ভেনিজুয়েলা কি আরেকটি সিরিয়া হতে চলেছে? by স্বরাজ সিং
আন্তর্জাতিক
আইনের কোনোই তোয়াক্কা না করে পশ্চিমা দেশগুলো নগ্নভাবে ভেনিজুয়েলার
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। তারা কোনো সন্দেহই অবশিষ্ট রেখে দেয় নি
যে, তারাই ভেনিজুয়েলার ভাগ্য নির্ধারণ করতে চাইছেন। বিরোধী দলীয় নেতা হুয়ান
গাইডো নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার কয়েক মিনিটের মধ্যে তাকে
স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই পথ অনুসরণ করেছে কানাডা, বৃটেন,
ফ্রান্স ও লাতিন আমেরিকার ডানপন্থি কিছু সরকার। লাতিন আমেরিকার ওই দেশগুলো
হলো পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর হাতের পুতুল। তারা দুই ঘন্টার মধ্যে
যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। তবে রাশিয়া, চীন, ইরান, তুরস্ক,
কিউবা, বলিভিয়া ও মেক্সিকো একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের বিরুদ্ধে এভাবে
পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। এই হস্তক্ষেপ
আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
তারা সমর্থন দিয়েছে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে। পশ্চিমা দেশগুলোর এমন উদ্যোগের সবচেয়ে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এর জন্য করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইকুয়েডরের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়াও সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সামরিক হামলার বিরুদ্ধে। বলেছেন, এমন হামলা চালালে তাতে সৃষ্টি হবে একটি গৃহযুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অন্য দেশগুলোর জোরপূর্বক অন্যদের ওপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। লাতিন আমেরিকাকে সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র দেখে এসেছে তার ঘরের পিছনের জায়গা বা ব্যাকইয়ার্ড হিসেবে, যেখানে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। গত দুই শতাব্দীতে কিউবা বাদে সত্যিকার অর্থে লাতিন আমেরিকার কোনো দেশ স্বাধীন হতে পারে নি। সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। যখনই এই দুটি স্বার্থের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়, তখনই শক্তি প্রয়োগ করতে কখনোই দ্বিধাবোধ করে না যুক্তরাষ্ট্র। উদাহরণ হিসেবে ডা. সালভাদর অ্যালেন্ডের কথাই ধরা যাক। তিনি চিলির নির্বাচিত মার্কসপন্থি প্রেসিডেন্ট। তিনি তার দেশের সম্পদ তার জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে তার বিরুদ্ধে জেনারেল পিনোচেটকে দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তার থেকে মুক্ত হতে কালক্ষেপণ করে নি যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকা থেকে বামপন্থি শক্তিগুলোতে নির্মূল করার পর্যায়ক্রমিক একটি অপারেশন কন্ডোর পরিচালনা করে। সেখানে তারা ডানপন্থি একনায়কদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করে।
বার বার হুগো শাভেজের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হুগো শাভেজ ১৯৯৯ সাল থেকে ২-১৩ সাল পর্যন্ত ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তেল বিক্রির অর্থে তিনি তার দেশবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে গেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভেনিজুয়েলা অন্যতম। হুগো শাভেজ ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর নিকোলাস মাদুরো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তার কবল থেকে বার বার মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রতিবারই তিনি টিকে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ ও তেলের মূল্য পতনের ফলে বাস্তবেই ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি কঠিন অবস্থায়। প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে দায়ী করার জন্য এটাকে একটি অজুহাত হিসেবে বেছে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার মাদুরোকে সমর্থন করছে তার সেনাবাহিনী। আরেকটি ফ্যাক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্য মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো খুব কঠিন। তা হলো, কর্মজীবী মানুষের জন্য বড় একটি ভিত্তি রচনা করে গেছেন হুগো শাভেজ। এ ছাড়া রাশিয়ার সরবরাহ দেয়া এক লাখ একে-৪৭ রাইফেল তুলে দিয়েছেন তার অনুসারীদের হাতে। ফলে যদি মাদুরোর সমর্থক ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত হুয়ান গাইডোর সমর্থকদের মধ্যে একটি সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তা হয়ে উঠবে চরম মাত্রায় রক্তক্ষীয়। এই যুদ্ধ বিপর্যয়কর হবে বলে যথার্থই সতর্কতা দিয়েছেন ভøাদিমির পুতিন।
এমন একটি যুদ্ধ হলে তাতে রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লোকসানটা বেশি হবে। যদি তাতে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যায় তাহলে সম্ভবত সেটা হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টিজের জন্য একটি ভয়াবহ আঘাত। এমনকি যদি এই যুুদ্ধে আমেরিকা বিজয়ী হয় তাহলে দীর্থে মেয়াদে এর ফল তাদের জন্য সহায়ক হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। ইউরোপে নিজের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রাশিয়াকে বড় রকমের বিজয় অর্জন করতে হবে এবং তার মধ্য দিয়ে তাদেরকে প্রেস্টিজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মতো দেশের জন্য একটি বড় রকমের আঘাত দিতে হবে তাদেরকে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাতিন আমেরিকায় বিজয়ী হওযার চেয়ে ইউরোপে পরাজিত হওয়া হবে অনেক বেশি খারাপ।
