মহানবমীতে দেবীকে ভক্তরা পূজা দিলেন by সুকুমার সরকার
রোববার
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী। এদিন সকাল ৯টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর
মহানবমী কল্পারম্ব ও বিহিত পূজা প্রশস্তা। এরআগে হয়েছে বীরাষ্টমীব্রত ও
মহাষ্টমী ব্রতের পালন।
গত ২ দিনের মতো রোববারও ভক্তরা ফুল ও বেলপাতা দিয়ে দেবীকে পূজা দিয়েছেন।
মা দেবী দূর্গা রোববার ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হচ্ছেন । নবমী বিহিত পূজা হচ্ছে নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে । দেবী দুর্গার কাছে নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে আহুতি দেয়া হয়।
মহানবমী ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। প্রতিবছর এ তিথিতে দুগর্তিনাশিনী দেবী দুর্গা ভক্তদের মাঝে আবির্ভূত হন অসুর শক্তির কাছ থেকে মানুষের মুক্তি ও রক্ষা, অসুরের বধ আর ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য । নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়।
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর মতো মহানবমীতেও সারাদিন পূজা মণ্ডপগুলোতে থাকবে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড়। ভক্তরা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত দেবীকে নানা উপাচারে আরাধনা করে সব অনাচার আর সঙ্কট মোচন এবং বিশ্ববাসীর শান্তি প্রার্থনা করেন ।
পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসবের সবচেয়ে বড় আয়োজন রোববার। কেননা এদিন রাতেই করুণ সুর বেজে উঠবে মাকে বিদায় জানানোর। রোববার মহানবমীতে সন্ধ্যায় প্রায় সব মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা। রাজারবাগে শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বেতার ও টেলিভিশন শিল্পীদের সমন্বয়ে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রোববারের রাত পেরুলেই মা `উমা` বাবার বাড়ি মর্ত ছেড়ে ফিরবেন স্বামীগৃহ কৈলাশে। বছরান্তে আশ্বিন-কার্তিকের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথির পাঁচটি দিবস `জগজ্জননী` উমা দেবীর পিতৃগৃহ ঘুরে যাওয়া। পাঁচ দিনের শারদ উত্সব শেষ হবে ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে।
দুর্গাপূজা এক সময় শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ছিল পুরান ঢাকার কোতোয়ালি এলাকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে পুরো ঢাকায় পূজার আয়োজন হচ্ছে মহাসমারোহে।
শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ আশ্রম, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, ধানমন্ডি সর্বজনীন পূজা কমিটি, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, কলাবাগান সর্বজনীন পূজা উত্সব, রমনা কালীমন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ও ব্যক্তিগতভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে উত্সবমুখর পরিবেশে।
আলোকসজ্জা আর নানা কারুকার্যে সজ্জিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি মণ্ডপ। গত ৫ বছর ধরে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বাসিন্দারা এবারও বনানী খেলার মাঠে জাঁকজমকভাবে পূজার আয়োজন করেন গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা উত্সবের ব্যানারে।
এ বছর সারাদেশে ২৯ হাজারের বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২১২টি। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ২০২টি।
মহানগরের চকবাজারে ৫টি, লালবাগে ৫টি, হাজারীবাগে ৯টি, কোতয়ালীতে ২১টি, বংশালে ২টি, সূত্রাপুরে ২৩টি, ওয়ারীতে ১৪টি, গেন্ডারিয়ায় ১৪টি, কদমতলীতে ৭টি, শ্যামপুরে ৬টি, ডেমরায় ১০টি, যাত্রাবাড়ীতে ৬টি, সবুজবাগ-শাহাজাহানপুরে ৬টি, মুগদায় ৪টি, মতিঝিলে ১টি, রামপুরায় ১টি, খিলগাঁওয়ে ৩টি, বাড্ডায় ৯টি, ভাটারায় ৪টি, গুলশান-বনানীতে ৮টি, খিলক্ষেতে ৩টি, তেজগাঁওতে ৪টি, শেরেবাংলা নগরে ৩টি, শাহবাগে ২টি, রমনায় ১টি, ধানমন্ডিতে ১টি, মোহাম্মদপুরে ৮টি, মিরপুরে ২টি, দারুসসালামে ৮টি, শাহ আলীতে ১টি, পল্লবীতে ৪টি, কাফরুলে ১টি, উত্তরখানে ১টি, দক্ষিণখানে ১টি, উত্তরায় ২টি, বিমানবন্দরে ১টি এবং তুরাগ থানায় ১১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
