খবর- হরতালের বিরুদ্ধে একজোট, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

হরতালের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। এক মাসে দুটি হরতাল কর্মসূচিতে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা গতকাল বুধবার বৈঠক করে এ থেকে বাঁচার পথ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, হরতাল ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ জন্য তাঁরা সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে হরতাল না দেওয়ার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, দেশের অর্থনীতির জন্য হরতাল একটি ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এবং এর ফলে দেশের জনগণের পরিবর্তে উপকৃত হয় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো। এ অবস্থায় কোনো কোনো ব্যবসায়ী নেতা আইন করে হলেও হরতাল নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত এই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাঁদের দাবি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক দলগুলো ঘন ঘন হরতালের কর্মসূচি দিলে প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবেন। এমনকি হরতাল কর্মসূচি প্রতিহত করতে ব্যবসায়ীরা দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন করার কথাও বলেছেন তাঁরা। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেন, হরতাল গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক অধিকার হলেও অর্থনীতির স্বার্থে এ ধরনের কর্মসূচি কারও কাম্য নয়।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সার্ক চেম্বারের সভাপতি আনিসুল হক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এম এ কাশেম, মো. আকরাম হোসেন ও ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ও আবুল কাশেম আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এ কে এম নূরুল ফজল বুলবুল, বিসিআইয়ের সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহ, বিকেএমইএর সহসভাপতি হাবিবুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহমেদ আল কবীর বক্তব্য দেন।
স্বাগত বক্তব্যে এ কে আজাদ বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। তুরস্ক ও জাপানের মতো দেশগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমনকি জাপান চীনের পরিবর্তে বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য কেনার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। এ অবস্থায় এক মাসে দুইবার হরতাল দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
এ কে আজাদ আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হরতাল বন্ধ করা না হলে কোটি ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে রাস্তায় নেমে কর্মসূচি দেওয়া হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের নিয়ে হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি প্রতিহত করা হবে। তবে যেকোনো কর্মসূচি নেওয়ার আগে এফবিসিসিআই বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে আলোচনা করবে। সাধারণ পরিষদের সভা ডেকেও সবার মতামত নেওয়া হবে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কখনোই হরতালের পক্ষে ছিল না। সব সময়ই হরতালের বিপক্ষে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, সব সময়ই সরকারি দল হরতালের বিপক্ষে থাকে, আর বিরোধী দল পক্ষে থাকে। তবে যারা হরতাল ডাকে তারাও জানে হরতাল দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
আনিসুল হক বলেন, হরতাল কারও উপকার করে না, বরং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতি করে। ব্যবসায়ীরা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, তাঁদের দল একটাই ‘ব্যবসা’। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য হরতাল এখন ভোঁতা হাতিয়ার। জনগণ ভোট দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। ভালো কাজ না করলে জনগণই ভোট দেবেন না।
ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর রাজনীতিবিদদের ওপর এত কিছু হয়ে গেল, তার পরও রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসেনি। জাতীয় সংসদকে বাদ দিয়ে বিরোধী দল কেন হরতাল দিচ্ছে তা বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, সরকারের কাজ নীতিমালা তৈরি করা। আর ওই নীতিমালা বাস্তবায়ন করে দেশ গড়বেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসায়ীদের হাত বেঁধে দিলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, আইন করে হরতাল বন্ধ করা ঠিক হবে না, তবে হরতালকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাও যেন না হয়। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে হরতাল বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।