এরই মধ্যে সিরিয়ার পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টিজ ও মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাবের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। ভেনিজুয়েলা যুদ্ধের পরিণাম সিরিয়া যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি বিপর্যয়কর হতে পারে। যদি মাদুরো টিকে যান, তারপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মতো টিকে থাকেন তাহলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ক্ষতি। আবার এমন যদি হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে সফলতার সঙ্গে সরিয়ে দিলো তাহলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক ভয়াবহভাবে, সম্ভবত অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এতে সংঘাত ইউরোপের দিকে ছড়িয়ে পড়াটা সারা বিশ্বের জন্য হবে অত্যন্ত বিপদজনক। ইউরোপে এমন সংঘাত বা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তা থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ কিন্তু শুরু হয়েছিল ইউরোপ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে তিনটি দেশ রাশিয়া, চীন ও ভারত। রাশিয়া পারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তিকে ভারসাম্যে আনতে। চীন পারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিতে ভারসাম্য আনতে। ভারত পারে যুদ্ধবিরোধী সেন্টিমেন্ট কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করতে। সুয়েজ খাল নিয়ে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন খুবই ভাল ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল ভারত। ওই সময় কূটনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের জয় পেয়েছিল ভারত। এবং তারা এ আন্দোলনের একজন নেতা হয়ে উঠেছিল। এর ফলে গড়ে উঠেছিল নেহরু-নাসের বন্ধুত্ব। আর তাই পুরো আরব বিশ্ব ভারতকে তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে দেখা শুরু করে। ভারতের এখন উচিত সেই একই রকম বিশ্বাসযোগ্য ভূমিকা নেয়া। বিশ্বে প্রকৃত শান্তিরক্ষায় তার প্রেস্টিজ উন্নত করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাদের ঝুঁকে পড়ায় প্রথাগত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
আসুন আমরা প্রত্যাশা করি, সব পক্ষই রিবত থাকবে। এই সঙ্কটকে এমনভাবে উত্তেজনাকর করে তুলবেন না যাতে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভেনিজুয়েলা সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধে যেন প্রবেশ না করে।
(স্বরাজ সিং ওয়াশিংটন স্টেট নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান। তার এ লেখাটি রাশিয়ার অনলাইন প্রাভদা’য় প্রকাশিত হয়েছে)
তারা সমর্থন দিয়েছে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে। পশ্চিমা দেশগুলোর এমন উদ্যোগের সবচেয়ে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এর জন্য করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইকুয়েডরের সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়াও সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সামরিক হামলার বিরুদ্ধে। বলেছেন, এমন হামলা চালালে তাতে সৃষ্টি হবে একটি গৃহযুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অন্য দেশগুলোর জোরপূর্বক অন্যদের ওপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। লাতিন আমেরিকাকে সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র দেখে এসেছে তার ঘরের পিছনের জায়গা বা ব্যাকইয়ার্ড হিসেবে, যেখানে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। গত দুই শতাব্দীতে কিউবা বাদে সত্যিকার অর্থে লাতিন আমেরিকার কোনো দেশ স্বাধীন হতে পারে নি। সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। যখনই এই দুটি স্বার্থের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়, তখনই শক্তি প্রয়োগ করতে কখনোই দ্বিধাবোধ করে না যুক্তরাষ্ট্র। উদাহরণ হিসেবে ডা. সালভাদর অ্যালেন্ডের কথাই ধরা যাক। তিনি চিলির নির্বাচিত মার্কসপন্থি প্রেসিডেন্ট। তিনি তার দেশের সম্পদ তার জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে তার বিরুদ্ধে জেনারেল পিনোচেটকে দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তার থেকে মুক্ত হতে কালক্ষেপণ করে নি যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকা থেকে বামপন্থি শক্তিগুলোতে নির্মূল করার পর্যায়ক্রমিক একটি অপারেশন কন্ডোর পরিচালনা করে। সেখানে তারা ডানপন্থি একনায়কদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করে।
