‘জজ সাহেবরা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবেন’
নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা
বাড়ানো সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে। আবেদনটি
পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
‘‘আপনারা বলতে পারেন, আমাদের কথা শুনবেন না, দেবেন না (বিচারকদের স্বতন্ত্র
পে-স্কেল)।
জজ সাহেবরা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবেন। আর কি করার আছে? আমাদের মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে।”
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এ দিন ধার্য করেন।
পরে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য রোববার দিন নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।
সকালে
আপিল বিভাগের এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল
মোমতাজ উদ্দিন ফকিরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কোথায়?
এর পরপরই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন।
আদালত
বলেন, “আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন কিনা নিজেকে জিজ্ঞেস করুন।
আমাদের বিচারকদের কি বলার আছে? এভাবে চললে তো কলাপস করবে। আমাদের কথা তো
বোঝার চেষ্টা করলেন না। আমাদের রায়টা রেখে দিলেন। গতকাল (সোমবার) বলেছেন
আপনারা আবেদন করবেন। এখন দেখছি তিন পৃষ্ঠার আবেদন দিয়েছেন। যার সঙ্গে আপনার
সাবমিশনের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক আছে।”
আদালত আরো বলেন,
“নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা নিয়ে উচ্চ আদালত একটি রায় দিয়েছেন।
তারপর আপনারা একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। আমরা এর সামান্য সংশোধন করেছি।
তারপরও আপনারা বুঝতে পারলেন না। যে আবেদন দিয়েছেন তা অত্যন্ত সতর্কতার
সঙ্গে কি প্রস্তাব তাও নেই। আপনারা বলতে পারেন, আমাদের কথা শুনবেন না,
দেবেন না। জজ সাহেবরা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করবেন। আর কি করার আছে?
আমাদের মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে।”
এরপর ব্যারিস্টার
আমীর-উল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, “উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন। সেটা
যদি সংসদে পরীক্ষা করা হয়, তাহলে কি আদালতকে আন্ডারমাইন করা হবে না? তাহলে
উচ্চ আদালত থেকে লাভ কি?”
আদালত বলেন, “আপনারা যে আবেদন
দিয়েছেন, এটার ওপর আগামী রোববার শুনানি হবে। অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করে
শুনানি হবে। আর আজকের আবেদনেও আপনারা মডিফিকেশনের কথা বলেছেন। আমাদের রায়ের
পরে কে মডিফিকেশন করবে?”
আদালত বলেন, “আজকের আবেদনে
আপনারা একটি লাইন লিখেছেন-আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে যথাযথভাবে নির্ধারণ করবেন।
২০০৯ সালের আইন তো আছে। নতুন করে তারপরও আইন প্রনয়ণ করতে হবে কেন? ”
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
গত
১৪ মার্চ বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো সংক্রান্ত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া
অগ্রগতি প্রস্তাব আংশিক সংশোধন করেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এ সংশোধনীসহ
সরকারের প্রস্তাব বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ এপ্রিল (সোমবার)
আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছিলো। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ একটি আবেদন দাখিল করার
কথা জানালে আদালত শুনানি একদিন মুলতবি করেন।
১৪ মার্চ
আদেশের পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “নিম্ন
আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি
প্রস্তাব আদালতে দাখিল করা হয়। ওই প্রস্তাব সংশোধন সাপেক্ষে গ্রহণ করেছেন
আদালত। প্রস্তাবে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদার সংখ্যা ২২ জন বলে উল্লেখ করা হয়।
সংখ্যা বাদ দিয়ে তা সংশোধন করে আদালত বলেছেন, পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলে
গ্রেড ওয়ানে উন্নীত হবেন। বিচারকেরা ৫০ শতাংশ ভাতা পেতেন। প্রস্তাবে ওই
ভাতা ২০ শতাংশ করার কথা বলা হয়। আদালত এ ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ জুডিশিয়াল ভাতা
উন্নীত করার কথা বলেছেন।
এর আগে গত বছরের ১৯ জুলাই
জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচারকদের স্বতন্ত্র
পে-স্কেল ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ
আদালতের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে বিভিন্ন ভাতা নির্ধারণ করে তা পে-স্কেলে
সংযুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
এরপর
সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ কার্যকর করে ১ অক্টোবর হলফনামার মাধ্যমে
আদালতকে জানাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে আরো তিন দফা সময় বাড়িয়ে ১০
জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় দেন আপিল বিভাগ। আবারও দুই সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৪
জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপর আরো দু’দফা সময় পায় সরকার।
প্রসঙ্গত,
ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ে বিচারকদের পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণের
জন্যে জুডিশিয়াল সার্ভিস ‘পে-কমিশন’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ
আদালত। এ নির্দেশনার আলোকে ২০০৭ সালের ১৭ জুন ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস
পে-কমিশন’ গঠন করা হয়। এ কমিশন ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল বিচারকদের আলাদা বেতন
কাঠামো নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্যে সরকারকে সুপারিশ করে।
পে-কমিশনের
এ সুপারিশ বাস্তবায়নে আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ও ২০১০ সালের ২৮
ফেব্রুয়ারি দু’দফা সরকারকে নির্দেশ দিলেও তা আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
এ
পরিপ্রেক্ষিতে মাসদার হোসেন মামলার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল
ইসলাম পে-কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবিতে একটি আবেদন করেন।
No comments