২৯ বছর পর পাকিস্তানে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট: আজ শুরু ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির’ মহারণ by সৌরভ কুমার দাস

নানা বিতর্ক, অনিশ্চয়তা পেছনে ফেলে অবশেষে আজ পর্দা উঠছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির। এবারের আসর আয়োজন করছে পাকিস্তান। তবে এককভাবে নয়, সহ-আয়োজক হিসেবে থাকছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মূলত ভারত-পাকিস্তান যেতে না চাওয়ায় বাধ্য হয়ে তাদের ম্যাচ আমিরাতে আয়োজন করতে হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম কোনো আইসিসি ইভেন্ট আয়োজন করছে পাকিস্তান। আজ আসরের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে গ্রুপ ‘এ’র দুই দল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল ৩টায়।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে মাঠে গড়ায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। দীর্ঘ ৮ বছর পর আবার মাঠে ফিরছে ‘মিনি বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই টুর্নামেন্ট। সেবার ফাইনালে ভারতকে ধসিয়ে শিরোপা উল্লাসে মাতে পাকিস্তান। এবার ঘরের মাঠে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামবে তারা। প্রথম ম্যাচে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। এই ম্যাচের আগে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে কিউইরা। কয়েকদিন আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানকে তাদের মাঠে দুবার হারিয়ে শিরোপা জিতেছে মিচেল স্যান্টনারের দল। পাকিস্তানের সর্বশেষ আইসিসি ইভেন্ট হয় ১৯৯৬ সালে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেবার যৌথভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করে দেশটি। ২৯ বছর পর কোনো আইসিসি ইভেন্ট ফিরছে পাকিস্তানে। ২০০৯ সালে পাকিস্তান সফররত শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। এরপর প্রায় অর্ধযুগ দেশটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৫ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

তবে এবারো এককভাবে আয়োজন করতে পারছে না তারা। রাজনৈতিক বৈরিতায় প্রায় দেড় যুগ পাকিস্তান সফর করে না ভারত। এর আগে ২০২৩ সালেও ভারত না যাওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে হয় পাকিস্তানকে। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও হচ্ছে একইভাবে, ভারত তাদের ম্যাচ খেলবে দুবাইয়ে। যদিও তারা ফাইনালে ওঠে তাহলে ফাইনালও হবে সেখানেই।

এবার নিরাপত্তা নিয়ে খুবই কঠোর অবস্থানে পাকিস্তান। লাহোরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ৮ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। কয়েকদিন আগে ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৫২ রান তাড়া করে জিতলেও কিউই বোলারদের বিপক্ষে পাকিস্তানি ব্যাটাররা মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না। প্রথম ম্যাচে ৩৩০ রান তাড়ায় তারা হারে ৭৮ রানে আর ফাইনালে আগে ব্যাটিং করে মাত্র ২৪২ রান তুলে। পাকিস্তানের জন্য শক্তির জায়গা হচ্ছে পেস বোলিং বিভাগ। নতুন বলে কিউই ব্যাটারদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন তারা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভরসার নাম শাহীন শাহ আফ্রিদি। দুর্দান্ত গতি আর দারুণ অ্যাঙ্গেলে বোলিং করা শাহীন শুরুতেই উইকেট তুলে পাকিস্তানকে এগিয়ে দিতে পারেন ম্যাচে। নাসিম শাহ ও হারিস রউফরাও আছে দারুণ ছন্দে। তবে সেক্ষেত্রে তাদের সামনে বড় বাধা কেন উইলিয়ামসন। ৩ নম্বরে নামা এই ব্যাটার যে কোনো বিপদে দলের হাল ধরতে ওস্তাদ। আইসিসি ইভেন্টে উইলিয়ামসনের চেয়ে ভরসাযোগ্য ব্যাটার কমই আছে। গেল ত্রিদেশীয় সিরিজেও ৩ ম্যাচে ২৫২ রান করেছেন তিনি। ওপেনার ডেভন কনওয়েও আছেন দারুণ ছন্দে। শেষ ৩ ম্যাচে সবমিলিয়ে ৮৮১ রান করেছে নিউজিল্যান্ড, হারিয়েছে ১৫ উইকেট। যেকোনো কন্ডিশনে দ্রুত মানিয়ে নেয়ার জন্য বাড়তি সুবিধা পাবে তারা। লোয়ার মিডল অর্ডারে টম ল্যাথাম ও গ্লেন  ফিলিপসও সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন। মিচেল স্যান্টনারের অধিনায়কত্বে বোলিং আক্রমণও দারুণ ব্যালেন্সড দলটির। ফার্গুসন চোটে ছিটকে গেলেও তারা পেয়ে গেছে কাইল জেমিসনকে। অধিনায়ক স্যান্টনার নিজেই স্পিন দিয়ে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন যেকোনো ম্যাচে।

পাকিস্তানের জন্য চিন্তার কারণ বাবর আজমের ফর্ম। দীর্ঘদিন ধরেই রান খরায় ভুগছেন তিনি। তবে ওপেনার ফখর জামান ও অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান আছেন দারুণ ছন্দে। লোয়ার মিডল অর্ডারে সালমান আঘাও অবদান রাখছেন ব্যাট হাতে। বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করা দুই অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ ও খুশদিল শাহও আছেন পাকিস্তান স্কোয়াডে। দু’জনেই যেকোনো দলের জন্য সম্পদ হতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত জয় পেতে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ব্যাটারদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.