বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে নিজেদের বিপদ ডাকছি -পলিসি ফোরামের নিবন্ধ by আইজ্যাক কফির
১৯৭১
সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বাধীন দেশ
বাংলাদেশ হিসেবে জন্ম নেয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়
আধিপত্যের পালাবদল হয়েছে দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এর একটি হলো বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
বিএনপি।
১৯৪১ সালে ভারতীয় ইসলামপন্থি নেতা আবুল আলা মওদুদী প্রতিষ্ঠিত জামাতে ইসলামীর একটি মিত্র দল বিএনপি। ১৯৭১ সালে এই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। কেননা, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রত্যাখ্যান করে। তখন থেকেই জামায়াত বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। যদিও ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার জামাতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়ার অভিযোগ তুললে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মুহাম্মদ এ আরাফাত রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বলেন, ‘জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী দল যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীনতার বিরোধিতা করে তারা নিজেদের জনগণকে হত্যা করেছে। এ দলটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। তাদের আদর্শ ও কর্মকাণ্ড গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী।’
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উগ্রপন্থা উত্থান নিয়ে যাদের উদ্বেগ রয়েছে তাদের জন্য বাংলাদেশকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা বাংলাদেশিদের সালাফি জিহাদিজমে সমর্থন দিতে উৎসাহিত করতে পারে।
প্রথমত, জামায়াতে ইসলামী ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো দাবি করে, যেহেতু বাংলাদেশ ব্লগার ও নাস্তিকদেরকে তাদের অনৈসলামিক মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়, তাই এ দেশ ইসলামকে ত্যাগ করেছে। আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি দেশটির বিরুদ্ধে মুসলিমদের হত্যার অভিযোগ করেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবাদের হুমকিকে অব্যাহতভাবে ভিন্নমত দমন ও বিরোধীদের দুর্নাম করতে ব্যবহার করছে।
এ বছরের শুরুতে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয় যা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আড়াই লাখ ডলার (২,৫২,০০০ ডলার) অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর তার ছেলেকে দেয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড। বিএনপি দাবি করেছে, এ বিচার ও রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা অকারণেই এমনটি বলেনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপির ৩ হাজারেরও বেশি কর্মীকে জেলে ঢুকিয়েছে সরকার।
বিএনপি আরো অভিযোগ করেছে যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী ভিন্নমতের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত।
ভিন্নমত চর্চার সুযোগ কমিয়ে এবং তা মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে সরকার এই অভিযোগের ভিত্তি স্থাপন করেছে যে, দেশ একদলীয় শাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এটা সরকার বিরোধীদেরকে ইসলামের ব্যানারে সমবেত হতে উৎসাহিত করতে পারে। যার সাহায্যে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, কীভাবে দলটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষকে নিগ্রহ করছে এবং একটি ধর্মভিত্তিক দলের অধীনে বাংলাদেশ কীভাবে একটি সমৃদ্ধ সমঅধিকারের দেশে পরিণত হবে- এসব মতবাদ প্রচার করা হতে পারে।
বার্মার রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। তাদের ওপরে চালানো নির্যাতনের সঙ্গে মিয়ানমারের সাবেক জেনারেল নে উইনের উগ্র-জাতীয়তাবাদী ‘মিয়ানমারাইজেশন’ নীতি ও তার বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা ছিনিয়ে নেয়া হয়। কার্যত নিজের দেশেই তাদের রাষ্ট্রহীন করা হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। পাকিস্তান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, শরণার্থী শিবির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। সুন্দর ভবিষ্যতের কথা বলে মানবপাচারকারী, চোরাচালানকারী ও উগ্রপন্থিরা শরণার্থীদের দুর্দশার সুযোগ নিতে পারে। আল-কায়েদা ও দায়েশ (ইসলামিক স্টেট) রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার সুযোগ নেয়ার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরকার এখনো দেশে বিদেশি জিহাদিদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করে নি।
বাংলাদেশ টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় অতিবাহিত করেছে। গত বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশে পৌঁছেছে। পরপর তিন বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশের ওপরে। যা হোক, সরকার শুধু ঢাকা শহরেই উন্নয়ন করছে এমন দাবি তুলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সফলতাকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। এটা শুধু মানুষকে কাজের খোঁজে রাজধানীতে পাড়ি জমাতেই উৎসাহিত করছে। এটাই বুঝিয়ে দেয় যে, কেন দেশের শহুরে জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশই ঢাকায় বসবাস করে। যা ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত করেছে।
