প্রিয়াংকার জয় রাহুলের ভয়
দাদা রাহুলের নামের ওপরে নিজের সুখ্যাতির ছায়া ফেলেছেন প্রিয়াংকা গান্ধী- প্রচারণার ষোলআনা খ্যাতিটুকুই তিনি কড়ায়-গণ্ডায় ছিনিয়ে নিয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে খুব কম মানুষই আছে যারা বিষয়টিকে স্বীকার করবেন না। আর বিদেশী সংবাদ মাধ্যমেও গুটিকয়েক আছেন যারা এটি অস্বীকার করবেন। গত তিন সপ্তাহ ধরে, যখন থেকে তিনি কথা বলতে শুরু করেছেন, তখন থেকে সংবাদপত্রের শিরোনাম এবং টিভির পর্দাজুড়ে কেবল প্রিয়ংকারই আধিপত্য। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী যেন খবর থেকে উধাও হয়ে গেছেন। কেবল খবরের সময়ে তাকে ছিটেফোঁটা চোখে পড়ে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, প্রিয়াংকা এমন কি করছেন যে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে একেবারে উধাও হয়ে গেলেন রাহুল। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম প্রিয়াংকার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে খুঁজে পেয়েছে। দেশের অধিকাংশ জনগণ সংবাদ মাধ্যমের এ দাবিকে মেনেও নিয়েছে। প্রিয়াংকা যখন খালি পায়ে গরম বালির ওপর দিয়ে হেঁটে যান জনতা তার মধ্যে চারিত্রিক দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস দেখতে পায়। তিনি যখন কথা বলেন, তার চোখের তারায় দ্যুতি ঠিকরায়। তার হাসি বা রাগ সবই যেন স্বতঃস্ফূর্ত। তাই সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন প্রিয়াংকা। অন্যদিকে রাহুলের প্রতি অবহেলা না করলেও খানিকটা যেন উদাসীন হয়ে পড়েছে ভারতের মানুষ। বারবার হিন্দুস্থান টাইমসের কংগ্রেসের দুই উত্তরসূরির বর্তমান অবস্থান ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের আলোকে এ বিশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
রাহুল যখন সংবাদপত্রের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তাকে দেখায় নির্লিপ্ত। আর সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় পুরোপুরি নিমগ্ন হয়ে যান নিজের মধ্যে। বিপরীতে প্রিয়াংকা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এক বা দুমিনিট কথা বললেও তা নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি হয়ে পড়ে কোণঠাসা। তিনি জানেন, কীভাবে ঘা তৈরি করে তাতে আঘাত করতে হয়। কিন্তু রাহুল তা জানেন না। পণ্ডিতব্যক্তিরা বলে থাকেন, রাজনীতি হল গণযোগাযোগের এক শৈল্পিক মাধ্যম। আপনি যদি জনতাকে প্রভাবিত করতে পারেন তাহলে তারা আপনার ডাকে সাড়া দেবে। প্রকৃতিগতভাবেই এই গুণটির অধিকারী প্রিয়াংকা। জনগণ তার কথা শোনে। রাহুলও জনতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তিনি যেন সঠিক শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই কেবল মুষ্ঠিমেয়রাই তার কথা বুঝতে পারে। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে তাই এখন দুই ভাইবোনকে নিয়ে শুরু হয়েছে তুলনা। দুটি প্রশ্নই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। প্রথমত, প্রিয়াংকা কি নির্বাচনী প্রচারণায় রাহুলের চাইতেও বেশি কার্যকর? তাকে দলে বড় ভূমিকা পালন করতে না দিয়ে কংগ্রেস কি তবে ভুল করেছে? এগুলোর উত্তর যাই হোক না কেন, এসব প্রশ্নই দলে রাহুলের অবস্থান এবং ভাবমূর্তিকে ছোট করে ফেলছে। কংগ্রেস রাহুলকে সোনিয়া গান্ধীর উত্তরাধিকার এবং দলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাইছে। অন্যদিকে ভারতের সংবাদ মাধ্যম এবং জনতার ধারণা, প্রিয়াংকা রাহুলের চেয়ে বেশি যোগ্য। আর এ কারণেই প্রিয়াংকার জনপ্রিয়তা এবং সফলতা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদিও তার পরিবার এবং দল এখনও এটি অনুধাবন করতে পারছে না। প্রিয়াংকা ইচ্ছাকৃতভাবে এবং সচেতনভাবেই যে নিজেকে উন্নত করছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।
No comments