বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
প্যারিসে
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ঢাকায়। ঘটনার
নিন্দা জানিয়েছে সরকার। হতাহতের ঘটনায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে
বিভিন্ন মহল থেকে। সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে দেশটির পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল দেশজুড়ে দিনভর আলোচনায় ছিল হামলার ঘটনা। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক
বাংলাদেশী বসবাস করেন ফ্রান্সে। তাদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা খোঁজ-খবর নিয়েছেন
দিনভর। অনেকের চোখ ছিল টেলিভিশনের পর্দায়, অনলাইন পত্রিকায়। যদিও গতকাল
পর্যন্ত বাংলাদেশী কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়। ভয়াবহ এ হামলার পর ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্সে হামলার ঘটনায়
বাংলাদেশকে আরও সতর্ক হতে হবে। এ সন্ত্রাসী হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে যাতে
কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না চালাতে পারে সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার
সদস্যদের তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে
তুলতে হবে। প্যারিসে নৃশংস হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট মো.
আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া,
বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে
তারা হামলায় নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি
সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা
সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঙ্গীকার করেন। শুক্রবার রাতে প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এদিকে ব্যাপক প্রাণহানির ওই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ শোক প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেই রাতে প্যারিসের কয়েকটি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং কয়েক শ’ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী দেশটির প্রেসিডেন্ট বরাবর শোকবার্তাটি পাঠান বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণহানি এবং আরো অনেক আহত হওয়ায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে আমি এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সন্ত্রাসীরা কেবলই সন্ত্রাসী এবং সভ্য সমাজে তাদের কোন স্থান নেই। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে আমরা একত্রে লড়াই চালিয়ে যাবো। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার প্রতি এবং আপনার মাধ্যমে ফ্রান্সের জনগণের প্রতি আমার গভীর শোক প্রকাশ করছি। হতাহত পরিবারের সদস্যদের জন্য আমাদের সমবেদনা। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
প্রেসিডেন্টের শোক: প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিরীহ জনগণের প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট শোক প্রকাশ করেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তার প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন। এই হামলায় বহু নিরপরাধ মানুষ নিহত ও আহত হন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নিহতদের বিদেহী আত্মার পারলৌকিক শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে প্যারিসে একটি কনসার্ট হলসহ পরপর কয়েকটি জায়গায় ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটিতে এটি সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা।
ফরাসিদের পাশে থাকার ঘোষণা খালেদার: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় দেড় শতাধিক নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমি বিস্মিত, হতবাক ও ক্ষুদ্ধ। সন্ত্রাসী এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত এবং কয়েকশ’ মানুষ আহত হওয়ার খবরে আমি উদ্বিগ্ন, শোকাহত। আমি এই বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর হোতারা দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি হবে বলেও আশা করছি। ফ্রান্স সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, ‘সব ধরনের উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফ্রান্সসহ বিশ্বের শান্তিকামী সকল মানুষের পাশে আছি এবং থাকবো।’ এদিকে এ বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপি’র মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। শনিবার দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনির পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে আমরাও ফ্রান্সের জনগণের এই দুঃসময়ে তাদের পাশে রয়েছি এবং আমাদের দলের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করছি।
স্পিকারের শোক
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া গভীর শোক ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তারা এ ঘটনাকে দুঃখজনক ও মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেন। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসস্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ.স. ম ফিরোজও শোক প্রকাশ করেছেন।
বিরোধী নেতার নিন্দা: এদিকে প্যারিসে একই সময়ে কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায় বিশ্ব আজ বিস্মিত, মর্মাহত ও হতবাক। তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং একই সঙ্গে আহতদের উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত আরোগ্য লাভের কামনা করেন।
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ বলেন, এ নৃশংস ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের হামলা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক হুমকি। তিনি বলেন, এ নৃশংস ঘটনায় ফ্রান্সের জনগণের মতো বাংলাদেশের জনগণও গভীরভাবে শোকাহত। এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করার জন্য শান্তিকামী বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যাদের জিম্মি করে রেখেছে তাদের উদ্ধারের জন্য ফ্রান্স সরকার জরুরিভিত্তিতে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন বলে আমরা আশা করি।
ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার
প্যারিসে ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাসের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে খ্যাত গুলশান-বনানী ও বারিধারা এলাকায় অতিরিক্ত চেকপোস্ট মোতায়েনসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে শনিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে রাজপথে অবস্থান করেছে। সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সারা বিশ্বে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে, বাংলাদেশেও তার ছোটখাটো প্রভাব পড়ছে। তবে, সরকার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্সে অবস্থান করছে। প্যারিসে হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই, কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, দুই বিদেশী ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার পর আগেই দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্যারিসে হামলার পর বিদেশী দূতাবাস এবং বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। ঢাকার গুলশান এবং বারিধারা এলাকায় অধিকাংশ বিদেশি দূতাবাসের অবস্থান আর বিদেশী নাগরিকরাও থাকেন এসব অভিজাত এলাকায়। প্যারিস হামলার পর ওইসব এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে ফ্রান্স দূতাবাসসহ সব কূটনৈতিক মিশন অফিসে। বাড়তি পুলিশ ছাড়াও সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে নজরদারির জন্য। গুলশান বারিধারা এলাকায় পুলিশের টহল চৌকিতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা যানবাহনের গতিবিধি নজরে এলেই পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। বাংলাদেশের স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে সারা দেশে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। কূটনৈতিকপাড়ায় আগে থেকেই কড়া নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। প্যারিসে হামলার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে। গোয়েন্দা তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্যারিসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর রাজধানী ঢাকার ফ্রান্সের দূতাবাসের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি জানানো হয়। এমনিতে দূতাবাসের সামনে পুলিশের একটি দল থাকে। দূতাবাসের অনুরোধে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে। এই ধরনের ঘটনা যেকোন দেশে হতে পারতো। প্যারিসে হামলার পর শাহজালাল বিমানবন্দরেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদান করা হচ্ছে।
সতর্কতার পরামর্শ বিশ্লেষকদের
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে নৃশংস হামলার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য সতর্ক বার্তা বলে মনে করেন নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক হতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিভেদ দূর করে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন- প্যারিসের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা নয়। যেভাবে কমান্ডো স্টাইলে হামলা হয়েছে তাতে মনে হয় এটি কোন যুদ্ধ। আইএস একটি শক্তিধর সংগঠনের নাম। বাংলাদেশে সরাসরি আইএস সদস্যরা আছে কিনা এ তথ্য আমাদের জানা নেই। সরকারও মনে করে দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। একারণেই তারা ইন্টারনেটের কিছু সুবিধাকে সীমিত করতে চায়। হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার বন্ধ করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বন্ধ করা যাবে না। কারণ এ মাধ্যম ছাড়াও তাদের যোগাযোগের আরও মাধ্যম রয়েছে। তারা সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেও যোগাযোগ করতে পারে। এ সমস্যা এখনও বড় সমস্যা না হলেও সামনে আরও বড় সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের ভেতরে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বন্ধ করতে হলে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য হয় না এমন তদন্ত করে লাভ নেই। বিদেশীরা আমাদের বিশ্বাস করতে পারছে না। এ সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, নিরাপত্তার জন্য হলেও সকল দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর এ দায়িত্ব সরকারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কার্যক্রমের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। তারা চেষ্টা করবে প্যারিসের এ ঘটনায় নিজেদের উজ্জীবিত করতে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর ও জোরদার করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন বলেন, আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হামলার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে দেশে তাদের মতবাদে বিশ্বাসী সংগঠন রয়েছে। তারা ফ্রান্সের এ হামলার ঘটনায় প্রভাবিত হতে পারে। তাই দেশে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তদন্তের আগে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন দলকে দায়ী করা হয় তবে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যায়। এসব বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে দেখলে হবে না। জঙ্গিবাদের প্রতিটি বিষয় তদন্ত করে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন- সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক সমস্যা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এর শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশ সম্পর্কে বিদেশীদের নেতিবাচক ধারণা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের কারণে নয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই এ বিষয়টি বুঝতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা
সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঙ্গীকার করেন। শুক্রবার রাতে প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এদিকে ব্যাপক প্রাণহানির ওই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ শোক প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, সেই রাতে প্যারিসের কয়েকটি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত এবং কয়েক শ’ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী দেশটির প্রেসিডেন্ট বরাবর শোকবার্তাটি পাঠান বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণহানি এবং আরো অনেক আহত হওয়ায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে আমি এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সন্ত্রাসীরা কেবলই সন্ত্রাসী এবং সভ্য সমাজে তাদের কোন স্থান নেই। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে আমরা একত্রে লড়াই চালিয়ে যাবো। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার প্রতি এবং আপনার মাধ্যমে ফ্রান্সের জনগণের প্রতি আমার গভীর শোক প্রকাশ করছি। হতাহত পরিবারের সদস্যদের জন্য আমাদের সমবেদনা। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
প্রেসিডেন্টের শোক: প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিরীহ জনগণের প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট শোক প্রকাশ করেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তার প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন। এই হামলায় বহু নিরপরাধ মানুষ নিহত ও আহত হন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নিহতদের বিদেহী আত্মার পারলৌকিক শান্তি কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে প্যারিসে একটি কনসার্ট হলসহ পরপর কয়েকটি জায়গায় ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটিতে এটি সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা।
ফরাসিদের পাশে থাকার ঘোষণা খালেদার: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় দেড় শতাধিক নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমি বিস্মিত, হতবাক ও ক্ষুদ্ধ। সন্ত্রাসী এই ঘটনায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত এবং কয়েকশ’ মানুষ আহত হওয়ার খবরে আমি উদ্বিগ্ন, শোকাহত। আমি এই বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর হোতারা দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি হবে বলেও আশা করছি। ফ্রান্স সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, ‘সব ধরনের উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফ্রান্সসহ বিশ্বের শান্তিকামী সকল মানুষের পাশে আছি এবং থাকবো।’ এদিকে এ বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপি’র মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। শনিবার দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনির পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে আমরাও ফ্রান্সের জনগণের এই দুঃসময়ে তাদের পাশে রয়েছি এবং আমাদের দলের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করছি।
