বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪০ বছর উদ্যাপন
‘একটা
কুঁড়িকে দেখে যেমন পুরো প্রস্ফুটিত ফুলকে ভাবা খুবই কঠিন, তেমনি ৪০ বছর
আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শুরুটা হয়েছিল, কুঁড়িটা হয়েছিল। কিন্তু এইভাবে
এত বড় হবে এটা আমরা ভাবিনি। এটা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এটা (বিশ্বসাহিত্য
কেন্দ্র) আরো বড় হবে।’ গতকাল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব
উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে এর প্রতিষ্ঠাতা ও
সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ৪০ বছর আগে আমাদের স্বপ্নের জায়গা ছিল যে, সারা দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আমরা আলো পৌঁছে দিতে চাই। সেইজন্য তারা যদি নিজে আসে খুব ভালো। আর তারা যদি না আসে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আমরা তার কাছে আলো দিয়ে আসবো। কিন্তু বাংলাদেশকে আলোকিত হতেই হবে। আমি একবার লিখেছিলাম যে, একদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশ হবে।
এটা শুনে সবাই তখন মুখ টিপে হেসেছিল। তারা ভেবেছিল আমি এতে বুঝাচ্ছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইট কাঠ সব বাংলাদেশ হবে। কিন্তু সেটা নয়। আমি বলতে চেয়েছিলাম আমরা যে আজকে আলোকিত মানুষের স্বপ্ন দেখেছি, উন্নত মানুষের স্বপ্ন দেখেছি, একদিন সারা জাতিকে সেই স্বপ্ন দেখতে হবে। তা না হলে আমরা পঙ্কিলতা থেকে উঠতে পারবো না। আমাদের একটা বড় জাতি চাই, একটা গৌরবময় জাতি চাই, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।
আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। সংগঠনটির ৪০ বছর পূর্তির আয়োজন ছিল বর্ণাঢ্য। সকালে রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য কার্নিভাল। তাশের দেশের রাজার পোশাক পরে র্যালির নেতৃত্ব দেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সঙ্গে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, শিল্পী মোস্তাফা জামান আব্বাসী, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নাট্যাভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, টিভি ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার এবং নাগরিক টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক প্রমুখ। কার্নিভালে বর্ণিল, মনোজ্ঞ ও সুসজ্জিত র্যালিটি ১৮টি ভাগে সাজানো হয়। র্যালির ২য় ধাপে রঙিন শাড়িতে সজ্জিত ছিলো ৩২ জন মেয়ে শিশু। বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলো, ঢাক-ঢোলবাদক দল, ভরত নাট্যম, কত্থক, মণিপুরী এবং গৌড়িও নাচের দল, রংধনুর আদলে সাতটি রঙে সজ্জিত শিশুর দল, রঙিন শাড়ি পরে কলস কাঁখে মেয়ের দল, রোমান বাদক দলের সঙ্গে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাজে সজ্জিত দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শিশুতোষ গল্পের চরিত্রে সজ্জিত দল, রঙিন পতাকা হাতে মানুষ ও সুসজ্জিত মোবাইল লাইব্রেরি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো র্যালির নবম ভাগ। এ ভাগে ছিল বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব চরিত্র। চরিত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যিই র্যালিতে হাঁটছেন সফোক্লিস, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, ফ্রয়েড, মহাকবি ফেরদৌসী, রুমী, মহাকবি গ্যাটে, শেখ সাদী, হাফিজ।
আরও ছিলেন গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, হেগেল, ডারউইন, নিউটন, গ্যালিলিও, আর্কিমিডিসসহ আরও অনেকে। জোয়ান অব আর্ককেও দেখা গেছে র্যালিতে। আর বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকদের মধ্যে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়া, কাজী নজরুল ইসলাম। চৌদ্দতম ভাগে ছিল বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের জনপ্রিয় রূপকথার বেশ কয়েকটি চরিত্র। ছিল হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, পিনোকিও, অরুণ-বরুণ-কিরণ-মালা, সিনডারেলা, আলাদিনের জীন, এমনকি শিয়াল পণ্ডিতও।
র্যালি শেষে দিনব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কণ্ঠশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, প্রিয়াংকা গোপ, চন্দনা মজুমদারসহ প্রায় ৫০ জনের অধিক শিল্পী মাতিয়ে রাখে মঞ্চ। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে গৌড়ীয়, মণিপুরী, কত্থকসহ বিভিন্ন ধরনের নাচ, ফাঁকে ফাঁকে চলে আলোচনাও। উৎসব আয়োজনে প্রায় ৩০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের আপ্যায়নের জন্য বাঙালিয়ানা ধাঁচে পরিবেশন করা হয় দেশীয় সব খাবার। আকর্ষণীয় বাঁশের ঝুড়িতে করে অতিথিদের হাতে তুলে দেয়া হয় পাটিশাপটা, তেলের পিঠা, সিঙ্গাড়া, কদমা, খই, চিঁড়ার মোয়া, নিমকপাড়া, মুড়লী, নকুল দানা, দানাদার, গজা, জিলাপিসহ আরও কিছু খাবার। অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আমরা পাইনি আমাদের ছেলে-মেয়েরা পেয়েছে। আলোকিত মানুষ গড়ার যে উদ্যোগ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ নিয়েছিলেন তা দেশ গড়ার প্রত্যয়ে অত্যন্ত দূরদর্শী একটি ভূমিকা ছিল।
চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার বলেন, মানুষের উপকার করবো এই চিন্তা নয়, আমি উপকৃত হবো এই চিন্তা থেকেই কাজ করলেই হয়। তাহলে দায়বদ্ধতা নয় কাজ করার আনন্দ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমিই আমার উপকার করবো। ভালোলাগা, এটা করতে ভালো লাগে তাই করছি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যেটা করেছেন। এখানে প্রগাঢ় একটা অনুভূতি কাজ করছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আরো অনেক দূর এগিয়ে যাক- এই কামনা করি।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেটার কোনো তুলনা নাই। এখন সারা পৃথিবীর সব থেকে বড় সমস্যা হলো কেউ বই পড়ে না। আমাদের দেশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এককভাবে এই কাজটিই করে যাচ্ছে।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, মানুষের মন পরিবর্তনে এবং সৃষ্টিশীল ভাবনার বিকাশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র অবদান রেখে যাচ্ছে সুদীর্ঘ ৪০ বছর ধরে। এটি একটি বিশাল ব্যাপার। এদিকে চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। উৎসব উপলক্ষে চারুশিল্পী মিলন রায়ের নেতৃত্বে একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী শিল্পী মাসব্যাপী কেন্দ্রকে সাজিয়ে তোলে মনোমুগ্ধকর রূপে। দেয়াল পেইন্টিং, ক্যানভাস, আলপনায় বর্ণিল করে তোলা হয় বিশ্বসাহ্যি কেন্দ্র। প্রবেশদ্বারে চমৎকার একটি তোরণ। তোরণ দিয়ে ঢুকতেই হাতের দু’পাশের দেয়ালে চোখে পড়বে নানান চিত্রকর্ম। এতে ফোক এবং রূপকথার বিভিন্ন চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আরেকটি টিম শিল্পী আবদুর রহমান নূর ও স্থপতি সায়ইদা শারমিন সেতুর নেতৃত্বে কেন্দ্রের পুরাতন বিল্ডিং এর রেপ্লিকাসহ নানান রকম কারুশিল্পে সাজিয়ে তোলে উৎসব স্থল। এতে ব্যবহার করা হয় কাগজের ফুল, পমপম বল, মাটির হাঁড়ি, মটকি, মঙ্গল প্রদীপসহ লোকজ সব উপকরণ। এছাড়াও সন্ধ্যার পর ঝলমলে আলোকসজ্জায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে কেন্দ্র। আর সবুজায়নের জন্য ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে টবে শোভা পায় নানান প্রজাতির গাছ।
তিনি আরো বলেন, ৪০ বছর আগে আমাদের স্বপ্নের জায়গা ছিল যে, সারা দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আমরা আলো পৌঁছে দিতে চাই। সেইজন্য তারা যদি নিজে আসে খুব ভালো। আর তারা যদি না আসে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আমরা তার কাছে আলো দিয়ে আসবো। কিন্তু বাংলাদেশকে আলোকিত হতেই হবে। আমি একবার লিখেছিলাম যে, একদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশ হবে।
এটা শুনে সবাই তখন মুখ টিপে হেসেছিল। তারা ভেবেছিল আমি এতে বুঝাচ্ছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইট কাঠ সব বাংলাদেশ হবে। কিন্তু সেটা নয়। আমি বলতে চেয়েছিলাম আমরা যে আজকে আলোকিত মানুষের স্বপ্ন দেখেছি, উন্নত মানুষের স্বপ্ন দেখেছি, একদিন সারা জাতিকে সেই স্বপ্ন দেখতে হবে। তা না হলে আমরা পঙ্কিলতা থেকে উঠতে পারবো না। আমাদের একটা বড় জাতি চাই, একটা গৌরবময় জাতি চাই, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।
আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। সংগঠনটির ৪০ বছর পূর্তির আয়োজন ছিল বর্ণাঢ্য। সকালে রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য কার্নিভাল। তাশের দেশের রাজার পোশাক পরে র্যালির নেতৃত্ব দেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সঙ্গে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, শিল্পী মোস্তাফা জামান আব্বাসী, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নাট্যাভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, টিভি ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার এবং নাগরিক টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক প্রমুখ। কার্নিভালে বর্ণিল, মনোজ্ঞ ও সুসজ্জিত র্যালিটি ১৮টি ভাগে সাজানো হয়। র্যালির ২য় ধাপে রঙিন শাড়িতে সজ্জিত ছিলো ৩২ জন মেয়ে শিশু। বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলো, ঢাক-ঢোলবাদক দল, ভরত নাট্যম, কত্থক, মণিপুরী এবং গৌড়িও নাচের দল, রংধনুর আদলে