রা করে সরকারকে অ্যাসাঞ্জের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা 'গেট আপ' নামের একটি প্রচারণা দল গঠন করে গত শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ শোভাযাত্রা করেছে। তারা ৫০ হাজারেরও বেশি লোকের স্বাক্ষর নিয়ে দাবিপত্র তৈরি করেছে। মার্কিন পত্রিকায় ওই দাবিপত্র প্রকাশের লক্ষ্যে তারা আড়াই লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড উইকিলিকসের মার্কিন তথ্য ফাঁসের বিষয়কে অবৈধ বলে যে মন্তব্য করেছেন, বিক্ষোভকারীরা তার তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ভৃত্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে উইকিলিকসের সমর্থকরা 'সাইবার যুদ্ধ' চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিন এবং লুলা ডি সিলভা অ্যাসাঞ্জের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুতিন বলেছেন, 'মিস্টার অ্যাসাঞ্জকে কেন জেলে পুরে রাখা হয়েছে? এটাই কি গণতন্ত্র?' পুতিন বলেন, 'আমি আমার আমেরিকান সতীর্থদের ছুড়ে দেওয়া বল আবার তাদের দিকে পাঠাতে চাই।'
লুলা ডি সিলভা অন্যান্য দেশের সরকার প্রধানরা অ্যাসাঞ্জকে এখনো সমর্থন না করায় বিশ্বনেতাদের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, 'অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হলো, অথচ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তিনি কোথাও উল্লেখ করার মতো একটি বিক্ষোভও দেখলেন না।'
এদিকে অ্যাসাঞ্জের জামিনের বেলের জন্য ইমরান খানের সাবেক পত্নী জেমিমা খান, চলচ্চিত্র পরিচালক কেনলক এবং সাংবাদিক জন পিলজার প্রায় ১,৮০,০০০ পাউন্ড অর্থ প্রদানের প্রস্তাব আদালতকে দিয়েছিলেন। যদিও আদালত জামিন নামঞ্জুর করে অ্যাসাঞ্জকে হাজতে পাঠায়। আবার অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় আইনজীবী, সিনেটর, মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবীরা অ্যাসাঞ্জের সমর্থনে খোলা চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী গিলার্ডের উদ্দেশ্যে। সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি। জাতিসংঘের স্বাধীনতা প্রকাশবিষয়ক প্রতিনিধি ফ্রাঙ্ক লা রুই বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে সক্ষম হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে যদি ব্যতিক্রম হয় তবে তা স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাজে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে অ্যাসাঞ্জের বিচার করাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুষ্কর হবে। ১৯১৭ সালের পুরনো গোয়েন্দাগিরি আইন প্রয়োগ করা অ্যাসাঞ্জের ক্ষেত্রে অসাংবিধানিক হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীও এ ক্ষেত্রে বড় বাধা।
এক অর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিলে চমকানো জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার অনুসারীদের লড়াই জমে উঠেছে। তবে এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের স্বরূপও উন্মোচিত হচ্ছে। আর জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ পরিগণিত হচ্ছেন বীর হিসেবে।
===========================
ভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয়  প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক  ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ অনিন্দ্য আরিফ


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.