সোমবার বিজয়া দশমী। আসছে বছর আবার এসো-এ ভারাক্রান্ত মিনতি রেখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোত্সব। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ।
দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বার্ষিক লক্ষ্মীপূজার দিন। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উত্সবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি।
প্রতি বছর দুর্গতি নাশিনী দুর্গা মায়ের পূজা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপন করা হয়। সবাই দুর্গা মাকে আহ্বান করে বলে - ‘মাগো, তুমি আমাদের দুর্গতি নাশ করে দাও, আমাদের মানসপটে লালিত-পালিত হিংসা বিদ্বেষ-হানাহানি দূর করে দাও। আমাদের শক্তি দাও, আমাদের শান্তি দাও’।
পৌরাণিক কাহিনী মতে, দুর্গাদেবী হলেন ব্রহ্মার মানস কন্যা। যখন সংসারে অসুরের রাজত্ব চলছিল, চারদিকে অসুরের জয়, অসুরের দাপটে মানবকূল, মানবকূল ত্রাহি ত্রাহি করছিল, অসুর তাদের আসুরিক বৃত্তি দ্বারা সবার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, শান্তি-সমৃদ্ধি তার হিংসার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল মানুষের ভাল গুন বা মানবীয় সত্ত্বা। তখন দেবী দুর্গাকে সৃজন করে ব্রহ্মা তাকে সর্বশক্তিতে ভরপুর করে অসুর বিনাশের জন্য মর্ত্যে প্রেরণ করেছিলেন। তখন দুর্গা দেবী তার দিব্যশক্তির দ্বারা আসুরী শক্তি বা অপশক্তিকে (অসুরকে) পরাভূত করে পুন:শান্তির জন্য সমর্থ হয়েছিলেন।
এ ঘটনাকে ভিত্তি করে সেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে দুর্গা মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী মূর্তির আরাধনা। এটিকে কেন্দ্র করেই প্রথম থেকে পাক-ভারত উপমহাদেশের তান্ত্রিক গোষ্ঠির সদস্যগণ পালন করে আসছে এই শারদীয় দুর্গোৎসব যা অবশেষে সনাতন হিন্দু র্ধমাবলম্বীরা বিশেষ করে বাংলাভাষা ভাষী ও বাংলা অঞ্চলের হিন্দুরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হিসেবে করে যাচ্ছেন।
এবার ঢাকা শহরের টিকাটুলীর সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ প্রাঙ্গণে দেখা গিয়েছে- এক ভিন্নধর্মী আয়োজন ‘চৈতন্য দুর্গোৎসব’। এখানে দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তির জায়গায় ছলি চৈতন্য বা চিন্ময়ী মূর্তি। এখানে দেখা গছেে একাডেমীর ছাত্রছাত্রীরা ধ্যানস্থ অবস্থায় দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরের ভূমিকায় আছে।
মৃন্ময়ীর স্থলে চিন্ময়ী রূপ। একেই বলে চৈতন্য দুর্গা। এর উদ্দেশ্য মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া যে দুর্গার শক্তি চৈতন্য মানুষের ভেতরে লুকিয়ে আছে। এখন সময় এসেছে তাকে জাগানোর। অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে থাকা দৈবী শক্তিকে জাগাতে হবে।
দি একাডেমী ফর এ বেটার ওয়ার্ল্ড পথ দেখাচ্ছে, আত্মিক জ্ঞান ও রাজযোগ সাধনার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দৈবী শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারি। আমাদের জন্য খুলে দিচ্ছে আত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে আত্মিক শক্তি বিকাশের পথ। যেমন: রাগ একটি আসুরী শক্তি। আমরা যদি আমাদের প্রেম, ক্ষমা, শুভভাবনারূপী শক্তিকে কাজে লাগাই তাহলে রাগ বা ক্রোধ ধীরে ধীরে কমে যাবে।
ঈর্ষা অত্যন্ত দু:খদায়ী একটি স্বভাব। অন্যের ভাল গুণকে গ্রহণ করে উদারভাবে তাদের গ্রহণ করতে পারলে ঈর্ষার আগুণ থেকে নিজেকে এবং অপরকে বাঁচানো যায়। তেমনি সন্তুষ্টতা রূপী স্বর্গীয় গুণের দ্বারা লোভরূপী অসুরকে দমন করা যায়। নম্রতা, বিনয়ী স্বভাবের দ্বারা অহংকারকে পরাজয় করা যায়।
