বদলে যাওয়া সংস্কৃতি নাকি আধুনিকতার ছোঁয়া? by শামীমুল হক
আচ্ছা,
সংস্কৃতি কি বদলে যাচ্ছে? নাকি এতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে? কোনটি যুতসই
হবে বুঝে উঠতে পারছি না। ভেবে পাচ্ছি না। বেশি দূর নয়। বছর চল্লিশ আগে
ফিরলে কি দেখি? গ্রামের মেঠোপথ মাড়িয়ে দলে দলে লোক যাচ্ছে নদীর পাড় কিংবা
কোনো বটতলায়। সেখানে বাংলা বছরের শেষদিনে বসেছে বান্নি। হাঁটতে হাঁটতে যখন
কাছে পৌঁছাতাম তখন ভেসে আসত হাজারো মানুষের কোলাহল। কেউ মাটির তৈরি নানা
পণ্য কিনে আনছেন। কেউ বা ভেপু বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফিরছেন।
কেউ টানছেন ডবডবি। এক উৎসবমুখর গ্রাম-বাংলা। বছরের শেষদিন চৈত্রসংক্রান্তির দিনে এবং বছরের শুরুর দিন পহেলা বৈশাখ বসতো এ বান্নি বা মেলা। থাকতো নানা ধরনের খাবার। যা শুধু মেলাতেই মিলত। এছাড়া শিশুরা নাগরদোলায় চড়তো। কেউ কেউ পুতুলনাচ দেখতো। কোনো কোনো বান্নিতে যাত্রাপালাও হতো। বাংলা নববর্ষ বলে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ছিল বান্নি জুড়ে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীরা হালখাতা করতেন। মিষ্টির ড্রাম নিয়ে বসতেন।
ওইদিন যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দায়মুক্তি নিতেন নির্দিষ্ট ক্রেতারা। এর অর্থ ছিল ব্যবসায়ী বা দোকানিরা বকেয়ার খাতাটি হালনাগাদ করে নিতেন। একে একে দেনাদাররা আসেন। দেনা পরিশোধ করেন। দোকানিরা তাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে বিদায় দিতেন। করতেন কোলাকুলি। পরদিন থেকে শুরু হতো নতুন বছরের যাত্রা। আর গ্রামের ঘরে ঘরে সেদিন একটু হলেও তিতা জাতীয় কিছু মুখে দিয়ে তারপর খাবার শুরু করতেন। এটাই ছিল প্রথা। কিন্তু এখন? গ্রামে গেলেও এসব আর দেখা যায় না। এতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তিতার জায়গা দখল করেছে পান্তা আর ইলিশ। নব্বই দশকে শুরু হওয়া চারুকলার মঙ্গলশোভাযাত্রা হয়ে উঠেছে বাংলা নববর্ষের প্রধান আকর্ষণ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। কিন্তু এ প্রাণের উৎসবে বাঙালির বাঙালিয়ানা কতটুকু আছে?
ভারতবর্ষের সম্রাট বিক্রমাদিত্য প্রবর্তন করেন পঞ্জিকা। এর নাম বিক্রম সাম্বাত পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকা ধরেই বাংলা পঞ্জিকার যাত্রা। এই পঞ্জিকাকেই ক্যালেন্ডার বলা হতো। তখন ছিল সংস্কৃত ভাষা। এটাকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর করা হয়। বারো মাসের নামগুলোও রাখা হয় একই। ইতিহাস মতে, রাজা শশাঙ্কের শাসনামলে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। একটি কথা না বললেই নয়, পহেলা বৈশাখ শুধু বাঙালির নববর্ষ নয়, এটি পুরো দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নববর্ষ। ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা তখন মুঘল সম্রাটদের হাতে। পাল থেকে সেন, সেন থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মুঘলরা ক্ষমতায় আসে। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর এবং তার পুত্র দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন হিজরি সাল অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করলেও, তৃতীয় মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন মুহম্মদ আকবর চন্দ্র মাসের ক্যালেন্ডার পাল্টে বাংলা ক্যালেন্ডার পুনঃস্থাপন করেন। এর কারণ ছিল, খাজনা আদায়।
চন্দ্র মাস অনুযায়ী খাজনা আদায় করতে গিয়ে কয়েক বছর ঘুরে খাজনা আদায়ের সময় চলে আসে ভিন্ন ঋতুতে। এতে কৃষকদের খাজনা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা দূর করতে সম্রাট আকবর ইরান থেকে আসা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজিকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌরবর্ষপঞ্জিতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব দেন। এভাবেই বাংলা পঞ্জিকার নবযাত্রা শুরু হয়। এরপরও সময়ে সময়ে বাংলা ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিকায়ন হয়েছে।
কিন্তু পহেলা বৈশাখ বাঙালির হৃদয়ে বাঙালিয়ানাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলেছে। তবে আদি সেই সংস্কৃতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখানেও এসেছে পরিবর্তন। পান্তা আর ইলিশ এসেছে খাবারের পাতে। হালখাতা যেন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়ে গেছে রেওয়াজ। নদীর পাড় থেকে বান্নি উঠে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও উঠে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে শহরে বৈশাখী মেলা নামে। যেন গ্রামীণ ছোঁয়ার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায় না। সেই এক মঞ্চের মধ্যেই যেন বন্দি বাংলা নববর্ষ। আগে শহর থেকে গ্রামে যেতেন বান্নি দেখতে। আর এখন গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসেন মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে। পার্থক্য এখানেই।
