জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন মমতা? by অমর সাহা
তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। দলের একচ্ছত্র নেত্রী। বিরোধীদের কথায় বলা হয় তাঁর একার কথায় দল চলে। রাজ্য চলে। এই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আরোহণের দ্বিতীয় বর্ষ উদ্যাপন করেছেন ২০ মে ঘটা করে। পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় একটানা ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে পরাস্ত করে ক্ষমতায় আসেন মমতা ২০১১ সালের ২০ মে। এই সুদীর্ঘ দুই বছরে মমতার কর্মকাণ্ডে কি খুশি রাজ্যবাসী বা মমতার জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েছে? সেই প্রশ্ন এখন উঠে এসেছে আজ রাজ্যবাসীর মনে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দাবি করেছে, মমতার জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। তিনিই রাজ্যের এখন রক্ষাকর্তা। একচ্ছত্র নেত্রী। তাঁর কথায় দল চলে, সরকার চলে। সেই মমতা কি সত্যি রাজ্যবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন?
একটু পেছনের দিকে তাকানো যাক। মাত্র ছয় মাস আগের কথা, কলকাতার প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক এই সময় একটি জনসমীক্ষা করে তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত বছরের ৫ নভেম্বর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার দেড় বছর পর কলকাতার মানুষ কী ভাবছেন, কী পরিবর্তন হয়েছে, বাম দলের অবস্থা কী, বামফ্রন্ট কি আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে ইত্যাদি নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই বাংলা দৈনিক এই সময় ও ‘ইপসোস’ চালায় এই জনসমীক্ষা। এই জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছিল কলকাতার রাজনীতির নানা চালচিত্র।
সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বামফ্রন্ট কি ক্ষমতায় আসতে পারবে? এই প্রশ্নের জবাবে ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, বামফ্রন্টের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রীর শিরোপা কার পাওয়া উচিত—এই প্রশ্নের জবাবে ৪৪ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন জ্যোতি বসুর নাম। ৩০ শতাংশ বলেছিলেন মমতার নাম। আর ১৫ শতাংশ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের এবং ১১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের নাম। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতার কি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে? এই প্রশ্নের জবাবে না বলেছেন ৬৯ শতাংশ এবং হ্যাঁ বলেছেন ২৪ শতাংশ মানুষ। কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর থেকে মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করে ভুল করেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৪৬ শতাংশ আর না বলেছেন ৪৩ শতাংশ মানুষ। আবার আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল একলা লড়ে সাফল্য পাবে কি? এই প্রশ্নের জবাবে ৪২ শতাংশ না, আবার ৪২ শতাংশ মানুষই বলেছেন হ্যাঁ। এ তো গেল ছয় মাস আগের কথা। এই ছয় মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি অঙ্গনে বহু পানি গড়িয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে মমতার বিরুদ্ধেও। বিরোধীরা দাবিও তুলেছে তার পদত্যাগের। কিন্তু সত্যি কি মমতার জনপ্রিয়তায় ভাটার টান দেখা দিয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদের এক কথা—জনপ্রিয়তা কমছে মমতার। মমতার একগুঁয়েমি এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব পিছিয়ে দিচ্ছে মমতাকেই। একের পর এক ঘটনায় জেরবার হচ্ছেন মমতা। সর্বশেষ যে ঘটনা মমতার জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তা হলো সারদা-কাণ্ড।
পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি। এই সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন রাজ্যের আমানতকারীদের কাছ থেকে অন্তত ২১ হাজার কোটি রুপি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন। সুদীপ্ত সেন কলকাতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৮ পাতার এক দীর্ঘ চিঠিতে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে লেখা চিঠিতে বলে যান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের পতনের মূলে রয়েছে সরকারি দলের কয়েকজন সাংসদ, মন্ত্রী ও নেতাসহ অন্তত ২২ জন। তাঁদের তিনি নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে পুষে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সুদীপ্ত সেন তাঁর চিঠিতে যাঁদের নাম উল্লেখ করে গেছেন, মমতার রাজ্য পুলিশ এখন পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অধিকন্তু রাজ্যের আপামর মানুষ সারদা-কাণ্ড সিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্তের দাবি তুললেও মমতা সেই দাবিকে উপেক্ষা করে রাজ্য পুলিশ দিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন। এই সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে পৃথক তিনটি জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে। তাই মমতার এসব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি রাজ্যবাসী এবং নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সারদার আমানতকারী ও এজেন্টরা। শুধু তা-ই নয়, ইতিমধ্যে ২০ জন আমানতকারী, এজেন্ট এবং কয়েকটি ভুঁইফোড় বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক আত্মহত্যাও করেছেন। অথচ এই মমতাই বিরোধী আসনে থাকাকালে রাজ্যের একটি ছোট্ট ঘটনারও সিবিআই তদন্ত চাইতেন। এসব ঘটনায় মমতার জনপ্রিয়তা যে হ্রাস পাচ্ছে, তা রাজ্যবাসী এখন বুঝতে পারছে।
