রেলের ৬ হাজার একর জমি বেদখলে by শিপন হাবীব
যুগের
পর যুগ বেদখলে থাকা রেলওয়ের প্রায় ছয় হাজার একর জমি উদ্ধারে তেমন কোন
ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়নি বিগত কোনো সরকারই। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের
দখলে থাকা এসব জমিতে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, বাসাবাড়িসহ বহুতল বাণিজ্যিক ভবন।
রেলওয়ের একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এবং প্রায়
সব ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্টদের আশীর্বাদে নির্বিঘ্নে জমিতে উঠেছে এসব
অবকাঠামো। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জমিগুলো স্থায়ীভাবে হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম
হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে
জানা গেছে এসব তথ্য। জানতে চাইলে, রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক এমপি
বুধবার যুগান্তরকে বলেন, রেলের সাড়ে ৪ হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। আদালতে
মামলাসহ নানা জটিলতায় অধিকাংশ বেদখল জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই
দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলওয়েতে সবচেয়ে বড় লুটপাট হয়েছে সম্পত্তি দখল আর ‘রেলের বাড়ি’ (কোয়ার্টার) ভাগাভাগিতে। রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখলকে ঘিরেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সুযোগে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও কামিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। এক তথ্যে জানা যায়, সারা দেশে রেলওয়ের মোট ৬১ হাজার ৬০৫ দশমিক ৮৪৯ একর জায়গা আছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ২৪ হাজার ৪০১ দশমিক ৬২ একর ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩৭ হাজার ২০৪ দশমিক ২২৯ একর। এ সম্পত্তির মধ্যে উভয় অঞ্চল মিলে প্রায় ছয় হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়ার আনন্দবাজার এলাকায় রেলওয়ের ২.৮৭ একর জয়গা বেদখলে নিয়ে বহুতল ভবনসহ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে এ জায়গাটি উদ্ধারে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তৎপরতা চালিয়ে গেলেও শুধু রাজনৈতিক কারণ ও সংশ্লিষ্ট রেল মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান না থাকায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, ২০০৯ সাল থেকে রেলওয়েতে পর পর ৪ জন মন্ত্রী আসা-যাওয়া করলেও, এ জায়গাটি উদ্ধারে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এলএ কেস নং ৭-১৯০৮ ও ১৯০৯ সালে সরকার ৩.৯৭ একর জায়গা গণপূর্ত বিভাগ/ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে। যা সিএস রেকর্ডমূলে গণপূর্ত বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ড হয়। যার খতিয়ান নং ১৬৮৫৫ এবং দাগ নং ১৩৬, ১৩৮ ও ১৩৯। ১৯২০ সালে গণপূর্ত বিভাগ/মন্ত্রণালয় রেলওয়েকে এই জায়গা হস্তান্তর করে। পরে ওই স্থানে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, স্টাফ কোয়ার্টার, স্টেশন ইয়ার্ডসহ প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৬৮ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে কমলাপুরে স্থানান্তর করার পর ওই জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে সিরাজুল ইসলাম, গ্রাম-বাপটা, থানা শ্রীপুর, জেলা গাজীপুর নামের এক ব্যক্তি জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে পরিত্যক্ত ওই জায়গাটি দখলে নেয়। সিরাজুল ইসলাম ওই সময় একটি ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিজীবী ছিলেন। পরে জাল দলিলকারী সিরাজুল ইসলামসহ ১৮ জন ১৯৭৪ সালে এ জমি নিয়ে ৩৫৩/৭৪ নং স্বত্বের মোকদ্দমায় ঢাকা প্রথম মুনসেফ আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু আদালতে প্রমাণ হয়, মির্জা আশরাফসহ ১৮ জনের নামে বিরোধী আরএস ১২৭৬/১২৭৬/১২৭৯ ও ১২১৩ দাগে ৩.