এখনও নরকের ছায়ায় ডা. নন্দিতা
সন্ধ্যা হলে নীড়ে ফেরে পাখিরা। তিনি পাখি
নন, ঘরে কেউ অপেক্ষাও করে নেই। তবু সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরতেই হয় তাকে। ভয়
ঢুকে গেছে মনে। বিশ্বাস উঠে গেছে পুরো পৃথিবীর মানুষের প্রতি। পরম
বিশ্বাসের জায়গা থেকে আঘাত পেয়ে কাউকে আর ভরসা করতে পারেন না তিনি। যাকে
ভালবেসে ঘর, সমাজ, ধর্ম- সব ছেড়েছিলেন সেই ভালবাসার মানুষটিই তাকে রেখে
অন্য আরেকজনের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন।
সম্পত্তি
হাতিয়ে নিতে পাগল সাজাতে চেয়েছিলেন তাকে। পাঁচ বছর ঘরে বন্দি ছিলেন। ২০১২
সালের ৯ই নভেম্বর পুলিশের সহায়তায় মুক্ত হন ডা. নন্দিতা সিনহা। তার
হৃদয়-পৃথিবী ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে হৃদরোগ চিকিৎসক ডা. জুলফিকার আহমেদ জামীর
হৃদয়হীনতায়। মুক্ত হওয়ার পর তালাক দিয়েছেন স্বামীকে। তবুও ইতি ঘটেনি
নরকজীবনের। নন্দিতার জন্য এখনও আতঙ্ক হয়েই আছেন ডা. জামী । সে আতঙ্ক
প্রতিনিয়তই তাড়া করছে তাকে। স্বামীর চতুরতায় ছেলেমেয়ে কেউই তার কাছে নেই।
ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। আইনি লড়াই করছেন মেয়েকে ফিরে পেতে।
সিলেট এমসি কলেজে পড়ার সময়ই জুলফিকার আহমেদ জামীর সঙ্গে পরিচয় হয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিলকপুরের বিপিন বিহারী সিনহার মেয়ে নন্দিতা সিনহার। এইচএসসি পাসের পর দু’জনেরই ঠিকানা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। বন্ধুত্ব রূপ নেয় ভালবাসায়। ধর্মের ব্যবধানও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সে ভালবাসায়। মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই ১৯৮৮ সালে বিয়ে হয় দু’জনের। ধর্ম পরিচয় পাল্টে নন্দিতা সিনহা হন নন্দিতা আহমেদ। কিছুদিনের মাঝেই নন্দিতা বুঝতে পারেন বড্ড ভুল করে ফেলেছেন। হাত ধরেছেন ভুল মানুষের। বাইরের রূপের সঙ্গে ভেতরের রূপের মিল নেই জামীর। সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। ফিকে হতে থাকে ভালবাসা। দুই সন্তানের মুখ চেয়েই শুধু সংসার টিকিয়ে রাখেন নন্দিতা। জোড়াতালির সংসার চলছিল কোন রকমে। ঝড় হয়ে আসে ভয়াবহ দুঃসংবাদটি। নন্দিতা জানতে পারেন তার শাশুড়ির বাসার কাজের মেয়ে তাসলিমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তার স্বামী। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শুধু সম্পর্কই নয় তার স্বামী ঘরও করছেন সেই মেয়েটির সঙ্গে এবং সে ঘরে একটি ছেলেও রয়েছে। সিদ্ধান্ত নেন সংসার আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। এমনই মুহূর্তে চরম আঘাত হানেন ডা. জামী।
২০০৭ সালের শেষ দিন। পূর্ব পরিকল্পনামতো ছেলেকে বন্ধুর বাসায় রেখে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরে ফেরেন ডা. জামী। খুলে রেখে আসেন মূল দরজা। কিছুক্ষণ পর সেই খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ৪ মুখোশধারী। ঘরে ঢুকেই তারা তেড়ে আসে ডা. নন্দিতার দিকে। জাপটে ধরে তাকে মাটিতে ফেলে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে। জ্ঞান হারান ডা. নন্দিতা। সেই শুরু নন্দিতার বন্দি জীবনের। নন্দিতাকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণে চলতে থাকে যড়যন্ত্র। নিয়মিত কড়া ইনজেকশন দেয়া হয় তাকে। এমনকি তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন করার মিশন নিয়ে শহরতলীর আখালিয়াস্থ শাহজালাল মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. নিজাম জাহিদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে সেখানে ভর্তি করা হয়। কিছু দিন পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় মিরের ময়দানের বাসায়। ইতিমধ্যে বাসা থেকে সরিয়ে ফেলা হয় তার নামে থাকা দু’টো জায়গার দলিল, ৩০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, তার নামে কেনা টয়োটা এলিয়েন গাড়ির কাগজ, পুবালী ব্যাংক স্টেডিয়াম শাখায় করা ৫ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ, ব্যাংকের চেক বই-জমা বই। বাসায় ফিরিয়ে আনার পর ডা. নন্দিতাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হতো না। নন্দিতাকে বন্দি রেখেই ২০১২ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে হজ পালনে সৌদি আরবে চলে যান ডা. জামী। পাহারা ও ইনজেকশনের দায়িত্ব দিয়ে যান নিজের বিশ্বস্ত লোক ইলেকট্রিশিয়ান আবদুল খালিক ও ড্রাইভার ভুট্টোর কাছে। স্বামীর চলে যাওয়ার পর মুক্তির আশা দেখেন ডা. নন্দিতা। জানালা দিয়ে প্রতিবেশী মহিলাকে তার ভাইয়ের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন তার ভাইদের যেন তাকে এসে নিয়ে যেতে বলেন। ওই মহিলার ফোন পেয়ে নভেম্বরের ৯ তারিখ ডা. নন্দিতার ভাইয়েরা পুলিশ নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। তবে ছেলে বা মেয়ে কাউকেই তার সঙ্গে যেতে দেয়া হয়নি।
ছেলেমেয়েদের এখনও ফিরে পাননি ডা. নন্দিতা। ছেলেকে নেশাগ্রস্ত করে বশ করে রেখেছেন ডা. জামী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা নেই। মেয়েকে ফিরে পেতে আইনি লড়াই করছেন নন্দিতা। পদে পদে হুমকি পাচ্ছেন। একলা চলতে ফিরতে তাই ভয় হয় নন্দিতার। আত্মহত্যাই করে ফেলবেন কিনা অসহায় নন্দিতা কখনও কখনও এমন ভাবেন। নরকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান তিনি। মানবজমিন-এর কাছে নিজের নরক জীবনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন নন্দিতা। টের পাননি কোন ফাঁকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একলা ফিরে যেতে সাহস পান না নন্দিতা। তাকে পৌঁছে দিতে হয় পাহারা দিয়ে।
সিলেট এমসি কলেজে পড়ার সময়ই জুলফিকার আহমেদ জামীর সঙ্গে পরিচয় হয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিলকপুরের বিপিন বিহারী সিনহার মেয়ে নন্দিতা সিনহার। এইচএসসি পাসের পর দু’জনেরই ঠিকানা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। বন্ধুত্ব রূপ নেয় ভালবাসায়। ধর্মের ব্যবধানও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সে ভালবাসায়। মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই ১৯৮৮ সালে বিয়ে হয় দু’জনের। ধর্ম পরিচয় পাল্টে নন্দিতা সিনহা হন নন্দিতা আহমেদ। কিছুদিনের মাঝেই নন্দিতা বুঝতে পারেন বড্ড ভুল করে ফেলেছেন। হাত ধরেছেন ভুল মানুষের। বাইরের রূপের সঙ্গে ভেতরের রূপের মিল নেই জামীর। সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। ফিকে হতে থাকে ভালবাসা। দুই সন্তানের মুখ চেয়েই শুধু সংসার টিকিয়ে রাখেন নন্দিতা। জোড়াতালির সংসার চলছিল কোন রকমে। ঝড় হয়ে আসে ভয়াবহ দুঃসংবাদটি। নন্দিতা জানতে পারেন তার শাশুড়ির বাসার কাজের মেয়ে তাসলিমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তার স্বামী। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শুধু সম্পর্কই নয় তার স্বামী ঘরও করছেন সেই মেয়েটির সঙ্গে এবং সে ঘরে একটি ছেলেও রয়েছে। সিদ্ধান্ত নেন সংসার আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। এমনই মুহূর্তে চরম আঘাত হানেন ডা. জামী।
