প্যারিসে জরুরি সম্মেলন করছেন ইইউ নেতারা: যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ
২০১৫ সালে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ব্যর্থ যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। একে মিনস্ক চুক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়। সেই চুক্তি এখনো ইউরোপকে তাড়া করে ফেরে। ওই আলোচনার মধ্যস্থতা করেছিল ফ্রান্স ও জার্মানি। তাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাসে যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এবার ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ একটি উদ্যোগ নিশ্চিত করতে পারেন কিয়ের স্টারমার। তিনি এ মাসের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন হোয়াইট হাউসে। সেখানে ইউরোপিয়ান নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবেন। কিয়ের স্টারমার ওয়াশিংটন থেকে ফিরে আসার পর জেলেনস্কিকে নিয়ে ইউরোপিয়ান নেতাদের আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। স্টারমার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপকে একত্রিত রাখার জন্য কাজ করবে বৃটেন। বাইরের শত্রুদের দ্বারা তাদের জোটে ভাঙন ধরাতে দেয়া যাবে না। বর্তমান বিশ্বে এটাই বাস্তবতা। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তায় এক প্রজন্মের মধ্যে এটা একটা মুহূর্ত। রাশিয়া থেকে যে হুমকি আসছে তা মোকাবিলা করতে হবে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কি বলেছেন, ইউরোপিয়ান নেতাদের সামিট আহ্বান করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এখনো এমন ঘোষণা দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আর ইউরোপের জন্য সহায়তা দেবে না এমন উদ্বেগ তুলে ধরে শনিবার একটি ‘আর্মি অব ইউরোপ’ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, কনফারেন্সে ভাষণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। এতে তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পুরনো বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ইউরোপকে এটা নতুন করে মেরামত করতে হবে। জেলেনস্কি আরও বলেন, তাদেরকে বাইরে রেখে পর্দার আড়ালে কোনো চুক্তি হলে তা কখনো মেনে নেবে না ইউক্রেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে শান্তি সংলাপে সম্মত হওয়ার পর এমন মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। সপ্তাহের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে, পুতিনের সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় ফোনে কথা হয়েছে এবং ইউক্রেনে একটি ‘উদ্ভট যুদ্ধ’ বন্ধে অবিলম্বে সংলাপ হবে। সেই সংলাপ শুরু হবে অবিলম্বে। পরে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জেলেনস্কিকে অবহিত করেন ট্রাম্প। এ সময় ট্রাম্পকে আস্থাশীল দেখায় যে, তার নেতৃত্ব ইউক্রেনে শান্তি চুক্তির পথ দেখাতে পারবে। উল্লেখ্য, কমপক্ষে তিন বছর ধরে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো কথা হয় না। এরপর পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোন এই নীরবতাকে ভেঙে দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের ওই ঘোষণাকে কেউ কেউ হতাশাজনক বলে মনে করছেন। তার এ ঘোষণাকে ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
তখন তারা প্রায় দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তারপর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। তাতে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ তা থেকে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেন। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রিপোর্ট দেয় যে, ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে জিতিয়ে আনতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল রাশিয়া। এমন রিপোর্টের পরেও ট্রাম্প রাশিয়ার পক্ষ নেন।
ওদিকে ১২ই ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শনিবার ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি মাইকেল ম্যাকল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, কয়েকদিনের মধ্যে সৌদি আরবে ট্রাম্প প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যস্থতাকারীদের শান্তি আলোচনা শুরু হবে। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ম্যাকল বলেন, সৌদি আরবের এই সংলাপে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে তিনি জানেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প, পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে এই সাক্ষাতের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। কিন্তু তার একদিন আগে ইউরোপিয়ান গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। তিনি বলেছেন, ইউরোপ মহাদেশ যে বড় হুমকি মোকাবিলা করছে তা রাশিয়া বা চীন থেকে আসছে না। সেই হুমকি তাদের অভ্যন্তরীণ। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে বক্তব্যে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, ইউরোপকে অবশ্যই তার নিজস্ব প্রতিরক্ষার পথ গড়ে তুলতে হবে। শনিবার একই কনফারেন্সে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পুতিন সরে যাবেন না। ন্যাটোর ২৩টি দেশ বর্তমানে তাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধির কমপক্ষে শতকরা ২ ভাগ প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করছে। এটা ইতিবাচক দিক।
No comments