কেউ টানছেন ডবডবি। এক উৎসবমুখর গ্রাম-বাংলা। বছরের শেষদিন চৈত্রসংক্রান্তির দিনে এবং বছরের শুরুর দিন পহেলা বৈশাখ বসতো এ বান্নি বা মেলা। থাকতো নানা ধরনের খাবার। যা শুধু মেলাতেই মিলত। এছাড়া শিশুরা নাগরদোলায় চড়তো। কেউ কেউ পুতুলনাচ দেখতো। কোনো কোনো বান্নিতে যাত্রাপালাও হতো। বাংলা নববর্ষ বলে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ছিল বান্নি জুড়ে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীরা হালখাতা করতেন। মিষ্টির ড্রাম নিয়ে বসতেন।
ওইদিন যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দায়মুক্তি নিতেন নির্দিষ্ট ক্রেতারা। এর অর্থ ছিল ব্যবসায়ী বা দোকানিরা বকেয়ার খাতাটি হালনাগাদ করে নিতেন। একে একে দেনাদাররা আসেন। দেনা পরিশোধ করেন। দোকানিরা তাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে বিদায় দিতেন। করতেন কোলাকুলি। পরদিন থেকে শুরু হতো নতুন বছরের যাত্রা। আর গ্রামের ঘরে ঘরে সেদিন একটু হলেও তিতা জাতীয় কিছু মুখে দিয়ে তারপর খাবার শুরু করতেন। এটাই ছিল প্রথা। কিন্তু এখন? গ্রামে গেলেও এসব আর দেখা যায় না। এতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তিতার জায়গা দখল করেছে পান্তা আর ইলিশ। নব্বই দশকে শুরু হওয়া চারুকলার মঙ্গলশোভাযাত্রা হয়ে উঠেছে বাংলা নববর্ষের প্রধান আকর্ষণ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। কিন্তু এ প্রাণের উৎসবে বাঙালির বাঙালিয়ানা কতটুকু আছে?
ভারতবর্ষের সম্রাট বিক্রমাদিত্য প্রবর্তন করেন পঞ্জিকা। এর নাম বিক্রম সাম্বাত পঞ্জিকা। এই পঞ্জিকা ধরেই বাংলা পঞ্জিকার যাত্রা। এই পঞ্জিকাকেই ক্যালেন্ডার বলা হতো। তখন ছিল সংস্কৃত ভাষা। এটাকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর করা হয়। বারো মাসের নামগুলোও রাখা হয় একই। ইতিহাস মতে, রাজা শশাঙ্কের শাসনামলে ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। একটি কথা না বললেই নয়, পহেলা বৈশাখ শুধু বাঙালির নববর্ষ নয়, এটি পুরো দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নববর্ষ। ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা তখন মুঘল সম্রাটদের হাতে। পাল থেকে সেন, সেন থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মুঘলরা ক্ষমতায় আসে। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর এবং তার পুত্র দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন হিজরি সাল অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করলেও, তৃতীয় মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন মুহম্মদ আকবর চন্দ্র মাসের ক্যালেন্ডার পাল্টে বাংলা ক্যালেন্ডার পুনঃস্থাপন করেন। এর কারণ ছিল, খাজনা আদায়।
চন্দ্র মাস অনুযায়ী খাজনা আদায় করতে গিয়ে কয়েক বছর ঘুরে খাজনা আদায়ের সময় চলে আসে ভিন্ন ঋতুতে। এতে কৃষকদের খাজনা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা দূর করতে সম্রাট আকবর ইরান থেকে আসা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজিকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌরবর্ষপঞ্জিতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব দেন। এভাবেই বাংলা পঞ্জিকার নবযাত্রা শুরু হয়। এরপরও সময়ে সময়ে বাংলা ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিকায়ন হয়েছে।
কিন্তু পহেলা বৈশাখ বাঙালির হৃদয়ে বাঙালিয়ানাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলেছে। তবে আদি সেই সংস্কৃতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখানেও এসেছে পরিবর্তন। পান্তা আর ইলিশ এসেছে খাবারের পাতে। হালখাতা যেন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়ে গেছে রেওয়াজ। নদীর পাড় থেকে বান্নি উঠে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও উঠে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে শহরে বৈশাখী মেলা নামে। যেন গ্রামীণ ছোঁয়ার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায় না। সেই এক মঞ্চের মধ্যেই যেন বন্দি বাংলা নববর্ষ। আগে শহর থেকে গ্রামে যেতেন বান্নি দেখতে। আর এখন গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসেন মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে। পার্থক্য এখানেই।
No comments