সিরিয়া : আমেরিকার সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
দ্বিতীয়
মহাযুদ্ধের প্রথম দিকে যখন হিটলারের দুর্ধর্ষ নাৎসি সৈন্যবাহিনী
রণক্ষেত্রে একটার পর একটা জয় অর্জন করছিল এবং ব্রিটিশ তথা মিত্রবাহিনী
(allied forces) ক্রমাগত পরাজিত হচ্ছিল, তখন ব্রিটিশ মিডিয়ায় একে আখ্যা
দেয়া হয়েছিল successfull retreat বা সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ। মধ্যপ্রাচ্যের
বর্তমান যুদ্ধেও মনে হয় আমেরিকার এই সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ শুরু হয়েছে। গত
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জেনেভায় মার্কিন বিদেশমন্ত্রী জন কেরি এবং রাশিয়ান
বিদেশমন্ত্রী সার্জাই লেভরভ দু’জনে মিলে সিরিয়ার আসাদ সরকারকে পরবর্তী পাঁচ
দিনের মধ্যে তাদের কেমিক্যাল উইপনসের স্টকপাইলের ঘাঁটিগুলোর সন্ধান দেয়ার
যে চরমপত্র দিয়েছেন তাকে রাশিয়ার কূটনৈতিক সাফল্য এবং আমেরিকায় সাফল্যজনক
পশ্চাদপসরণ বিনা দ্বিধায় বলা চলে। কথা ছিল, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট তার জনগণের
বিরুদ্ধে কেমিক্যাল অস্ত্র ব্যবহার করছেন এই ‘অপরাধের’ শাস্তি দেয়ার জন্য
আমেরিকা, ব্রিটেন যুক্তভাবে সিরিয়ায় হামলা চালাবে। প্রেসিডেন্ট ওবামা অনবরত
হুমকি দিচ্ছিলেন সিরিয়ায় মিসাইল হামলা চালানোর। সিরিয়ার পক্ষ শক্তভাবে
নিয়েছিল ইরান, অন্যদিকে কূটনৈতিকভাবে নিয়েছিল রাশিয়া ও চীন। তারা সিরিয়ায়
হামলা চালানো সম্পর্কে আমেরিকাকে সতর্ক করে দিয়েছিল।
একমাত্র ইরান শক্তভাবে পশ্চিমা দেশগুলোকে জানিয়েছিল, সিরিয়ায় কোনো হামলা হলে তারা নিশ্চুপ থাকবে না। ইরান জানে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদ রাখার মিথ্যা অজুহাত দিয়ে আমেরিকা যেমন ইরাক আক্রমণ এবং সাদ্দামকে বিচার প্রহসনে হত্যা করেছে, তেমনি সিরিয়ার বিরুদ্ধেও একই অজুহাত তুলে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত এবং সাদ্দাম ও গাদ্দাফির পরিণতি বরণে বাধ্য করতে চায়। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে ইরান। ইরান মার্কিন তাঁবেদার নয়। আমেরিকা ও ইসরাইল চায় ইরানের ধ্বংস। কিন্তু ইরানে হামলা চালানোর আগে তার একমাত্র মিত্র সিরিয়াকে ধ্বংস করা প্রয়োজন।
ধরে নেয়া যাক, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল। এ গণঅভ্যুত্থানের শুরুতেই আমেরিকা ও ন্যাটোর বিদ্রোহীদের পক্ষালম্বন, তাদের অস্ত্র সাহায্যদান এবং গণ-অভ্যুত্থানকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার পেছনে ওবামা প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্যটা কী ছিল?
