গৃহযুদ্ধের পথে যাচ্ছে মিসর? by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
তাহলে কি সত্যিই আরব বসন্তের কবর রচিত হলো
মিসরে? মাত্র বছর দুয়েক আগে গণবিক্ষোভের মুখে পতন হয়েছিল দীর্ঘদিনের
স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের।
এরপর সুপ্রাচীন সভ্যতার দেশটির
কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। কিন্তু
স্থিতিশীলতা আসেনি। আদর্শিক মতদ্বৈততা আর কায়েমি স্বার্থবাদের
সুযোগসন্ধানী তৎপরতা—এ দুইয়ের জেরে উৎখাত হয়েছেন ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট
মোহাম্মদ মুরসি। দেশ দুই ভাগে বিভক্ত। নীল নদে বয়ে যাচ্ছে রক্তের নহর।
দিগন্তে নেই সংকটের কোনো আশু সমাধানের লক্ষণ। হতাশ দেশবাসীর মনে কাটা ঘায়ে
নুনের ছিটা দিতে দৃশ্যত মুক্তির পথে হোসনি মোবারক।অনেক মিসরীয়ই ভাবছেন,
এই যদি হয়, তাহলে এত কষ্ট করে লৌহমানব মোবারককে উৎখাত করে কী লাভ হলো?
পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মিসরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ঐতিহাসিক তাহরির
স্কয়ারের রক্তঝরা বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার আভাস সুস্পষ্ট। একই সঙ্গে
সেনাশক্তির পুনরাবির্ভাব ও তা পোক্ত হওয়ার আশঙ্কাও জোরালো।আরব বসন্তের জের
ধরে ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের উৎখাতের পর প্রকৃত গণতন্ত্র, অর্থনীতিতে সবল
যে নতুন দেশের স্বপ্ন মিসরের মানুষ দেখেছিল, সে আশার মৃত্যু ঘটেছে। অগণিত
কর্মহীন বেকার যুবকের দেশ মিসরে এখন সর্বব্যাপী আশঙ্কা, দ্বিধাবিভক্ত জাতি
দীর্ঘস্থায়ী এক গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে কি না! অন্তত সেনাবাহিনীর সঙ্গে
ইসলামপন্থীদের চলমান সংঘাতের অবসান না হলে দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরবে
না।সংঘাতময় মিসরে এখন প্রতিদিন যা ঘটছে, তা হচ্ছে সেনা-সমর্থিত
অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসি ও তাঁর
পৃষ্ঠপোষক ব্রাদারহুডের সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্মম দমন-পীড়ন। গত
দুই সপ্তাহের সেনা অভিযান ও সহিংসতায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার
ছাড়িয়েছে। বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘ ও প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বানেও
সেনাবাহিনী শান্ত হচ্ছে না। প্রতিদিনই সেখানে ঝরছে রক্ত। মিসরের একটি
ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে বুঝি আর খুব বেশি দেরি নেই। আন্তর্জাতিক
বিশ্লেষক, অভিজ্ঞজন ও কূটনীতিকেরা বারবার হুঁশিয়ার করছেন, এ পরিস্থিতি
দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশটিতে অচিরেই ছড়িয়ে পড়বে গৃহযুদ্ধ। তবে
মিসরের বিশ্লেষকেরা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁরা
জানান, সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধিতা করা ব্রাদারহুড কখনো
কার্যকর সশস্ত্র দলে পরিণত হতে পারবে না। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হাজেম
এল বেবলাউয়ি এর মধ্যে জোর দিয়েই বলেছেন, দেশে গৃহযুদ্ধ বাধবে বলে মনে
করেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাজেম
জানান, সামনের দিনগুলোয় কিছু সমস্যা যে আসবে, তা তিনি অস্বীকার করেন না।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কয়েকটি দেশের মতো গৃহযুদ্ধ লাগার মতো পরিস্থিতি
সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন না।
মিসরের চলমান সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ নেতৃস্থানীয় পশ্চিমা দেশগুলো এর মধ্যে কঠোর সমালোচনা এবং চাপের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থের কারণে চুপচাপ। বছরের পর বছর ধরে মিসরের প্রধান দাতা দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে বছরে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার পাচ্ছে মিসর। এর মধ্যে সামরিক খাতেই তারা পায় ১২৩ কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্যের এ পরীক্ষিত বন্ধুকে ত্যাগ, এমনকি দুর্বল করা মার্কিন স্বার্থের অনুকূল নয়। অন্যদিকে, বিশ্ব গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও দৃষ্টিকটু। এ কারণে খুব মেপে পা ফেলছে বারাক ওবামার সরকার। অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোর হম্বিতম্বিও বিশেষ কোনো কাজে আসছে না। আসবেই বা কেন? ইইউ থেকে মিসর সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয় সামান্যই। অনেকের ধারণা, মিসরের সেনাবাহিনীর অর্থনৈতিক খুঁটি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, কাজেই সেনা কর্তৃপক্ষের ওপর অবশ্যই তাদের প্রভাব আছে। আড়ালে বসে দেশটির শাসনক্ষমতার ওপর কলকাঠি নাড়াতে গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাদের দিয়ে হটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রই। নইলে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ করে বসে আছে কেন? মিসরে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে কি হয়নি, সেই আপাত সহজ প্রশ্নটির মীমাংসা করতেই বা কেন তারা মার্কিন সংবিধান আর আইন নিয়ে গবেষণা করতে হবে বলে গোঁ ধরেছে?
