আমাদের ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না। জামায়াতে ইসলামী কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি, আপস করেনি আর করবেও না। ফাঁসির কাঠগড়ায় আমাদের নেতৃবৃন্দকে পাঠিয়ে দেয়ার আগে বহু অফার আমাদের কাছে এসেছিল আমরা তা গ্রহণ করিনি।

মঙ্গলবার বিকালে দলের কারাবন্দি নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর পল্টন মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে পল্টন মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পল্টন মোড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। প্রথম নির্যাতন করেছিল জামায়াতে ইসলামীর ওপর। এই সময়ে আজহারের মুক্তির জন্য আমাদের রাস্তায় নামতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা ভদ্র কিন্তু বোকা নই, ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন।

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফেরতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নিবন্ধন তো জালিম সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই জুলুম কি এ সরকার আবার করবে? এজন্য কি হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছিল? আমরা বাংলাদেশে আর কোনো বৈষম্য বরদাস্ত করবো না।
তিনি বলেন, একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠন করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। এই সংগঠন কারও কাছে মাথানত করে না। দলমত নির্বিশেষে আসুন সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই।

ঢাকা মহানগর জামায়াত আয়োজিত সমাবেশে মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আজহার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় আসতে হবে কখনো ভাবিনি। এটা আমাদের ন্যায্য অধিকার। যদি আজহার ভাইকে মুক্তি এবং  জামায়াতের নিবন্ধন, দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে না দেয়া হয়, আমরা পুরা ঢাকা মহানগরীতে বিক্ষোভ করবো।

ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা দেখেছি প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা তার মামলা থেকে মুক্তি নিয়েছেন অথচ দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ অন্যায়ভাবে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন আজহার ভাই। কোন কারণে তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। আমরা দেখতে চাই এই ষড়যন্ত্র কারা করেছে। আমরা অবিলম্বে নিবন্ধন ফিরে পেতে চাই, আজহার ভাইয়ের মুক্তি চাই।

তিনি বলেছেন, আমরা চেয়েছিলাম, এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের যেন বক্তব্য দিতে না হয়। এই সরকারকে আমরাই বসিয়েছি। কিন্তু আমরা দেখছি, এই সরকারের ভেতর ভারতীয় ভূতের আছর আছে। আজহারুল ইসলামের রায় বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল কিংবা সুপ্রিম কোর্ট থেকে ঘোষিত হয়নি। এই রায় ঘোষণা হয়েছে মোদি সরকারের গোপন অন্ধকার কক্ষ থেকে।

মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি হয়েছে ভারতের সিদ্ধান্তে। কামরুজ্জামানের ফাঁসি হয়েছে ভারতের সিদ্ধান্তে। আমাদের সকল নেতার ফাঁসি, জেল-জুলুম সবই শেখ হাসিনার মাধ্যমে ভারত বাস্তবায়ন করেছে।

জামায়াত নেতা বলেন, আমরা ভারতকে মানি না, আমরা মানি বাংলাদেশকে। আমরা মাত্র আন্দোলন শুরু করেছি। ভালোয় ভালোয় আজহারুল ইসলামকে ছেড়ে দিন।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বলেন, একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্য এই দেশের ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছিল। তারা আশা করেছিল এত বছর ধরে যত জুলুম, অবিচার করা হয়েছে তার মূলোচ্ছেদ করা হবে কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে মুক্তি দিলেও অজানা কারণে আজহার ভাইকে মুক্তি দেয়া হয়নি। অবিলম্বে আজহারুল ইসলাম ভাইকে মুক্তি দিতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিমের পরিচালনায় সমাবেশে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.