ইসরাইলের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইরানকে ধ্বংস করা নয় কি? মধ্যপ্রাচ্যে এখন একমাত্র সিরিয়াই ইরানের মিত্র দেশ। সিরিয়া ও ইরানই প্যালেস্টিনিদের ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য সাহায্য জুগিয়ে আসছে।
মজার ব্যাপার এই যে, সিরিয়া ও ইরানে হামলা চালানোর জন্য শুধু ইসরাইলই আমেরিকার ওপর চাপ দিচ্ছে না, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতের মতো মুসলিম দেশগুলোও এই চাপ দিচ্ছে। শুধু চাপ দেয়া নয়, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের তারা ক্রমাগত অস্ত্র সাহায্য জোগাচ্ছে। কিছুদিন আগে ইরানে বোমা হামলা চালানোর জন্য সৌদি আরবের বাদশা ইসরাইলের সঙ্গে মিলে ওবামা প্রশাসনের ওপর চাপ দিয়েছিল। ইরান রাজতন্ত্র ধ্বংস করে প্রজাতন্ত্র স্থাপন করেছে ও ধর্মীয় পরিচয়ে তারা শিয়া এই কারণে সৌদি বাদশারা ইরানকে ধ্বংস করতে চান এবং এই উদ্দেশ্যে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলাতে দ্বিধা করেননি। সাদ্দামকে ধ্বংস করার জন্য সৌদি আরব আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে, এখন সিরিয়া ও ইরানের মতো দুটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস করতে চায়। এটাই হচ্ছে ‘ইসলামের রক্ষক’ সৌদি রাজতন্ত্রের বর্তমান ভূমিকা। সেই সঙ্গে রয়েছে মার্কিন স্বার্থ ও আধিপত্য রক্ষাও।
সৌদি আরব দেদার অস্ত্র ও অর্থ দিচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের। তার মধ্যে আমেরিকার কাছ থেকে বা অন্যভাবে পাওয়া রাসায়নিক অস্ত্রও আছে কিনা তা কে বলবে? মধ্যপ্রাচ্যের একটি আরব দৈনিকের সন্দেহ, এই অস্ত্র বিদ্রোহীদের দেয়া হয়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরানকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকা সাদ্দাম হোসেনকে এই বিষাক্ত অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। পরে এই অস্ত্র রাখার অভিযোগেই সাদ্দামের বিরুদ্ধে একটি অবৈধ যুদ্ধ করেছে। যদিও প্রমাণিত হয়েছে, সাদ্দামের কাছে তখন এ ধরনের কোনো অস্ত্র ছিল না।
বর্তমান সিরিয়া যুদ্ধেও পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত সিরিয়ান বিদ্রোহীরা এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে- না, আমাদের সৈন্যরা করেছে, তা আগে সংশয়াতীতভাবে নির্ণীত হওয়া প্রয়োজন। তার আগেই সিরিয়ায় আমেরিকার মিসাইল হামলা চালানোর এবং প্রেসিডেন্ট আসাদকে শাস্তি দেয়ার নামে সিরিয়ার শত শত নিরীহ নর-নারী শিশু হত্যার পরিকল্পনা কি সমর্থনযোগ্য? ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এই তিনটি দেশকেই ড্রোন হামলা চালিয়ে কার্যত ধ্বংস করে আমেরিকার আধিপত্যবাদের ক্ষুধা মেটেনি। এখন সিরিয়া ও ইরানকে ধ্বংস করতে হবে? সিরিয়ায় আসাদ সরকার কেমিক্যাল অস্ত্র নিজ জনগণের ওপর ব্যবহার করেছে এই অভিযোগ যদি সঠিকও হয়, তাহলে প্রথমে জাতিসংঘের মাধ্যমে আসাদ সরকারকে এই অস্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত করা এবং কোনো ধরনের পিউনিটিভ ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই আরও ধ্বংসাত্মক মিসাইল হামলা চালানোর এই হুংকার কেন? অপর দেশের জনগণকে রক্ষার নামে সেই জনগণের ওপর বর্বর সামরিক হামলা চালানোর অধিকার আমেরিকাকে কে দিয়েছে?
