নওয়াজ, জারদারিকে নোটিশ
নওয়াজ শরিফ, আসিফ আলী জারদারি, বিলাওয়াল ভুট্টো, ইমরান খান |
বিদেশে গচ্ছিত সম্পদ ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়ে দায়ের করা একটি পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ অন্তত ৬৪ জন রাজনীতিককে নোটিশ দিয়েছেন আদালত৷ আইনজীবীদের এ-সংক্রান্ত একটি পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে লাহোর হাইকোর্ট গত শুক্রবার এই নোটিশ জারি করেন৷ নওয়াজ ছাড়াও যেসব রাজনীতিককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্য রয়েছেন নওয়াজের ভাই ও পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও কো-চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি৷ পাকিস্তানের ১১তম প্রেিসডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে৷ যদিও কখনোই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি৷ যে পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজনীতিকদের নোটিশ দেওয়া হলো, সেটি প্রকৃতপক্ষে দায়ের করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে৷ সে সময় ২৬ জন রাজনীতিকের বিদেশে থাকা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা চেয়ে পিটিশনটি করেছিলেন আইনজীবী জাভেদ ইকবাল জাফরি৷ পরে তাতে সংশধোনী এনে আরও রাজনীতিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ আইনজীবী জাফরি আদালতে বলেন, পিটিশনে নাম থাকা ওই রাজনীতিকেরা অন্তত তিন লাখ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানি লন্ডারিংয়ের (অবৈধভাবে অর্থ পাচার) মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন৷ এই অর্থ পাচার দেশের জাতীয় কোষাগারের জন্য বিপুল ক্ষতি বয়ে এনেছে৷ অবৈধভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে আদালত বারবার নির্দেশ দিলেও ওই রাজনীতিকেরা আজ পর্যন্ত অভিযোগের ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য আদালতে দাখিল করেননি৷ শুনানিকালে আইনজীবী জাফরি যুক্তি দেন, ওই রাজনীতিকদের সম্পদ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা গেলে পাকিস্তানের জন্য কোনো বিদেশি ঋণ লাগবে না৷ বর্তমানে পাকিস্তানের যেসব আন্তর্জাতিক ঋণ রয়েছে, তা শোধ দেওয়া যাবে৷
এরপর তিনি ওই রাজনীতিকদের সম্পদ ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ দিতে আদালতের প্রতি আবেদন জানান৷ আদালতের বিচারপতি খালিদ মাহমুদ খান পরে ওই রাজনীতিকদের কাছ থেকে অভিযোগের বিষয়ে জবাব চেয়ে নোটিশ জারি করেন এবং ২৯ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন৷ পাকিস্তানের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর৷ বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো ও তাঁর স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখার অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ ১৯৯৭ সালে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যম পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসার পর বেনজির ও জারদারির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের বিষয়টিসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত গতি পায়৷ জারদারিকে এ ঘটনায় কখনো দোষী সাব্যস্ত না করা হলেও, তাঁকে একই ধরনের অন্য দুর্নীতির অভিযোগে আট বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে৷ ২০০৪ সালে তিনি মুক্তি পান৷ ২০০৮ সালে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷ প্রেসিডেন্ট থাকাকালেও তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলাটি নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে৷ পাকিস্তানের প্রভাবশালী বিচার বিভাগ বিভিন্ন সময় জারদারির বিরুদ্ধে ওই মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে সুইজারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে জারদারির পিপিপি সরকার তখন প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তি রক্ষাকবচ রয়েছে, এমন বক্তব্য তুলে ধরে তা করতে বারবার অস্বীকৃতি জানায়৷ এ ঘটনায় তখন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়, যাতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রধানমিন্ত্রত্ব হারান৷ ডন৷
No comments