কুয়েতে বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমিনদের জীবনধারা


বাংলাদেশ এবং এশিয়ার অন্য দেশ থেকে যাওয়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ওপর কুয়েতের পরিচ্ছন্নতা কাজ অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এশিয়ার হাজার হাজার মানুষ দেশটির সড়কে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং ব্যক্তিগত ভৃত্য হিসেবে কাজ করেন। তাদের বেশির ভাগই খুব অল্প বেতন পান। ফলে নিজেদের রোজগার বাড়ানোর জন্য তারা এসব কাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত কাজ করেন। এমনটাই জানিয়েছে অনলাইন কুয়েত টাইমস। 
বাংলাদেশি এক শ্রমিকের সঙ্গে তার কাজের বিষয়ে কথা বলে কুয়েত টাইমস। তিনি হলেন ফরিদপুরের আমিন মতলিব। তিনি কুয়েতে সড়ক পরিচ্চন্নতাকর্মী।
গাছ ও ঝোপঝাড় কাটার কাজও করেন। সেখানকার পার্ক এবং বাগানগুলোতে প্রতিদিন গাছ ছাঁটাইয়ের কাজ করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, আমি সুয়াইখ শহরের রাস্তা এবং বাগানের গাছ কাটা ও ঝোপঝাড় ছাঁটার দায়িত্বে রয়েছি। আমরা শুধু এই কাজই করি না, পানি সাপ্লাই প্ল্যান্টের সুইচ বন্ধ ও চালানোর কাজও করি। 
গ্রীষ্মকালে আমিন ভোর তিনটায় ঘুম থেকে ওঠেন। ৩টা ৪৫ মিনিটে তাদেরকে বাসে করে নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। ৪টা থেকে কাজ শুরু করে বিকালে ঘরে ফিরে আসেন। আমিন জানান, আমার চাচা ও আরো পাঁচ বাংলাদেশি আমার সঙ্গে কাজ করেন। সুয়াইখে আমরা তিনটি দীর্ঘ রাস্তা পরিষ্কার করি। আমাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সেরে ফেলার নির্দেশনা দেয়া থাকে। যাতে রোদ উঠে গেলে বিশ্রাম নিতে পারি। প্রয়োজন হলে আমরা গাছ ছাঁটাইয়ের কাজও করি। 
কুয়েতে ১লা জুন থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ। সুতরাং ১০টা থেকে আমরা গাছের ছায়ায় জমায়েত হতে শুরু করি। একে অন্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলি, দেশে কল করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলি, খাওয়া-দাওয়া করি। ততক্ষণে ট্রাকে ময়লার ব্যাগ ওঠানো হয়। বিকালের দিকে আমিনের কাজ শেষ হয় এবং বাসে করে ঘরে ফিরে যান।     
আমিনের বয়স ৩০ বছর। তার ১৪ বছরের একটি ছেলে এবং তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পরিবার প্রসঙ্গে আমিন জানান, ১৫ বছর বয়সে আমি বিয়ে করি। বাংলাদেশে জীবনধারা খুব কঠিন। ১৫ বছর বয়সে আমি আমার ছোটবেলার প্রেমিকাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। বাবা-মাকে এ বিষয়ে জানালে তারা সম্মতি দেন। বিয়ের পরে ফরিদপুরে সংসার শুরু করি। আমার মনে আছে, প্রথম সন্তান জন্মের সময় পর্যন্তও আমাদের জীবন কষ্টকর ছিল। তখন আমার বয়স ১৬। আমি তখন কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতাম। কিন্তু চেয়ার, টেবিল বানিয়ে যে টাকা রোজগার করতাম তা আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট ছিল না। একদিন আমার স্ত্রীকে বললাম যে, আমার বিদেশে চলে যাওয়া উচিত। এটা তার জন্য কষ্টকর হলেও, ধীরে ধীরে সে মেনে নেয়। পরে এজেন্টের মাধ্যমে টাকা দিয়ে পরের মাসে কুয়েত চলে আসি। আমি আমার চাচা আবুল খায়ের একসাথে ২০০৫ সালে কুয়েত আসি। আমার চাচার বয়স তখন ৪০, আর আমি মাত্র ১৮। পরে মাসিক ৪০ কুয়েতি দিনার চুক্তিতে আমাদেরকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০ কুয়েতি দিনার করা হয়। অবসর সময়ে আমি গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করি যাতে আমি কিছু বাড়তি রোজগার করতে পারি। এই হলো আমার জীবন। 
সড়ক পরিচ্চন্নতাকর্মীদের খারাপ আবহাওয়ার উপেক্ষা করে, ভালো-খারাপ মানুষের সঙ্গে চুক্তি করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ বিষয়ে আমিন বলেন, আমরা এমন নির্মম আবহাওয়ায় অভ্যস্ত নই। কিন্তু আমাদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। যখন প্রখর রোদ থাকে, তখন আমরা অবশ্যই গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম করি। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের সঙ্গে চিৎকার করে। প্রখর রোদে কাজ করতে বলে। তবে একইভাবে ভালো মানুষও রয়েছেন। আমাদের ভাগ্য ভালো থাকলে কেউ কেউ ৫ কিংবা ১০ দিনার দেন। আমিন আরো বলেন, আমাদেরকে গ্রীষ্মের প্রখর রোদে এবং শীতকালে তীব্র শীতের মধ্যে কাজ করতে হয়। এখানে আমরা যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই, তাতে এখানকার মানুষরা অভ্যস্ত। 
আমিনরা যে গাছ ছাঁটাই করেন, সেগুলো ট্রাকে করে ফার্মে নেয়া হয়। আর কাগজ ও প্লাস্টিকগুলো রিসাইকেল করার উদ্দেশ্যে নেয়া হয়। বর্জ্য সরাসরি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

No comments

Powered by Blogger.