শুধু এ নয়, মমতার জনপ্রিয়তা হ্রাসের আরও অনেক কারণ রয়েছে।
এবার তাকানো যাক একটু পেছনের দিকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র মমতাদের নিয়ে আঁকা একটি কার্টুন ই-মেইলে পোস্ট করে ফেঁসে যান। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে। শিলাদিত্য চৌধুরী নামের এক কৃষক মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর এক জনসভায় সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাতে গেলে মমতার নির্দেশে পুলিশ তাঁকে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেপ্তার করে। আবার তানিয়া ভরদ্বাজ নামের এক ছাত্রী কলকাতার টাউন হলে ভারতের একটি নামী টিভি চ্যানেলের এক টক শোতে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে ফেঁসে যান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মাওবাদী আখ্যা দিয়ে টক শোর স্থল ত্যাগ করেন। আর কলকাতার সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার দময়ন্তী সেন কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের একটি ধর্ষণকাণ্ড প্রমাণ করায় তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এসব ঘটনায়ও রাজ্যবাসীর মনে মমতা সম্পর্কে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি এবং তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে মমতার ভূমিকাকেও মেনে নিতে পারেনি অনেকে। ভারতের কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকার এসব চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নিলেও আপত্তি তোলেন মমতা। তাই মমতার এসব আচরণকে মেনে নিতে পারেননি প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজুও। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, মমতাকে আরও সহিষ্ণু হতে হবে। কমাতে হবে তাঁর খামখেয়ালিপনা। বদলাতে হবে তাঁর আচরণ। নইলে বেশি দিন মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না মমতা।
তাই বলা চলে, যে জনসমর্থন নিয়ে মমতা ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই জনসমর্থনকে এখন আর তিনি ধরে রাখতে পারছেন না। ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ। আর এর জন্যই দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে তাঁর জনসমর্থন। সেই কথাটিই ছয় মাস আগেই ভেসে উঠেছে সংবাদপত্রে। এই সময়ে। অথচ মমতার সামনে এখনো বাকি রয়েছে ক্ষমতায় থাকার তিনটি বছর।
l অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতাপ্রতিনিধি।
একটু পেছনের দিকে তাকানো যাক। মাত্র ছয় মাস আগের কথা, কলকাতার প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক এই সময় একটি জনসমীক্ষা করে তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত বছরের ৫ নভেম্বর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার দেড় বছর পর কলকাতার মানুষ কী ভাবছেন, কী পরিবর্তন হয়েছে, বাম দলের অবস্থা কী, বামফ্রন্ট কি আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে ইত্যাদি নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ওই বাংলা দৈনিক এই সময় ও ‘ইপসোস’ চালায় এই জনসমীক্ষা। এই জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছিল কলকাতার রাজনীতির নানা চালচিত্র।
সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বামফ্রন্ট কি ক্ষমতায় আসতে পারবে? এই প্রশ্নের জবাবে ৫০ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, বামফ্রন্টের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রীর শিরোপা কার পাওয়া উচিত—এই প্রশ্নের জবাবে ৪৪ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন জ্যোতি বসুর নাম। ৩০ শতাংশ বলেছিলেন মমতার নাম। আর ১৫ শতাংশ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের এবং ১১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের নাম। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতার কি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে? এই প্রশ্নের জবাবে না বলেছেন ৬৯ শতাংশ এবং হ্যাঁ বলেছেন ২৪ শতাংশ মানুষ। কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর থেকে মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করে ভুল করেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৪৬ শতাংশ আর না বলেছেন ৪৩ শতাংশ মানুষ। আবার আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল একলা লড়ে সাফল্য পাবে কি? এই প্রশ্নের জবাবে ৪২ শতাংশ না, আবার ৪২ শতাংশ মানুষই বলেছেন হ্যাঁ। এ তো গেল ছয় মাস আগের কথা। এই ছয় মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি অঙ্গনে বহু পানি গড়িয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে মমতার বিরুদ্ধেও। বিরোধীরা দাবিও তুলেছে তার পদত্যাগের। কিন্তু সত্যি কি মমতার জনপ্রিয়তায় ভাটার টান দেখা দিয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদের এক কথা—জনপ্রিয়তা কমছে মমতার। মমতার একগুঁয়েমি এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব পিছিয়ে দিচ্ছে মমতাকেই। একের পর এক ঘটনায় জেরবার হচ্ছেন মমতা। সর্বশেষ যে ঘটনা মমতার জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তা হলো সারদা-কাণ্ড।
পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি। এই সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন রাজ্যের আমানতকারীদের কাছ থেকে অন্তত ২১ হাজার কোটি রুপি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন। সুদীপ্ত সেন কলকাতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৮ পাতার এক দীর্ঘ চিঠিতে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে লেখা চিঠিতে বলে যান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের পতনের মূলে রয়েছে সরকারি দলের কয়েকজন সাংসদ, মন্ত্রী ও নেতাসহ অন্তত ২২ জন। তাঁদের তিনি নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে পুষে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। সুদীপ্ত সেন তাঁর চিঠিতে যাঁদের নাম উল্লেখ করে গেছেন, মমতার রাজ্য পুলিশ এখন পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অধিকন্তু রাজ্যের আপামর মানুষ সারদা-কাণ্ড সিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্তের দাবি তুললেও মমতা সেই দাবিকে উপেক্ষা করে রাজ্য পুলিশ দিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন। এই সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে পৃথক তিনটি জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে। তাই মমতার এসব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি রাজ্যবাসী এবং নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সারদার আমানতকারী ও এজেন্টরা। শুধু তা-ই নয়, ইতিমধ্যে ২০ জন আমানতকারী, এজেন্ট এবং কয়েকটি ভুঁইফোড় বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক আত্মহত্যাও করেছেন। অথচ এই মমতাই বিরোধী আসনে থাকাকালে রাজ্যের একটি ছোট্ট ঘটনারও সিবিআই তদন্ত চাইতেন। এসব ঘটনায় মমতার জনপ্রিয়তা যে হ্রাস পাচ্ছে, তা রাজ্যবাসী এখন বুঝতে পারছে।
শুধু এ নয়, মমতার জনপ্রিয়তা হ্রাসের আরও অনেক কারণ রয়েছে।
এবার তাকানো যাক একটু পেছনের দিকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র মমতাদের নিয়ে আঁকা একটি কার্টুন ই-মেইলে পোস্ট করে ফেঁসে যান। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে। শিলাদিত্য চৌধুরী নামের এক কৃষক মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর এক জনসভায় সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাতে গেলে মমতার নির্দেশে পুলিশ তাঁকে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেপ্তার করে। আবার তানিয়া ভরদ্বাজ নামের এক ছাত্রী কলকাতার টাউন হলে ভারতের একটি নামী টিভি চ্যানেলের এক টক শোতে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে ফেঁসে যান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মাওবাদী আখ্যা দিয়ে টক শোর স্থল ত্যাগ করেন। আর কলকাতার সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার দময়ন্তী সেন কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের একটি ধর্ষণকাণ্ড প্রমাণ করায় তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এসব ঘটনায়ও রাজ্যবাসীর মনে মমতা সম্পর্কে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি এবং তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে মমতার ভূমিকাকেও মেনে নিতে পারেনি অনেকে। ভারতের কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকার এসব চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নিলেও আপত্তি তোলেন মমতা। তাই মমতার এসব আচরণকে মেনে নিতে পারেননি প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজুও। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, মমতাকে আরও সহিষ্ণু হতে হবে। কমাতে হবে তাঁর খামখেয়ালিপনা। বদলাতে হবে তাঁর আচরণ। নইলে বেশি দিন মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না মমতা।
তাই বলা চলে, যে জনসমর্থন নিয়ে মমতা ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই জনসমর্থনকে এখন আর তিনি ধরে রাখতে পারছেন না। ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ। আর এর জন্যই দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে তাঁর জনসমর্থন। সেই কথাটিই ছয় মাস আগেই ভেসে উঠেছে সংবাদপত্রে। এই সময়ে। অথচ মমতার সামনে এখনো বাকি রয়েছে ক্ষমতায় থাকার তিনটি বছর।
l অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতাপ্রতিনিধি।
No comments