এ গুণগুলো সবার মধ্যে যদি বিকশিত হয়, ফুটে ওঠে তাহলে আপনা আপনি কমে যাবে হিংসা, ঈর্ষা, অশান্তি, লড়াই- ঝগড়া। এটাই হল প্রকৃত দুর্গাপূজা যে পূজা আমাদের চেতনাকে নাড়া দেয়, আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দৈবী শক্তিকে জাগিয়ে তোলে।
মা দেবী দূর্গা রোববার ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হচ্ছেন । নবমী বিহিত পূজা হচ্ছে নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে । দেবী দুর্গার কাছে নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে আহুতি দেয়া হয়।
মহানবমী ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। প্রতিবছর এ তিথিতে দুগর্তিনাশিনী দেবী দুর্গা ভক্তদের মাঝে আবির্ভূত হন অসুর শক্তির কাছ থেকে মানুষের মুক্তি ও রক্ষা, অসুরের বধ আর ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য । নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়।
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর মতো মহানবমীতেও সারাদিন পূজা মণ্ডপগুলোতে থাকবে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড়। ভক্তরা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত দেবীকে নানা উপাচারে আরাধনা করে সব অনাচার আর সঙ্কট মোচন এবং বিশ্ববাসীর শান্তি প্রার্থনা করেন ।
পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসবের সবচেয়ে বড় আয়োজন রোববার। কেননা এদিন রাতেই করুণ সুর বেজে উঠবে মাকে বিদায় জানানোর। রোববার মহানবমীতে সন্ধ্যায় প্রায় সব মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা। রাজারবাগে শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বেতার ও টেলিভিশন শিল্পীদের সমন্বয়ে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রোববারের রাত পেরুলেই মা `উমা` বাবার বাড়ি মর্ত ছেড়ে ফিরবেন স্বামীগৃহ কৈলাশে। বছরান্তে আশ্বিন-কার্তিকের পঞ্চমী থেকে দশমী তিথির পাঁচটি দিবস `জগজ্জননী` উমা দেবীর পিতৃগৃহ ঘুরে যাওয়া। পাঁচ দিনের শারদ উত্সব শেষ হবে ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে।
দুর্গাপূজা এক সময় শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ছিল পুরান ঢাকার কোতোয়ালি এলাকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে পুরো ঢাকায় পূজার আয়োজন হচ্ছে মহাসমারোহে।
শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ আশ্রম, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, ধানমন্ডি সর্বজনীন পূজা কমিটি, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, কলাবাগান সর্বজনীন পূজা উত্সব, রমনা কালীমন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ও ব্যক্তিগতভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে উত্সবমুখর পরিবেশে।
আলোকসজ্জা আর নানা কারুকার্যে সজ্জিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি মণ্ডপ। গত ৫ বছর ধরে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বাসিন্দারা এবারও বনানী খেলার মাঠে জাঁকজমকভাবে পূজার আয়োজন করেন গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা উত্সবের ব্যানারে।
এ বছর সারাদেশে ২৯ হাজারের বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২১২টি। গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ২০২টি।
মহানগরের চকবাজারে ৫টি, লালবাগে ৫টি, হাজারীবাগে ৯টি, কোতয়ালীতে ২১টি, বংশালে ২টি, সূত্রাপুরে ২৩টি, ওয়ারীতে ১৪টি, গেন্ডারিয়ায় ১৪টি, কদমতলীতে ৭টি, শ্যামপুরে ৬টি, ডেমরায় ১০টি, যাত্রাবাড়ীতে ৬টি, সবুজবাগ-শাহাজাহানপুরে ৬টি, মুগদায় ৪টি, মতিঝিলে ১টি, রামপুরায় ১টি, খিলগাঁওয়ে ৩টি, বাড্ডায় ৯টি, ভাটারায় ৪টি, গুলশান-বনানীতে ৮টি, খিলক্ষেতে ৩টি, তেজগাঁওতে ৪টি, শেরেবাংলা নগরে ৩টি, শাহবাগে ২টি, রমনায় ১টি, ধানমন্ডিতে ১টি, মোহাম্মদপুরে ৮টি, মিরপুরে ২টি, দারুসসালামে ৮টি, শাহ আলীতে ১টি, পল্লবীতে ৪টি, কাফরুলে ১টি, উত্তরখানে ১টি, দক্ষিণখানে ১টি, উত্তরায় ২টি, বিমানবন্দরে ১টি এবং তুরাগ থানায় ১১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