আবুল কাশেম খান বলেন, হরতালে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের লোকসান হয়, কিন্তু লাভবান হয় থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাউস, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো। কারণ হরতালের কারণে এ দেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতারা চলে যান ওই সব দেশে।
নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, হরতাল কেবল দেশের উন্নয়ন নয়, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির জন্যও ক্ষতিকর। দীর্ঘদিনের অপসংস্কৃতি এই হরতাল বন্ধের জন্য এফবিসিসিআইকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। কমিটি হরতালের বিকল্প কর্মসূচি দেওয়ার জন্য সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করবে।
আহমেদ আল কবীর বলেন, দেশে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ঘন ঘন হরতাল হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি হরতাল বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, জনগণের কল্যাণ নয়, সরকার যাতে বড় ধরনের অর্জন করতে না পারে, এ জন্য হরতাল দেওয়া হয়। গণতান্ত্রিক দেশে হরতাল নিষিদ্ধ নয়, তবে কাম্যও নয়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমীর হোসেন খান বলেন, ঈদের তিন দিন আগে দেওয়া হরতালে ব্যবসায়ীদের এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল। হরতালের বিপক্ষে কর্মসূচি হিসেবে সব ব্যবসায়ীর এক হয়ে দোকান খুলে রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মনজুরুল হক বলেন, হরতাল করে এমন রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট না দেওয়ার জন্য দেশের তিন কোটি ব্যবসায়ী অঙ্গীকার করলেই রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল বন্ধ করতে বাধ্য হবে। সাইবার ক্যাফে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল করিম ভূঁইয়া হরতালের বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে এফবিসিসিআইকে একটি ওয়েবসাইট খোলার প্রস্তাব করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক ব্যবসায়ী নেতা প্রতিবাদ হিসেবে হরতালের দিন বেলা দুইটা পর্যন্ত দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার কর্মসূচি দেওয়ার সুপারিশ করেন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বায়রার সভাপতি আবুল বাশার, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি সানাউল্লাহ খান, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, কুরিয়ার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের, এসএমই সমিতির সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান, মানি চেঞ্জার সমিতির সভাপতি মোস্তফা খান, প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ।
হরতাল বন্ধে বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বান: ৩০ নভেম্বরের হরতাল কর্মসূচি বাতিল করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন দাবি জানিয়েছে। দল ও সংগঠনগুলো হলো বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হকার্স লীগ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি।
=========================
আলোচনা- 'হজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে কিছু কথা' by এয়ার কমোডর (অব.) মুহম্মদ জাকীউল ইসলাম  শিল্প-অর্থনীতি 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেতন-কাঠামো' by খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ  স্মরণ- 'মীর শওকত আলী বীর উত্তম : একজন বীরের প্রতিকৃতি' by ড. আশকার ইবনে শাইখ  আন্তর্জাতিক- 'মিয়ানমারে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ' by আহসান হাবীব  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিচিত্র সংকটের আবর্তে একটি বাড়ি' by এবিএম মূসা  ইতিহাস- 'হাজংমাতা শহীদ রাশিমনির স্মৃতিসৌধে' by দীপংকর চন্দ  গল্প- 'ঈর্ষার রং ও রূপ' by আতাউর রহমান  ডিজিটাল-প্রযুক্তি কি মানবতাবিরোধী প্রবণতা তৈরি করে? by মোহীত উল আলম  খবর- এক দশক পর ছেলের সঙ্গে দেখা হলো সু চির  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'ট্রানজিটঃ অর্থের বাইরে বাইরে প্রাপ্তিযোগও ভাবতে হবে' by কে এ এস মুরশিদ  খবর- আমনের বাম্পার ফলনেও বাড়ছে চালের দাম by ইফতেখার মাহমুদ  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি' by ফজলুল বারী  আলোচনা- 'খাদ্যনিরাপত্তা ও পশুসম্পদ' by ড. মো. সিদ আলোচনা- 'আমি বাস্তুহারা'_এ কথার মানে কী?' by এ এন রাশেদা  গল্পালোচনা- 'বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র' by মোস্তফা কামাল  রাজনৈতিক আলোচনা- 'যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধা সনদ' by হারুন হাবীব  খবর ও ফিচার- কয়েন-কাহিনী  প্রকৃতি- 'বৈরিতায় বিপন্ন বাঘ' by বিপ্লব রহমান  প্রকৃতি- 'সুন্দরবন ঘেঁষে রেললাইন!' by পার্থ সারথি দাস  খবর- কোরীয় সীমান্তে ব্যাপক গোলাবিনিময়ে নিহত ২


প্রথম আলো এর সৌজন্যে

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.