গাজায় কেন আবার হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরায়েল

যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ নৃশংস হামলা নিয়ে মিডল ইস্ট আইয়ে লিখেছেন ইসরায়েলি সাংবাদিক ও লেখক মেরন র‍্যাপোপোর্ট। তিনি ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজের সাবেক বার্তা বিভাগের প্রধান। বর্তমানে তিনি স্বাধীন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। ফিলিস্তিনি মালিকদের থেকে জলপাইগাছ চুরি নিয়ে অনুসন্ধান করার জন্য তিনি ন্যাপোলি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর জার্নালিজম পেয়েছিলেন।

গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের চালানো হামলায় ৪০০ জনের বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা শতাধিক। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এটা ছিল ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ানক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামরিক পদক্ষেপ।

হামলার পাশাপাশি গাজাবাসীর ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশও নতুন করে জারি করেছে ইসরায়েল। ফলে গাজাজুড়ে হাজার হাজার মানুষ নতুন করে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।

এমনকি ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’-এর মধ্যপন্থী সামরিক ভাষ্যকার আমোস হারেলও গত মঙ্গলবার থেকে গাজাবাসীর ওপর শুরু করা হামলাকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারের স্বার্থে শুরু করা যুদ্ধ বলে মনে করেন।

এ হামলা ও হামলার ধরনের সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলার সঙ্গে তিনটি বিষয়ের সম্পর্কে আছে বলে মনে হচ্ছে। এক. রাজনৈতিকভাবে নেতানিয়াহুর টিকে থাকা। দুই. সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার। তিন. জনগণকে উত্তেজিত না করে মিত্রদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা।

সরকার টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ

চলতি মাসের শেষের দিকে নেতানিয়াহুকে বাজেট পাস করতে হবে। এটা করতে না পারলে তাঁর সরকারের পতন হবে এবং নতুন নির্বাচন দিতে হবে।

বাজেট যদি পাস করা যায়, তাহলে ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নেতানিয়াহুর সরকার টিকে যাবে। তাই বাজেট পাস করতে পারাটা তাঁর সরকারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী মাসে পার্লামেন্টে বাজেট পাস করতে পারবে না, এখন পর্যন্ত এমন স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে নিজের জোট সরকারের শরিক ইউনাইটেড তোরাহ জুদায়িজম পার্টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন নেতানিয়াহু। আশকেনাজি ইহুদিদের নিয়ে গঠিত এ দলের অতিগোঁড়া সদস্যরা বাজেট পাসে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

নেতানিয়াহুর জোট সরকার টিকে থাকার জন্য ইউনাইটেড তোরাহ জুদায়িজম পার্টির আটটি আসন বেশ দরকারি। দলটি এরই মধ্যে একটি বিল উত্থাপন করেছে, যেখানে অতিগোঁড়া তরুণদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে চাকরি করা থেকে অব্যাহতি দিতে বলা হয়েছে। নেতানিয়াহু সরকার বিলটি সমর্থন না করলে দলটি বাজেট পাসে বাগড়া দিতে পারে।

এ কারণে নেতানিয়াহুর সরকারকে শক্তিশালী করার দরকার পড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে শোনা যাচ্ছে, ইসরায়েলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আবার নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় ফিরছেন। রাজনৈতিক দল জ্যুইশ পাওয়ারের এই নেতা গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি অনুমোদনের পর পদত্যাগ করেছিলেন।

গত মঙ্গলবার গাজায় হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর বেন-গভির ঘোষণা দেন, তাঁর দল আসলেই সরকারে ফিরতে যাচ্ছে। কারণ, যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার তাঁদের যে দাবি ছিল, তা পূর্ণ হয়েছে।

এর অর্থ হলো এখন জুদায়িজম পার্টি বিপক্ষে ভোট দিলেও বাজেট পাস হবে। এটা নেতানিয়াহুর জন্য নগদ লাভ।