স্পিকারের শোক
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া গভীর শোক ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তারা এ ঘটনাকে দুঃখজনক ও মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেন। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসস্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ.স. ম ফিরোজও শোক প্রকাশ করেছেন।
বিরোধী নেতার নিন্দা: এদিকে প্যারিসে একই সময়ে কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায় বিশ্ব আজ বিস্মিত, মর্মাহত ও হতবাক। তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং একই সঙ্গে আহতদের উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত আরোগ্য লাভের কামনা করেন।
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ বলেন, এ নৃশংস ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের হামলা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক হুমকি। তিনি বলেন, এ নৃশংস ঘটনায় ফ্রান্সের জনগণের মতো বাংলাদেশের জনগণও গভীরভাবে শোকাহত। এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করার জন্য শান্তিকামী বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যাদের জিম্মি করে রেখেছে তাদের উদ্ধারের জন্য ফ্রান্স সরকার জরুরিভিত্তিতে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন বলে আমরা আশা করি।
ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার
প্যারিসে ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাসের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে খ্যাত গুলশান-বনানী ও বারিধারা এলাকায় অতিরিক্ত চেকপোস্ট মোতায়েনসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে শনিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে রাজপথে অবস্থান করেছে। সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সারা বিশ্বে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে, বাংলাদেশেও তার ছোটখাটো প্রভাব পড়ছে। তবে, সরকার তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্সে অবস্থান করছে। প্যারিসে হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই, কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, দুই বিদেশী ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার পর আগেই দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্যারিসে হামলার পর বিদেশী দূতাবাস এবং বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। ঢাকার গুলশান এবং বারিধারা এলাকায় অধিকাংশ বিদেশি দূতাবাসের অবস্থান আর বিদেশী নাগরিকরাও থাকেন এসব অভিজাত এলাকায়। প্যারিস হামলার পর ওইসব এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে ফ্রান্স দূতাবাসসহ সব কূটনৈতিক মিশন অফিসে। বাড়তি পুলিশ ছাড়াও সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে নজরদারির জন্য। গুলশান বারিধারা এলাকায় পুলিশের টহল চৌকিতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা যানবাহনের গতিবিধি নজরে এলেই পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। বাংলাদেশের স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে সারা দেশে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। কূটনৈতিকপাড়ায় আগে থেকেই কড়া নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। প্যারিসে হামলার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে। গোয়েন্দা তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্যারিসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর রাজধানী ঢাকার ফ্রান্সের দূতাবাসের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি জানানো হয়। এমনিতে দূতাবাসের সামনে পুলিশের একটি দল থাকে। দূতাবাসের অনুরোধে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সিনিয়র এএসপি আলমগীর হোসেন শিমুল বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে। এই ধরনের ঘটনা যেকোন দেশে হতে পারতো। প্যারিসে হামলার পর শাহজালাল বিমানবন্দরেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদান করা হচ্ছে।
সতর্কতার পরামর্শ বিশ্লেষকদের
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে নৃশংস হামলার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য সতর্ক বার্তা বলে মনে করেন নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক হতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিভেদ দূর করে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন- প্যারিসের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা নয়। যেভাবে কমান্ডো স্টাইলে হামলা হয়েছে তাতে মনে হয় এটি কোন যুদ্ধ। আইএস একটি শক্তিধর সংগঠনের নাম। বাংলাদেশে সরাসরি আইএস সদস্যরা আছে কিনা এ তথ্য আমাদের জানা নেই। সরকারও মনে করে দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। একারণেই তারা ইন্টারনেটের কিছু সুবিধাকে সীমিত করতে চায়। হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবার বন্ধ করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বন্ধ করা যাবে না। কারণ এ মাধ্যম ছাড়াও তাদের যোগাযোগের আরও মাধ্যম রয়েছে। তারা সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেও যোগাযোগ করতে পারে। এ সমস্যা এখনও বড় সমস্যা না হলেও সামনে আরও বড় সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের ভেতরে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বন্ধ করতে হলে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য হয় না এমন তদন্ত করে লাভ নেই। বিদেশীরা আমাদের বিশ্বাস করতে পারছে না। এ সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, নিরাপত্তার জন্য হলেও সকল দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর এ দায়িত্ব সরকারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কার্যক্রমের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। তারা চেষ্টা করবে প্যারিসের এ ঘটনায় নিজেদের উজ্জীবিত করতে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর ও জোরদার করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন বলেন, আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হামলার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে দেশে তাদের মতবাদে বিশ্বাসী সংগঠন রয়েছে। তারা ফ্রান্সের এ হামলার ঘটনায় প্রভাবিত হতে পারে। তাই দেশে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তদন্তের আগে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন দলকে দায়ী করা হয় তবে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যায়। এসব বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে দেখলে হবে না। জঙ্গিবাদের প্রতিটি বিষয় তদন্ত করে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন- সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক সমস্যা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এর শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশ সম্পর্কে বিদেশীদের নেতিবাচক ধারণা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের কারণে নয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই এ বিষয়টি বুঝতে হবে।
No comments