অ্যাসাঞ্জের ‘বন্দিজীবনের’ এক বছর
মার্কিন
তারবার্তা ফাঁস করে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে
রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পর এক বছর পূরণহলো। তিনি এই এক বছরে দূতাবাস ভবনের
বারান্দার বাইরে কখনো যাননি। তার পরও আড়ালে অনেক কিছুই ঘটে চলেছে। লন্ডনে
নিযুক্ত ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূত আনা আলবানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়ার
সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্দো পাতিনো গত সপ্তাহে এ
ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ওই পদে পরিবর্তন আনার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের কোনো সম্পর্ক
নেই বলে জানানো হয়। ইকুয়েডরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,
আলবানের কর্মকাণ্ড নিয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনেকে চরম অসন্তোষ প্রকাশ
করেন। তাঁদের মতে, আলবান ‘নিজের অযোগ্যতার’ প্রমাণ দিয়েছেন। কূটনৈতিক
সংকটকালে তিনি দায়িত্ব পালনের ‘উপযুক্ত নন’। লন্ডনে নতুন রাষ্ট্রদূত হতে
যাচ্ছেন হুয়ান ফ্যালকনি পুইগ নামের একজন আইনজীবী। তবে রাষ্ট্রদূত পদে
পরিবর্তন আনার পেছনে হয়তো অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে ইকুয়েডরের অবস্থান
পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে ধারণা করছেন।
সুইডেন বা যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ এড়াতে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে গত
জুনে আশ্রয় নেন অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জ। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির
অভিযোগে মামলায় তাঁকে সুইডেনে জিজ্ঞাসাবাদের কথা ছিল। তবে তিনি এসব অভিযোগ
অস্বীকার করেছেন। সুইডেনের কর্তৃপক্ষ তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করতে
পারে এবং গোপনীয় সরকারি তথ্য ফাঁসের অভিযোগে সেখানে তাঁর মৃত্যুদণ্ড
হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইকুয়েডর দূতাবাসে তাঁর আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাটি
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনেককে বিস্মিত করেছে। এ ছাড়া লাতিন আমেরিকার
দেশটিই বা কেন তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন
সূত্র বলছে, অ্যাসাঞ্জ আশ্রয় প্রার্থনা করতে আসবেন বলে লন্ডনে ইকুয়েডরের
দূতাবাস অনেক আগে থেকেই জানত। তার পরও ইকুয়েডর সরকার অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে
আনুষ্ঠানিক অবস্থান ঘোষণা করতে দুই মাস সময় নেয়। এখন তিনি ইকুয়েডর
দূতাবাসে অবস্থান করে গ্রেপ্তার এড়াতে পারছেন। তবে সেখান থেকে বাইরে
বেরোলেই লন্ডনের কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করবে।
সর্বোপরি অ্যাসাঞ্জের আশ্রয় গ্রহণের ব্যাপারটি ইকুয়েডরকে কূটনৈতিক অঙ্গনে
বিশেষ ভাবমূর্তি অর্জনে সহায়তা করেছে। তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার
ব্যাপারে যুক্তরাজ্য ও ইকুয়েডরের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু
প্রচলিত আইনের কারণেই অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের বিকল্প লন্ডনের
নেই। বিবিসি।
No comments