সমঝোতার পথ খুঁজুন- কেন সরকারি অবরোধ?
বিরোধী দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’
কর্মসূচি ২৯ ডিসেম্বর হলেও সরকার আরও আগেভাগেই প্রস্তুত। দুই দিন আগে থেকেই
সম্ভব-অসম্ভব সব উপায়ে ঢাকামুখী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে সরকার।
সড়ক,
নৌ ও রেলপথের কোনোটিই যাতে বিরোধী দলের সমর্থকেরা ব্যবহার করতে না পারে,
তার জন্য চলছে ‘সরকারি অবরোধ’। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের
ক্ষতি, একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহারের পরিণাম—কোনো কিছুরই পরোয়া করছে না সরকার।
ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ যে কার্যত বিচ্ছিন্ন, তার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সরকারের এই ‘অবরোধ’ কর্মসূচির সঙ্গে তুলনীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার রাজার আহাম্মকি। পায়ে ধুলা লাগবে বলে সমস্ত পথঘাট চামড়া দিয়ে মুড়ে দেওয়া যায় না। বরং নিজের পায়ে জুতা পরাই বুদ্ধিমানের কাজ। সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকাতে সমগ্র রাজধানীসহ সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ করে সেই ভুলই করছে। জন চলাচলে বাধা দিয়ে, গণহারে তল্লাশি-হয়রানি-গ্রেপ্তার করা কোনো আইনি কর্তৃপক্ষের আচরণ হতে পারে না।
বিরোধী দল যতবার কর্মসূচি দেবে, ততবারই কি সরকার এই আচরণ করবে? সেটা কি কার্যত সম্ভব? এতে কি সরকারের জনবিচ্ছিন্নতাই আরও বাড়বে না? এতে কি দেশের ক্ষতি হয় না? প্রতিযোগিতাহীন নির্বাচন, বিরোধীদের ধরপাকড়-দমন, কর্মসূচি পালনে সর্বাত্মক বাধা—বিশ্বের কাছে এই চিত্র মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এসব আসলে মূল সমস্যা থেকে উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে থাকার শামিল।
একদিকে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে অভিযানে অংশ নিচ্ছেন, বিরোধীদের ঘরবাড়ি তছনছ করছেন, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিরোধীদের সমাবেশ ঠেকাতে দলীয় কর্মীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর ডাক দিতে দ্বিধা করছেন না। ঢাকার প্রবেশপথ দিয়ে মাছিও যাতে প্রবেশ না করতে পারে, তার জন্য কর্মীদের পুরস্কারের আশ্বাস ও শাস্তির হুমকি দিচ্ছেন। বিরোধী দল ও সরকারের আচরণ যদি সংঘাতের পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে দেশের অধোগতি অনিবার্য।
দেশ চালাতে হলে, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে বিরোধী দলের সঙ্গে আপস-মীমাংসার পথ বের করতেই হবে সরকারকে। বিরোধী দল মানে কতিপয় নেতা-নেত্রী নন; বিরোধী দল মানে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ, যারা ওই সব নেতা-নেত্রী এবং তাঁদের দাবি-দাওয়ার সমর্থক। বিরোধী দলকে দমনের মাধ্যমে সরকার দেশবাসীর একটি অংশকে অপদস্থ ও উপেক্ষিত করে রাখতে পারে না। সরকার দলনির্ভর হলেও তাকে দেশের অধিকাংশ জনগণের দিকে তাকিয়ে দেশ চালাতে হয়। একতরফা নির্বাচন করতে ‘সরকারি অবরোধ’ ও পুলিশি শক্তির মাত্রাছাড়া ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পথ যে ব্যর্থ হতে বাধ্য, সরকারের এই উপলব্ধি ছাড়া সামনে সমূহ অমঙ্গল এড়ানো সম্ভব নয়। আবার আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের সহিংসতা ও নাশকতাও গ্রহণযোগ্য নয়।
No comments