সোমবার বিজয়া দশমী। আসছে বছর আবার এসো-এ ভারাক্রান্ত মিনতি রেখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোত্সব। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ।
দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও বার্ষিক লক্ষ্মীপূজার দিন। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উত্সবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় তার সমাপ্তি।
প্রতি বছর দুর্গতি নাশিনী দুর্গা মায়ের পূজা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপন করা হয়। সবাই দুর্গা মাকে আহ্বান করে বলে - ‘মাগো, তুমি আমাদের দুর্গতি নাশ করে দাও, আমাদের মানসপটে লালিত-পালিত হিংসা বিদ্বেষ-হানাহানি দূর করে দাও। আমাদের শক্তি দাও, আমাদের শান্তি দাও’।
পৌরাণিক কাহিনী মতে, দুর্গাদেবী হলেন ব্রহ্মার মানস কন্যা। যখন সংসারে অসুরের রাজত্ব চলছিল, চারদিকে অসুরের জয়, অসুরের দাপটে মানবকূল, মানবকূল ত্রাহি ত্রাহি করছিল, অসুর তাদের আসুরিক বৃত্তি দ্বারা সবার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, শান্তি-সমৃদ্ধি তার হিংসার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল মানুষের ভাল গুন বা মানবীয় সত্ত্বা। তখন দেবী দুর্গাকে সৃজন করে ব্রহ্মা তাকে সর্বশক্তিতে ভরপুর করে অসুর বিনাশের জন্য মর্ত্যে প্রেরণ করেছিলেন। তখন দুর্গা দেবী তার দিব্যশক্তির দ্বারা আসুরী শক্তি বা অপশক্তিকে (অসুরকে) পরাভূত করে পুন:শান্তির জন্য সমর্থ হয়েছিলেন।
এ ঘটনাকে ভিত্তি করে সেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে দুর্গা মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী মূর্তির আরাধনা। এটিকে কেন্দ্র করেই প্রথম থেকে পাক-ভারত উপমহাদেশের তান্ত্রিক গোষ্ঠির সদস্যগণ পালন করে আসছে এই শারদীয় দুর্গোৎসব যা অবশেষে সনাতন হিন্দু র্ধমাবলম্বীরা বিশেষ করে বাংলাভাষা ভাষী ও বাংলা অঞ্চলের হিন্দুরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হিসেবে করে যাচ্ছেন।
এবার ঢাকা শহরের টিকাটুলীর সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ প্রাঙ্গণে দেখা গিয়েছে- এক ভিন্নধর্মী আয়োজন ‘চৈতন্য দুর্গোৎসব’। এখানে দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তির জায়গায় ছলি চৈতন্য বা চিন্ময়ী মূর্তি। এখানে দেখা গছেে একাডেমীর ছাত্রছাত্রীরা ধ্যানস্থ অবস্থায় দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরের ভূমিকায় আছে।
মৃন্ময়ীর স্থলে চিন্ময়ী রূপ। একেই বলে চৈতন্য দুর্গা। এর উদ্দেশ্য মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া যে দুর্গার শক্তি চৈতন্য মানুষের ভেতরে লুকিয়ে আছে। এখন সময় এসেছে তাকে জাগানোর। অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে থাকা দৈবী শক্তিকে জাগাতে হবে।
দি একাডেমী ফর এ বেটার ওয়ার্ল্ড পথ দেখাচ্ছে, আত্মিক জ্ঞান ও রাজযোগ সাধনার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দৈবী শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারি। আমাদের জন্য খুলে দিচ্ছে আত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে আত্মিক শক্তি বিকাশের পথ। যেমন: রাগ একটি আসুরী শক্তি। আমরা যদি আমাদের প্রেম, ক্ষমা, শুভভাবনারূপী শক্তিকে কাজে লাগাই তাহলে রাগ বা ক্রোধ ধীরে ধীরে কমে যাবে।
ঈর্ষা অত্যন্ত দু:খদায়ী একটি স্বভাব। অন্যের ভাল গুণকে গ্রহণ করে উদারভাবে তাদের গ্রহণ করতে পারলে ঈর্ষার আগুণ থেকে নিজেকে এবং অপরকে বাঁচানো যায়। তেমনি সন্তুষ্টতা রূপী স্বর্গীয় গুণের দ্বারা লোভরূপী অসুরকে দমন করা যায়। নম্রতা, বিনয়ী স্বভাবের দ্বারা অহংকারকে পরাজয় করা যায়।
এ গুণগুলো সবার মধ্যে যদি বিকশিত হয়, ফুটে ওঠে তাহলে আপনা আপনি কমে যাবে হিংসা, ঈর্ষা, অশান্তি, লড়াই- ঝগড়া। এটাই হল প্রকৃত দুর্গাপূজা যে পূজা আমাদের চেতনাকে নাড়া দেয়, আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দৈবী শক্তিকে জাগিয়ে তোলে।
No comments