তৃণমূলে দুর্নীতির বিস্তার by ড. কর্নেল অলি আহমদ (অব.) বীরবিক্রম
বাংলাদেশের
গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বহুমাত্রিক উন্নয়নের জন্য টেস্ট রিলিফ
(টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিকে খুবই কার্যকর ব্যবস্থা
বলে মনে করা হলেও তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। দুর্নীতিমুক্ত ও
দক্ষ তদারক ব্যবস্থা জোরদার করে টেস্ট রিলিফ ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য
কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামবাংলার আর্থ-সামাজিক কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে বদলানো
সম্ভব। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এ ধরনের প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা
রাখছে। তবে উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন, দুর্নীতির কারণে যে কোনো
জনকল্যাণকর প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও
কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের মূল লক্ষ্য- গ্রামের সাধারণ
মানুষের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সংস্কার। সেই সঙ্গে গ্রামের
অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এসব
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়া হচ্ছে; তাই দুর্নীতিপরায়ণ মহল
তা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। এর কারণ এ ধরনের বেশির ভাগ প্রকল্পে দুর্বল তদারক
ব্যবস্থা। প্রকল্পে তদারক ব্যবস্থা যত অসংগঠিত ও দুর্বল সেখানে দুর্নীতিও
তত বেশি হবে, এটাই যেন বাংলাদেশের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টিআর, জিআর, কাবিখা সাধারণত সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এগুলো তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়ক নির্মাণের জন্য বিতরণ করে থাকেন। বিতরণ থেকে শুরু করে কার্য সম্পাদন হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে এমপি, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, পিআইও, ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, কোনো প্রকল্পেই ৫০ থেকে ৬০ ভাগের অধিক কাজ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ ভাগও কাজ হয় না। ফলে গ্রাম পর্যায়ে এ প্রকল্পগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে প্রকল্পের দুর্নীতিবাজরা অনেকে বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যেসব ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলে বিশ্বাস করে না, কোরআন এবং হাদিসে বিশ্বাস করে না, ধর্ম গ্রন্থের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নেই, ওই সব ব্যক্তি কখনও হারাম রোজগার থেকে বিরত থাকে না। বিভিন্ন জানা ও অজানা কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমরা জনগণকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এসব প্রকল্পের বিক্রয়লব্ধ টাকা ন্যূনতম চার থেকে পাঁচ স্তরে ভাগাভাগি হয়, ফলে প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সারাদেশে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পে হরিলুটের খবর প্রায় প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। কাজের নামগন্ধ পর্যন্ত নেই, প্রতিষ্ঠানেরও অস্তিত্ব নেই অথচ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কাবিখা-টিআরের শত শত টন চাল-গম এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। বছরজুড়ে এসব প্রকল্পে লাগামহীনভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্প চালু হয়েছে গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কাবিখা ও টিআর প্রকল্প। এ ধরনের প্রকল্পে ‘হরিলুট’ হলে সারাদেশের উন্নয়নের কী অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের পেছনে প্রতিবছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়, তা দিয়ে দেশের অনেক বড় ধরনের উন্নয়ন করা সম্ভব। অথচ এ ধরনের প্রকল্পে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা অবাধেই ঘটতে দেখা যায়। প্রতি অর্থবছর এই প্রকল্পে অর্থাৎ কাবিখা ও টিআর-এর পেছনে সরকারের ব্যয় হয় ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে, যেখানে টাকার অভাবে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না, সেখানে এত বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কোনো ঘটনাই মেনে নেয়া যায় না। দলীয় প্রভাবশালীদের প্রভাবে ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যোগসাজশে কোথাও ভুয়া প্রকল্প, কোথাও প্রকল্পের কাজ শেষ না করা, আবার অনেক ক্ষেত্রে ৩০-৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে পুরো বিলই তুলে নেয়া হয়েছে, এমন খবরও আমরা জানতে পেরেছি গণমাধ্যমের কল্যাণে।
