গাছের যোগাযোগেও হ্যাকারের বাধা!
কল্পবিজ্ঞাননির্ভর
ছবি ‘অ্যাভাটার’-এ পরিচালক জেমস ক্যামেরন দেখিয়েছিলেন, একে-অপরের সঙ্গে
যোগাযোগ করছে গাছেরা! রূপালি পর্দার এমন ঘটনা কিন্তু বাস্তবেও ঘটে।
গবেষকেরা এখন বলছেন, গাছেরা নিজেদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই যোগাযোগে নাকি নাক গলায় হ্যাকাররাও!
অবশ্য এই হ্যাকার বলতে প্রচলিত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে না। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, একটি বিশেষ প্রজাতির পোকা এই হ্যাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি চীনের একদল গবেষক দেখেছেন, সংকটের সময়ে গাছেরা তাদের চারপাশে যোগাযোগ করে। বিশেষ করে, কোনো গাছ রোগাক্রান্ত হলে বা কীট-পতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়ে হুমকির সম্মুখীন হলে সেটি চারপাশের অন্য গাছদের সতর্ক করতে সংকেত বার্তা পাঠায়।
গবেষণাটি করেছেন চীনের জিলিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের হাং জুন-চাং, জিয়াও-পিং ইয়ু ও তাদের সহকর্মীরা। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, জীবাণু অথবা কীট-পতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর গাছেরা দুই ভাবে সতর্ক সংকেত পাঠায়। হয় বাতাসের মাধ্যমে অথবা শেকড়ের সাহায্যে মাটির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়।
কোনো গাছে যখন জীবাণু আক্রমণ করে, তখন গাছ ব্যাপক হারে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদন করে। এই অ্যাসিড জীবাণুকে প্রতিহত করে, আর চারপাশের বাতাসে মিশে অন্য গাছদের সতর্ক করে দেয়। অন্যদিকে কোনো পোকামাকড় আক্রমণ করলে গাছ উৎপাদন করে জ্যাসমোনিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ওই পতঙ্গ খায় এমন শিকারি প্রাণীকে আকৃষ্ট করে। এর পাশাপাশি সতর্ক করে দেয় অন্য গাছকে।
ঠিক এই জায়গাতেই সমস্যা সৃষ্টি করছে হোয়াইটফ্লাইস নামের একটি পোকা। এটি গাছকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, গাছকে বোকা বানিয়ে ভুল সতর্ক বার্তা পাঠাতেও বাধ্য করে এগুলো। এ জন্যই গবেষকেরা এই নির্দিষ্ট পোকাগুলোকে ‘হ্যাকার’ বলে অভিহিত করছেন।
‘প্রসিডিং অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’ নামের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকীতে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা তাদের প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করেছেন। হাং জুন-চাং ও জিয়াও-পিং ইয়ু তাদের গবেষণায় দেখেন, হোয়াইটফ্লাইসের লালাতে এক ধরনের পদার্থ রয়েছে যা গাছেদের ধোঁকা দিতে সক্ষম। ওই পোকাগুলো এমন ভাবে আক্রমণ করে, যাতে গাছ সেগুলোকে পোকা নয়, বরং জীবাণু ভাবে। ফলে গাছ জ্যাসমোনিক অ্যাসিড তৈরির পরিবর্তে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে চারপাশে ভুল সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই ভুল সতর্ক বার্তায় আশপাশের গাছগুলো আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ে। কারণ পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয় না গাছগুলোর। ফলে হোয়াইটফ্লাইসের বিনা বাধায় গাছের ক্ষতি করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে টমেটো গাছের ওপর গবেষণা চালান। তারা কিছু টমেটো চারাকে কাচের ছোট ছোট কক্ষে উৎপাদন করেন। কয়েকটি টমেটো গাছে হোয়াইটফ্লাইস ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকিগুলো থাকে সুস্থ অবস্থায়। এভাবে কয়েক দিন চলার পরে আক্রান্ত কক্ষ ও সুস্থ কক্ষ পাশাপাশি রেখে, একটি থেকে অপরটিতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে ২৪ ঘণ্টা রাখার পর দেখা যায়, ওই সুস্থ টমেটো গাছেও হোয়াইটফ্লাইস আক্রমণ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই ধরনের গাছেই হোয়াইটফ্লাইস সমান সংখ্যক ডিম দিয়েছে। তবে দ্বিতীয় ধাপে আক্রান্ত গাছে পোকাগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে।
বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে আরও একটি পরীক্ষা করেন। এবার তাঁরা মনোযোগ দেন, দুই ধরনের কক্ষের গাছে কী ধরনের অ্যাসিড উৎপাদিত হচ্ছে তার ওপর। তারা এ জন্য দুই কক্ষের বাতাসকে নমুনা হিসেবে বেছে নেন। এ সময় দেখা গেছে-সুস্থ বাতাসে থাকা টমেটো গাছে যখন হোয়াইটফ্লাইস প্রথমবার আক্রমণ করছে, তখন জ্যাসমোনিক অ্যাসিড বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু যখন ওই কক্ষের বাতাস অন্য সুস্থ কক্ষে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তখন সেখানে হোয়াইটফ্লাইস আক্রমণ করলে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে জ্যাসমোনিক অ্যাসিড উৎপাদিত হয়।
অপরদিকে বিপরীত ঘটনা ঘটছে স্যালিসিলিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে। সতেজ গাছে প্রথমবার হোয়াইটফ্লাইসের আক্রমণে কম পরিমাণে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদিত হলেও, দ্বিতীয় কক্ষে বাতাস সরবরাহের পরে আক্রান্ত গাছেরা অধিক পরিমাণে স্যালিসিলিক অ্যাসিড তৈরি করছে। এই ঘটনায় বিজ্ঞানীর ভুল বার্তা প্রদানের বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন।
প্রাপ্ত ফলাফলের গুরুত্ব বোঝাতে গবেষক হাং জুন-চাং বলেন, গাছের এমন ধরনের দৈহিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, যা পোকার কারণে ভুল সংকেত পাঠাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কৃষি খাতে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। গোপনে আক্রমণ চালানো কীট-পতঙ্গ থেকে নিজেদের ফসলকে রক্ষা করতে পারবেন কৃষকেরা। এতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ ডলারের অপচয় রোধ করা যাবে।
অবশ্য এই হ্যাকার বলতে প্রচলিত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে না। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, একটি বিশেষ প্রজাতির পোকা এই হ্যাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি চীনের একদল গবেষক দেখেছেন, সংকটের সময়ে গাছেরা তাদের চারপাশে যোগাযোগ করে। বিশেষ করে, কোনো গাছ রোগাক্রান্ত হলে বা কীট-পতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়ে হুমকির সম্মুখীন হলে সেটি চারপাশের অন্য গাছদের সতর্ক করতে সংকেত বার্তা পাঠায়।
গবেষণাটি করেছেন চীনের জিলিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের হাং জুন-চাং, জিয়াও-পিং ইয়ু ও তাদের সহকর্মীরা। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, জীবাণু অথবা কীট-পতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর গাছেরা দুই ভাবে সতর্ক সংকেত পাঠায়। হয় বাতাসের মাধ্যমে অথবা শেকড়ের সাহায্যে মাটির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়।
কোনো গাছে যখন জীবাণু আক্রমণ করে, তখন গাছ ব্যাপক হারে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদন করে। এই অ্যাসিড জীবাণুকে প্রতিহত করে, আর চারপাশের বাতাসে মিশে অন্য গাছদের সতর্ক করে দেয়। অন্যদিকে কোনো পোকামাকড় আক্রমণ করলে গাছ উৎপাদন করে জ্যাসমোনিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ওই পতঙ্গ খায় এমন শিকারি প্রাণীকে আকৃষ্ট করে। এর পাশাপাশি সতর্ক করে দেয় অন্য গাছকে।
