লিফশুল্ৎজ: বাংলাদেশবান্ধব মার্কিন সাংবাদিক by মতিউর রহমান
লরেন্স লিফশুল্ৎজ গ্রামের মানুষ।
নিউইয়র্ক শহরের বাইরের একটি গ্রামে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। ভিয়েতনাম
যুদ্ধের দামামা তরুণ লিফশুল্ৎজকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।
তাঁর
সেই বেড়ে ওঠার সময় তিনি হয়তো ভাবতেও পারেননি একদিন তাঁর কর্মক্ষেত্র
হবে দক্ষিণ এশিয়া। যে অঞ্চলটিতে তিনি তাঁর চোখের সামনেই প্রত্যক্ষ করলেন
‘আরেক ভিয়েতনাম’।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃত্তির আওতায় বিহারে এসেছিলেন ১৯৬৯ সালে। ১৯৭০ সালেই তিনি ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে প্রত্যক্ষ করেন পূর্ব পাকিস্তান। এবং সম্ভবত সেই শুরু। এরপর তাঁর পেশা ও মননে অনবরত উদ্ভাসিত ও আলোড়িত বাংলাদেশ।
১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে লরেন্স লিফশুল্ৎজের লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ১৯৭৫ ও ’৭৬ সালে হংকংয়ের সাপ্তাহিক ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ পত্রিকায় তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তাঁর সেসব লেখা থেকে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির পেছনের অনেক অজানা খবর জানতে পাই। তাঁর লেখা বাংলাদেশ: দি আনফিনিশড রেভল্যুশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই। প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এ বইয়ের দুটি অংশ। একটি সামরিক আদালতে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং অন্যটি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের কাহিনি নিয়ে। বাংলাদেশের মর্মান্তিক ও তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ দুটি রাজনৈতিক ঘটনা জানতে-বুঝতে এখনো সর্বমহলে তাঁর এ বইয়ের তথ্যই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বিশেষত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আমেরিকার ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর বইয়ের তথ্য এখনো সর্বাধিক বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত।
লরেন্স লিফশুল্ৎজের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৯৪ সালে। আমি তখন ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক। আমাদের অনুরোধে পঁচাত্তরের ঘটনায় মার্কিন ভূমিকা নিয়ে তিনি তখন ভোরের কাগজ-এ অনেক লিখেছেন। এর পর থেকে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে, বাংলাদেশে ও আমেরিকায় নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা হয়।
বাংলাদেশ সব সময় রয়েছে তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে। প্রথম আলোর তিনি একজন অন্তরঙ্গ সুহূদ, নিয়মিতই লেখালেখি করেন। অবশ্য প্রথম আলোই নয়, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাঁর কাজ সতত আলোচিত ও উদ্ধৃত হয়ে থাকে। তিনিই একমাত্র বিদেশি, একমাত্র মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক, যিনি বাংলাদেশ ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঝোড়ো অধ্যায়কে নিরন্তর লক্ষ করে এসেছেন। বিরতি দিয়ে হলেও নিয়মিত লিখে চলেছেন। তাহেরের বিপ্লবী মতাদর্শের সঙ্গে অনেকের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ বিচারের নামে প্রহসনের প্রতিবাদ জানাতে উচ্চকিত লিফশুল্ৎজ ঢাকা হাইকোর্টে এসে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বাংলাদেশবান্ধব মার্কিন সাংবাদিক লিফশুল্ৎজ আরও দীর্ঘকাল বাংলাদেশকে ভালোবাসবেন, পর্যবেক্ষণ করে যাবেন, নিজের ভেতরে এই আশা সব সময় বাঁচিয়ে রাখি।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃত্তির আওতায় বিহারে এসেছিলেন ১৯৬৯ সালে। ১৯৭০ সালেই তিনি ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে প্রত্যক্ষ করেন পূর্ব পাকিস্তান। এবং সম্ভবত সেই শুরু। এরপর তাঁর পেশা ও মননে অনবরত উদ্ভাসিত ও আলোড়িত বাংলাদেশ।
১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে লরেন্স লিফশুল্ৎজের লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ১৯৭৫ ও ’৭৬ সালে হংকংয়ের সাপ্তাহিক ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ পত্রিকায় তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তাঁর সেসব লেখা থেকে আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির পেছনের অনেক অজানা খবর জানতে পাই। তাঁর লেখা বাংলাদেশ: দি আনফিনিশড রেভল্যুশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী বই। প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। এ বইয়ের দুটি অংশ। একটি সামরিক আদালতে কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং অন্যটি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের কাহিনি নিয়ে। বাংলাদেশের মর্মান্তিক ও তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ দুটি রাজনৈতিক ঘটনা জানতে-বুঝতে এখনো সর্বমহলে তাঁর এ বইয়ের তথ্যই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বিশেষত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আমেরিকার ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর বইয়ের তথ্য এখনো সর্বাধিক বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত।
লরেন্স লিফশুল্ৎজের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ১৯৯৪ সালে। আমি তখন ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক। আমাদের অনুরোধে পঁচাত্তরের ঘটনায় মার্কিন ভূমিকা নিয়ে তিনি তখন ভোরের কাগজ-এ অনেক লিখেছেন। এর পর থেকে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে, বাংলাদেশে ও আমেরিকায় নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা হয়।
বাংলাদেশ সব সময় রয়েছে তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে। প্রথম আলোর তিনি একজন অন্তরঙ্গ সুহূদ, নিয়মিতই লেখালেখি করেন। অবশ্য প্রথম আলোই নয়, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাঁর কাজ সতত আলোচিত ও উদ্ধৃত হয়ে থাকে। তিনিই একমাত্র বিদেশি, একমাত্র মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক, যিনি বাংলাদেশ ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঝোড়ো অধ্যায়কে নিরন্তর লক্ষ করে এসেছেন। বিরতি দিয়ে হলেও নিয়মিত লিখে চলেছেন। তাহেরের বিপ্লবী মতাদর্শের সঙ্গে অনেকের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ বিচারের নামে প্রহসনের প্রতিবাদ জানাতে উচ্চকিত লিফশুল্ৎজ ঢাকা হাইকোর্টে এসে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বাংলাদেশবান্ধব মার্কিন সাংবাদিক লিফশুল্ৎজ আরও দীর্ঘকাল বাংলাদেশকে ভালোবাসবেন, পর্যবেক্ষণ করে যাবেন, নিজের ভেতরে এই আশা সব সময় বাঁচিয়ে রাখি।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো
No comments