প্রজন্ম ধ্বংসের মিশনে ইসরাইল -ফিলিস্তিনিদের নির্বংশ করার মাস্টারপ্লান
গাজায় পরিকল্পিতভাবে প্রজন্ম ধ্বংসের
মিশনে নেমেছে ইসরাইল। নারী ও শিশু হত্যা করে ফিলিস্তিনিদের নির্বংশ করার
মাস্টারপ্লান নিয়েছে ইহুদি এই রাষ্ট্র। স্থল অভিযানে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি
ছাড়া করে ও সুড়ঙ্গ কৌশল ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালিয়ে প্রতিরোধ সক্ষমতা ভেঙে
দিতে চায় তারা। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে
শিক্ষা-দীক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে চায় গাজার প্রজন্মকে। এই প্রথমবারের মতো
তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোও
তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। মসজিদ ও ক্রীড়া কেন্দ্র ধ্বংস করে
সাংস্কৃতিভাবেও দেউলিয়া করার পাঁয়তারা করেছে। আবার হাসপাতাল এমনকি
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে স্বাস্থ্যহীন দুর্বল জনগোষ্ঠীতে পরিণত করার
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। যারা বেঁচে থাকছে, তারা হয়ে উঠছে পঙ্গু ও
প্রতিবন্ধী প্রজন্ম। নৃশংসতা ও বীভৎসতার চরম মাত্রা প্রদর্শন করে মানসিক
ট্রমায় ফেলতে চায় পুরো জাতিকে।
ইসরাইলের এবারের অপারেশনে প্রজন্ম ধ্বংসের এই পরিকল্পনা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রোববার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়েপ এরদোগান এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন। ইস্তাম্বুলের এক নির্বাচনী জনসভায় লক্ষাধিক লোকের সামনে এরদোগান বলেন, ‘সব অপরাধ মাথায় নিয়ে হিটলার যেমন বর্ণমুক্ত (ইহুদিমুক্ত) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল ইসরাইলও এখন সেই লক্ষ্যে ধাবিত হচ্ছে। তারা নারীদের হত্যা করছে যাতে ফিলিস্তিনি শিশুর জন্ম দিতে না পারে, তারা শিশুদের হত্যা করছে যাতে তারা বড় হতে না পার, তারা পুরুষদের হত্যা করছে যাতে তারা নিজেদের দেশ রক্ষা করতে না পারে।’
এদিকে গাজার সার্বিক পরিস্থিতি ‘অসহনীয়’ এবং বিষয়টিতে সরকারের অবশ্যই দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হামন্ড।
ইরাইলের লাগাতার সেনা অভিযানে গাজায় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে পার্লামেন্টে লেবার পার্টির নেতা এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ড প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের অবস্থানের সমালোচনার পর এমন মন্তব্য করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের সমালোচনা না করে প্রধানমন্ত্রী ‘ভুল’ করছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন মিলিব্যান্ড। রোববার পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী হামন্ড যুক্তরাজ্যের ‘দ্য সানডে টেলিগ্রাফ’ পত্রিকাকে বলেন, ‘গাজায় অন্তহীন সহিংতার আভাস দেখা যাচ্ছে। গাজা নিয়ে প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় যা দেখানো হচ্ছে তা জনগণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে, তারা নিশ্চয়ই এ নিয়ে অনেক বিরক্ত। ব্রিটিশ জনগণ নিশ্চয় বুঝতে পারছে যে, গাজার সাধারণ মানুষ অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে আছে, যেদিকে অবশ্যই দৃষ্টি দেয়া উচিত।’ হামন্ড আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সেই অনুভূতির সঙ্গে আমিও একমত। হত্যাযজ্ঞ বন্ধে অচিরেই গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গাজায় ২৭ দিন ধরে চালানো ইসরাইলের ত্রিমুখী সেনা অভিযানে ১,৭৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। ইসরাইল গাজায় ‘বেসামরিক জনগণ ও স্থাপনাকে হামলার লক্ষ্যবস্তু’ করে যুদ্ধাপরাধ করছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো হুশিয়ার করেছে। গাজা অভিযানকে কেন্দ্র করে ইহুদি রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে নেদ্যারল্যান্ডসের ‘দ্য হেগ’ এ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলাও হয়েছে।
No comments