ট্রাম্প ফ্যাক্টর

গাজায় নতুন করে হত্যাযজ্ঞ শুরুর পেছনে ট্রাম্পেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন নেতানিয়াহু। সেখান থেকে ফেরার পর থেকে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি জোরেশোরে অনুসরণ করছে বলে মনে হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি বা আইন তোয়াক্কা করার কোনো গরজ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর থেকে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউট থেকে বিরোধীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা শুরু করেছেন।

এরই মধ্যে সেনাবাহিনী ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’-এর শীর্ষ পদে রদবদল করা হয়েছে। হারজি হালেভিকে বাদ দিয়ে ইয়াল জমিরকে নতুন সেনাপ্রধান করা হয়েছে। নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের এক সপ্তাহের মাথায় তাঁর নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।

জমির মার্চের শুরুতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁর কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তিনি সেনাবাহিনীতে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দূত হিসেবে কাজ করছেন।

জমির এরই মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারিকে অপসারণ করেছেন। তিনি সরকারের কাজের সমালোচক ছিলেন। ইয়ানিভ আসোরকে গুরুত্বপূর্ণ সাউদার্ন কমান্ডের প্রধান করা হয়েছে। এই কমান্ডই গাজা যুদ্ধ দেখভাল করছে।

এর আগে ইয়ানিভ আসোর সেনাসদস্য বিভাগের প্রধান ছিলেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি নেতানিয়াহুকে অতিগোঁড়াদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ (কন্সক্রিপশন) দেওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন।

ইতজিক কোহেনকে অপারেশন অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য যাঁরা দায়ী, তিনি সেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন। সেনাবাহিনীতে এসব পরিবর্তন নেতানিয়াহুর পক্ষে যায়।

জমির এক সিনাগগে প্রার্থনায় যোগ দিয়ে বাইবেলে বর্ণিত শত্রু আমালেকীয়দের নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন। যুদ্ধের শুরুর দিকে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনিদের আমালেকীয়দের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত নিয়ে সম্প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি সংস্থাটির প্রধান রোনেন বারকে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে তিনি এমন এক সময়ে রোনেন বারকে সরাতে চাইছেন, যখন কাতার থেকে অর্থ নেওয়ার সন্দেহে নেতানিয়াহুর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছিল শিন বেত।

শিন বেত নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে নেতানিয়াহুর হাতে বিপুল ক্ষমতা কুক্ষিগত হবে। এ গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ হাতে এলে নেতানিয়াহু তাঁর দেশীয় বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে পারবেন।

যুদ্ধবিরতি মেনে না চলার বিষয়েও নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোভাব অনুসরণ করেছেন। ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে গত জানুয়ারিতে হওয়া চুক্তিতে বলা হয়েছিল, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার ১৬ দিন পর দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছানো সম্ভব না হলেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে।

কিন্তু ট্রাম্পের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে নেতানিয়াহু মনে করলেন, তিনি লিখিত চুক্তি অগ্রাহ্য করতে পারেন এবং সবচেয়ে নির্মম উপায়ে গাজায় হামলা চালাতে পারেন।

ইসরায়েলি জনগণের ভয়

গত মঙ্গলবার পুরো হামলা যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো হয়েছে। এতে স্থলবাহিনী অংশ নেয়নি। শুধু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালানোর মধ্যেও ইসরায়েলের ঘরোয়া রাজনীতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

যদিও নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার অনিচ্ছা এবং যুদ্ধ পুনরায় শুরুর বাসনা গোপন করেননি। পাশাপাশি তাঁর অতিডানপন্থী মিত্র বেন–গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গাজা উপত্যকা দখলে নেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে বিতাড়নের দাবি জানিয়েছেন।

তারপরও গাজায় আবারও বড় ধরনের স্থল অভিযান পরিচালনা নিয়ে নেতানিয়াহু শঙ্কিত। কারণ, তিনি সেনাবাহিনী ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতে যে রদবদল করেছেন এবং সব জিম্মিকে মুক্ত করা ও যুদ্ধ শেষ করার মতো একটি চুক্তি নিয়ে তিনি যে দোলাচলে রয়েছেন, তা জনগণের একটি বিরাট অংশকে ক্ষুব্ধ করতে পারে। তাঁরা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, এমন একটি সেনাবাহিনীতে কাজ না করতে জনগণের প্রতি খোলামেলা আহ্বান জানাতে পারে। সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে চাওয়ার হার এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।