তবে শেষ পর্যন্ত ওবামা প্রশাসন নড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। তারা মিসরকে দেওয়া মোটা অঙ্কের অনুদান কাটছাঁট বা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে। একই সঙ্গে মিসরে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানসহ সমরাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবছে তারা। এতে অবশ্য মিসরের অন্তর্বর্তী সরকার মোটেও বিচলিত নয়। প্রধানমন্ত্রী হাজেম এল বেবলাউয়ি জানান, যুক্তরাষ্ট্র অর্থ আর অস্ত্র বন্ধ করে দিলেও তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। প্রয়োজনে রাশিয়ার কাছে সহায়তা চাইবেন তাঁরা।
এমন পরিস্থিতিতে মিসরের সংকট শিগগিরই সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির দিকে যাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৩ ফান্ড ফর পিস ফেইলড স্টেট ইনডেক্স সূচকে সবচেয়ে কম স্থিতিশীল দেশগুলোর তালিকায় এখন ৩৪তম স্থানে রয়েছে মিসর।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিসরের বর্তমান সংকট হুট করে তৈরি হয়নি। এর পেছনের অন্যতম কারণ বিশাল তরুণ সম্প্রদায়ের চাওয়া ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান। দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে। এসব তরুণ-যুবক আর সেকেলে নিয়ম-নীতিতে চলতে ইচ্ছুক নন। সেনাশাসনের মতো স্বৈরশাসন তো তাঁরা চানই না। তাঁরা চান জীবিকা অর্জনের এমন সুযোগ, যা দিয়ে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করা যাবে। আধুনিক, সহজ ও সচ্ছল জীবনের আশায় উজ্জীবিত হয়ে মোবারক পতনের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তাঁরা। আশা ছিল, নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার তাঁদের সব চাওয়া পূরণ করতে পারবে। কিন্তু বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে মোবারক-যুগের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা তাঁদের আহত করেছে। নির্বাচনের পর ব্রাদারহুড-সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসিও তরুণ সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ না করে ক্রমেই কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠা আর নিজস্ব মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার দিকেই মন দিয়েছিলেন।
মিসরের তরুণ সম্প্রদায় এখন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন। তাদের একদল অন্তর্বর্তী সরকার তথা সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছে, আরেক দল সমর্থন করছে মুরসি ও ব্রাদারহুডকে। সব মিলিয়ে তারা অনেকটা দিগ্ভ্রান্ত। মিসরীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমর আদলি বলেছেন, এই রাজনৈতিক-সংকট চলতে থাকলে মিসর সত্যিই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি দীর্ঘ অন্তর্বর্তী সময় পার হতে হবে। এর মধ্যে অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা চলতে থাকলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে পড়বে।’
আমর আদলি জানান, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে কেবল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের মতো দেশগুলোর অর্থ সহায়তায় কাজ হবে না। যদিও দেশ তিনটি মিলে মিসরকে হাজার কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়ে থাকে। মিসরের জন্য পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া অর্থনৈতিক বিষয়গুলোয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেই। তারা ব্যয় কাটছাঁট বা কর বাড়ানোর মতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এতে এ সরকার যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, অর্থনৈতিক সংকট তত বাড়বে বৈ কমবে না। সে ক্ষেত্রে জনগণের দুর্গতি আরও বাড়বে।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হাসান নাফা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে জানান, মিসর পরিস্থিতি নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা আসলে বাড়াবাড়ি। এখানে গৃহযুদ্ধ বাধার কোনো আশঙ্কা নেই। ব্রাদারহুড যদিও এর আগে এভাবে কখনো প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করেনি, তা হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করার মতো শক্তি তাদের নেই। তারা এখন মিছেই হাত-পা ছুড়ছে। আসলে তারা পরাজিত। আর মিসরের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী এখন সেনাবাহিনীকেই সমর্থন করছে।
মিসরের চলমান সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ নেতৃস্থানীয় পশ্চিমা দেশগুলো এর মধ্যে কঠোর সমালোচনা এবং চাপের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থের কারণে চুপচাপ। বছরের পর বছর ধরে মিসরের প্রধান দাতা দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে বছরে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার পাচ্ছে মিসর। এর মধ্যে সামরিক খাতেই তারা পায় ১২৩ কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্যের এ পরীক্ষিত বন্ধুকে ত্যাগ, এমনকি দুর্বল করা মার্কিন স্বার্থের অনুকূল নয়। অন্যদিকে, বিশ্ব গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও দৃষ্টিকটু। এ কারণে খুব মেপে পা ফেলছে বারাক ওবামার সরকার। অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোর হম্বিতম্বিও বিশেষ কোনো কাজে আসছে না। আসবেই বা কেন? ইইউ থেকে মিসর সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয় সামান্যই। অনেকের ধারণা, মিসরের সেনাবাহিনীর অর্থনৈতিক খুঁটি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, কাজেই সেনা কর্তৃপক্ষের ওপর অবশ্যই তাদের প্রভাব আছে। আড়ালে বসে দেশটির শাসনক্ষমতার ওপর কলকাঠি নাড়াতে গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাদের দিয়ে হটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রই। নইলে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ করে বসে আছে কেন? মিসরে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে কি হয়নি, সেই আপাত সহজ প্রশ্নটির মীমাংসা করতেই বা কেন তারা মার্কিন সংবিধান আর আইন নিয়ে গবেষণা করতে হবে বলে গোঁ ধরেছে?
