হৃদয়ভাঙা মৃত্যু
রক্তনালিতে
টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণি গতকাল সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭ টায়
মারা গেছে। মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন মানবজমিনকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল
১১টা থেকে মুক্তামণির প্রচণ্ড জ্বর আসে। এর পর থেকে আমার সোনাপাখি আর কোনো
কথা বলেনি। অথচ আমার সোনাপাখি কারো সঙ্গে কথা না বলে এক মুহূর্তও থাকতে
পারতো না। দুই বোন এক ভাই-এর মধ্যে মুক্তামণি আর হিরামণি ছিল যমজ বড় বোন।
সবার ছোট হচ্ছে ভাই আল আমিন। হিরামণি ক্লাস ফাইভে পড়লেও মুক্তামণি ক্লাস টু
পর্যন্ত পড়াশোনার পর আর নিয়মিত করতে পারেনি। জন্মের দেড় বছরের মাথায় তার
ডান হাতে ছোট্ট একটি টিউমারের মতো দেখা যায়। এরপর স্থানীয় হোমিওপ্যাথিক
ডাক্তার থেকে শুরু করে সাতক্ষীরার সকল ডাক্তার দেখিয়ে সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও আমার পাখিকে বাঁচাতে পারিনি বলে কান্নায়
ভেঙে পড়েন মুক্তামণির বাবা।
মুক্তামণির মা আসমা খাতুন মেয়েকে সব সময় চোখে চোখে রাখতেন বলে জানান বাবা ইব্রাহিম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে জ্বর আসার পর মুক্তামণিকে বলেছিলাম, চলো মা আর একবার ঢাকায় যেয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসি। জবাবে মুক্তামণি বাবাকে বলে, আব্বা আমি আর কোথাও যেতে চাই না। মুক্তামণির শরীরে রক্ত ছিল না বললেই চলে। তাই অনেক বুঝিয়ে বলার পর সাতক্ষীরা সদরে গিয়ে শরীরে রক্ত দিতে যেতে রাজি হয় মুক্তা। সুস্থ থাকাকালীন মুক্তামণি বাবাকে বলতো, আব্বা আমি সুস্থ হয়ে বোনের সঙ্গে স্কুলে যাবো। তোমাদের সঙ্গে কুটুম বাড়ি বেড়াতে যাবো। আমার সোনাপাখির আর কোথাও যাওয়া হবে না। না কুটুম বাড়ি, না স্কুলে। মারা যাওয়ার আগে বাবার কাছ থেকে পানি পান করার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মুক্তা। উপজেলার কামারবাসা গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যায় স। শেষবারের মতো মুক্তামণিকে দেখতে শ’ শ’ মানুষ তাদের বাসায় ভিড় জমিয়েছেন। এ সময় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফরহাদ জামিল মুক্তামণির বাসায় এসে পরিবারকে সমবেদনা জানান।
মুক্তামণির বোন হীরামণি বলেন, ইচ্ছে ছিল, বোন সুস্থ হলে ওকে নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাবো। কিন্তু তা আর হলো না।’ কথাগুলো বলছিল মুক্তামণির যমজ বোন হীরামণি। রক্তনালির টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণি বুধবার সকালে মারা যাওয়ার পর হীরামণি এভাবেই শোকাতুর ভাবে কথাগুলো বলছিলো। সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদির দোকানদার ইব্রাহিম হোসেনের দুই যমজ মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা ফুলে ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে। এরপর থেকেই মুক্তামণি বিছানাবন্দি হয়ে পড়ে। সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা চিকিৎসা চলে। তবে ভালো হয়নি বা ভালো হবে, সে কথা কেউ কখনো বলেননি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনায় আসে মুক্তামণির খবর। গত বছরের ১১ই জুলাই মুক্তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে বার্ন ইউনিটের কেবিনে ছিল ছয় মাস। গত বছরের ১২ই আগস্ট তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় তার ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের একটি টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। তবে সাময়িকভাবে হাতের ফোলা কমলেও তা সমপ্রতি আগের চেয়েও বেশি ফুলে গিয়েছিল। রক্ত জমতে থাকে ফোলা জায়গায়। আর ড্রেসিং করতে কয়েক দিন দেরি হলেই হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো এবং আগের মতো হাত থেকে অসংখ্য সাদা পোকা বেরিয়ে আসতো। মুক্তামণির বয়স হয়েছিল ১২ বছর। গত বছরের ২২শে ডিসেম্বর এক মাসের ছুটিতে বার্ন ইউনিট থেকে মুক্তামণি বাড়ি ফেরে। তবে ওর আর ঢাকায় ফেরা হয়নি।
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা খারাপ দেখে ১৫ দিন আগে ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তিনি মুক্তার দু’টি ছবি পাঠানোর কথা বলেন। ছবি দেখে তার হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডাক্তার। এরপর গত বুধবার সামন্ত লাল ফোন করে মুক্তামণির খোঁজ-খবর নিয়ে রোজার পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। মুক্তামণির অবস্থার অবনতির পাশাপাশি জ্বর এলে তিনি মঙ্গলবার আবার সামন্ত লালের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তামণির মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি, এটা তো খুবই খারাপ খবর।’ ‘জীবনে বহু রোগীর চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছি, আবার বহু রোগীর মৃত্যুও দেখেছি। কিন্তু মুক্তামণির মৃত্যু আমার জন্য হার্ট ব্রেকিং খবর। ছোট্ট এ শিশুটির ধুঁকে ধুঁকে মারা যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না’।
