দেশের অর্থনীতি যে কোনো সময়ের চেয়ে চ্যালেঞ্জে আছে -সিপিডি’র পর্যালোচনা
বেসরকারি
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, বাংলাদেশের
অর্থনীতির অগ্রগতি গত ১০ বছরে সীমান্ত রেখায় উপনীত হয়েছে। পাশাপাশি আলোচ্য
সময়ে দেশের অর্থনীতি যে কোনো সময়ের চেয়ে চাপের মুখে আছে। দেশের সামষ্টিক
অর্থনীতিতে একটা শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরেছে। দেখা দিয়েছে দুর্বলতা।
এটি রক্ষা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর মূল অনুষঙ্গ হলো- কর আহরণে দুর্বলতা,
ব্যাংকিং খাতে সমস্যা এবং বৈদেশিক লেনদেনের স্থিতিতে চাপ।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মুখে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটা শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরেছে। এর অনুসঙ্গগুলো হলো- কর আহরণে অপারগতা। বাংলাদেশের উন্নয়নে একটা অমোচনীয় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। এটাকে যদি অতিক্রম করা না যায় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অভিলাষ তার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া অন্য উৎস থেকে যদি বিনিয়োগের চেষ্টা করা হয় তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তিনি বলেন, কর আহরণ করতে না পারার কারণে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো হলেও উচ্চ আমদানির কারণে লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে। এতে দেশের বৈদেশিক মজুত দ্রুত নেমে আসছে। এটা কিছুদিন আগে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতায় থাকলেও এখন ৫ মাসে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের টাকার মান অবনমন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের টাকার ৩ শতাংশ অবনমন করা উচিত। কারণ বর্তমানে মূলস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় টাকার অবনমন করা হলে মানুষের পক্ষ সহ্য করা সহজ হবে।
ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে বলে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তিন-চার বছর ধরে এ বিষয়ে বলতে বলতে এমন একটা অবস্থায় এসেছি অবশেষে ব্যাংক খাতের সংকট সবাই উপলব্ধি করছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে আমরা তার প্রতিফলন দেখি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকিং খাত নিয়ে যে কয়টা পদক্ষেপ নিয়েছে তার সবগুলোই আরো বেশি ক্ষতিকর হয়েছে।
তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। অথচ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে নাড়াচাড়া করে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার সমাধান হবে না। এটা কাঠামোগতভাবে সুশাসন যদি আনা না যায় এবং যারা ব্যাংকের টাকা তসরুপ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে ব্যাংকিং খাতের মানুষের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এটা কোনো দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুদের হারকে নাড়াচাড়া করে যে কিছু করা যাবে না তার প্রমাণ হলো সুদের হার কমে গেলেও ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না। ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকে কেউ টাকা রাখছে না, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তারাও টাকা দিচ্ছে না। এই তারল্য সংকটের সমাধান সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে হুকুমের অর্থনীতির মধ্যে ফেলে দিলে কোনোভাবেই সুখকর হবে না।
তিনি বলেন, সামপ্রতিককালে কৃষকের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে ইতিপূর্বে এই রকম আচরণ করা হয়নি। গ্রামীণ অর্থনীতি ভিত্তি এখন শহরে চলে আসছে। আর সেটা শহর থেকে বিদেশে চলে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কৃষকের পক্ষে আগামী দিনে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। সরকার সময়মত ধান, চাল সংগ্রহ করেনি। আমদানি শুল্ক অনেক দেরি করে আরোপ করেছে। ফলে অর্থনীতির এই ধরনের অব্যবস্থাপনার চিত্র অন্য কোনো খাতে করা হয়নি।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, আগামী বাজেটে ১ কোটি ৮০ লাখ কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হোক। এটা করা হলে ৯ হাজার ১০০ কোটি লাগবে। অথচ রপ্তানিখাতে ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দাবি করা হচ্ছে এতে লাগবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে কৃষকের সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বেশি না।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা বলা হলেও বছর শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ সময় ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া উচিত হবে না’- এমন অভিমত তুলে ধরে তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে তা আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যত্যয় ঘটবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে- ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, পেশি শক্তি মাধ্যমে উপার্জন করা, সেগুলোকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের সূচকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের দিক থেকে ততোটা ভালো অবস্থানে নেই। তাই এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। প্রবৃদ্ধির ধারার সঙ্গে অন্যান্য উন্নয়নের সূচকগুলোর একটি বৈসাদৃশ্য আছে।
এ সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন চিত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ বছর অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে মাত্র ৩ মাসে। এটা যে কী এডিপি হবে সেটা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না।
বহুল আলোচিত ভ্যাট আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা একক ও কম হারের পক্ষপাতি।
অর্থনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ছিল, তা সামপ্রতিককালে ‘দুর্বল’ হয়ে গেছে বলেও মনে করে সিপিডি।
ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে সিপিডি বলছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে সুবিধাভোগীদের প্রভাব কমানো জরুরি।