আমেরিকা এখন ইউনিপোলার বিশ্বের অধীশ্বর হলে কী হবে, সে একা যুদ্ধ করতে ভয় পায়। চল্লিশের দশকে আমেরিকার একক হাতে যখন অ্যাটম বোমা ছিল, তখনও কোরিয়ার যুদ্ধে সে একা নামেনি। অধিকাংশ মিত্রদেশকে (তুরস্কসহ) নামিয়েছিল এবং জাতিসংঘের বিনা অনুমোদনে জাতিসংঘের নাম ও পতাকা ব্যবহার করেছে। দু-দুটো গালফ যুদ্ধে শক্তিগর্বে স্ফীত আমেরিকা বারবার জাতিসংঘকে উপেক্ষা করেছে বটে, কিন্তু ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র ও তাঁবেদার দেশগুলোকে যুদ্ধে জড়িত করেছে।
কিন্তু কোনো (কোরিয়া থেকে গালফ যুদ্ধ) যুদ্ধেই আমেরিকা সুপিরিয়র অস্ত্র ব্যবহার করেও সার্বিক জয়ের অধিকারী হতে পারেনি। ইরাক যুদ্ধ শেষ হয়েও হচ্ছে না। আফগানিস্তানে তাদের লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে। এসব অবৈধ যুদ্ধের ব্যয় বহন করতে গিয়ে শুধু আমেরিকার নয়, গ্লোবাল অর্থনীতিতেই ত্রিশের মন্দার চাইতেও বড় মন্দা বা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ওবামা আর নতুন যুদ্ধে জড়াতে চান না একথা সত্য। কিন্তু তার ঘাড়ে সিন্দবাদের বুড়ো দৈত্যের মতো মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের যুদ্ধবাজ অংশটি চেপে বসে আছে। তিনি কোন্ দিকে যাবেন? তার জন্য ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির।
অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং সামরিক শক্তির সাহায্যে একাধিক যুদ্ধে সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতাই পশ্চিমা শক্তি- বিশেষ করে আমেরিকাকে ইরাক যুদ্ধের পরই সরাসরি সিরিয়া ও ইরান আক্রমণে বিরত রেখেছে। নইলে এতদিনে এই দুটি দেশ- বিশেষ করে ইরান আক্রান্ত হতো। সিরিয়ায় ওবামা রেজিম চেঞ্জ চান না বলে যতই কথা বলুন, আসলে বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য জুগিয়েছে সিরিয়ায় রেজিম চেঞ্জ দ্বারা ইরানেও রেজিম চেঞ্জের পথ প্রশস্ত করাই ছিল ওয়াশিংটনের লক্ষ্য। সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে এই লক্ষ্য অর্জনের দিকেই ওবামা প্রশাসন ক্রমশ এগুচ্ছিল।
কিন্তু সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতা এবং ইরান, চীন ও রাশিয়া শক্তভাবে সিরিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় পশ্চিমা দেশ- বিশেষ করে ওবামা প্রশাসনের পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি নামা ছাড়া এস্টাবলিশমেন্টের যুদ্ধবাজ অংশের চাপ উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওবামা তাই ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে (সঙ্গে পরোক্ষভাবে ইসরাইল) সঙ্গে নিয়ে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ধুয়া তুলে সিরিয়ায় হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সেধেছে যুদ্ধক্লান্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত মার্কিন ও ব্রিটিশ জনমত। যুদ্ধবিরোধী বিরাট মিছিল হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকারের যুদ্ধে নামার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
এরপর আমেরিকা একা যুদ্ধে নামবে এমন হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। আমি আগেই বলেছি, আমেরিকার একা যুদ্ধে নামার সাহস দেখানোর অতীতের কোনো রেকর্ড নেই। ব্রিটেন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার পর নিজের মুখ রক্ষার জন্য ওবামা তার আগেকার প্রেসিডেন্ট বুশের মতো রণহুংকার দিতে থাকলেও যুদ্ধের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন চাইবেন এই অজুহাত তুলে সিরিয়ায় হামলা চালানো থেকে বিরত থাকেন। কংগ্রেসের এই অনুমোদন দানও এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে।
এই ফাঁকে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার বিদেশমন্ত্রী জন কেরিকে লাগিয়েছিলেন সিরিয়ায় কোনো ধরনের হামলা চালানোর ব্যাপারে রাশিয়ার সম্মতি আদায়ের জন্য। রাশিয়া সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর প্রচণ্ড বিরোধী। জেনেভায় রুশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে জন কেরি অনেক আলাপ-আলোচনা করে যেটুকু সাফল্য অর্জন করেছেন (যদি একে সাফল্য বলা যায়) তা হল- আসাদ সরকারকে যুক্তভাবে একটি চরমপত্র দেয়া, যাতে রাসায়নিক অস্ত্রের ঘাঁটিগুলোর সন্ধান সিরিয়া পাঁচদিনের মধ্যে দেয় এবং এই অস্ত্র সম্পর্কে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের আগামী নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করতে সহযোগিতা জোগায়।
রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার এই সমঝোতার ফলে সিরিয়া আশু মার্কিন হামলা থেকে বেঁচে গেল। ওবামা প্রশাসনের মুখ কিছুটা রক্ষা পেল। কিন্তু সিরিয়াকে মার্কিন হামলা থেকে রক্ষার ব্যাপারে রুশ কূটনীতি সফল হল। আমেরিকার যুদ্ধবাজ চক্র এবং ইসরাইল ও সৌদি বাদশাদের চাপ থেকেও ওবামা আপাতত মুক্ত হলেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা রাশিয়ার সঙ্গে এই সমঝোতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিনন্দন জানালেও তিনি এবং তার ইউরোপিয়ান ও আরব মিত্ররা জানেন, এই সমঝোতার ফলে আমেরিকার যুদ্ধনীতি একটা বড় ঘা খেয়েছে, রাশিয়া কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে এবং আমেরিকার নীতিকে সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ আখ্যা দেয়া যায়। লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকার (১৫ সেপ্টেম্বর) খবর, সিরিয়ার সাধারণ মানুষ এই সমঝোতাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং মার্কিন বোমা হামলা থেকে বাঁচানোর জন্য রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
পশ্চিমা মিডিয়া এবং যুদ্ধবাদী মহল এই সমঝোতার আসল তাৎপর্য বুঝতে পারেননি তা নয়। তারা অনেকেই প্রকাশ্যে অভিমত প্রকাশ করেছেন, সিরিয়ায় আসাদ সরকার টিকে গেল। প্রত্যক্ষ মার্কিন মদদ ছাড়া বিদ্রোহীদের জয়ের আশা নেই। এই সমঝোতায় শনিবারের চরমপত্র অগ্রাহ্য করলে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং আসাদ ক্ষমতায় টিকে গেলেন এবং তার সাদ্দাম ও গাদ্দাফির পরিণতি বরণের আশংকা অনেকটাই কমে গেল।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরাও এই সমঝোতায় হতাশ এবং বিরক্ত। তারা হুমকি দিয়েছে, রাসায়নিক অস্ত্র অনুসন্ধান সম্পর্কে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দেবে। তাদের তারা সিরিয়ায় ঢুকতে দেবে না। এই হুমকি তারা কতটা কার্যকর করতে পারবে সে সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়ায় অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, এবার যুদ্ধের হুংকার দিয়ে সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণের দ্বিতীয় নজির স্থাপন করেছে আমেরিকা। মার্কিন হামলার হুমকির মুখে রাশিয়া কিউবাকে মিসাইল অস্ত্রসজ্জিত করার জন্য মিসাইলবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল কিউবায়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি হুমকি দিয়েছিলেন কিউবাগামী মিসাইলবাহী রুশ রণতরীর ওপর তিনি হামলা চালাবেন। তখন তৃতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয় হয় এমন আশংকা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘোষণা করেন, তিনি কিউবায় হামলা চালাবেন না এবং রাশিয়াও তার মিসাইলবাহী জাহাজ সমুদ্রবক্ষ থেকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়। কেউবায় ক্যাস্ট্রো রেজিম টিকে যায় এবং বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধের বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায়।
তাই বিশ্বের বর্তমান পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, কিউবা সংকটের মতো সিরিয়া সংকটেও আমেরিকায় সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ এবং রাশিয়ার কূটনৈতিক সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আরেকটি বড় ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধের বিপর্যয় বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ হয়তো এড়াতে পেরেছে।
একমাত্র ইরান শক্তভাবে পশ্চিমা দেশগুলোকে জানিয়েছিল, সিরিয়ায় কোনো হামলা হলে তারা নিশ্চুপ থাকবে না। ইরান জানে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদ রাখার মিথ্যা অজুহাত দিয়ে আমেরিকা যেমন ইরাক আক্রমণ এবং সাদ্দামকে বিচার প্রহসনে হত্যা করেছে, তেমনি সিরিয়ার বিরুদ্ধেও একই অজুহাত তুলে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত এবং সাদ্দাম ও গাদ্দাফির পরিণতি বরণে বাধ্য করতে চায়। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে ইরান। ইরান মার্কিন তাঁবেদার নয়। আমেরিকা ও ইসরাইল চায় ইরানের ধ্বংস। কিন্তু ইরানে হামলা চালানোর আগে তার একমাত্র মিত্র সিরিয়াকে ধ্বংস করা প্রয়োজন।
ধরে নেয়া যাক, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল। এ গণঅভ্যুত্থানের শুরুতেই আমেরিকা ও ন্যাটোর বিদ্রোহীদের পক্ষালম্বন, তাদের অস্ত্র সাহায্যদান এবং গণ-অভ্যুত্থানকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করার পেছনে ওবামা প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্যটা কী ছিল?