৭৮৮৫ একর ভূমি রেকর্ড সম্পূর্ণ জালিয়াতি করা। জাল দলিলের মাধ্যমে এ জমিটি দখল করা হয়। যেটি এখনও তাদের দখলে আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা নূরুন্নবী কবীর বুধবার যুগান্তরকে জানান, রেলওয়ের এ জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্র“প দখল করে রেখেছে। যতবারই উচ্ছেদ করতে যাওয়া হয়েছে ততবারই রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলেই যত দ্রুত সম্ভব জায়গাটি দখলমুক্ত করা যাবে। তবে এ বিষয়ে দখলকারী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মমতাজ ইসলাম দাবি করেন, এ জয়গা মির্জা মোঃ আশরাফের কাছ থেকে তার স্বামী ক্রয় করেছেন। ওই জায়গায় কখনও রেলওয়ে স্টেশন কিংবা কোয়ার্টার ছিল না। রেল ভুল করে এ জায়গাটি পর্চায় তুলে নেয়। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, এ জায়গা দখলকৃত নয়, ক্রয়সূত্রে এ জায়গার তারাই মালিক। রেল তাদের এ জায়গা কৌশলে দখল করতে চাচ্ছে। এ মুহূর্তে জায়গাটি নিয়ে হাইকোর্ট ও জজকোর্টে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৪ জুলাই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন গোপীবাগ এলাকায় বেদখলে থাকা ১৫ একর রেলের জায়গা উদ্ধার করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে উঠা ‘শরীফ বাড়ি’ ১৪/২/এ গোপীবাগ ৩য় লেনের বাড়িটি উচ্ছেদ করা হয়নি। প্রায় ৩০ কোটি টাকার জায়গা দখল করে এ বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ বাড়িটি কখনও মেজর বাড়ি অথবা কখনও রেলওয়ে বড়কর্তার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে তৎকালীন রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আহমাদুল হক যুগান্তরকে জানান, এ বাড়িটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এ বাড়িটি রেলওয়ের জায়গায় করা হয়েছে।
‘শরীফ বাড়ি’র মালিকানা দাবিদার আবদুল আজিজ শরীফ তার কাছে থাকা একটি ম্যাপ দেখিয়ে বুধবার যুগান্তরকে বলেন, তিনি ১৯৭৪ সালে নুরউদ্দিন, সালাউদ্দিন নামক দু’ভাইয়ের কাছ থেকে ৮ কাঠা জায়গা ক্রয় করেন। যা সিএস মৌজা শহর ঢাকার অন্তর্ভুক্ত। বাড়িটি রেলওয়ের বাউন্ডারির ভেতরে কেন এমন প্রশ্নে আজিজ শরীফ চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রেল ভুল করে এ বাউন্ডারী ওয়াল দিয়েছে। এ জায়গার মালিক তিনিই যে, তার দলিল ও সব কাগজপত্র রয়েছে তার কাছে।
ভূসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, রেলে প্রায় ৭ হাজার ২শ’ বাড়ি (সরকারি কোয়ার্টার) অবৈধ দখলে রয়েছে। দখলমুক্ত না হওয়ায় এসব বাড়ির বিদ্যুৎ পরিশোধ বাবদ গত ৭ বছরে প্রায় ২১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। শুধু রাজধানীতে কমলাপুর-টঙ্গী ও কমলাপুর-শনিরআখড়া পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে থাকা প্রায় ৩৯ একর জায়গা বেদখলে রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এসব জায়গার কিছু উচ্ছেদ করা হলেও পরক্ষণেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তা আবার দখলে নেয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের পাশে বিবিরহাট এলাকায় ৩২ শতাংশ একটি পুকুর ভূমিদস্যুরা রাতের আঁধারে ভরাট করে প্রায় অর্ধশত দোকানপাট নির্মাণ করে।
জানা যায়, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর মাছ চাষের জন্য একসঙ্গে ২৫টি পুকুর ইজারা দিতে দরপত্র আহবান করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ৮ হাজার ৪শ’ টাকা লিজ দরে পুকুরটি মাছ চাষের জন্য নিয়ে অবৈধভাবে মাটি ভরাট করে দোকান নির্মাণ করে। সংশ্লিষ্ট ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা কামরুল আমিনের ভাষ্য, ইজারাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ করা হলেও পুলিশের অসহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না।