বার বার হুগো শাভেজের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হুগো শাভেজ ১৯৯৯ সাল থেকে ২-১৩ সাল পর্যন্ত ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তেল বিক্রির অর্থে তিনি তার দেশবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে গেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভেনিজুয়েলা অন্যতম। হুগো শাভেজ ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর নিকোলাস মাদুরো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তার কবল থেকে বার বার মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রতিবারই তিনি টিকে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ ও তেলের মূল্য পতনের ফলে বাস্তবেই ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি কঠিন অবস্থায়। প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে দায়ী করার জন্য এটাকে একটি অজুহাত হিসেবে বেছে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার মাদুরোকে সমর্থন করছে তার সেনাবাহিনী। আরেকটি ফ্যাক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্য মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো খুব কঠিন। তা হলো, কর্মজীবী মানুষের জন্য বড় একটি ভিত্তি রচনা করে গেছেন হুগো শাভেজ। এ ছাড়া রাশিয়ার সরবরাহ দেয়া এক লাখ একে-৪৭ রাইফেল তুলে দিয়েছেন তার অনুসারীদের হাতে। ফলে যদি মাদুরোর সমর্থক ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত হুয়ান গাইডোর সমর্থকদের মধ্যে একটি সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তা হয়ে উঠবে চরম মাত্রায় রক্তক্ষীয়। এই যুদ্ধ বিপর্যয়কর হবে বলে যথার্থই সতর্কতা দিয়েছেন ভøাদিমির পুতিন।
এমন একটি যুদ্ধ হলে তাতে রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লোকসানটা বেশি হবে। যদি তাতে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যায় তাহলে সম্ভবত সেটা হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টিজের জন্য একটি ভয়াবহ আঘাত। এমনকি যদি এই যুুদ্ধে আমেরিকা বিজয়ী হয় তাহলে দীর্থে মেয়াদে এর ফল তাদের জন্য সহায়ক হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। ইউরোপে নিজের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রাশিয়াকে বড় রকমের বিজয় অর্জন করতে হবে এবং তার মধ্য দিয়ে তাদেরকে প্রেস্টিজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মতো দেশের জন্য একটি বড় রকমের আঘাত দিতে হবে তাদেরকে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাতিন আমেরিকায় বিজয়ী হওযার চেয়ে ইউরোপে পরাজিত হওয়া হবে অনেক বেশি খারাপ।
এরই মধ্যে সিরিয়ার পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টিজ ও মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাবের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। ভেনিজুয়েলা যুদ্ধের পরিণাম সিরিয়া যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি বিপর্যয়কর হতে পারে। যদি মাদুরো টিকে যান, তারপর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মতো টিকে থাকেন তাহলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ক্ষতি। আবার এমন যদি হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে সফলতার সঙ্গে সরিয়ে দিলো তাহলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক ভয়াবহভাবে, সম্ভবত অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এতে সংঘাত ইউরোপের দিকে ছড়িয়ে পড়াটা সারা বিশ্বের জন্য হবে অত্যন্ত বিপদজনক। ইউরোপে এমন সংঘাত বা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তা থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ কিন্তু শুরু হয়েছিল ইউরোপ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে তিনটি দেশ রাশিয়া, চীন ও ভারত। রাশিয়া পারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তিকে ভারসাম্যে আনতে। চীন পারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিতে ভারসাম্য আনতে। ভারত পারে যুদ্ধবিরোধী সেন্টিমেন্ট কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি করতে। সুয়েজ খাল নিয়ে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন খুবই ভাল ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিল ভারত। ওই সময় কূটনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের জয় পেয়েছিল ভারত। এবং তারা এ আন্দোলনের একজন নেতা হয়ে উঠেছিল। এর ফলে গড়ে উঠেছিল নেহরু-নাসের বন্ধুত্ব। আর তাই পুরো আরব বিশ্ব ভারতকে তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে দেখা শুরু করে। ভারতের এখন উচিত সেই একই রকম বিশ্বাসযোগ্য ভূমিকা নেয়া। বিশ্বে প্রকৃত শান্তিরক্ষায় তার প্রেস্টিজ উন্নত করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাদের ঝুঁকে পড়ায় প্রথাগত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
আসুন আমরা প্রত্যাশা করি, সব পক্ষই রিবত থাকবে। এই সঙ্কটকে এমনভাবে উত্তেজনাকর করে তুলবেন না যাতে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভেনিজুয়েলা সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধে যেন প্রবেশ না করে।
(স্বরাজ সিং ওয়াশিংটন স্টেট নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান। তার এ লেখাটি রাশিয়ার অনলাইন প্রাভদা’য় প্রকাশিত হয়েছে)
No comments