হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দৃষ্টিতে: খালেদা জিয়ার কারাজীবনের এক বছর by ব্রাড এডামস
এক
বছর আগে, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির
প্রধান খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয়
নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ওই সময়
আদালত তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের মামলাগুলোতে ব্যবস্থা নিয়েছে।
মামলাগুলোর অন্তর্নিহিত যোগ্যতার (আন্ডারলাইং মেরিটস) বিষয়ে কোনো অবস্থান নেয় নি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। খালেদা জিয়ার সমর্থকরা দাবি করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০৭-২০০৮ সালে সেনা সমর্থিক সরকার যে দুর্নীতির মামলা করেছিল, তারাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলীয় সদস্যদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি সরকারের শুধু সমালোচকদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেছেন।
সরকারি ফলাফলে দেখা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশি আসনে জয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
‘ক্রিয়েটিং প্যানিক: বাংলাদেশ ইলেকশন ক্র্যাকডাউন অন পলিটিক্যাল অপোনেন্টস অ্যান্ড ক্রিটিকস’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বর্ণনা করেছে নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার পর্যায়ক্রমে প্রচ- আক্রমণ হেনেছে (সিস্টেমেটিক অনস্লট)। বিএনপি বলেছে, তাদের দলের সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে তিন লাখেরও বেশি ফৌজদারি মামলা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তার করেছে কয়েক হাজারকে। বিরোধী দলগুলোর ঐক্যফ্রন্ট রিপোর্ট করেছে, তাদের ৮ হাজার দুই শতাধিক সদস্য ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অনেক মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এমন অনেক মামলাকে ‘ভৌতিক মামলা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব মামলায় অপরাধ সংঘটনের সময়ে অভিযুক্তদের কেউ কেউ মৃত, বিদেশে অথবা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আবু তাহেরের কথা। তিনি এক সময় বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মারা গেছেন ক্যান্সারে। কিন্তু ২০১৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়। অভিযুক্ত করা হয় যে, তিনি বেআইনিভাবে সমাবেশ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের যুব শাখা যুবলীগের একজন সদস্যকে আগের দিন হত্যা করেছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দুই দলের নেতাকর্মীরাই সহিংসতায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতহীনভাবে তাতে সাড়া দেয় নি। পুলিশ গ্রেপ্তার ও আটক করেছে বিরোধী দলের সদস্যদের। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক, যারা বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও সদস্যদের টার্গেট করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনা বিরল।
নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের পরিবর্তে, কর্তৃপক্ষ নির্বাচনে জালিয়াতির রিপোর্টিংয়ের জন্য সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করেছে। গুরুত্বর অভিযোগগুলোকে দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। তারা নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে অভিহিত করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেসব গুরুত্বর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তের সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যরা। এসব সুপারিশ গ্রহণ করা উচিত নির্বাচন কমিশন ও সরকারের।
(ব্রাড এডামস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক। তার এ লেখাটি সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে)
মামলাগুলোর অন্তর্নিহিত যোগ্যতার (আন্ডারলাইং মেরিটস) বিষয়ে কোনো অবস্থান নেয় নি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। খালেদা জিয়ার সমর্থকরা দাবি করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০৭-২০০৮ সালে সেনা সমর্থিক সরকার যে দুর্নীতির মামলা করেছিল, তারাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলীয় সদস্যদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি সরকারের শুধু সমালোচকদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেছেন।
সরকারি ফলাফলে দেখা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগেরও বেশি আসনে জয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
‘ক্রিয়েটিং প্যানিক: বাংলাদেশ ইলেকশন ক্র্যাকডাউন অন পলিটিক্যাল অপোনেন্টস অ্যান্ড ক্রিটিকস’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বর্ণনা করেছে নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার পর্যায়ক্রমে প্রচ- আক্রমণ হেনেছে (সিস্টেমেটিক অনস্লট)। বিএনপি বলেছে, তাদের দলের সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে তিন লাখেরও বেশি ফৌজদারি মামলা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তার করেছে কয়েক হাজারকে। বিরোধী দলগুলোর ঐক্যফ্রন্ট রিপোর্ট করেছে, তাদের ৮ হাজার দুই শতাধিক সদস্য ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অনেক মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এমন অনেক মামলাকে ‘ভৌতিক মামলা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব মামলায় অপরাধ সংঘটনের সময়ে অভিযুক্তদের কেউ কেউ মৃত, বিদেশে অথবা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আবু তাহেরের কথা। তিনি এক সময় বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মারা গেছেন ক্যান্সারে। কিন্তু ২০১৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়। অভিযুক্ত করা হয় যে, তিনি বেআইনিভাবে সমাবেশ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের যুব শাখা যুবলীগের একজন সদস্যকে আগের দিন হত্যা করেছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দুই দলের নেতাকর্মীরাই সহিংসতায় যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতহীনভাবে তাতে সাড়া দেয় নি। পুলিশ গ্রেপ্তার ও আটক করেছে বিরোধী দলের সদস্যদের। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক, যারা বিরোধী দলীয় প্রার্থী ও সদস্যদের টার্গেট করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনা বিরল।
নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের পরিবর্তে, কর্তৃপক্ষ নির্বাচনে জালিয়াতির রিপোর্টিংয়ের জন্য সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করেছে। গুরুত্বর অভিযোগগুলোকে দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। তারা নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে অভিহিত করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেসব গুরুত্বর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তের সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যরা। এসব সুপারিশ গ্রহণ করা উচিত নির্বাচন কমিশন ও সরকারের।
(ব্রাড এডামস আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক। তার এ লেখাটি সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে)
No comments