এই অর্থনৈতিক পরিবর্তন বাংলাদেশে আধুনিকীকরণ করেছে যেখানে এখন একটি এলজিবিটি ম্যাগাজিন আর ধর্মনিরপেক্ষতা ও ব্লগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। একইসঙ্গে আধুনিকায়ন বর্তমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অসন্তোষ তৈরি করছে। একই সঙ্গে দুর্বল অবকাঠামো, মৌলিক সেবা ও নিরাপত্তায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এই পরিবেশে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম বা ছাত্রশিবিরের মতো ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আল কায়েদা নিজেদেরকে মিত্র হিসেবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ বলতে যা বোঝায় তার বিরুদ্ধে মতবাদ প্রচার করছে।
নিজেরাই সন্ত্রাসী হামলা করার পরিবর্তে আল কায়েদা বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, তারা নিজেদের সরকারের কাছেই হামলার শিকার। যাতে সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমারা। আল কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত হচ্ছে। যেখানে মুসলিমদের ধার্মিকতা, সম্মান ও পবিত্র স্থানের মর্যাদা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাদের জীবন বিপন্ন। তারা নির্যাতিত হচ্ছে। দেশটি ইসলামের সঙ্গে রাজনৈতিক, সামরিক ও আদর্শগতভাবে যুদ্ধ করছে।’
এদিকে, দায়েশের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। এদের কর্মীরা বাংলাদেশে কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। তারা ইতালিয়ান বিদেশিদের আনাগোনা আছে এমন একটি ক্যাফেতে আক্রমণ করেছে। যাতে প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, ইতালিয়ান ত্রাণকর্মী সিজার তাবেলাকে হত্যা করেছে।
বাংলাদেশ এমন বহু ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে যা এ দেশকে আল কায়েদা ও দায়েশের কাছে লোভনীয় করে তুলেছে। উভয় দলই দেশের কিছু গঠনতান্ত্রিক জটিলতার সুযোগ নিতে চাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনছি।
[উপরের লেখাটি পলিসিফোরামে প্রকাশিত আইজ্যাক কফিরের লেখা ‘ইগনোরিং বাংলাদেশ অ্যাট আওয়ার পেরিল’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে অনূদিত। আইজ্যাক কফির অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক এবং অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটের কাউন্টার টেরোরিজম পলিসি সেন্টারের প্রধান। আর পলিসিফোরাম অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্রফর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির একটি উদ্যোগ যেখানে এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের নানা ইস্যুতে বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ অভিমত প্রকাশিত হয়। আইজ্যাক কফিরের এ লেখাটি এশিয়ান করেসপন্ডেন্টেও প্রকাশিত হয়েছে]
১৯৪১ সালে ভারতীয় ইসলামপন্থি নেতা আবুল আলা মওদুদী প্রতিষ্ঠিত জামাতে ইসলামীর একটি মিত্র দল বিএনপি। ১৯৭১ সালে এই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। কেননা, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রত্যাখ্যান করে। তখন থেকেই জামায়াত বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। যদিও ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার জামাতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়ার অভিযোগ তুললে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মুহাম্মদ এ আরাফাত রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বলেন, ‘জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী দল যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীনতার বিরোধিতা করে তারা নিজেদের জনগণকে হত্যা করেছে। এ দলটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। তাদের আদর্শ ও কর্মকাণ্ড গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী।’
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উগ্রপন্থা উত্থান নিয়ে যাদের উদ্বেগ রয়েছে তাদের জন্য বাংলাদেশকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা বাংলাদেশিদের সালাফি জিহাদিজমে সমর্থন দিতে উৎসাহিত করতে পারে।
প্রথমত, জামায়াতে ইসলামী ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো দাবি করে, যেহেতু বাংলাদেশ ব্লগার ও নাস্তিকদেরকে তাদের অনৈসলামিক মতবাদ প্রচারের অনুমতি দেয়, তাই এ দেশ ইসলামকে ত্যাগ করেছে। আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি দেশটির বিরুদ্ধে মুসলিমদের হত্যার অভিযোগ করেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবাদের হুমকিকে অব্যাহতভাবে ভিন্নমত দমন ও বিরোধীদের দুর্নাম করতে ব্যবহার করছে।
এ বছরের শুরুতে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয় যা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আড়াই লাখ ডলার (২,৫২,০০০ ডলার) অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর তার ছেলেকে দেয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড। বিএনপি দাবি করেছে, এ বিচার ও রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা অকারণেই এমনটি বলেনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপির ৩ হাজারেরও বেশি কর্মীকে জেলে ঢুকিয়েছে সরকার।
