মুক্তিপণের ২৫ লাখ পেয়েও মিলনকে হত্যা করলো অপহরণকারীরা

ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে পড়ে অপহরণের শিকার মিলন হোসেনের (২২) মরদেহ ২৬ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। জমি-জায়গা বিক্রি করে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও ছেলেকে জীবিত না পেয়ে নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে পীরগঞ্জের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত মিলন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। মিলন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ছিলেন। বুধবার ১৯শে মার্চ  রাত ১০টার দিকে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ। এরা হলেন- ঠাকুরগাঁও সদরের মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সিজান আলী (২৮), আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ (২৫) ও সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রত্না আক্তার রিভা (১৯)। এ সময় মুরাদের হেফাজত থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এদিকে, গতকাল দুপুরে মিলন হোসেনের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন এলাকাবাসী। পরে জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা মিলন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার করা হবে বলে স্বজনদের আশ্বস্ত করেন। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ছেড়ে চৌরাস্তায় অবস্থান নেন তারা। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এর আগে বিক্ষুব্ধ জনতা আটক সিজান আলীর বসতবাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেন।

গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি মিলন হোসেনের সঙ্গে ফেসবুকে অজ্ঞাত একজনের যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে সেই ব্যক্তি মিলন হোসেনকে দেখা করার কথা বলেন।

একইদিন দুপুরে দেখা করার জন্য পীরগঞ্জ থেকে জেলা শহরের মুন্সিরহাট পলিটেকনিক্যালের পেছনে লিচু বাগানে যান মিলন। এরপর রাতে মিলন বাড়িতে না এলে তার বড় ভাই হামিদুর রহমান মিলনের মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পান। মিলনকে ফোনে না পেয়ে তার ভাই পরিবার ও এলাকার লোকজনকে অবগত করলে সবাই মিলে মিলনকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও সন্ধান পায়নি। ওইদিন রাত ১টার দিকে মিলনের বাবাকে ফোন করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জানান যে, মিলন তাদের হেফাজতে রয়েছে। তারা ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। অপহরণের তিনদিন পর ২৬শে ফেব্রুয়ারি মিলনকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। এরপরও মিলনকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে কয়েক ধাপে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ বাগিয়ে নেয় চক্রটি।

পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিজান ও মুরাদকে আটক করে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি সিজানের বাড়ির পেছনের অব্যবহৃত টয়লেটের স্লাবের ভেতর থেকে বুধবার রাত ৩টার দিকে মাটি খুঁড়ে মিলনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আরেক আসামি রত্না আক্তার ইভাকে আটক করে। ধারণা করা হচ্ছে, অপহৃত মিলন অপহরণকারী চক্রকে চিনে ফেলায় তারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করছিলাম কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা স্বীকার করে তারা মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেয়া তথ্যমতে, মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.