‘আমি চাই না রোহিঙ্গারা ফিরে আসুক’
মোহাম্মদ
হোসেন একজন রোহিঙ্গা। মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন
বাংলাদেশে। তিনি জানেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোন ব্যক্তি তাদের
গ্রামে হানা দিয়েছিল। কে ওই গ্রামের মানুষদের কেটে কেটে টুকরো টুকরো
করেছিল। তিনি বলেন, দু’বছর আগে ওই একই ব্যক্তি তাকে এক অন্ধকূপে আটকে
রেখেছিল। উত্তপ্ত ধাতব রড দিয়ে তার পা পুড়িয়ে দিয়েছিল। আঙ্গুলের নখের ভিতর
দিয়ে সূচ ফুটিয়ে দিয়েছিল। ওই একই ব্যক্তি মোস্তাফা খাতুনকে কয়েকদিন ধরে
পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেছে। তারপর সেনারা যখন ওই তার গ্রামে হানা দেয় তখন ওই
একই ব্যক্তি মোস্তাফা খাতুনের স্বামীর গলা কেটে ফেলে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের
সাংবাদিক মাইকেল শয়ার্টজকে দেয়া সাক্ষাতকারে দুই ডজনের মতো মুসলিম রোহিঙ্গা
শরণার্থী যেসব কথা বলেছেন তা প্রায় অভিন্ন। এসব সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে
কিভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নিষ্পেষণ চালানো হয়েছে।
কিভাবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছর ২৭ শে আগস্ট মিয়ানমারে ছুট পাইন
গ্রামে কিভাবে গণহারে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তারা সবাই বলেছেন, এর জন্য
দায়ী একজন ব্যক্তি। রোহিঙ্গারা জানেন ওই ব্যক্তি কোথায় বসবাস করে এবং তারা
তার মোবাইল নম্বর পর্যন্ত জানেন। তার নাম হলো অং থেইন মাইয়া। ছুট পাইন
গ্রাম সহ বেশ কতগুলো গ্রামের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছে সে। তাকে যে বিচারের
আওতায় আনা হবে তেমন কোন লক্ষণই নেই।
এক বছর পেরিয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার। তারা রোহিঙ্গা জাতিকে নির্মূল করার মিশনে নেমেছিল। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। হত্যা করেছে হাজার হাজার মানুষকে। ধর্ষণ করেছে নারীদের। এতে বাধ্য হয়ে বন্যার পানির মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এ ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এর জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রচেষ্টা নিয়েছে তা বড় অর্থে হোঁচট খেয়েছে। তারা দৃষ্টি দিয়েছে দেশটির নেতৃত্বের দিকে। এর মধ্যে রয়েছে জেনারেলরা ও মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি। এর মধ্যে সুচি ওই নৃশংসতা বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি তীব্র সমালোচিত হয়েছেন। নিন্দিত হয়েছেন। তার অনেক সম্মানসূচক পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে।
নির্যাতনকারীদের মধ্যে অং থেইন মাইয়া কোনো সেনা সদস্য নয়। সে একজন বেসামরিক প্রশাসক। সেনাবাহিনী ও নিজেদের বামার বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের দিয়ে সে রোহিঙ্গাদের ওপর দীর্ঘদিন নিষ্পেষণ চালিয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক। জবাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অং থেইন মাইয়া। সে দাবি করে, ওই গণহত্যার সময় সে সেখানে উপস্থিত পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু তার এই বক্তব্য এক ডজনেরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের বিপরীত। ছুট পাইন গ্রামের অধিবাসীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন নির্যাতনের সেই একই রকম বক্তব্য এসেছে রাখাইনের অন্য গ্রামগুলো থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে। ফলে তারা এখন শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাখাইনে ফিরে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন।
ছুট পাইন ও অন্য গ্রামের বৌদ্ধ রাখাইন ও মুসলিম রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন অস্বস্তিকরভাবে পাশাপাশি বসবাস করছেন। তারা মাঠের ধানক্ষেতের অধিকার নিয়ে প্রতিযোগিতা করেন।
পুকুরের মাছ কে ধরবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। কোথায় গবাদিপশু চড়ানো যাবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই তাদের মধ্যে এই অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ওই যুদ্ধে রাখাইনরা যে পক্ষকে সমর্থন করতো, রোহিঙ্গারা তার বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করতেন। বৌদ্ধরা সমর্থন করতো জাপানকে। মুসলিমরা সহযোগিতা করতেন বৃটেনকে।