রেলওয়ে মহাপরিচালক তফাজ্জল হোসেন বলেন, রেল মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগ দ্রুত সময়ের মধ্যে বেদখলে থাকা রেলের সম্পত্তি ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাঠে নামবে। ইতিমধ্যে অবৈধ স্থাপনা নিজ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে ফেলার নোটিশও দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আনন্দবাজার ফুলবাড়িয়াস্থ ৩.৯৭ একর জায়গাটির মালিক সম্পূর্ণ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অবৈধ দলখদাররা সন্ত্রাসী কায়দায় তা ভোগ করছে। বহুবার চেষ্টা করেও উচ্ছেদ কার্যক্রমে সফল হওয়া যায়নি। উপরের নির্দেশে অচিরেই এ জায়গাটি উদ্ধার করা হবে। যে কোনো মূলে বেদখলে থাকা রেলওয়ের জমি উদ্ধার করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলওয়েতে সবচেয়ে বড় লুটপাট হয়েছে সম্পত্তি দখল আর ‘রেলের বাড়ি’ (কোয়ার্টার) ভাগাভাগিতে। রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখলকে ঘিরেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সুযোগে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও কামিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। এক তথ্যে জানা যায়, সারা দেশে রেলওয়ের মোট ৬১ হাজার ৬০৫ দশমিক ৮৪৯ একর জায়গা আছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ২৪ হাজার ৪০১ দশমিক ৬২ একর ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩৭ হাজার ২০৪ দশমিক ২২৯ একর। এ সম্পত্তির মধ্যে উভয় অঞ্চল মিলে প্রায় ছয় হাজার একর জমি বেদখলে রয়েছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়ার আনন্দবাজার এলাকায় রেলওয়ের ২.৮৭ একর জয়গা বেদখলে নিয়ে বহুতল ভবনসহ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে এ জায়গাটি উদ্ধারে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তৎপরতা চালিয়ে গেলেও শুধু রাজনৈতিক কারণ ও সংশ্লিষ্ট রেল মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান না থাকায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, ২০০৯ সাল থেকে রেলওয়েতে পর পর ৪ জন মন্ত্রী আসা-যাওয়া করলেও, এ জায়গাটি উদ্ধারে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এলএ কেস নং ৭-১৯০৮ ও ১৯০৯ সালে সরকার ৩.৯৭ একর জায়গা গণপূর্ত বিভাগ/ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে। যা সিএস রেকর্ডমূলে গণপূর্ত বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ড হয়। যার খতিয়ান নং ১৬৮৫৫ এবং দাগ নং ১৩৬, ১৩৮ ও ১৩৯। ১৯২০ সালে গণপূর্ত বিভাগ/মন্ত্রণালয় রেলওয়েকে এই জায়গা হস্তান্তর করে। পরে ওই স্থানে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, স্টাফ কোয়ার্টার, স্টেশন ইয়ার্ডসহ প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৬৮ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে কমলাপুরে স্থানান্তর করার পর ওই জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে সিরাজুল ইসলাম, গ্রাম-বাপটা, থানা শ্রীপুর, জেলা গাজীপুর নামের এক ব্যক্তি জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে পরিত্যক্ত ওই জায়গাটি দখলে নেয়। সিরাজুল ইসলাম ওই সময় একটি ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিজীবী ছিলেন। পরে জাল দলিলকারী সিরাজুল ইসলামসহ ১৮ জন ১৯৭৪ সালে এ জমি নিয়ে ৩৫৩/৭৪ নং স্বত্বের মোকদ্দমায় ঢাকা প্রথম মুনসেফ আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু আদালতে প্রমাণ হয়, মির্জা আশরাফসহ ১৮ জনের নামে বিরোধী আরএস ১২৭৬/১২৭৬/১২৭৯ ও ১২১৩ দাগে ৩.৭৮৮৫ একর ভূমি রেকর্ড সম্পূর্ণ জালিয়াতি করা। জাল দলিলের মাধ্যমে এ জমিটি দখল করা হয়। যেটি এখনও তাদের দখলে আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা নূরুন্নবী কবীর বুধবার যুগান্তরকে জানান, রেলওয়ের এ জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্র“প দখল করে রেখেছে। যতবারই উচ্ছেদ করতে যাওয়া হয়েছে ততবারই রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলেই যত দ্রুত সম্ভব জায়গাটি দখলমুক্ত করা যাবে। তবে এ বিষয়ে দখলকারী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মমতাজ ইসলাম দাবি করেন, এ জয়গা মির্জা মোঃ আশরাফের কাছ থেকে তার স্বামী ক্রয় করেছেন। ওই জায়গায় কখনও রেলওয়ে স্টেশন কিংবা কোয়ার্টার ছিল না। রেল ভুল করে এ জায়গাটি পর্চায় তুলে নেয়। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, এ জায়গা দখলকৃত নয়, ক্রয়সূত্রে এ জায়গার তারাই মালিক। রেল তাদের এ জায়গা কৌশলে দখল করতে চাচ্ছে। এ মুহূর্তে জায়গাটি নিয়ে হাইকোর্ট ও জজকোর্টে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৪ জুলাই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন গোপীবাগ এলাকায় বেদখলে থাকা ১৫ একর রেলের জায়গা উদ্ধার করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে উঠা ‘শরীফ বাড়ি’ ১৪/২/এ গোপীবাগ ৩য় লেনের বাড়িটি উচ্ছেদ করা হয়নি। প্রায় ৩০ কোটি টাকার জায়গা দখল করে এ বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ বাড়িটি কখনও মেজর বাড়ি অথবা কখনও রেলওয়ে বড়কর্তার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে তৎকালীন রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পদ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আহমাদুল হক যুগান্তরকে জানান, এ বাড়িটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এ বাড়িটি রেলওয়ের জায়গায় করা হয়েছে।
‘শরীফ বাড়ি’র মালিকানা দাবিদার আবদুল আজিজ শরীফ তার কাছে থাকা একটি ম্যাপ দেখিয়ে বুধবার যুগান্তরকে বলেন, তিনি ১৯৭৪ সালে নুরউদ্দিন, সালাউদ্দিন নামক দু’ভাইয়ের কাছ থেকে ৮ কাঠা জায়গা ক্রয় করেন। যা সিএস মৌজা শহর ঢাকার অন্তর্ভুক্ত। বাড়িটি রেলওয়ের বাউন্ডারির ভেতরে কেন এমন প্রশ্নে আজিজ শরীফ চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রেল ভুল করে এ বাউন্ডারী ওয়াল দিয়েছে। এ জায়গার মালিক তিনিই যে, তার দলিল ও সব কাগজপত্র রয়েছে তার কাছে।
ভূসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, রেলে প্রায় ৭ হাজার ২শ’ বাড়ি (সরকারি কোয়ার্টার) অবৈধ দখলে রয়েছে। দখলমুক্ত না হওয়ায় এসব বাড়ির বিদ্যুৎ পরিশোধ বাবদ গত ৭ বছরে প্রায় ২১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। শুধু রাজধানীতে কমলাপুর-টঙ্গী ও কমলাপুর-শনিরআখড়া পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে থাকা প্রায় ৩৯ একর জায়গা বেদখলে রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এসব জায়গার কিছু উচ্ছেদ করা হলেও পরক্ষণেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তা আবার দখলে নেয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম ষোলশহর স্টেশনের পাশে বিবিরহাট এলাকায় ৩২ শতাংশ একটি পুকুর ভূমিদস্যুরা রাতের আঁধারে ভরাট করে প্রায় অর্ধশত দোকানপাট নির্মাণ করে।
জানা যায়, ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর মাছ চাষের জন্য একসঙ্গে ২৫টি পুকুর ইজারা দিতে দরপত্র আহবান করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ৮ হাজার ৪শ’ টাকা লিজ দরে পুকুরটি মাছ চাষের জন্য নিয়ে অবৈধভাবে মাটি ভরাট করে দোকান নির্মাণ করে। সংশ্লিষ্ট ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা কামরুল আমিনের ভাষ্য, ইজারাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ করা হলেও পুলিশের অসহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না।
রেলওয়ে মহাপরিচালক তফাজ্জল হোসেন বলেন, রেল মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগ দ্রুত সময়ের মধ্যে বেদখলে থাকা রেলের সম্পত্তি ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাঠে নামবে। ইতিমধ্যে অবৈধ স্থাপনা নিজ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে ফেলার নোটিশও দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আনন্দবাজার ফুলবাড়িয়াস্থ ৩.৯৭ একর জায়গাটির মালিক সম্পূর্ণ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অবৈধ দলখদাররা সন্ত্রাসী কায়দায় তা ভোগ করছে। বহুবার চেষ্টা করেও উচ্ছেদ কার্যক্রমে সফল হওয়া যায়নি। উপরের নির্দেশে অচিরেই এ জায়গাটি উদ্ধার করা হবে। যে কোনো মূলে বেদখলে থাকা রেলওয়ের জমি উদ্ধার করা হবে।
No comments