তিনি বলেন, ‘ও যে রোগে ভুগছিল সেটা নিয়ে এমন সময়ে আমাদের কাছে এসেছে যখন আর কোনও উপায় ছিল না। আরও আগে যদি আসতো তাহলে ডেফিনিটলি আমরা সেটা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করতাম।’ ‘গতকাল আমি তার বাসায় স্থানীয় সিভিল সার্জনকে দিয়ে চিকিৎসকও পাঠিয়েছিলাম। আমার চিকিৎসকরা গিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ওর বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। আসতে বলছিলাম। কিন্তু ওরা কিছুতেই ঢাকায় আসতে চায়নি।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তওহীদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অবস্থার অবনতি হয়েছে শুনে গতকাল দুপুরে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ফরহাদ জামিল ও অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ মো. হাফিজুল্লাহকে মুক্তামণির বাড়িতে পাঠান।
এ বিষয়ে ফরহাদ জামিল গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ও হাফিজুল্লাহ মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তামণির বাড়িতে গিয়েছিলেন। মুক্তামণির শরীরে তখন জ্বর ছিল। রক্তশূন্যতায় ভুগছিল সে। হাতের ক্ষত আরও বেড়ে গিয়েছিল। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তার রোগ শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভালো করে সে কথা বলতে পারছিল না। বিষয়টি তারা ডা. সামন্ত লাল সেনকে বিস্তারিত জানান। তবে মুক্তামণি ও তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন আর ঢাকায় যেতে চাচ্ছিলেন না।
সাতক্ষীরার মুক্তামণিকে দাদার কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে মুক্তামণির জানাজা সম্পন্ন হয়। মুক্তামণিকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শাহ আবদুল সাদী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার।
উল্লেখ্য, মুক্তামণির কী অসুখ জানেন না চিকিৎসকরাও!’ এই শিরোনামে একটি অনলাইনে খবর প্রকাশিত হয়। পরে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আসে। বিষয়টি নজরে আসার পর অনেকেই মুক্তার চিকিৎসায় হাত বাড়ান। পরে মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১২ই জুলাই রক্তনালির টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালিতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামণির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেক’র চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর মুক্তামণির হাতে গত বছরের ৫ই আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। শুরুতে তার হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মুক্তামণির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামণির হাত আবার ফুলে যাওয়ায় ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়া হয়।
মুক্তামণির মা আসমা খাতুন মেয়েকে সব সময় চোখে চোখে রাখতেন বলে জানান বাবা ইব্রাহিম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে জ্বর আসার পর মুক্তামণিকে বলেছিলাম, চলো মা আর একবার ঢাকায় যেয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসি। জবাবে মুক্তামণি বাবাকে বলে, আব্বা আমি আর কোথাও যেতে চাই না। মুক্তামণির শরীরে রক্ত ছিল না বললেই চলে। তাই অনেক বুঝিয়ে বলার পর সাতক্ষীরা সদরে গিয়ে শরীরে রক্ত দিতে যেতে রাজি হয় মুক্তা। সুস্থ থাকাকালীন মুক্তামণি বাবাকে বলতো, আব্বা আমি সুস্থ হয়ে বোনের সঙ্গে স্কুলে যাবো। তোমাদের সঙ্গে কুটুম বাড়ি বেড়াতে যাবো। আমার সোনাপাখির আর কোথাও যাওয়া হবে না। না কুটুম বাড়ি, না স্কুলে। মারা যাওয়ার আগে বাবার কাছ থেকে পানি পান করার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মুক্তা। উপজেলার কামারবাসা গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যায় স। শেষবারের মতো মুক্তামণিকে দেখতে শ’ শ’ মানুষ তাদের বাসায় ভিড় জমিয়েছেন। এ সময় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফরহাদ জামিল মুক্তামণির বাসায় এসে পরিবারকে সমবেদনা জানান।
মুক্তামণির বোন হীরামণি বলেন, ইচ্ছে ছিল, বোন সুস্থ হলে ওকে নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাবো। কিন্তু তা আর হলো না।’ কথাগুলো বলছিল মুক্তামণির যমজ বোন হীরামণি। রক্তনালির টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণি বুধবার সকালে মারা যাওয়ার পর হীরামণি এভাবেই শোকাতুর ভাবে কথাগুলো বলছিলো। সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদির দোকানদার ইব্রাহিম হোসেনের দুই যমজ মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা ফুলে ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে। এরপর থেকেই মুক্তামণি বিছানাবন্দি হয়ে পড়ে। সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা চিকিৎসা চলে। তবে ভালো হয়নি বা ভালো হবে, সে কথা কেউ কখনো বলেননি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর প্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনায় আসে মুক্তামণির খবর। গত বছরের ১১ই জুলাই মুক্তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে বার্ন ইউনিটের কেবিনে ছিল ছয় মাস। গত বছরের ১২ই আগস্ট তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় তার ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের একটি টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। তবে সাময়িকভাবে হাতের ফোলা কমলেও তা সমপ্রতি আগের চেয়েও বেশি ফুলে গিয়েছিল। রক্ত জমতে থাকে ফোলা জায়গায়। আর ড্রেসিং করতে কয়েক দিন দেরি হলেই হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো এবং আগের মতো হাত থেকে অসংখ্য সাদা পোকা বেরিয়ে আসতো। মুক্তামণির বয়স হয়েছিল ১২ বছর। গত বছরের ২২শে ডিসেম্বর এক মাসের ছুটিতে বার্ন ইউনিট থেকে মুক্তামণি বাড়ি ফেরে। তবে ওর আর ঢাকায় ফেরা হয়নি।
মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা খারাপ দেখে ১৫ দিন আগে ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তিনি মুক্তার দু’টি ছবি পাঠানোর কথা বলেন। ছবি দেখে তার হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডাক্তার। এরপর গত বুধবার সামন্ত লাল ফোন করে মুক্তামণির খোঁজ-খবর নিয়ে রোজার পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। মুক্তামণির অবস্থার অবনতির পাশাপাশি জ্বর এলে তিনি মঙ্গলবার আবার সামন্ত লালের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তামণির মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি, এটা তো খুবই খারাপ খবর।’ ‘জীবনে বহু রোগীর চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছি, আবার বহু রোগীর মৃত্যুও দেখেছি। কিন্তু মুক্তামণির মৃত্যু আমার জন্য হার্ট ব্রেকিং খবর। ছোট্ট এ শিশুটির ধুঁকে ধুঁকে মারা যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না’।
তিনি বলেন, ‘ও যে রোগে ভুগছিল সেটা নিয়ে এমন সময়ে আমাদের কাছে এসেছে যখন আর কোনও উপায় ছিল না। আরও আগে যদি আসতো তাহলে ডেফিনিটলি আমরা সেটা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করতাম।’ ‘গতকাল আমি তার বাসায় স্থানীয় সিভিল সার্জনকে দিয়ে চিকিৎসকও পাঠিয়েছিলাম। আমার চিকিৎসকরা গিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ওর বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। আসতে বলছিলাম। কিন্তু ওরা কিছুতেই ঢাকায় আসতে চায়নি।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তওহীদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অবস্থার অবনতি হয়েছে শুনে গতকাল দুপুরে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ফরহাদ জামিল ও অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ মো. হাফিজুল্লাহকে মুক্তামণির বাড়িতে পাঠান।
এ বিষয়ে ফরহাদ জামিল গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ও হাফিজুল্লাহ মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তামণির বাড়িতে গিয়েছিলেন। মুক্তামণির শরীরে তখন জ্বর ছিল। রক্তশূন্যতায় ভুগছিল সে। হাতের ক্ষত আরও বেড়ে গিয়েছিল। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তার রোগ শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভালো করে সে কথা বলতে পারছিল না। বিষয়টি তারা ডা. সামন্ত লাল সেনকে বিস্তারিত জানান। তবে মুক্তামণি ও তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন আর ঢাকায় যেতে চাচ্ছিলেন না।
সাতক্ষীরার মুক্তামণিকে দাদার কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে মুক্তামণির জানাজা সম্পন্ন হয়। মুক্তামণিকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক শাহ আবদুল সাদী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার।
উল্লেখ্য, মুক্তামণির কী অসুখ জানেন না চিকিৎসকরাও!’ এই শিরোনামে একটি অনলাইনে খবর প্রকাশিত হয়। পরে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আসে। বিষয়টি নজরে আসার পর অনেকেই মুক্তার চিকিৎসায় হাত বাড়ান। পরে মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১২ই জুলাই রক্তনালির টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালিতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামণির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেক’র চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর মুক্তামণির হাতে গত বছরের ৫ই আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। শুরুতে তার হাতের ফোলা অংশে অস্ত্রোপচার করে তা ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল মুক্তামণির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামণির হাত আবার ফুলে যাওয়ায় ফোলা কমানোর জন্য হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেয়া হয়।
No comments