ইসরাইলের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইরানকে ধ্বংস করা নয় কি? মধ্যপ্রাচ্যে এখন একমাত্র সিরিয়াই ইরানের মিত্র দেশ। সিরিয়া ও ইরানই প্যালেস্টিনিদের ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য সাহায্য জুগিয়ে আসছে।
মজার ব্যাপার এই যে, সিরিয়া ও ইরানে হামলা চালানোর জন্য শুধু ইসরাইলই আমেরিকার ওপর চাপ দিচ্ছে না, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতের মতো মুসলিম দেশগুলোও এই চাপ দিচ্ছে। শুধু চাপ দেয়া নয়, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের তারা ক্রমাগত অস্ত্র সাহায্য জোগাচ্ছে। কিছুদিন আগে ইরানে বোমা হামলা চালানোর জন্য সৌদি আরবের বাদশা ইসরাইলের সঙ্গে মিলে ওবামা প্রশাসনের ওপর চাপ দিয়েছিল। ইরান রাজতন্ত্র ধ্বংস করে প্রজাতন্ত্র স্থাপন করেছে ও ধর্মীয় পরিচয়ে তারা শিয়া এই কারণে সৌদি বাদশারা ইরানকে ধ্বংস করতে চান এবং এই উদ্দেশ্যে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলাতে দ্বিধা করেননি। সাদ্দামকে ধ্বংস করার জন্য সৌদি আরব আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে, এখন সিরিয়া ও ইরানের মতো দুটি মুসলিম দেশকে ধ্বংস করতে চায়। এটাই হচ্ছে ‘ইসলামের রক্ষক’ সৌদি রাজতন্ত্রের বর্তমান ভূমিকা। সেই সঙ্গে রয়েছে মার্কিন স্বার্থ ও আধিপত্য রক্ষাও।
সৌদি আরব দেদার অস্ত্র ও অর্থ দিচ্ছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের। তার মধ্যে আমেরিকার কাছ থেকে বা অন্যভাবে পাওয়া রাসায়নিক অস্ত্রও আছে কিনা তা কে বলবে? মধ্যপ্রাচ্যের একটি আরব দৈনিকের সন্দেহ, এই অস্ত্র বিদ্রোহীদের দেয়া হয়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরানকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকা সাদ্দাম হোসেনকে এই বিষাক্ত অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। পরে এই অস্ত্র রাখার অভিযোগেই সাদ্দামের বিরুদ্ধে একটি অবৈধ যুদ্ধ করেছে। যদিও প্রমাণিত হয়েছে, সাদ্দামের কাছে তখন এ ধরনের কোনো অস্ত্র ছিল না।
বর্তমান সিরিয়া যুদ্ধেও পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত সিরিয়ান বিদ্রোহীরা এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে- না, আমাদের সৈন্যরা করেছে, তা আগে সংশয়াতীতভাবে নির্ণীত হওয়া প্রয়োজন। তার আগেই সিরিয়ায় আমেরিকার মিসাইল হামলা চালানোর এবং প্রেসিডেন্ট আসাদকে শাস্তি দেয়ার নামে সিরিয়ার শত শত নিরীহ নর-নারী শিশু হত্যার পরিকল্পনা কি সমর্থনযোগ্য? ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এই তিনটি দেশকেই ড্রোন হামলা চালিয়ে কার্যত ধ্বংস করে আমেরিকার আধিপত্যবাদের ক্ষুধা মেটেনি। এখন সিরিয়া ও ইরানকে ধ্বংস করতে হবে? সিরিয়ায় আসাদ সরকার কেমিক্যাল অস্ত্র নিজ জনগণের ওপর ব্যবহার করেছে এই অভিযোগ যদি সঠিকও হয়, তাহলে প্রথমে জাতিসংঘের মাধ্যমে আসাদ সরকারকে এই অস্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত করা এবং কোনো ধরনের পিউনিটিভ ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই আরও ধ্বংসাত্মক মিসাইল হামলা চালানোর এই হুংকার কেন? অপর দেশের জনগণকে রক্ষার নামে সেই জনগণের ওপর বর্বর সামরিক হামলা চালানোর অধিকার আমেরিকাকে কে দিয়েছে?