ঠিক এই জায়গাতেই সমস্যা সৃষ্টি করছে হোয়াইটফ্লাইস নামের একটি পোকা। এটি গাছকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, গাছকে বোকা বানিয়ে ভুল সতর্ক বার্তা পাঠাতেও বাধ্য করে এগুলো। এ জন্যই গবেষকেরা এই নির্দিষ্ট পোকাগুলোকে ‘হ্যাকার’ বলে অভিহিত করছেন।
‘প্রসিডিং অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’ নামের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকীতে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা তাদের প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করেছেন। হাং জুন-চাং ও জিয়াও-পিং ইয়ু তাদের গবেষণায় দেখেন, হোয়াইটফ্লাইসের লালাতে এক ধরনের পদার্থ রয়েছে যা গাছেদের ধোঁকা দিতে সক্ষম। ওই পোকাগুলো এমন ভাবে আক্রমণ করে, যাতে গাছ সেগুলোকে পোকা নয়, বরং জীবাণু ভাবে। ফলে গাছ জ্যাসমোনিক অ্যাসিড তৈরির পরিবর্তে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে চারপাশে ভুল সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই ভুল সতর্ক বার্তায় আশপাশের গাছগুলো আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ে। কারণ পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয় না গাছগুলোর। ফলে হোয়াইটফ্লাইসের বিনা বাধায় গাছের ক্ষতি করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে টমেটো গাছের ওপর গবেষণা চালান। তারা কিছু টমেটো চারাকে কাচের ছোট ছোট কক্ষে উৎপাদন করেন। কয়েকটি টমেটো গাছে হোয়াইটফ্লাইস ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকিগুলো থাকে সুস্থ অবস্থায়। এভাবে কয়েক দিন চলার পরে আক্রান্ত কক্ষ ও সুস্থ কক্ষ পাশাপাশি রেখে, একটি থেকে অপরটিতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে ২৪ ঘণ্টা রাখার পর দেখা যায়, ওই সুস্থ টমেটো গাছেও হোয়াইটফ্লাইস আক্রমণ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই ধরনের গাছেই হোয়াইটফ্লাইস সমান সংখ্যক ডিম দিয়েছে। তবে দ্বিতীয় ধাপে আক্রান্ত গাছে পোকাগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে।
বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে আরও একটি পরীক্ষা করেন। এবার তাঁরা মনোযোগ দেন, দুই ধরনের কক্ষের গাছে কী ধরনের অ্যাসিড উৎপাদিত হচ্ছে তার ওপর। তারা এ জন্য দুই কক্ষের বাতাসকে নমুনা হিসেবে বেছে নেন। এ সময় দেখা গেছে-সুস্থ বাতাসে থাকা টমেটো গাছে যখন হোয়াইটফ্লাইস প্রথমবার আক্রমণ করছে, তখন জ্যাসমোনিক অ্যাসিড বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু যখন ওই কক্ষের বাতাস অন্য সুস্থ কক্ষে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তখন সেখানে হোয়াইটফ্লাইস আক্রমণ করলে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে জ্যাসমোনিক অ্যাসিড উৎপাদিত হয়।
অপরদিকে বিপরীত ঘটনা ঘটছে স্যালিসিলিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে। সতেজ গাছে প্রথমবার হোয়াইটফ্লাইসের আক্রমণে কম পরিমাণে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদিত হলেও, দ্বিতীয় কক্ষে বাতাস সরবরাহের পরে আক্রান্ত গাছেরা অধিক পরিমাণে স্যালিসিলিক অ্যাসিড তৈরি করছে। এই ঘটনায় বিজ্ঞানীর ভুল বার্তা প্রদানের বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন।
প্রাপ্ত ফলাফলের গুরুত্ব বোঝাতে গবেষক হাং জুন-চাং বলেন, গাছের এমন ধরনের দৈহিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, যা পোকার কারণে ভুল সংকেত পাঠাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কৃষি খাতে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। গোপনে আক্রমণ চালানো কীট-পতঙ্গ থেকে নিজেদের ফসলকে রক্ষা করতে পারবেন কৃষকেরা। এতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ ডলারের অপচয় রোধ করা যাবে।
No comments