কাবিখা ও টিআর প্রকল্পে অনিয়ম, অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতি ও হরিলুটের খবর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকদের দফতরে অনেক অভিযোগও জমা পড়েছে। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে আইনানুগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, এর প্রমাণ অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত থাকার মধ্যেই রয়েছে। কাবিখা-টিআর প্রকল্প সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের স্বার্থের প্রকল্প হিসেবে এখন পরিচিতি লাভ করেছে। গ্রামীণ উন্নয়নে এসব প্রকল্প নেয়া হলেও তা থাকছে শুধু কাগজেকলমেই। প্রকল্পগুলো সার্বক্ষণিক তদারকিতে কেউ না থাকায় স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী-ক্যাডাররা এগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। সামাজিক নিরাপত্তার নামে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আসলে নেতাকর্মী-ক্যাডারদেরই পোষা হচ্ছে। আর অনিয়ম, অব্যবস্থা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লুটপাটের কারণে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন না হয়ে বরং উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রায়ই দেখা যায়, কোনো প্রকল্পে চাল বা গম বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় একটি সিন্ডিকেট গঠিত হয় এবং এসব জিনিস তাদের কাছে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। টেন্ডার ছাড়া গম-চাল বিক্রি করলে প্রকৃত মূল্যও পাওয়া যায় না। জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই টনপ্রতি দুই হাজার টাকা নিজেদের জন্য রাখেন, যা থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে। একটি প্রকল্প পাস করতে হলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। যেমন ইউএনও, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা, পিআইও, অডিট অফিসারকে ঘুষের টাকা দিতে দিতে অর্ধেক টাকাই শেষ হয়ে যায়। যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় না। তাই কাজ হয় সীমিত। যদি সম্পূর্ণ টাকার কাজ হতো তাহলে বাংলাদেশ এত অনুন্নত থাকত না।
কোনো জেলায় গম বা চাল দিয়ে সরাসরি প্রকল্পের কাজ হয় না। নগদ টাকা দিয়েই কাজ হয়। দুর্নীতি বন্ধের জন্য সরকারের করণীয় হচ্ছে বরাদ্দকৃত গম ও চাল জেলা পর্যায়ে প্রকাশ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থগুলো আনুপাতিক হারে উপজেলা-পৌরসভাগুলোকে বরাদ্দ প্রদান করা। এতে দুর্নীতি অনেক অংশে হ্রাস পাবে। দুর্নীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা না গেলেও অন্তত দুর্নীতির প্রধান পথগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে। অবশিষ্ট ধাপগুলো কীভাবে কমানো যায় তারও একটি নীতিমালা থাকা উচিত। আমার মতে, সরাসরি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজগুলো করলে এবং যথাযথভাবে তদারকি করলে অবস্থার উন্নতি হবে। এই বোধ সরকারের টনক নড়াতে না পারলে তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি কখনও বন্ধ হবে না। চরিত্র গঠন বাধাগ্রস্ত হবে এবং সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাবে। সামাজিক অবক্ষয় ও দুর্নীতি রোধের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিু পর্যায় পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ড. কর্নেল অলি আহমদ (অব.) বীরবিক্রম : সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি
টিআর, জিআর, কাবিখা সাধারণত সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এগুলো তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়ক নির্মাণের জন্য বিতরণ করে থাকেন। বিতরণ থেকে শুরু করে কার্য সম্পাদন হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে এমপি, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, পিআইও, ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, কোনো প্রকল্পেই ৫০ থেকে ৬০ ভাগের অধিক কাজ হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ ভাগও কাজ হয় না। ফলে গ্রাম পর্যায়ে এ প্রকল্পগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। পরবর্তী পর্যায়ে প্রকল্পের দুর্নীতিবাজরা অনেকে বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যেসব ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলে বিশ্বাস করে না, কোরআন এবং হাদিসে বিশ্বাস করে না, ধর্ম গ্রন্থের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস নেই, ওই সব ব্যক্তি কখনও হারাম রোজগার থেকে বিরত থাকে না। বিভিন্ন জানা ও অজানা কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমরা জনগণকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। এসব প্রকল্পের বিক্রয়লব্ধ টাকা ন্যূনতম চার থেকে পাঁচ স্তরে ভাগাভাগি হয়, ফলে প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সারাদেশে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পে হরিলুটের খবর প্রায় প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। কাজের নামগন্ধ পর্যন্ত নেই, প্রতিষ্ঠানেরও অস্তিত্ব নেই