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেন জেনারেলরা। তাদের অধীনে অং থেইন মাইয়ার মতো বৌদ্ধরা রাজ্যের বড় বড় ক্ষমতা পেয়ে যায়। রোহিঙ্গাদের ওপর মাতব্বরি চালানোর বিশাল ক্ষমতা আসে তাদের হাতে।
জুলাই মাসে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ফোরটিফাই রাইটস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে স্থানীয় বৌদ্ধদের সহযোগিতা নিয়ে সেনাবাহিনী নির্মমভাবে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অন্য অপরাধগুলো ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে পারে এমন জিনিসগুলো জব্দ করা হয়। রোহিঙ্গাদের বাড়ির চারপাশে যে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছিল তা ভেঙে ফেলে তারা। হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল রাখাইন রাজ্যে।
অনেক বছর ধরে অং থেইন মাইয়া রোহিঙ্গাদেরকে তার অধীনে সন্ত্রাসী এক অবস্থার মধ্যে রেখেছিল। সে তাদের সবকিছু চুরি করে নেয়। গবাদি পশু চড়ানো থেকে শুরু করে বিয়ের প্রস্তাব সবকিছুতে সে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করে।
আবদুল্লাহ নামে একজন রোহিঙ্গা তার নাম উচ্চারিত হতেই ক্ষোভে জ্বলে উঠলেন। তিনি বলেছেন, অং থেইন মাইয়া আমাদেরকে এতটাই নির্যাতন করেছে যে, আমার মনে হয় তাকে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতাম।
ছুট পাইন গ্রামে নির্যাতনের অভিন্ন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর তদন্তকারীরা। জুনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাতে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, অং থেইন মাইয়া তাদের ওপর দীর্ঘদিন নির্যাতন চালিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে অং থেইন মাইয়া। এখনও সে দায়িত্বে আছে। বলেছে, রোহিঙ্গা প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার রয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তবে সে রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে অভিহিত করেছে। বলেছে, বাঙালিরা মিথ্যে অভিযোগ করেছে। তারা আসলে মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তারা বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী। তার অভিযোগ, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। কি কারণে তারা পালিয়েছে সে বিষয়টি অং থেইন মাইয়ার কাছে অজানা। তার দাবি, রোহিঙ্গারা চলে যাওয়ায় তার ও তার প্রতিবেশীদের জীবন উন্নত হয়েছে। সাক্ষাতকারে সে বলেছে, আমি চাই না এসব রোহিঙ্গা আর ফিরে আসুক। বাঙালিদের বাদ দিয়ে আমাদের গ্রাম শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
এক বছর পেরিয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার। তারা রোহিঙ্গা জাতিকে নির্মূল করার মিশনে নেমেছিল। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। হত্যা করেছে হাজার হাজার মানুষকে। ধর্ষণ করেছে নারীদের। এতে বাধ্য হয়ে বন্যার পানির মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এ ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এর জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রচেষ্টা নিয়েছে তা বড় অর্থে হোঁচট খেয়েছে। তারা দৃষ্টি দিয়েছে দেশটির নেতৃত্বের দিকে। এর মধ্যে রয়েছে জেনারেলরা ও মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি। এর মধ্যে সুচি ওই নৃশংসতা বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি তীব্র সমালোচিত হয়েছেন। নিন্দিত হয়েছেন। তার অনেক সম্মানসূচক পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে।