আমেরিকা এখন ইউনিপোলার বিশ্বের অধীশ্বর হলে কী হবে, সে একা যুদ্ধ করতে ভয় পায়। চল্লিশের দশকে আমেরিকার একক হাতে যখন অ্যাটম বোমা ছিল, তখনও কোরিয়ার যুদ্ধে সে একা নামেনি। অধিকাংশ মিত্রদেশকে (তুরস্কসহ) নামিয়েছিল এবং জাতিসংঘের বিনা অনুমোদনে জাতিসংঘের নাম ও পতাকা ব্যবহার করেছে। দু-দুটো গালফ যুদ্ধে শক্তিগর্বে স্ফীত আমেরিকা বারবার জাতিসংঘকে উপেক্ষা করেছে বটে, কিন্তু ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র ও তাঁবেদার দেশগুলোকে যুদ্ধে জড়িত করেছে।
কিন্তু কোনো (কোরিয়া থেকে গালফ যুদ্ধ) যুদ্ধেই আমেরিকা সুপিরিয়র অস্ত্র ব্যবহার করেও সার্বিক জয়ের অধিকারী হতে পারেনি। ইরাক যুদ্ধ শেষ হয়েও হচ্ছে না। আফগানিস্তানে তাদের লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে। এসব অবৈধ যুদ্ধের ব্যয় বহন করতে গিয়ে শুধু আমেরিকার নয়, গ্লোবাল অর্থনীতিতেই ত্রিশের মন্দার চাইতেও বড় মন্দা বা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ওবামা আর নতুন যুদ্ধে জড়াতে চান না একথা সত্য। কিন্তু তার ঘাড়ে সিন্দবাদের বুড়ো দৈত্যের মতো মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের যুদ্ধবাজ অংশটি চেপে বসে আছে। তিনি কোন্ দিকে যাবেন? তার জন্য ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির।
অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং সামরিক শক্তির সাহায্যে একাধিক যুদ্ধে সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতাই পশ্চিমা শক্তি- বিশেষ করে আমেরিকাকে ইরাক যুদ্ধের পরই সরাসরি সিরিয়া ও ইরান আক্রমণে বিরত রেখেছে। নইলে এতদিনে এই দুটি দেশ- বিশেষ করে ইরান আক্রান্ত হতো। সিরিয়ায় ওবামা রেজিম চেঞ্জ চান না বলে যতই কথা বলুন, আসলে বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য জুগিয়েছে সিরিয়ায় রেজিম চেঞ্জ দ্বারা ইরানেও রেজিম চেঞ্জের পথ প্রশস্ত করাই ছিল ওয়াশিংটনের লক্ষ্য। সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে এই লক্ষ্য অর্জনের দিকেই ওবামা প্রশাসন ক্রমশ এগুচ্ছিল।
কিন্তু সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতা এবং ইরান, চীন ও রাশিয়া শক্তভাবে সিরিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় পশ্চিমা দেশ- বিশেষ করে ওবামা প্রশাসনের পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি নামা ছাড়া এস্টাবলিশমেন্টের যুদ্ধবাজ অংশের চাপ উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওবামা তাই ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে (সঙ্গে পরোক্ষভাবে ইসরাইল) সঙ্গে নিয়ে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ধুয়া তুলে সিরিয়ায় হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সেধেছে যুদ্ধক্লান্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত মার্কিন ও ব্রিটিশ জনমত। যুদ্ধবিরোধী বিরাট মিছিল হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকারের যুদ্ধে নামার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
এরপর আমেরিকা একা যুদ্ধে নামবে এমন হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। আমি আগেই বলেছি, আমেরিকার একা যুদ্ধে নামার সাহস দেখানোর অতীতের কোনো রেকর্ড নেই। ব্রিটেন যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার পর নিজের মুখ রক্ষার জন্য ওবামা তার আগেকার প্রেসিডেন্ট বুশের মতো রণহুংকার দিতে থাকলেও যুদ্ধের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন চাইবেন এই অজুহাত তুলে সিরিয়ায় হামলা চালানো থেকে বিরত থাকেন। কংগ্রেসের এই অনুমোদন দানও এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে।