সাতটি রঙে সজ্জিত শিশুর দল, রঙিন শাড়ি পরে কলস কাঁখে মেয়ের দল, রোমান বাদক দলের সঙ্গে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাজে সজ্জিত দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শিশুতোষ গল্পের চরিত্রে সজ্জিত দল, রঙিন পতাকা হাতে মানুষ ও সুসজ্জিত মোবাইল লাইব্রেরি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো র্যালির নবম ভাগ। এ ভাগে ছিল বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব চরিত্র। চরিত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যিই র্যালিতে হাঁটছেন সফোক্লিস, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, ফ্রয়েড, মহাকবি ফেরদৌসী, রুমী, মহাকবি গ্যাটে, শেখ সাদী, হাফিজ।
আরও ছিলেন গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, হেগেল, ডারউইন, নিউটন, গ্যালিলিও, আর্কিমিডিসসহ আরও অনেকে। জোয়ান অব আর্ককেও দেখা গেছে র্যালিতে। আর বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকদের মধ্যে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়া, কাজী নজরুল ইসলাম। চৌদ্দতম ভাগে ছিল বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের জনপ্রিয় রূপকথার বেশ কয়েকটি চরিত্র। ছিল হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, পিনোকিও, অরুণ-বরুণ-কিরণ-মালা, সিনডারেলা, আলাদিনের জীন, এমনকি শিয়াল পণ্ডিতও।
র্যালি শেষে দিনব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কণ্ঠশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, প্রিয়াংকা গোপ, চন্দনা মজুমদারসহ প্রায় ৫০ জনের অধিক শিল্পী মাতিয়ে রাখে মঞ্চ। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে গৌড়ীয়, মণিপুরী, কত্থকসহ বিভিন্ন ধরনের নাচ, ফাঁকে ফাঁকে চলে আলোচনাও। উৎসব আয়োজনে প্রায় ৩০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের আপ্যায়নের জন্য বাঙালিয়ানা ধাঁচে পরিবেশন করা হয় দেশীয় সব খাবার। আকর্ষণীয় বাঁশের ঝুড়িতে করে অতিথিদের হাতে তুলে দেয়া হয় পাটিশাপটা, তেলের পিঠা, সিঙ্গাড়া, কদমা, খই, চিঁড়ার মোয়া, নিমকপাড়া, মুড়লী, নকুল দানা, দানাদার, গজা, জিলাপিসহ আরও কিছু খাবার। অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আমরা পাইনি আমাদের ছেলে-মেয়েরা পেয়েছে। আলোকিত মানুষ গড়ার যে উদ্যোগ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ নিয়েছিলেন তা দেশ গড়ার প্রত্যয়ে অত্যন্ত দূরদর্শী একটি ভূমিকা ছিল।
চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার বলেন, মানুষের উপকার করবো এই চিন্তা নয়, আমি উপকৃত হবো এই চিন্তা থেকেই কাজ করলেই হয়। তাহলে দায়বদ্ধতা নয় কাজ করার আনন্দ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমিই আমার উপকার করবো। ভালোলাগা, এটা করতে ভালো লাগে তাই করছি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যেটা করেছেন। এখানে প্রগাঢ় একটা অনুভূতি কাজ করছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আরো অনেক দূর এগিয়ে যাক- এই কামনা করি।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেটার কোনো তুলনা নাই। এখন সারা পৃথিবীর সব থেকে বড় সমস্যা হলো কেউ বই পড়ে না। আমাদের দেশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এককভাবে এই কাজটিই করে যাচ্ছে।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, মানুষের মন পরিবর্তনে এবং সৃষ্টিশীল ভাবনার বিকাশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র অবদান রেখে যাচ্ছে সুদীর্ঘ ৪০ বছর ধরে। এটি একটি বিশাল ব্যাপার। এদিকে চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। উৎসব উপলক্ষে চারুশিল্পী মিলন রায়ের নেতৃত্বে একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী শিল্পী মাসব্যাপী কেন্দ্রকে সাজিয়ে তোলে মনোমুগ্ধকর রূপে। দেয়াল পেইন্টিং, ক্যানভাস, আলপনায় বর্ণিল করে তোলা হয় বিশ্বসাহ্যি কেন্দ্র। প্রবেশদ্বারে চমৎকার একটি তোরণ। তোরণ দিয়ে ঢুকতেই হাতের দু’পাশের দেয়ালে চোখে পড়বে নানান চিত্রকর্ম। এতে ফোক এবং রূপকথার বিভিন্ন চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আরেকটি টিম শিল্পী আবদুর রহমান নূর ও স্থপতি সায়ইদা শারমিন সেতুর নেতৃত্বে কেন্দ্রের পুরাতন বিল্ডিং এর রেপ্লিকাসহ নানান রকম কারুশিল্পে সাজিয়ে তোলে উৎসব স্থল। এতে ব্যবহার করা হয় কাগজের ফুল, পমপম বল, মাটির হাঁড়ি, মটকি, মঙ্গল প্রদীপসহ লোকজ সব উপকরণ। এছাড়াও সন্ধ্যার পর ঝলমলে আলোকসজ্জায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে কেন্দ্র। আর সবুজায়নের জন্য ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে টবে শোভা পায় নানান প্রজাতির গাছ।
No comments