এ পরিস্থিতিতে পুরো গাজা বা অন্তত উপত্যকাটির উত্তরাঞ্চল দখল করতে গেলেও হাজার হাজার সেনা সমাবেশের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এটা করতে গেলে নেতানিয়াহু সরাসরি বা অনানুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে পারেন।

সেনাসদস্য নিয়োগ দিতে গিয়ে গণপ্রত্যাখ্যানের মুখে পড়তে হলে তা সেনাবাহিনীর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে গণ্য হবে। অথচ এই সেনাবাহিনীই এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সমাজের অস্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা বিল্ডিং ব্লক। সেনাবাহিনী ধাক্কা খেলে তা ইসরায়েলের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করবে।

তাই এসব কিছু আমলে নিয়ে অন্তত এখন পর্যন্ত শুধু বিমান হামলার ওপর নির্ভর করাকে নিরাপদ মনে করছেন নেতানিয়াহু। আপাতত বোমা ফেলাটাই নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারণ, এতে সংরক্ষিত সেনা বা রিজার্ভিস্টদের যুদ্ধের মাঠে পাঠাতে হচ্ছে না বা সেনাসদস্যদের ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে না।

অন্যদিকে নেতানিয়াহু এটাও জানেন, ফিলিস্তিনের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ হত্যার কারণে ইসরায়েলি সমাজে এরই মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট সামরিক উদ্দেশ্য নেই

সরকারকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহু উল্লিখিত সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। কারণ, এসব হামলার সামরিক উদ্দেশ্য প্রায় অস্তিত্বহীন। এসব হামলার নেতানিয়াহুর একমাত্র সম্ভাব্য সামরিক লক্ষ্য হলো হামাসকে আরও চাপে রাখা, যাতে গোষ্ঠীটিকে এক ধাপের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা যায়। এতে যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই সব জিম্মিকে উদ্ধার করা যাবে।

এবারের বোমা হামলার পর দ্বিতীয় ধাপের চুক্তির কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়াই যদি হামাস কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়, তা নেতানিয়াহুর পক্ষে যাবে। তখন তিনি বলতে শুরু করবেন, সামরিক চাপ দিয়েই তাদের মুক্ত করা গেছে। নির্বাচনেও তিনি এর সুবিধা নিতে পারেন। এরই মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে তিনি এমনটি করেছেন।

কিন্তু সেটা তো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পরিষ্কার কোনো লক্ষ্যবস্তু নয়। খোদ ইসরায়েলই বলছে, এবারের হামলায় হামাসের যেসব কর্মকর্তা মারা গেছেন, তাঁরা গোষ্ঠীটির গাজার বেসামরিক প্রশাসনের। এবারের হামলায় হামাসের সামরিক সক্ষমতার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

এসব কিছুর কারণে বলা যায়, গাজায় এবার ইসরায়েলে নতুন করে যে অভিযান শুরু করেছে, তার উদ্দেশ্য ঘরোয়া রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধি। কারণ, এবারের হামলার মধ্য দিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই গাজায় সন্ত্রাস ছড়ানো হচ্ছে।

অনুবাদ: মুহাম্মদ তাসনিম আলম

গাজায় ধ্বংসস্তূপে এক ফিলিস্তিনি শিশু। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে, ২০ মার্চ ২০২৫
গাজায় ধ্বংসস্তূপে এক ফিলিস্তিনি শিশু। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে, ২০ মার্চ ২০২৫ ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ধ্বংসস্তূপ খতিয়ে দেখছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজা উপত্যকার খান ইউনিস, ২০ মার্চ ২০২৫
ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ধ্বংসস্তূপ খতিয়ে দেখছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজা উপত্যকার খান ইউনিস, ২০ মার্চ ২০২৫ ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.