খুলনায় ১৩২০ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ ভারত মতৈক্য- সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সমঝোতা স্মারক সই
যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে খুলনায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনমতার
কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।
চলতি বছরের জুলাই মাসে বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরম্ন হবে।
তিন থেকে চার বছরের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। শুক্রবার রাতে এ
ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক(এমওইউ) স্বারিত হয়। প্রায় ১৩০
কিলোমিটার গ্রিড লাইন নির্মাণ শেষে দুই বছরের মধ্যে ভারত থেকে
প্রতিশ্রম্নত আড়াই শ' মেগাওয়াট বিদু্যত আমদানি করা হবে। প্রতি ইউনিট
বিদু্যত আমদানি জন্য খরচ হবে প্রায় সাড়ে তিন টাকা। জানুয়ারিতে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে বিদ্যুত খাতে সহযোগিতা নিয়ে দুই দেশের
মধ্যে একটি এমওইউ স্বারিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা
শুরম্ন হয়।বিদু্যত খাতে সহযোগিতা নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় দুইদেশের সচিব পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিদু্যত সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির বিদু্যত সচিব এইচএস বর্মা। বিকেলে বিদু্যত উন্নয়ন বোর্ডয়ে(পিডিবি) যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের বিদু্যত সচিব নতুন বিদু্যত কেন্দ্র নিমর্াণ, ভারত থেকে বিদু্যত আমদানি এবং পুরনো বিদু্যত কেন্দ্রগুলোর দতা বাড়ানোসহ এ খাতে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারত থেকে বিদু্যত আমদানি করতে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সরবরাহ লাইন নিমর্াণ করতে হবে। এর মধ্যে ৮৫ কিলোমিটার ভারতীয় অংশে এবং ৪৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়বে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ(পিজিসিবি) বাংলাদেশ অংশে এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ইন্ডিয়া(পিজিসিআই) ভারতীয় অংশের লাইন নিমর্াণ করবে। সরবরাহ লাইন নিমর্াণের জন্য আগামী ২৮ ফেব্রম্নয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হবে। জুলাই মাসের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হবে। ২০১২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে গ্রিড নিমর্াণ শেষে প্রসত্মাবিত আড়াই শ' মেগাওয়াট বিদু্যত আমদানি করা যাবে বলে জানানো হয়। আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিশ্রম্নত আড়্াই শ' মেগাওয়াটের বাইরেও ভারতের বেসরকারী খাত থেকে বিদু্যত আমদানির চেষ্টা করা হবে। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই বিদু্যত কেনা সম্ভব বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, ভারত থেকে আমদানি করা বিদু্যতের প্রকৃত দাম জানতে আরও কিছুদিন অপো করতে হবে। পিজিসিআই তাদের ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য খরচের ওপর নির্ভর করে প্রতি ইউনিট বিদু্যতের মূল্য নিধর্ারণ করবে। ভারতের স্থানীয় বাজার দরেই বাংলাদেশ বিদু্যত আমদানি করবে। তবে এেেত্র প্রতি ইউনিট বিদু্যতের দাম সাড়ে তিন টাকা হতে পারে বলে তিনি জানান।
বিদু্যত সচিব জানান, দুইদেশে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে খুলনায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদু্যত কেন্দ্র নিমর্াণের ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই দেশ। প্রসত্মাবিত কেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার দু'টি ইউনিট থাকবে। কেন্দ্রটিতে বিদু্যত উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) এবং ভারতীয় সংস্থা এনপিটিসির ৫০ শতাংশ হারে অংশীদারিত্ব থাকবে। তবে অধিকতর দতার কারণে এনপিটিসির কাছে বিদু্যত কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে। কেন্দ্রটি নিমর্াণে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। বিদু্যত কেন্দ্রটি নিমর্াণে প্রাথমিকভাবে সময় ধরা হয়েছে চার বছর। তবে দ্রম্নত সম্ভাব্যতা যাচাই ও জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে তিন বছরের মধ্যেই কেন্দ্রটি নিমর্াণ করা যাবে বলে তিনি আশা করেন। আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভর করে কেন্দ্রটি নিমর্াণ করা হবে। তবে কোন দেশ থেকে কয়লা আমদানি করা হবে তা এখনও চূড়ানত্ম করা হয়নি। তিনি বলেন, বিদু্যত উৎপাদন বাড়াতে হলে আগামী দিনে আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদু্যত কেন্দ্রে যেতে হবে। এজন্য দতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এনপিটিসি কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনায় থাকলে আমরা তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারব। রাতে স্থানীয় একটি হোটেলে এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক(এমওইউ) স্বারিত হয়। তিনি জানান, বিদু্যত ব্যবস্থাপনায় দতা বাড়ানোর জন্য ভারত বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় প্রশিণ দেবে। এছাড়া আগামী মে মাসে দুই যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি এবং জুনে স্টিয়ারিং কমিটির পরবতর্ী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের বিদু্যত সচিব এইচএস বর্মা বলেন, গত কয়েক বছরের বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা গর্বিত। ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত উৎপাদনের যে ল্যমাত্রা নিধর্ারণ করেছে তা অর্জনে আমরা সহযোগিতা দেব। তিনি জানান, বর্তমানে ভারতে ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত উৎপাদিত হয়। আগামী তিন বছরে আরও ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত উৎপাদনের ল্য নিধর্ারণ করা হয়েছে। এই ল্য অর্জিত হলে ভারতের গড় বিদু্যত উৎপাদন ২ লাখ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। তিনি জানান, ভারতে প্রতি ইউনিট বিদু্যতের মূল্য ২ থেকে আড়াই রম্নপি। তবে কয়লার দামের ওপর বিদু্যতের মূল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা আজ শনিবার ঘোড়াশাল তাপ বিদু্যত কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবে।
No comments