এই ফাঁকে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার বিদেশমন্ত্রী জন কেরিকে লাগিয়েছিলেন সিরিয়ায় কোনো ধরনের হামলা চালানোর ব্যাপারে রাশিয়ার সম্মতি আদায়ের জন্য। রাশিয়া সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর প্রচণ্ড বিরোধী। জেনেভায় রুশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে জন কেরি অনেক আলাপ-আলোচনা করে যেটুকু সাফল্য অর্জন করেছেন (যদি একে সাফল্য বলা যায়) তা হল- আসাদ সরকারকে যুক্তভাবে একটি চরমপত্র দেয়া, যাতে রাসায়নিক অস্ত্রের ঘাঁটিগুলোর সন্ধান সিরিয়া পাঁচদিনের মধ্যে দেয় এবং এই অস্ত্র সম্পর্কে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের আগামী নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করতে সহযোগিতা জোগায়।
রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার এই সমঝোতার ফলে সিরিয়া আশু মার্কিন হামলা থেকে বেঁচে গেল। ওবামা প্রশাসনের মুখ কিছুটা রক্ষা পেল। কিন্তু সিরিয়াকে মার্কিন হামলা থেকে রক্ষার ব্যাপারে রুশ কূটনীতি সফল হল। আমেরিকার যুদ্ধবাজ চক্র এবং ইসরাইল ও সৌদি বাদশাদের চাপ থেকেও ওবামা আপাতত মুক্ত হলেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা রাশিয়ার সঙ্গে এই সমঝোতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিনন্দন জানালেও তিনি এবং তার ইউরোপিয়ান ও আরব মিত্ররা জানেন, এই সমঝোতার ফলে আমেরিকার যুদ্ধনীতি একটা বড় ঘা খেয়েছে, রাশিয়া কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে এবং আমেরিকার নীতিকে সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ আখ্যা দেয়া যায়। লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকার (১৫ সেপ্টেম্বর) খবর, সিরিয়ার সাধারণ মানুষ এই সমঝোতাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং মার্কিন বোমা হামলা থেকে বাঁচানোর জন্য রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
পশ্চিমা মিডিয়া এবং যুদ্ধবাদী মহল এই সমঝোতার আসল তাৎপর্য বুঝতে পারেননি তা নয়। তারা অনেকেই প্রকাশ্যে অভিমত প্রকাশ করেছেন, সিরিয়ায় আসাদ সরকার টিকে গেল। প্রত্যক্ষ মার্কিন মদদ ছাড়া বিদ্রোহীদের জয়ের আশা নেই। এই সমঝোতায় শনিবারের চরমপত্র অগ্রাহ্য করলে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং আসাদ ক্ষমতায় টিকে গেলেন এবং তার সাদ্দাম ও গাদ্দাফির পরিণতি বরণের আশংকা অনেকটাই কমে গেল।
সিরিয়ার বিদ্রোহীরাও এই সমঝোতায় হতাশ এবং বিরক্ত। তারা হুমকি দিয়েছে, রাসায়নিক অস্ত্র অনুসন্ধান সম্পর্কে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দেবে। তাদের তারা সিরিয়ায় ঢুকতে দেবে না। এই হুমকি তারা কতটা কার্যকর করতে পারবে সে সম্পর্কে পশ্চিমা মিডিয়ায় অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, এবার যুদ্ধের হুংকার দিয়ে সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণের দ্বিতীয় নজির স্থাপন করেছে আমেরিকা। মার্কিন হামলার হুমকির মুখে রাশিয়া কিউবাকে মিসাইল অস্ত্রসজ্জিত করার জন্য মিসাইলবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল কিউবায়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডি হুমকি দিয়েছিলেন কিউবাগামী মিসাইলবাহী রুশ রণতরীর ওপর তিনি হামলা চালাবেন। তখন তৃতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয় হয় এমন আশংকা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘোষণা করেন, তিনি কিউবায় হামলা চালাবেন না এবং রাশিয়াও তার মিসাইলবাহী জাহাজ সমুদ্রবক্ষ থেকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়। কেউবায় ক্যাস্ট্রো রেজিম টিকে যায় এবং বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধের বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায়।
তাই বিশ্বের বর্তমান পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, কিউবা সংকটের মতো সিরিয়া সংকটেও আমেরিকায় সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণ এবং রাশিয়ার কূটনৈতিক সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আরেকটি বড় ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধের বিপর্যয় বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ হয়তো এড়াতে পেরেছে।
No comments