জাহাঙ্গীরনগর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে by মোঃ মুজিবুর রহমান
কোনো
বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বছরজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে, তাহলে সেখানে
স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে
সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের পড়ালেখায়
বিঘ্নিত ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ বছরের
শুরু থেকেই নানা কারণে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়ে আসছে। শিক্ষকদের একটা
অংশ উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। একপর্যায়ে শিক্ষা
মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট
অচলাবস্থার নিরসন হয়নি। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন ৬ মাসেরও
বেশি সময়ের সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানের
শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন এ ব্যাপারে কিছুই
করণীয় নেই। আমরা দেখছি, সর্বশেষ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষক ফোরাম নামে
শিক্ষকদের একটি সংগঠন এখন উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের এক দফা
দাবি নিয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে। এর ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষা কার্যক্রম আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণের আপাতত কোনো
লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসন করে ক্যাম্পাসে
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়ালেখা করতে চায়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পেছনে টাকা ঢালেন উজ্জ্বল শিক্ষাজীবনের প্রত্যাশায়। সরকারও বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চলেছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অংশ হিসেবে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো পরিবেশই এখন দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রধান দায়িত্ব উপাচার্যের হলেও এ ব্যাপারে শিক্ষকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরাই এখন রয়েছেন নানামুখী আন্দোলনে। উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনকে নিয়েই মূলত মূল আন্দোলন চলমান রয়ের্ছে কয়েক মাস ধরে। ড. আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তার নিয়োগকে শিক্ষকরা সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন বলে মনে হয় না। দৃশ্যত উপাচার্যও সবাইকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারছেন না। এর আগে প্রায় একই ধরনের আন্দোলনের মুখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়। আশা করা হয়েছিল নতুন উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ড. আনোয়ার হোসেনকে উপাচার্য নিয়োগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসেনি। বরং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। নতুন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ হয়ে অফিসে দিন কাটাতে দেখা গেছে। তার বাসভবনের সামনেও শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘট চলছে। এমনকি শিক্ষকদের কর্মসূচির মুখে উপাচার্য নিজেও বাসভাবনে প্রবেশ না করে সেখানেই সস্ত্রীক অবস্থান গ্রহণ করেন। এসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে ব্যাপকভাবে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী, তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়েই রইল।
অতীতে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের আন্দোলন ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে দেখা গেছে, তার প্রায় সব ক’টির পেছনেই কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের কিছু অংশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো বন্ধ করে দিয়ে উপাচার্য অপসারণের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক করা যায়, সে বিষয়ে উপাচার্যও তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন নিয়োগকে কেন্দ্র করে রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটে চলেছে। তাদের মুক্ত করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি। অন্যদিকে ‘শিক্ষা অধিকার মঞ্চ’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি নতুন সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে লিফলেটও বিতরণ করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সন্দেহ নেই। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছুটিকে উপলক্ষ করে এরই মধ্যে অনেকেই হল ছাড়তে শুরু করেছে। অথচ এ বছর তাদের নিয়মিত ক্লাসই হতে পারল না। পরীক্ষা অনুষ্ঠানও বিঘিœত হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কী করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনে এগিয়ে যাবে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।
দেশে আরও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায়ই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের লাগাতার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা অভাবিত। মাঝখানে কিছুদিন শান্ত থাকার পর আবারও বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে কারণ যা-ই থাকুক না কেন, উপাচার্য ও শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি ও বিপরীতমুখী অবস্থান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও গভীর সংকট তৈরি করছে। এ দিকটিই গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে সবাইকে।
বর্তমান উপাচার্য একজন খ্যাতিমান শিক্ষক। যারা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়েরই গুণী শিক্ষক। যে কোনো বিষয়ে তাদের মধ্যে পরস্পর মতপার্থক্য দেখা দিতেই পারে। কিন্তু তাই বলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে জিম্মি করে আন্দোলন-ধর্মঘট চলবে দীর্ঘমেয়াদে, এটা সমর্থন করা যায় না। আমরা চাই, উপাচার্য ও আন্দোলনরত শিক্ষকরা একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবেন দ্রুত। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কোনো কিছুতেই।
