পাইলস চিকিৎসায় রিং লাইগেশন by অধ্যাপক ডা: এ কে এম ফজলুল হক
আমরা
সবাই জানি, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে
বর্তমান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এমন একটি
উন্নততর প্রযুক্তির ফলে আজ ৮০-৯০ শতাংশ পাইলস রোগ বিনা অপারেশনে এবং বিনা
ব্যথায় নিরাময় করা সম্ভব।
১৯৫৪ সালে ডা: ব্লেইসডেল প্রথম এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন এবং এর সাহায্যে তিনি বিনা অপারেশনে বহির্বিভাগে পাইলসের সফল চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদর্শন করে সবার সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অবশ্য এর আগে ১৮৬৯ সাল থেকে বিনা অপারেশনে ইনজেকশনের মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিন্তু ইনজেকশনের সাফল্য আশাব্যঞ্জক ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এটা শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের পাইলসে ভালো ফল দিতে সক্ষম। বারবার ইনজেকশন দিয়ে অতিরিক্ত সুফল পাওয়া যায় না। এরূপ পরিস্থিতিতে ‘রিং লাইগেশন’ পদ্ধতি পাইলসের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। ১৯৬২ সালে ডা: জে ব্যারন এই যন্ত্রটির উন্নততর সংস্করণ বের করেন এবং দু’টি গবেষণা প্রবন্ধে তিনি প্রমাণ করেন যে, এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত চমৎকার ফলাফল দিচ্ছে। এরপর বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারিতে প্রথিতযশা আমেরিকান সার্জন ডা: মারভিন এল করম্যান একটি গবেষণা প্রবন্ধে প্রকাশ করেন এই নতুন যন্ত্রের সাহায্যে পাইলস চিকিৎসার অভাবনীয় সাফল্য। তিনি প্রমাণ করেন, এই যন্ত্রের সাহায্যে রিং লাইগেশন পদ্ধতিতে পাইলস রোগীদের ৮০ শতাংশ বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করা সম্ভব।
কোন ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য : কয়েকটি সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব পাইলস রোগীকে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে যাদের চিকিৎসা করা যাবে না তাদের উপসর্গগুলো হচ্ছে- বহিঃস্থিত পাইলস, যদি সাথে এনাল ফিশার বা ফিস্টুলা থাকে অথবা এমন পাইলস যা সবসময় বাইরে ঝুলে থাকে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি : এ চিকিৎসায় একটি যন্ত্রের সাহায্যে পাইলসের মাংসপিণ্ডকে ধীরে ধীরে কাটার ব্যবস্থা করা হয়। এতে সাধারণত রোগীরা ব্যথা পান না। এ চিকিৎসার ফলে পায়ুপথের ভেতরের পাইলসগুলো আর ফুলে ওঠার সুযোগ পায় না। যেহেতু পাইলস তিন বা ততোধিক থাকে, তাই একবার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। এ কারণে কিছু দিনের ব্যবধানে দু-তিনবার এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। চিকিৎসকের চেম্বারেই এ চিকিৎসা সম্ভব। সাধারণত অজ্ঞান বা অবশ করার প্রয়োজন নেই। কখনো কখনো ডুশ দিয়ে পেট পরিষ্কার করে নিতে হয়। চিকিৎসার পর কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রোগী বাসায় চলে যেতে পারেন। মফস্বলের রোগীরা পর দিন চলে যেতে পারেন। চিকিৎসার আগে প্রকটস্কপি ও সিগময়ডস্পপি করে মলদ্বারের গভীরে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ পায়ুপথে রক্তক্ষরণের অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। অতএব, পায়ুপথে রক্ত গেলেই পাইলস হয়েছে বলে সবাই ধরে নেন। এ ধারণা ভুল। প্রথমত, পরীক্ষা করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রক্ত যাওয়ার সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন। এরপর চিকিৎসার প্রশ্ন।
চিকিৎসার পর উপদেশ : কোষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে যেন মলত্যাগে কষ্ট না হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাতলা পায়খানা দুই-ই খারাপ। মাঝে মধ্যে রক্ত যেতে পারে। তবে চিকিৎসার সম্পূর্ণ কোর্স শেষ হলে আর রক্ত যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
হার্টের রোগীদের জন্য : অনেকে আছেন পাইলসে অবহেলা করেন। যদি এ অবস্থায় আপনার কোনোরূপ হৃদরোগ হয়, তাহলে হৃদরোগের চিকিৎসার আগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আগে পাইলস অপারেশন করে আসার উপদেশ দেবেন। কারণ হৃদরোগ অপারেশনের পর রক্তজমাট বাঁধা নিরোধক ওষুধ খেতে হবে বহুদিন। তখন পাইলসের রক্ত যাওয়ার পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাবে। কারণ তখন আপনাকে এমন ওষুধ দেয়া হবে যাতে আপনার রক্ত জমাট বাঁধবে অনেক দেরিতে। এমনকি অনেক উচ্চ রক্তচাপের রোগী এসপিরিন/ডিসপ্রিন/ইকোসপিরিন জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন। এগুলো দেয়া হয় হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য। ওষুধটি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এ অবস্থায় পাইলসের রক্ত বন্ধ করা খুবই কষ্টকর। অতএব অবহেলা না করে সময় থাকতে পাইলসের চিকিৎসা করে নেয়া জরুরি।
জটিলতা : চিকিৎসার পর রোগীর সামান্য অস্বস্তি লাগতে পারে। কারো কারো অল্প ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসা চলাকালীন মাঝে মধ্যে রক্ত যেতে পারে।
