বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রায় কার্যকর ছাড়া জাতীয় দায় মিটবে না
আজ বেদনাদীর্ণ ১৫ আগস্ট। কেবল আমাদের জাতীয় ইতিহাসই নয়, আধুনিক ইতিহাসে ব্যক্তিনায়কের ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনন্য চরিত্র। মহাত্মা গান্ধী জননায়ক ছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না; জওহরলাল নেহরু যতটা রাষ্ট্রনায়ক, ততটা জননন্দিত জননায়ক ছিলেন না। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবের প্রভাবের বিস্তার জনগণের হূদয় থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধিপ্রাপ্তি এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানে এ দুই গুণের সাক্ষাত্ প্রমাণ। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। আগস্টের এই দিনে তিনি সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের হাতে বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে সমাজ ও রাষ্ট্রে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা আজও জাগরূক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উত্থান যতটা বীরত্বপূর্ণ, মৃত্যু ততটাই মর্মান্তিক। ঘাতকেরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারের নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ প্রায় সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে যে বর্বরতার প্রমাণ দিয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসেও বিরল। মুহূর্তে দেশ হয়েছিল নেতৃত্বহীন আর রাষ্ট্র হয়েছিল পথচ্যুত। তবে এটাও সত্য যে জননায়ক হিসেবে তাঁর প্রশ্নহীন সফলতার পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি কতটা সফল ছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। স্বাধীনতাযুদ্ধ-পরবর্তী কঠিন সময়ে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা সামাল দেওয়ার কর্মধারা এবং বাকশালের মতো অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভুলে গেলে চলবে না যে তিনি কেবল একটি রাষ্ট্রের স্থপতিই নন, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রেরণাও। সুতরাং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ নামের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে তাঁর যে নাড়ির বন্ধন মহাকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত, তা অস্বীকার করা যাবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাযোগ্য স্বীকৃতিদান এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের বিচার ৩৪ বছর ধরে ঝুলে থেকেছে। লজ্জাকরভাবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে খুনিদের রক্ষার চেষ্টাও আমরা দেখেছি। অবশেষে সেই কালো আইনের রাহুগ্রাস থেকে সংবিধান ও দেশ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু বিচার সম্পন্ন হলেও রায় চূড়ান্ত করে আদেশ কার্যকর করায় দুঃখজনক বিলম্ব দেখা যাচ্ছে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিতকরণ বেঞ্চ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন; কিন্তু আজও সেই রায় বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার বদলের পর বিচারকাজেও শিথিলতা এসে পড়ে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন প্রতিক্রিয়াশীল জোট সরকারের উদ্যোগহীনতার কারণে মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে থাকে। বিচারকদের বেঞ্চগঠনে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করে বিচারপ্রক্রিয়াকে স্থবির করে দেওয়া হয়। তবে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পাঁচ আসামির আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঁচজনেরই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।
১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়া এখন জাতীয় দায়। নতুন বিচারক নিয়োগের পর এখন আবার নতুন করে শুনানি শুরু হওয়ার পথে। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকারের উদ্যোগে দ্রুতই পুরো প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হবে এবং মিটবে জাতীয় দায়।
মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দলীয় নন, জাতীয়; তিনি আর ব্যক্তি নন, ইতিহাসের নায়ক। ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ব্যাধি আকারে ফিরে ফিরে আসতে থাকে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ধারাবাহিকতায় জেলহত্যাসহ সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন না হলে সেই ব্যাধির বীজ রয়েই যাবে। সে দিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
আজ এই শোকাবহ দিনে বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও একই ঘটনায় নিহত সবার আত্মার শান্তি কামনা ও শোকার্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উত্থান যতটা বীরত্বপূর্ণ, মৃত্যু ততটাই মর্মান্তিক। ঘাতকেরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারের নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ প্রায় সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে যে বর্বরতার প্রমাণ দিয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসেও বিরল। মুহূর্তে দেশ হয়েছিল নেতৃত্বহীন আর রাষ্ট্র হয়েছিল পথচ্যুত। তবে এটাও সত্য যে জননায়ক হিসেবে তাঁর প্রশ্নহীন সফলতার পাশাপাশি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি কতটা সফল ছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। স্বাধীনতাযুদ্ধ-পরবর্তী কঠিন সময়ে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা সামাল দেওয়ার কর্মধারা এবং বাকশালের মতো অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভুলে গেলে চলবে না যে তিনি কেবল একটি রাষ্ট্রের স্থপতিই নন, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রেরণাও। সুতরাং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ নামের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে তাঁর যে নাড়ির বন্ধন মহাকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত, তা অস্বীকার করা যাবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যথাযোগ্য স্বীকৃতিদান এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের বিচার ৩৪ বছর ধরে ঝুলে থেকেছে। লজ্জাকরভাবে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে খুনিদের রক্ষার চেষ্টাও আমরা দেখেছি। অবশেষে সেই কালো আইনের রাহুগ্রাস থেকে সংবিধান ও দেশ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু বিচার সম্পন্ন হলেও রায় চূড়ান্ত করে আদেশ কার্যকর করায় দুঃখজনক বিলম্ব দেখা যাচ্ছে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিতকরণ বেঞ্চ ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন; কিন্তু আজও সেই রায় বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার বদলের পর বিচারকাজেও শিথিলতা এসে পড়ে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন প্রতিক্রিয়াশীল জোট সরকারের উদ্যোগহীনতার কারণে মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে থাকে। বিচারকদের বেঞ্চগঠনে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করে বিচারপ্রক্রিয়াকে স্থবির করে দেওয়া হয়। তবে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পাঁচ আসামির আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঁচজনেরই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।
১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়া এখন জাতীয় দায়। নতুন বিচারক নিয়োগের পর এখন আবার নতুন করে শুনানি শুরু হওয়ার পথে। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকারের উদ্যোগে দ্রুতই পুরো প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হবে এবং মিটবে জাতীয় দায়।
মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দলীয় নন, জাতীয়; তিনি আর ব্যক্তি নন, ইতিহাসের নায়ক। ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ব্যাধি আকারে ফিরে ফিরে আসতে থাকে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ধারাবাহিকতায় জেলহত্যাসহ সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন না হলে সেই ব্যাধির বীজ রয়েই যাবে। সে দিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
আজ এই শোকাবহ দিনে বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও একই ঘটনায় নিহত সবার আত্মার শান্তি কামনা ও শোকার্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।
No comments