সেই সময়টা ছিল রূপকথার গল্পের মতো by ইব্রাহীম ইশান

বরেণ্য প্রযোজক, চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং রাজনীতিবিদ চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল। জানা-অজানা অনেক বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন মানবজমিনের সঙ্গে। আপনি এক সময়ে অভিনয় নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করতেন? এখন ব্যস্ততাটা কী নিয়ে? বরেণ্য এ নায়ক বলেন, এখন আমাদের ব্যবহারের মতো সেই ধরনের পরিচালক নেই, কাহিনী নেই। সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধাও নেই। এ ছাড়া চলচ্চিত্র শিল্প এখন অস্তিত্বহীন অবস্থায় আছে। সুতরাং প্রথমে চলচ্চিত্র শিল্পটাকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে আনতে হবে। এরপর আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করবো। তাই এখন আমার চলচ্চিত্রে ব্যস্ততা নেই। আমার আরেকটি পরিচয় আছে। আমি একজন রাজনীতিবিদ। সেই পরিচয়েই এখন ব্যস্ত। এফডিসি’র বর্তমান এমডি মাসুমা রহমান তানিকে নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেছেন। তাকে অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই। উজ্জ্বল বলেন, তরুণ ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রক্ত ঝরিয়েছে, যারা আহত-নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার সন্তানদের বিপ্লবের মাসে বিলিয়ে দিয়েছেন। সেই তাদের সঙ্গে বেঈমানি করে এমন একজন অভিভাবককে এখানে আনা হয়েছে। যার সঙ্গে স্বৈরাচারের সকল ভূমিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার একটি ডকুমেন্টেশন আমাদের এবং জনগণের কাছে আছে। উনি ২০১৮ সালে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তার ফাইন্যান্সার যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িত। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে নানা রকমভাবে এই স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। সেই প্রতিষ্ঠা করার জন্য সহযোগী হিসেবে একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকাকে আমি তীব্র নিন্দা জানাই। সেই লক্ষ্যেই আমরা যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আমরা তার পরিবর্তন চাই। আমরা তাকে এখান থেকে বিদায় করে দিতে চাই। চলচ্চিত্রে এখন যারা কাজ করছে, তাদের কেমন মনে হচ্ছে? তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে? উত্তরে এ বরেণ্য নায়ক বলেন, এক সময় সংস্কৃতি তার আপন গতিতে আপন পরিবেশনায় চলতো। এর কোনো বাউন্ডারি ছিল না। এখন তো আরও নেই প্রযুক্তির কারণে। সেই লক্ষ্যে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে সাজিয়ে বর্তমান সময়ের উপযোগী করে নিতে হবে। সেজন্য প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে। এই চলচ্চিত্রকে তার নিজের পায়ে আবার দাঁড় করাতে হবে। চলচ্চিত্র শিল্পের শিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সেজন্য ফিল্ম একাডেমি করা যেতে পারে। দেশে যদি শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি থাকে তো চলচ্চিত্র একাডেমি থাকবে না কেন? আগামী ঈদে বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আপনার সময়ে ঈদের আমেজ কী রকম থাকতো? উজ্জ্বল হেসে বলেন, সেই সময়টা ছিল রূপকথার গল্পের মতো। যেটা আমরা কল্পনায় দেখি। আমাদের চলচ্চিত্রে প্রতি সপ্তাহেই উৎসব হতো। গুলিস্তান এবং কাকরাইলে চলচ্চিত্রের মূল ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। প্রতি বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ছবি রিলিজ হতো। সারা দিন সেখানে মানুষের আনাগোনা, পাশাপাশি এফডিসি সারা রাত খোলা থাকতো। অ্যাকাউন্টসের টাকা রিসিভ হতো, প্রিন্ট হতো। মনে হতো উৎসব হচ্ছে। আর ঈদে মহা উৎসব হতো। একই সময়ে অনেক ছবি, প্রত্যেকে সেই ছবির অপেক্ষায় থাকতো। ঈদে সিনেমা দেখার আলাদা একটা বাজেট থাকতো দর্শকদের। সেই দিনগুলো এখন শুধুই স্বপ্নের দিন। আমার বেশির ভাগ সিনেমাই ঈদের সময়ে মুক্তি পেয়েছিল।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.