তবে শেষ পর্যন্ত ওবামা প্রশাসন নড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। তারা মিসরকে দেওয়া মোটা অঙ্কের অনুদান কাটছাঁট বা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে বলে শোনা যাচ্ছে। একই সঙ্গে মিসরে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানসহ সমরাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবছে তারা। এতে অবশ্য মিসরের অন্তর্বর্তী সরকার মোটেও বিচলিত নয়। প্রধানমন্ত্রী হাজেম এল বেবলাউয়ি জানান, যুক্তরাষ্ট্র অর্থ আর অস্ত্র বন্ধ করে দিলেও তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। প্রয়োজনে রাশিয়ার কাছে সহায়তা চাইবেন তাঁরা।
এমন পরিস্থিতিতে মিসরের সংকট শিগগিরই সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির দিকে যাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৩ ফান্ড ফর পিস ফেইলড স্টেট ইনডেক্স সূচকে সবচেয়ে কম স্থিতিশীল দেশগুলোর তালিকায় এখন ৩৪তম স্থানে রয়েছে মিসর।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিসরের বর্তমান সংকট হুট করে তৈরি হয়নি। এর পেছনের অন্যতম কারণ বিশাল তরুণ সম্প্রদায়ের চাওয়া ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান। দেশটির নাগরিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে। এসব তরুণ-যুবক আর সেকেলে নিয়ম-নীতিতে চলতে ইচ্ছুক নন। সেনাশাসনের মতো স্বৈরশাসন তো তাঁরা চানই না। তাঁরা চান জীবিকা অর্জনের এমন সুযোগ, যা দিয়ে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করা যাবে। আধুনিক, সহজ ও সচ্ছল জীবনের আশায় উজ্জীবিত হয়ে মোবারক পতনের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তাঁরা। আশা ছিল, নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার তাঁদের সব চাওয়া পূরণ করতে পারবে। কিন্তু বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে মোবারক-যুগের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা তাঁদের আহত করেছে। নির্বাচনের পর ব্রাদারহুড-সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসিও তরুণ সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ না করে ক্রমেই কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠা আর নিজস্ব মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার দিকেই মন দিয়েছিলেন।
মিসরের তরুণ সম্প্রদায় এখন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন। তাদের একদল অন্তর্বর্তী সরকার তথা সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছে, আরেক দল সমর্থন করছে মুরসি ও ব্রাদারহুডকে। সব মিলিয়ে তারা অনেকটা দিগ্ভ্রান্ত। মিসরীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমর আদলি বলেছেন, এই রাজনৈতিক-সংকট চলতে থাকলে মিসর সত্যিই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি দীর্ঘ অন্তর্বর্তী সময় পার হতে হবে। এর মধ্যে অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা চলতে থাকলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে পড়বে।’
আমর আদলি জানান, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে কেবল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতের মতো দেশগুলোর অর্থ সহায়তায় কাজ হবে না। যদিও দেশ তিনটি মিলে মিসরকে হাজার কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়ে থাকে। মিসরের জন্য পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া অর্থনৈতিক বিষয়গুলোয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেই। তারা ব্যয় কাটছাঁট বা কর বাড়ানোর মতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এতে এ সরকার যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, অর্থনৈতিক সংকট তত বাড়বে বৈ কমবে না। সে ক্ষেত্রে জনগণের দুর্গতি আরও বাড়বে।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক হাসান নাফা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে জানান, মিসর পরিস্থিতি নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা আসলে বাড়াবাড়ি। এখানে গৃহযুদ্ধ বাধার কোনো আশঙ্কা নেই। ব্রাদারহুড যদিও এর আগে এভাবে কখনো প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করেনি, তা হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করার মতো শক্তি তাদের নেই। তারা এখন মিছেই হাত-পা ছুড়ছে। আসলে তারা পরাজিত। আর মিসরের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী এখন সেনাবাহিনীকেই সমর্থন করছে।
No comments