মমতাকে এড়িয়ে তিস্তা চুক্তি করবে না ভারত
বহুপ্রতীক্ষিত
তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের প্রশ্নে দিল্লি যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
মমতা ব্যানার্জির মতামতকে অগ্রাহ্য করে কিছুতেই এগোবে না, সেটা আবারো
জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। নরেন্দ্র মোদি
সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে তার বাৎসরিক সংবাদ সম্মেলনে মিস স্বরাজ আরো
জানিয়েছেন, গত বছর শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় মিস ব্যানার্জি তিস্তার
বিকল্প হিসেবে অন্য দু-তিনটি নদীর জল ভাগাভাগির যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন,
সেটা কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, চলমান
রোহিঙ্গা সংকটে ভারত মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে, বাংলাদেশের কাছ থেকে কখনও এমন
অভিযোগ তাদের শুনতে হয়নি বলেও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন। যে
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাধায় বহুপ্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি আজও হতে পারেনি,
তাদের অগ্রাহ্য করেই কেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি
করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে না- এমন একটা দাবি বেশ কিছুকাল ধরেই
বাংলাদেশের গণমাধ্যম বা সুশীল সমাজের ভেতর থেকে উঠছে। ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় কাঠামোতে সেটা
কিছুতেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘দেখুন, তিস্তা চুক্তি শুধু ভারত আর বাংলাদেশ
এই দুই সরকারের বিষয় নয়- পশ্চিমবঙ্গও সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ
স্টেকহোল্ডার। সে কারণেই আমরা বারবার মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলোচনার কথা
বলছি।’ তিনি গত বছর শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় একটা বিকল্প প্রস্তাব
দিয়েছিলেন, সেটা ছিল তিস্তা বাদ দিয়ে অন্য দু-তিনটে নদী (ধরলা, জলঢাকা,
শিলতোর্সা ইত্যাদি) থেকে একই পরিমাণ জল বাংলাদেশে পাঠানো। তাতে তারা জলও
পাবে, তিস্তাও বাঁচবে।’ এখন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারের জলসম্পদ
মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাবের ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে, কিন্তু আমরা সেই
রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। তবে আমি এটাও বলবো, আমাদের সরকারের মেয়াদের তো
পুরো এক বছর এখনও বাকি- আমাদের আগেই ফেল করিয়ে দিচ্ছেন কেন? এক বছর বাকি
থাকতেই আমাদের ব্যর্থ ঘোষণা না-করে একটু ধৈর্য ধরুন- আমরা তিস্তা চুক্তির
পেছনে লেগে আছি!’ গত শুক্র ও শনিবার যথাক্রমে নরেন্দ্র মোদি ও মমতা
ব্যানার্জির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাদা আলাদা বৈঠকে
কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে অবশ্য সুষমা স্বরাজ মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু মমতা
ব্যানার্জিকে রাজি না করিয়ে কেন্দ্র যে একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না,
সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তার যুক্তি হলো, ‘তৃতীয় স্টেকহোল্ডার
পশ্চিমবঙ্গের সম্মতি না নিয়ে যদি আপনি চুক্তি করেও ফেলেন, তার বাস্তবায়ন
কীভাবে করবেন? তিস্তার জল তো পশ্চিমবঙ্গ থেকেই যাবে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাও
বলে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মত নিয়ে সমঝোতা হলে তবেই কিন্তু সেটা টেকসই হয়।
ফলে শেখ হাসিনা ও তার বর্তমান মেয়াদের মধ্যেই তিস্তা চুক্তি হবে বলে
প্রধানমন্ত্রী মোদি যে কথা দিয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যাবে কিনা
সেটা অনেকটাই ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে-
প্রকারান্তরে সুষমা স্বরাজ সেটা মেনেই নিয়েছেন। কিন্তু তিস্তা নিয়ে
বাংলাদেশের যা-ই ক্ষোভ থাকুক, রোহিঙ্গা প্রশ্নে তারা কখনও ভারতের কাছে
কোনো অনুযোগ জানায়নি বলে মিস স্বরাজ বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে দাবি
করেছেন। তিনি বলেন, দেখুন, এই সংকটে ভারত মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে এমন
অভিযোগ কিন্তু বাংলাদেশ কখনো করেনি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে
এসেছিলেন, আমিও সদ্য মিয়ানমারে গিয়ে অং সান সুচির সঙ্গে দেখা করে এলাম। বরং
দুজনেই আমাকে বলেছেন তাদের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়ে গেছে। এমন কী
আমি এটাও জেনেছি মিয়ানমার ইতিমধ্যেই ১২২২ জনের তালিকা যাচাই-বাছাই করে
তাদের ফিরিয়ে নিতেও রাজি হয়ে গেছে। সংকটের ব্যাপকতার তুলনায় এটা হয়তো ছোট
পদক্ষেপ- কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই- এবং আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ও
মিয়ানমার সততার সঙ্গে এগোলে এর সমাধান অবশ্যই সম্ভব। মিয়ানমার যাতে সংকট
নিরসনের চেষ্টায় আন্তরিক থাকে, সে জন্য ভারত কোনো প্রভাব খাটাবে কিনা মিস
স্বরাজ তারও কোনো জবাব দেননি। তবে তিস্তা ও রোহিঙ্গা- উভয় ইস্যুতেই
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে যে বেশ অস্বস্তির উপাদান তৈরি হয়েছে
সেটাও কিন্তু তার বক্তব্যে গোপন থাকেনি।
No comments