কর্তৃত্ব ফেরাতে মরিয়া এরশাদ by নিয়াজ মাহমুদ
পার্টিতে নিজের কর্তৃত্ব ফেরাতে মরিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এজন্য তিনি শুরু করেছেন নানামুখী তৎপরতা। একই সঙ্গে দলে শুদ্ধি অভিযানেও নেমেছেন। দলের যারা তাকে বাদ দিয়ে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করার প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন এবার তাদেরকে মাইনাস করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন জাপা চেযারম্যান। এরশাদ তার এ প্রচেষ্টায় খানিকটা সফল হয়েছেন বলে দলটির প্রেসিডিয়ামের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর তারা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের পর রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করার পর থেকে এরশাদ ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আমরা তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা না করায় তিনি ক্ষেপে গিয়ে আমাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন পদ থেকে। এদিকে গতকাল বিকালে জাপার কাকরাইল অফিসের সামনে জাতীয় যুবসংহতি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রাঙ্গা ও তাজুলকে পার্টি থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ওদিকে, রওশন এরশাদের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছে, এরশাদ এখন যে কোন মূল্যে বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান। ফিরে পেতে চান দলে কর্তৃত্ব। তাই এসব করছেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকায় ছিলেন ব্যারিস্টার অনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তাদের সহযোগী ছিলেন মসিউর রহমান রাঙ্গা ও তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদ। এরশাদকে মাইনাস করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে তারা দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনের পর এরশাদ সিএমএইচ থেকে ফিরে গুলশানের একটি হোটেলে (এরশাদের নির্দেশে যার নির্বাচনে যাননি) দলের কিছু নেতার সম্মানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে ব্যারিস্টার অনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মশিউর রহমান রাঙ্গা ও তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদ অনুপস্থিত ছিলেন। তখন এরশাদ তাদের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন তোমরা ফিরে এসো। না হয় আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। পরে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দলের মহাসচিব করেন এরশাদ। সময়ে প্রয়োজনে ব্যারিস্টার অনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু রওশনের নেতৃত্ব মানলেও একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় রওশনের। এরশাদও সুযোগ বুঝে তাদেরকে প্রশ্রয় দেন দলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। এ অবস্থায় গত মাসে কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে এরশাদ-রওশন আবার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। শুধু স্পিকারকে পাল্টাপাল্টি চিঠি দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তারা। এর আগেও দু’জন পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও যান। একপর্যায়ে ৯ই আগস্ট এরশাদ কলকাতা যাওয়ার সময় জাপার ঢাকা দক্ষিণের সভাপতির পদ থেকে কাজী ফিরোজ রশীদকে অব্যাহতি দেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনের মাগরিবের নামাজের বিরতির সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সংসদ ভবন কার্যালয়ে দেখা করেছেন এরশাদ। মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও এসময় তার সঙ্গে ছিলেন। এর আগে ৩১শে আগস্ট অনুষ্ঠিত দলের সংসদীয় দলের বৈঠকে মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে আসতে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন এরশাদ। ওই সময় তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন রওশনও। জাপা সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কেন্দ্র করে এরশাদের নেতৃত্ব নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে জাপায়। অনেকেই পার্টি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের কথা মুখে বললেও বাস্তবে অবহেলা করা শুরু করেন। এছাড়া মন্ত্রিসভায় অংশ নেয়া নেতারা নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করে তারা দলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেন। বিষয়টি নিজের কাছে ধরা পড়লেও এতদিন কঠোর অবস্থানে যাননি এরশাদ। সুযোগ বুঝে এবার পার্টিতে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছেন তিনি। গত ১৪ই আগস্ট ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার পর জাতীয় পার্টিতে কর্তৃত্ব ফেরাতে মরিয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে কোন বার্তা পেয়ে হয়তো তিনি এমনটি করছেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সামনে এরশাদ আরও কয়েকজন নেতার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়েও নিজের অনুগত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করেছেন। পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু গতকাল জানিয়েছেন, যারা পার্টি ভাঙার চেষ্টা করছে তারা জাতীয় পার্টির কেউ না। জাতীয় পার্টিকে কেউ ভাঙতে পারবে না। এদিকে সংসদ ভবনের লবিতে দলীয় এমপিদের হাতাহতির ঘটনায়ও ক্ষুব্ধ এরশাদ। এ ঘটনার পর ওই রাতেই সংসদ ভবনে সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বৈঠক করেন এরশাদ। দলীয় সূত্র জানায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপের পদ থেকে তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া ও মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এ বৈঠকে। আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অপর একটি সূত্র আভাস দিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পার্টিতে আরও রদবদল হতে পারে। এ লক্ষ্য নিয়েই সামনে এগুচ্ছেন তিনি।
ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা: এদিকে বৃহস্পতিবার সংসদ লবিতে অপ্রীতকর ঘটনার জন্য পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল টেলিফোনে ওই দিনের ঘটনার জন্য রাঙা দুঃখ প্রকাশ করেন বলেন জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছেন।
জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে জানান: স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতির পদে পুনঃবহালের দাবিতে শুক্রবার বিকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাঙ্গা সমর্থক জাপার অঙ্গসংগঠনের নেতারা। নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বলেছেন এরশাদের ঘন ঘন এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রতি আমরা আস্থা রাখতে পারছি না। পার্টিও চেয়ারম্যান আমাদের দায়িত্ব দিয়ে সংঘর্ষ বাধাতে চান। আবার কালকে এ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিলে তখন রংপুরে বাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে দলীয় কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাঙ্গার সমর্থকরা কার্যালয় দখলে রেখেছে। যে কোন মুহূর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কায় সেখানে ব্যাপক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বিকালের সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ঢাকায় বসে অন্যের প্ররচনায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মামা-ভাগ্নের সর্ম্পক নষ্ট করার অপচেষ্টা করছেন। সভা থেকে দাবি হয় তৃণমূল পর্যায়ে এসে রংপুরের নেতা-কর্মীদের উপস্থিততে যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এরশাদের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। কিন্তু ঢাকায় বসে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে রংপুরের নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না। বক্তারা পর্াটির চেয়াম্যানের কাছে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রেসিডিয়াম পদ ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে কাফনের কাপড় পড়ে আগামী দিনে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হমকি দেন। সমাবেশে জেলা জাপার সহসভাপতি সামসুল আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা জাপার সাবেক সহসভাপতি আবদুল লতিফ খান, জাপা নেতা শামিম সিদ্দিকী, জেলা যুব সংহতির সভাপতি আলহাজ মো. আবদুল রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক নাজিমুজ্জামান নাজিম, মহনগর যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আহমেদ, জেলা ছাত্রসমাজের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জবা, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি রিপন, রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রসমাজের সভাপতি সুমন, সাধারণ সম্পাদক পাপ্পু, রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি মো. আতোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাসুদার রহমান মিলন জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা কল্পনা প্রমুখ।
ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গা: এদিকে বৃহস্পতিবার সংসদ লবিতে অপ্রীতকর ঘটনার জন্য পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল টেলিফোনে ওই দিনের ঘটনার জন্য রাঙা দুঃখ প্রকাশ করেন বলেন জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছেন।
জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে জানান: স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতির পদে পুনঃবহালের দাবিতে শুক্রবার বিকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাঙ্গা সমর্থক জাপার অঙ্গসংগঠনের নেতারা। নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বলেছেন এরশাদের ঘন ঘন এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রতি আমরা আস্থা রাখতে পারছি না। পার্টিও চেয়ারম্যান আমাদের দায়িত্ব দিয়ে সংঘর্ষ বাধাতে চান। আবার কালকে এ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিলে তখন রংপুরে বাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে দলীয় কার্যালয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাঙ্গার সমর্থকরা কার্যালয় দখলে রেখেছে। যে কোন মুহূর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কায় সেখানে ব্যাপক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বিকালের সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ঢাকায় বসে অন্যের প্ররচনায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মামা-ভাগ্নের সর্ম্পক নষ্ট করার অপচেষ্টা করছেন। সভা থেকে দাবি হয় তৃণমূল পর্যায়ে এসে রংপুরের নেতা-কর্মীদের উপস্থিততে যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এরশাদের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। কিন্তু ঢাকায় বসে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে রংপুরের নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না। বক্তারা পর্াটির চেয়াম্যানের কাছে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রেসিডিয়াম পদ ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। তা না হলে কাফনের কাপড় পড়ে আগামী দিনে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হমকি দেন। সমাবেশে জেলা জাপার সহসভাপতি সামসুল আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা জাপার সাবেক সহসভাপতি আবদুল লতিফ খান, জাপা নেতা শামিম সিদ্দিকী, জেলা যুব সংহতির সভাপতি আলহাজ মো. আবদুল রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক নাজিমুজ্জামান নাজিম, মহনগর যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আহমেদ, জেলা ছাত্রসমাজের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জবা, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি রিপন, রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রসমাজের সভাপতি সুমন, সাধারণ সম্পাদক পাপ্পু, রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি মো. আতোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাসুদার রহমান মিলন জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা কল্পনা প্রমুখ।
No comments