অনুষ্ঠান শেষে সিপিডির পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে হলো- রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা। সরকারি ব্যয় সুশৃঙ্খলভাবে করা, যাতে অপচয় না হয়। কর ছাড়ের হিসাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। ব্যাংক কমিশন গঠন ও সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। পুঁজিবাজারের সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান অডিট করে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ব্যাংক খাতে পুঁজির সংকট বাড়ছে, তারল্য সংকট আগামীতে আরো বাড়বে। ঋণ খেলাপি কমাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো কোনও কাজে আসছে না বলেও মন্তব্য করেন তৌফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য আশু পদক্ষেপ নতুন বাজেটে রাখতে হবে। এ জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করারও পরামর্শ দেন।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মুখে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটা শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরেছে। এর অনুসঙ্গগুলো হলো- কর আহরণে অপারগতা। বাংলাদেশের উন্নয়নে একটা অমোচনীয় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে। এটাকে যদি অতিক্রম করা না যায় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অভিলাষ তার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া অন্য উৎস থেকে যদি বিনিয়োগের চেষ্টা করা হয় তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তিনি বলেন, কর আহরণ করতে না পারার কারণে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো হলেও উচ্চ আমদানির কারণে লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে। এতে দেশের বৈদেশিক মজুত দ্রুত নেমে আসছে। এটা কিছুদিন আগে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতায় থাকলেও এখন ৫ মাসে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের টাকার মান অবনমন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের টাকার ৩ শতাংশ অবনমন করা উচিত। কারণ বর্তমানে মূলস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় টাকার অবনমন করা হলে মানুষের পক্ষ সহ্য করা সহজ হবে।
ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে বলে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তিন-চার বছর ধরে এ বিষয়ে বলতে বলতে এমন একটা অবস্থায় এসেছি অবশেষে ব্যাংক খাতের সংকট সবাই উপলব্ধি করছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে আমরা তার প্রতিফলন দেখি না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাংকিং খাত নিয়ে যে কয়টা পদক্ষেপ নিয়েছে তার সবগুলোই আরো বেশি ক্ষতিকর হয়েছে।
তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। অথচ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে নাড়াচাড়া করে ব্যাংকিং খাতের সমস্যার সমাধান হবে না। এটা কাঠামোগতভাবে সুশাসন যদি আনা না যায় এবং যারা ব্যাংকের টাকা তসরুপ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে ব্যাংকিং খাতের মানুষের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এটা কোনো দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুদের হারকে নাড়াচাড়া করে যে কিছু করা যাবে না তার প্রমাণ হলো সুদের হার কমে গেলেও ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না। ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকে কেউ টাকা রাখছে না, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তারাও টাকা দিচ্ছে না। এই তারল্য সংকটের সমাধান সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে হুকুমের অর্থনীতির মধ্যে ফেলে দিলে কোনোভাবেই সুখকর হবে না।
তিনি বলেন, সামপ্রতিককালে কৃষকের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে ইতিপূর্বে এই রকম আচরণ করা হয়নি। গ্রামীণ অর্থনীতি ভিত্তি এখন শহরে চলে আসছে। আর সেটা শহর থেকে বিদেশে চলে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কৃষকের পক্ষে আগামী দিনে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। সরকার সময়মত ধান, চাল সংগ্রহ করেনি। আমদানি শুল্ক অনেক দেরি করে আরোপ করেছে। ফলে অর্থনীতির এই ধরনের অব্যবস্থাপনার চিত্র অন্য কোনো খাতে করা হয়নি।
সিপিডির এই ফেলো বলেন, আগামী বাজেটে ১ কোটি ৮০ লাখ কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হোক। এটা করা হলে ৯ হাজার ১০০ কোটি লাগবে। অথচ রপ্তানিখাতে ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দাবি করা হচ্ছে এতে লাগবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে কৃষকের সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বেশি না।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫০ হাজার কোটি টাকা বলা হলেও বছর শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ সময় ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া উচিত হবে না’- এমন অভিমত তুলে ধরে তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে তা আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যত্যয় ঘটবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে- ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, পেশি শক্তি মাধ্যমে উপার্জন করা, সেগুলোকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের সূচকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের দিক থেকে ততোটা ভালো অবস্থানে নেই। তাই এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। প্রবৃদ্ধির ধারার সঙ্গে অন্যান্য উন্নয়নের সূচকগুলোর একটি বৈসাদৃশ্য আছে।
এ সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন চিত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ বছর অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে মাত্র ৩ মাসে। এটা যে কী এডিপি হবে সেটা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না।
বহুল আলোচিত ভ্যাট আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা একক ও কম হারের পক্ষপাতি।
অর্থনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ছিল, তা সামপ্রতিককালে ‘দুর্বল’ হয়ে গেছে বলেও মনে করে সিপিডি।
ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারে সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে সিপিডি বলছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে সুবিধাভোগীদের প্রভাব কমানো জরুরি।
অনুষ্ঠান শেষে সিপিডির পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে হলো- রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা। সরকারি ব্যয় সুশৃঙ্খলভাবে করা, যাতে অপচয় না হয়। কর ছাড়ের হিসাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। ব্যাংক কমিশন গঠন ও সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। পুঁজিবাজারের সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান অডিট করে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ব্যাংক খাতে পুঁজির সংকট বাড়ছে, তারল্য সংকট আগামীতে আরো বাড়বে। ঋণ খেলাপি কমাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো কোনও কাজে আসছে না বলেও মন্তব্য করেন তৌফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য আশু পদক্ষেপ নতুন বাজেটে রাখতে হবে। এ জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করারও পরামর্শ দেন।
No comments