রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চলমান থাকবে?
‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা’র যে ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে, তার সুফল নিতে তৎপর খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আরও চার আসামি। পূর্বতন রাষ্ট্রপতিরা যে মন্দ নজির সৃষ্টি করেছিলেন, সেটা এখন ‘নিয়মে’ পরিণত হতে বসেছে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার চার প্রার্থীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের খোঁজ নিলেই ‘ক্ষমা’ প্রত্যাশা ও ক্ষমা দান-প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক চরিত্রটি স্পষ্ট হয়। খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইয়াসিন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমানের ছেলে। আরেক প্রার্থী আবদুল জব্বার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র সন্ত্রাসীদের ‘গডফাদার’ তাহেরের পালক ছেলে। অন্য দুজন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার দূরসম্পর্কের আত্মীয় কালা মৃধা ও জাকির মৃধা। শেষোক্ত দুজনের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী খোলাখুলি সুপারিশও করেছেন। রক্ষকই এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।
দলীয় লোকদের দিয়ে কমিটি করে তথাকথিত ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার’ এবং রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতাবলে খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া একই সুতায় গাঁথা। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে আইনের স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কেবল প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করবেন। তাই সঠিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বাছবিচারহীন ব্যবহারের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর সায় না থেকে পারে না। রাষ্ট্রপতির নামে বিতরিত‘ক্ষমা’র সিদ্ধান্তের দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই বর্তায়।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লবকে ক্ষমা করে দেওয়া। এ ছাড়া ২০১০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ক্ষমাপ্রাপ্ত ২০ আসামিরও সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের ক্ষমার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৩ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের হাত দিয়ে। সে সময় রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির নেতা সারওয়ার কামালকে ক্ষমা করেন। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও হয়েছিল। সেই রিটের জবাবে আদালত বলেছিলেন যে অন্যায্য ও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হলে উচ্চ আদালত হতাশ হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না; কোনো সাংবিধানিক পদাধিকারী তাঁর ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছেন কি না, সেটা পরীক্ষা করার এখতিয়ার উচ্চ আদালতের আছে।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, উচ্চ আদালতের এই অভিমতের পরও ৪৯ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক অশুভ আঁতাত রয়েছে, যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই এর অপব্যবহার করে। আর বিরোধী দলে থাকলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ব্যাপারে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালদের নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন এবং সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে আইন করেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমার অপব্যবহার রহিত করতে হবে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। আমরা আশা করব, তিনি ক্ষমার যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসে পদ ও আইন উভয়ের প্রতিই সুবিচার করবেন।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার চার প্রার্থীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের খোঁজ নিলেই ‘ক্ষমা’ প্রত্যাশা ও ক্ষমা দান-প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক চরিত্রটি স্পষ্ট হয়। খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইয়াসিন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমানের ছেলে। আরেক প্রার্থী আবদুল জব্বার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র সন্ত্রাসীদের ‘গডফাদার’ তাহেরের পালক ছেলে। অন্য দুজন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়ার দূরসম্পর্কের আত্মীয় কালা মৃধা ও জাকির মৃধা। শেষোক্ত দুজনের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী খোলাখুলি সুপারিশও করেছেন। রক্ষকই এখানে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।
দলীয় লোকদের দিয়ে কমিটি করে তথাকথিত ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার’ এবং রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতাবলে খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া একই সুতায় গাঁথা। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে আইনের স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কেবল প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করবেন। তাই সঠিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বাছবিচারহীন ব্যবহারের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর সায় না থেকে পারে না। রাষ্ট্রপতির নামে বিতরিত‘ক্ষমা’র সিদ্ধান্তের দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই বর্তায়।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লবকে ক্ষমা করে দেওয়া। এ ছাড়া ২০১০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ক্ষমাপ্রাপ্ত ২০ আসামিরও সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের ক্ষমার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৩ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের হাত দিয়ে। সে সময় রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির নেতা সারওয়ার কামালকে ক্ষমা করেন। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও হয়েছিল। সেই রিটের জবাবে আদালত বলেছিলেন যে অন্যায্য ও অন্যায়ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হলে উচ্চ আদালত হতাশ হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না; কোনো সাংবিধানিক পদাধিকারী তাঁর ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছেন কি না, সেটা পরীক্ষা করার এখতিয়ার উচ্চ আদালতের আছে।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, উচ্চ আদালতের এই অভিমতের পরও ৪৯ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক অশুভ আঁতাত রয়েছে, যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই এর অপব্যবহার করে। আর বিরোধী দলে থাকলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ব্যাপারে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালদের নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন এবং সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে আইন করেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমার অপব্যবহার রহিত করতে হবে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। আমরা আশা করব, তিনি ক্ষমার যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসে পদ ও আইন উভয়ের প্রতিই সুবিচার করবেন।
No comments