আমরা মনে করি, শিক্ষকদের সমস্যা শিক্ষকদেরই সমাধান করা উচিত। সেখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। অথচ বারবার দেখা যাচ্ছে, নিজেদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকরা অনাকাক্সিক্ষত কর্মসূচির পথ বেছে নিচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেমে আসছে চরম অনিশ্চয়তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিচ্ছে স্থবিরতা। সৃষ্টি হচ্ছে সেশনজটের। এরই মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের অনার্সে ভর্তি কার্যক্রম নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হওয়ার আগেই শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে- এটাই প্রত্যাশা।
মোঃ মুজিবুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়ালেখা করতে চায়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পেছনে টাকা ঢালেন উজ্জ্বল শিক্ষাজীবনের প্রত্যাশায়। সরকারও বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চলেছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের অংশ হিসেবে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো পরিবেশই এখন দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রধান দায়িত্ব উপাচার্যের হলেও এ ব্যাপারে শিক্ষকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরাই এখন রয়েছেন নানামুখী আন্দোলনে। উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনকে নিয়েই মূলত মূল আন্দোলন চলমান রয়ের্ছে কয়েক মাস ধরে। ড. আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তার নিয়োগকে শিক্ষকরা সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন বলে মনে হয় না। দৃশ্যত উপাচার্যও সবাইকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারছেন না। এর আগে প্রায় একই ধরনের আন্দোলনের মুখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়। আশা করা হয়েছিল নতুন উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ড. আনোয়ার হোসেনকে উপাচার্য নিয়োগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসেনি। বরং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। নতুন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ হয়ে অফিসে দিন কাটাতে দেখা গেছে। তার বাসভবনের সামনেও শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘট চলছে। এমনকি শিক্ষকদের কর্মসূচির মুখে উপাচার্য নিজেও বাসভাবনে প্রবেশ না করে সেখানেই সস্ত্রীক অবস্থান গ্রহণ করেন। এসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে ব্যাপকভাবে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী, তা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়েই রইল।
অতীতে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের আন্দোলন ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে দেখা গেছে, তার প্রায় সব ক’টির পেছনেই কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের কিছু অংশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো বন্ধ করে দিয়ে উপাচার্য অপসারণের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক করা যায়, সে বিষয়ে উপাচার্যও তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন নিয়োগকে কেন্দ্র করে রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটে চলেছে। তাদের মুক্ত করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি। অন্যদিকে ‘শিক্ষা অধিকার মঞ্চ’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি নতুন সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে লিফলেটও বিতরণ করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সন্দেহ নেই। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছুটিকে উপলক্ষ করে এরই মধ্যে অনেকেই হল ছাড়তে শুরু করেছে। অথচ এ বছর তাদের নিয়মিত ক্লাসই হতে পারল না। পরীক্ষা অনুষ্ঠানও বিঘিœত হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কী করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনে এগিয়ে যাবে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।
দেশে আরও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায়ই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে দেখা যায়। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের লাগাতার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা অভাবিত। মাঝখানে কিছুদিন শান্ত থাকার পর আবারও বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে কারণ যা-ই থাকুক না কেন, উপাচার্য ও শিক্ষকদের পাল্টাপাল্টি ও বিপরীতমুখী অবস্থান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও গভীর সংকট তৈরি করছে। এ দিকটিই গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে সবাইকে।
বর্তমান উপাচার্য একজন খ্যাতিমান শিক্ষক। যারা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়েরই গুণী শিক্ষক। যে কোনো বিষয়ে তাদের মধ্যে পরস্পর মতপার্থক্য দেখা দিতেই পারে। কিন্তু তাই বলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে জিম্মি করে আন্দোলন-ধর্মঘট চলবে দীর্ঘমেয়াদে, এটা সমর্থন করা যায় না। আমরা চাই, উপাচার্য ও আন্দোলনরত শিক্ষকরা একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবেন দ্রুত। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কোনো কিছুতেই।
আমরা মনে করি, শিক্ষকদের সমস্যা শিক্ষকদেরই সমাধান করা উচিত। সেখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। অথচ বারবার দেখা যাচ্ছে, নিজেদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকরা অনাকাক্সিক্ষত কর্মসূচির পথ বেছে নিচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেমে আসছে চরম অনিশ্চয়তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিচ্ছে স্থবিরতা। সৃষ্টি হচ্ছে সেশনজটের। এরই মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের অনার্সে ভর্তি কার্যক্রম নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হওয়ার আগেই শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে- এটাই প্রত্যাশা।
মোঃ মুজিবুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
No comments