বিএনপি আরো অভিযোগ করেছে যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী ভিন্নমতের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত।
ভিন্নমত চর্চার সুযোগ কমিয়ে এবং তা মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে সরকার এই অভিযোগের ভিত্তি স্থাপন করেছে যে, দেশ একদলীয় শাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এটা সরকার বিরোধীদেরকে ইসলামের ব্যানারে সমবেত হতে উৎসাহিত করতে পারে। যার সাহায্যে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, কীভাবে দলটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষকে নিগ্রহ করছে এবং একটি ধর্মভিত্তিক দলের অধীনে বাংলাদেশ কীভাবে একটি সমৃদ্ধ সমঅধিকারের দেশে পরিণত হবে- এসব মতবাদ প্রচার করা হতে পারে।
বার্মার রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। তাদের ওপরে চালানো নির্যাতনের সঙ্গে মিয়ানমারের সাবেক জেনারেল নে উইনের উগ্র-জাতীয়তাবাদী ‘মিয়ানমারাইজেশন’ নীতি ও তার বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা ছিনিয়ে নেয়া হয়। কার্যত নিজের দেশেই তাদের রাষ্ট্রহীন করা হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। পাকিস্তান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, শরণার্থী শিবির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। সুন্দর ভবিষ্যতের কথা বলে মানবপাচারকারী, চোরাচালানকারী ও উগ্রপন্থিরা শরণার্থীদের দুর্দশার সুযোগ নিতে পারে। আল-কায়েদা ও দায়েশ (ইসলামিক স্টেট) রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার সুযোগ নেয়ার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরকার এখনো দেশে বিদেশি জিহাদিদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করে নি।
বাংলাদেশ টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি সময় অতিবাহিত করেছে। গত বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশে পৌঁছেছে। পরপর তিন বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশের ওপরে। যা হোক, সরকার শুধু ঢাকা শহরেই উন্নয়ন করছে এমন দাবি তুলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সফলতাকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। এটা শুধু মানুষকে কাজের খোঁজে রাজধানীতে পাড়ি জমাতেই উৎসাহিত করছে। এটাই বুঝিয়ে দেয় যে, কেন দেশের শহুরে জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশই ঢাকায় বসবাস করে। যা ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত করেছে।
এই অর্থনৈতিক পরিবর্তন বাংলাদেশে আধুনিকীকরণ করেছে যেখানে এখন একটি এলজিবিটি ম্যাগাজিন আর ধর্মনিরপেক্ষতা ও ব্লগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। একইসঙ্গে আধুনিকায়ন বর্তমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অসন্তোষ তৈরি করছে। একই সঙ্গে দুর্বল অবকাঠামো, মৌলিক সেবা ও নিরাপত্তায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এই পরিবেশে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম বা ছাত্রশিবিরের মতো ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আল কায়েদা নিজেদেরকে মিত্র হিসেবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ বলতে যা বোঝায় তার বিরুদ্ধে মতবাদ প্রচার করছে।
নিজেরাই সন্ত্রাসী হামলা করার পরিবর্তে আল কায়েদা বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে এই বার্তা দিচ্ছে যে, তারা নিজেদের সরকারের কাছেই হামলার শিকার। যাতে সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমারা। আল কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত হচ্ছে। যেখানে মুসলিমদের ধার্মিকতা, সম্মান ও পবিত্র স্থানের মর্যাদা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাদের জীবন বিপন্ন। তারা নির্যাতিত হচ্ছে। দেশটি ইসলামের সঙ্গে রাজনৈতিক, সামরিক ও আদর্শগতভাবে যুদ্ধ করছে।’
এদিকে, দায়েশের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। এদের কর্মীরা বাংলাদেশে কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। তারা ইতালিয়ান বিদেশিদের আনাগোনা আছে এমন একটি ক্যাফেতে আক্রমণ করেছে। যাতে প্রায় ২০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, ইতালিয়ান ত্রাণকর্মী সিজার তাবেলাকে হত্যা করেছে।
বাংলাদেশ এমন বহু ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে যা এ দেশকে আল কায়েদা ও দায়েশের কাছে লোভনীয় করে তুলেছে। উভয় দলই দেশের কিছু গঠনতান্ত্রিক জটিলতার সুযোগ নিতে চাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনছি।
[উপরের লেখাটি পলিসিফোরামে প্রকাশিত আইজ্যাক কফিরের লেখা ‘ইগনোরিং বাংলাদেশ অ্যাট আওয়ার পেরিল’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে অনূদিত। আইজ্যাক কফির অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক এবং অস্ট্রেলিয়ান স্ট্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটের কাউন্টার টেরোরিজম পলিসি সেন্টারের প্রধান। আর পলিসিফোরাম অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্রফর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির একটি উদ্যোগ যেখানে এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের নানা ইস্যুতে বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ অভিমত প্রকাশিত হয়। আইজ্যাক কফিরের এ লেখাটি এশিয়ান করেসপন্ডেন্টেও প্রকাশিত হয়েছে]
No comments