২০০৭ সালের শেষ দিন। পূর্ব পরিকল্পনামতো ছেলেকে বন্ধুর বাসায় রেখে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরে ফেরেন ডা. জামী। খুলে রেখে আসেন মূল দরজা। কিছুক্ষণ পর সেই খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ৪ মুখোশধারী। ঘরে ঢুকেই তারা তেড়ে আসে ডা. নন্দিতার দিকে। জাপটে ধরে তাকে মাটিতে ফেলে শরীরে ইনজেকশন পুশ করে। জ্ঞান হারান ডা. নন্দিতা। সেই শুরু নন্দিতার বন্দি জীবনের। নন্দিতাকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণে চলতে থাকে যড়যন্ত্র। নিয়মিত কড়া ইনজেকশন দেয়া হয় তাকে। এমনকি তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন করার মিশন নিয়ে শহরতলীর আখালিয়াস্থ শাহজালাল মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. নিজাম জাহিদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে সেখানে ভর্তি করা হয়। কিছু দিন পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় মিরের ময়দানের বাসায়। ইতিমধ্যে বাসা থেকে সরিয়ে ফেলা হয় তার নামে থাকা দু’টো জায়গার দলিল, ৩০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, তার নামে কেনা টয়োটা এলিয়েন গাড়ির কাগজ, পুবালী ব্যাংক স্টেডিয়াম শাখায় করা ৫ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ, ব্যাংকের চেক বই-জমা বই। বাসায় ফিরিয়ে আনার পর ডা. নন্দিতাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হতো না। নন্দিতাকে বন্দি রেখেই ২০১২ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে হজ পালনে সৌদি আরবে চলে যান ডা. জামী। পাহারা ও ইনজেকশনের দায়িত্ব দিয়ে যান নিজের বিশ্বস্ত লোক ইলেকট্রিশিয়ান আবদুল খালিক ও ড্রাইভার ভুট্টোর কাছে। স্বামীর চলে যাওয়ার পর মুক্তির আশা দেখেন ডা. নন্দিতা। জানালা দিয়ে প্রতিবেশী মহিলাকে তার ভাইয়ের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন তার ভাইদের যেন তাকে এসে নিয়ে যেতে বলেন। ওই মহিলার ফোন পেয়ে নভেম্বরের ৯ তারিখ ডা. নন্দিতার ভাইয়েরা পুলিশ নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। তবে ছেলে বা মেয়ে কাউকেই তার সঙ্গে যেতে দেয়া হয়নি।
ছেলেমেয়েদের এখনও ফিরে পাননি ডা. নন্দিতা। ছেলেকে নেশাগ্রস্ত করে বশ করে রেখেছেন ডা. জামী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা নেই। মেয়েকে ফিরে পেতে আইনি লড়াই করছেন নন্দিতা। পদে পদে হুমকি পাচ্ছেন। একলা চলতে ফিরতে তাই ভয় হয় নন্দিতার। আত্মহত্যাই করে ফেলবেন কিনা অসহায় নন্দিতা কখনও কখনও এমন ভাবেন। নরকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান তিনি। মানবজমিন-এর কাছে নিজের নরক জীবনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন নন্দিতা। টের পাননি কোন ফাঁকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একলা ফিরে যেতে সাহস পান না নন্দিতা। তাকে পৌঁছে দিতে হয় পাহারা দিয়ে।
No comments