আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে আসতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে আসতে হবে

আওয়ামী লীগকে দেশের রাজনীতিতে আসতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। গতকাল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত ফিলিস্তিনে গণহত্যা-বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত নেতারা শেখ হাসিনার সরকারের ওপরও তীব্র আক্রমণ করেন এবং বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হলে দেশের মানুষ তা বরদাস্ত করবে না। তারা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতার ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে।

সরজমিন দেখা যায়, বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশের সময় ব্যাগ নিয়ে আসা মুসল্লিদের ব্যাগ তল্লাশি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় সেনাবাহিনী, সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যদেরও ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় মুসল্লিরা ইসরাইল-বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন। মিছিলকারীরা ইসরাইলকে নিষিদ্ধ এবং নেতানিয়াহু’র বিচার দাবি করেন।

এ সময় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে আমরা জাতিসংঘের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাচ্ছি। এই যুদ্ধের দাবানল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এর জন্য দায়ী হবে জাতিসংঘ। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকে মুজাহিদের দল গঠন করার উদ্যোগ নিন। তিনি বলেন, ভারতে মুসলমানদের রক্ত দিয়ে হলি খেলবার পাঁয়তারা হচ্ছে। ভারত এবং ইসরাইলের যৌথ প্রযোজনায় মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আওরঙ্গজেব সমাধি ভাঙার চক্রান্ত করা হচ্ছে। যদি ভাঙা হয় আমরা এ কার্যক্রমকে গাজওয়াতুল হিন্দের প্রতিধ্বনি হিসেবে বিবেচনা করবো। প্রয়োজনে বাংলার মুসলমানরা আওরঙ্গজেব অভিমুখে লংমার্চ করবে।  

পাসপোর্টে এক্সেপ্ট ইসরাইল লেখা বহাল রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ভারতের প্রেসক্রিপশনে পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরাইল লেখা তুলে দিয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের প্রতি পাসপোর্টে এক্সেপ্ট ইসরাইল লেখা বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি। পিলখানা, শাপলা চত্ব্বর ও জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি এ দেশের মানুষ বরদাস্ত করবে না। মামুনুল হক বলেন, মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পূর্ব ধারণা ছিল, সরকার পতন হলে লাখ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করা হবে কিন্তু তা হয়নি। এর সুযোগ নিয়ে তারা পুনর্গঠিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো ষড়যন্ত্র হেফাজত ইসলাম রুখে দেবে।
সমাবেশে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফযলুর করিম কাসেমী বলেন, ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তাতে বাংলাদেশের মুসলমানদের রক্তে দাগ লেগেছে। জাতিসংঘ মুসলমানদের স্বার্থে অন্ধ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে ইসরাইলি পণ্য বর্জন এবং প্রবেশ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুকে ফাঁসি দিতে হবে। ইসরাইলের অস্তিত্ব পৃথিবীতে রাখতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্ক খুব ভালো। আপনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। ইসরাইল এবং ভারত মুসলিম নিধনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তিনি বলেন, শাপলা চত্ব্বর, বিডিআর ও জুলাই বিপ্লবের গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সমাবেশে হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ও রাজনীতি করতে দেয়া হবে না।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.