নির্যাতনকারীদের মধ্যে অং থেইন মাইয়া কোনো সেনা সদস্য নয়। সে একজন বেসামরিক প্রশাসক। সেনাবাহিনী ও নিজেদের বামার বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের দিয়ে সে রোহিঙ্গাদের ওপর দীর্ঘদিন নিষ্পেষণ চালিয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক। জবাবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অং থেইন মাইয়া। সে দাবি করে, ওই গণহত্যার সময় সে সেখানে উপস্থিত পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু তার এই বক্তব্য এক ডজনেরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের বিপরীত। ছুট পাইন গ্রামের অধিবাসীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন নির্যাতনের সেই একই রকম বক্তব্য এসেছে রাখাইনের অন্য গ্রামগুলো থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে। ফলে তারা এখন শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাখাইনে ফিরে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন।
ছুট পাইন ও অন্য গ্রামের বৌদ্ধ রাখাইন ও মুসলিম রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন অস্বস্তিকরভাবে পাশাপাশি বসবাস করছেন। তারা মাঠের ধানক্ষেতের অধিকার নিয়ে প্রতিযোগিতা করেন।
পুকুরের মাছ কে ধরবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। কোথায় গবাদিপশু চড়ানো যাবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই তাদের মধ্যে এই অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ওই যুদ্ধে রাখাইনরা যে পক্ষকে সমর্থন করতো, রোহিঙ্গারা তার বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করতেন। বৌদ্ধরা সমর্থন করতো জাপানকে। মুসলিমরা সহযোগিতা করতেন বৃটেনকে।
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেন জেনারেলরা। তাদের অধীনে অং থেইন মাইয়ার মতো বৌদ্ধরা রাজ্যের বড় বড় ক্ষমতা পেয়ে যায়। রোহিঙ্গাদের ওপর মাতব্বরি চালানোর বিশাল ক্ষমতা আসে তাদের হাতে।
জুলাই মাসে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ফোরটিফাই রাইটস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে স্থানীয় বৌদ্ধদের সহযোগিতা নিয়ে সেনাবাহিনী নির্মমভাবে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অন্য অপরাধগুলো ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে পারে এমন জিনিসগুলো জব্দ করা হয়। রোহিঙ্গাদের বাড়ির চারপাশে যে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছিল তা ভেঙে ফেলে তারা। হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল রাখাইন রাজ্যে।
অনেক বছর ধরে অং থেইন মাইয়া রোহিঙ্গাদেরকে তার অধীনে সন্ত্রাসী এক অবস্থার মধ্যে রেখেছিল। সে তাদের সবকিছু চুরি করে নেয়। গবাদি পশু চড়ানো থেকে শুরু করে বিয়ের প্রস্তাব সবকিছুতে সে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করে।
আবদুল্লাহ নামে একজন রোহিঙ্গা তার নাম উচ্চারিত হতেই ক্ষোভে জ্বলে উঠলেন। তিনি বলেছেন, অং থেইন মাইয়া আমাদেরকে এতটাই নির্যাতন করেছে যে, আমার মনে হয় তাকে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতাম।
ছুট পাইন গ্রামে নির্যাতনের অভিন্ন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছেন মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর তদন্তকারীরা। জুনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাতে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, অং থেইন মাইয়া তাদের ওপর দীর্ঘদিন নির্যাতন চালিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে অং থেইন মাইয়া। এখনও সে দায়িত্বে আছে। বলেছে, রোহিঙ্গা প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার রয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তবে সে রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে অভিহিত করেছে। বলেছে, বাঙালিরা মিথ্যে অভিযোগ করেছে। তারা আসলে মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তারা বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী। তার অভিযোগ, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। কি কারণে তারা পালিয়েছে সে বিষয়টি অং থেইন মাইয়ার কাছে অজানা। তার দাবি, রোহিঙ্গারা চলে যাওয়ায় তার ও তার প্রতিবেশীদের জীবন উন্নত হয়েছে। সাক্ষাতকারে সে বলেছে, আমি চাই না এসব রোহিঙ্গা আর ফিরে আসুক। বাঙালিদের বাদ দিয়ে আমাদের গ্রাম শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
No comments