>>>লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব) কলোরেকটাল সার্জারী বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬
১৯৫৪ সালে ডা: ব্লেইসডেল প্রথম এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন এবং এর সাহায্যে তিনি বিনা অপারেশনে বহির্বিভাগে পাইলসের সফল চিকিৎসা পদ্ধতি প্রদর্শন করে সবার সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অবশ্য এর আগে ১৮৬৯ সাল থেকে বিনা অপারেশনে ইনজেকশনের মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। কিন্তু ইনজেকশনের সাফল্য আশাব্যঞ্জক ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এটা শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের পাইলসে ভালো ফল দিতে সক্ষম। বারবার ইনজেকশন দিয়ে অতিরিক্ত সুফল পাওয়া যায় না। এরূপ পরিস্থিতিতে ‘রিং লাইগেশন’ পদ্ধতি পাইলসের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। ১৯৬২ সালে ডা: জে ব্যারন এই যন্ত্রটির উন্নততর সংস্করণ বের করেন এবং দু’টি গবেষণা প্রবন্ধে তিনি প্রমাণ করেন যে, এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত চমৎকার ফলাফল দিচ্ছে। এরপর বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারিতে প্রথিতযশা আমেরিকান সার্জন ডা: মারভিন এল করম্যান একটি গবেষণা প্রবন্ধে প্রকাশ করেন এই নতুন যন্ত্রের সাহায্যে পাইলস চিকিৎসার অভাবনীয় সাফল্য। তিনি প্রমাণ করেন, এই যন্ত্রের সাহায্যে রিং লাইগেশন পদ্ধতিতে পাইলস রোগীদের ৮০ শতাংশ বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করা সম্ভব।
কোন ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য : কয়েকটি সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব পাইলস রোগীকে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে যাদের চিকিৎসা করা যাবে না তাদের উপসর্গগুলো হচ্ছে- বহিঃস্থিত পাইলস, যদি সাথে এনাল ফিশার বা ফিস্টুলা থাকে অথবা এমন পাইলস যা সবসময় বাইরে ঝুলে থাকে।
চিকিৎসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি : এ চিকিৎসায় একটি যন্ত্রের সাহায্যে পাইলসের মাংসপিণ্ডকে ধীরে ধীরে কাটার ব্যবস্থা করা হয়। এতে সাধারণত রোগীরা ব্যথা পান না। এ চিকিৎসার ফলে পায়ুপথের ভেতরের পাইলসগুলো আর ফুলে ওঠার সুযোগ পায় না। যেহেতু পাইলস তিন বা ততোধিক থাকে, তাই একবার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। এ কারণে কিছু দিনের ব্যবধানে দু-তিনবার এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। চিকিৎসকের চেম্বারেই এ চিকিৎসা সম্ভব। সাধারণত অজ্ঞান বা অবশ করার প্রয়োজন নেই। কখনো কখনো ডুশ দিয়ে পেট পরিষ্কার করে নিতে হয়। চিকিৎসার পর কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রোগী বাসায় চলে যেতে পারেন। মফস্বলের রোগীরা পর দিন চলে যেতে পারেন। চিকিৎসার আগে প্রকটস্কপি ও সিগময়ডস্পপি করে মলদ্বারের গভীরে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ পায়ুপথে রক্তক্ষরণের অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। অতএব, পায়ুপথে রক্ত গেলেই পাইলস হয়েছে বলে সবাই ধরে নেন। এ ধারণা ভুল। প্রথমত, পরীক্ষা করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রক্ত যাওয়ার সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন। এরপর চিকিৎসার প্রশ্ন।
চিকিৎসার পর উপদেশ : কোষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে যেন মলত্যাগে কষ্ট না হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাতলা পায়খানা দুই-ই খারাপ। মাঝে মধ্যে রক্ত যেতে পারে। তবে চিকিৎসার সম্পূর্ণ কোর্স শেষ হলে আর রক্ত যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
হার্টের রোগীদের জন্য : অনেকে আছেন পাইলসে অবহেলা করেন। যদি এ অবস্থায় আপনার কোনোরূপ হৃদরোগ হয়, তাহলে হৃদরোগের চিকিৎসার আগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আগে পাইলস অপারেশন করে আসার উপদেশ দেবেন। কারণ হৃদরোগ অপারেশনের পর রক্তজমাট বাঁধা নিরোধক ওষুধ খেতে হবে বহুদিন। তখন পাইলসের রক্ত যাওয়ার পরিমাণ বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাবে। কারণ তখন আপনাকে এমন ওষুধ দেয়া হবে যাতে আপনার রক্ত জমাট বাঁধবে অনেক দেরিতে। এমনকি অনেক উচ্চ রক্তচাপের রোগী এসপিরিন/ডিসপ্রিন/ইকোসপিরিন জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন। এগুলো দেয়া হয় হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য। ওষুধটি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এ অবস্থায় পাইলসের রক্ত বন্ধ করা খুবই কষ্টকর। অতএব অবহেলা না করে সময় থাকতে পাইলসের চিকিৎসা করে নেয়া জরুরি।
জটিলতা : চিকিৎসার পর রোগীর সামান্য অস্বস্তি লাগতে পারে। কারো কারো অল্প ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসা চলাকালীন মাঝে মধ্যে রক্ত যেতে পারে।
>>>লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব) কলোরেকটাল সার্জারী বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬
No comments