অথচ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কাবিখা-টিআরের শত শত টন চাল-গম এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। বছরজুড়ে এসব প্রকল্পে লাগামহীনভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্প চালু হয়েছে গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কাবিখা ও টিআর প্রকল্প। এ ধরনের প্রকল্পে ‘হরিলুট’ হলে সারাদেশের উন্নয়নের কী অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের পেছনে প্রতিবছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়, তা দিয়ে দেশের অনেক বড় ধরনের উন্নয়ন করা সম্ভব। অথচ এ ধরনের প্রকল্পে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা অবাধেই ঘটতে দেখা যায়। প্রতি অর্থবছর এই প্রকল্পে অর্থাৎ কাবিখা ও টিআর-এর পেছনে সরকারের ব্যয় হয় ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে, যেখানে টাকার অভাবে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয় না, সেখানে এত বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কোনো ঘটনাই মেনে নেয়া যায় না। দলীয় প্রভাবশালীদের প্রভাবে ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যোগসাজশে কোথাও ভুয়া প্রকল্প, কোথাও প্রকল্পের কাজ শেষ না করা, আবার অনেক ক্ষেত্রে ৩০-৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে পুরো বিলই তুলে নেয়া হয়েছে, এমন খবরও আমরা জানতে পেরেছি গণমাধ্যমের কল্যাণে।
কাবিখা ও টিআর প্রকল্পে অনিয়ম, অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতি ও হরিলুটের খবর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকদের দফতরে অনেক অভিযোগও জমা পড়েছে। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে আইনানুগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, এর প্রমাণ অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত থাকার মধ্যেই রয়েছে। কাবিখা-টিআর প্রকল্প সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের স্বার্থের প্রকল্প হিসেবে এখন পরিচিতি লাভ করেছে। গ্রামীণ উন্নয়নে এসব প্রকল্প নেয়া হলেও তা থাকছে শুধু কাগজেকলমেই। প্রকল্পগুলো সার্বক্ষণিক তদারকিতে কেউ না থাকায় স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী-ক্যাডাররা এগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। সামাজিক নিরাপত্তার নামে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আসলে নেতাকর্মী-ক্যাডারদেরই পোষা হচ্ছে। আর অনিয়ম, অব্যবস্থা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লুটপাটের কারণে এসব প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন না হয়ে বরং উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রায়ই দেখা যায়, কোনো প্রকল্পে চাল বা গম বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় একটি সিন্ডিকেট গঠিত হয় এবং এসব জিনিস তাদের কাছে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। টেন্ডার ছাড়া গম-চাল বিক্রি করলে প্রকৃত মূল্যও পাওয়া যায় না। জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই টনপ্রতি দুই হাজার টাকা নিজেদের জন্য রাখেন, যা থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে। একটি প্রকল্প পাস করতে হলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। যেমন ইউএনও, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা, পিআইও, অডিট অফিসারকে ঘুষের টাকা দিতে দিতে অর্ধেক টাকাই শেষ হয়ে যায়। যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় না। তাই কাজ হয় সীমিত। যদি সম্পূর্ণ টাকার কাজ হতো তাহলে বাংলাদেশ এত অনুন্নত থাকত না।
কোনো জেলায় গম বা চাল দিয়ে সরাসরি প্রকল্পের কাজ হয় না। নগদ টাকা দিয়েই কাজ হয়। দুর্নীতি বন্ধের জন্য সরকারের করণীয় হচ্ছে বরাদ্দকৃত গম ও চাল জেলা পর্যায়ে প্রকাশ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থগুলো আনুপাতিক হারে উপজেলা-পৌরসভাগুলোকে বরাদ্দ প্রদান করা। এতে দুর্নীতি অনেক অংশে হ্রাস পাবে। দুর্নীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা না গেলেও অন্তত দুর্নীতির প্রধান পথগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে। অবশিষ্ট ধাপগুলো কীভাবে কমানো যায় তারও একটি নীতিমালা থাকা উচিত। আমার মতে, সরাসরি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজগুলো করলে এবং যথাযথভাবে তদারকি করলে অবস্থার উন্নতি হবে। এই বোধ সরকারের টনক নড়াতে না পারলে তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি কখনও বন্ধ হবে না। চরিত্র গঠন বাধাগ্রস্ত হবে এবং সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাবে। সামাজিক অবক্ষয় ও দুর্নীতি রোধের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিু পর্যায় পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ড. কর্নেল অলি আহমদ (অব.) বীরবিক্রম : সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি
No comments